আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কৈশোর ১

চতুর্মাত্রিক.কম (choturmatrik.com)

৫ই জুন, ২০০৮ আজ সারাদিন, সকাল থেকে বসে আছি। মাথায় অজস্র চিন্তা চলছে। সব ঠেলে দিয়ে এখন লিখতে শুরু করলাম। কৈশোর!! গতকাল থেকে দারুন স্মৃতিকাতর হয়ে আছি। পুরোনো স্বপ্ন আর জীবনটা বড় বেশি জ্বালাচ্ছে।

ভুলে থাকার জন্য ক্রমশ হা হা করে হাসছি, ছুঁড়ে ফেলতে চাচ্ছি ভাবনাগুলো। আজ সকালে হুট করে একটা মেসেজ পেয়েছি: "যতদূরে গেলে দূরে যাওয়া হয়, তার চেয়ে কত দূরে তুমি?... কেমন আছো বেকুব?" মাথায় কিছুক্ষণ পরে যখন চিন্তাগুলো চলতে শুরু করলো, তার একটু পরে বুঝতে পারলাম কে মেসেজটা পাঠিয়েছে!! শুরু থেকে শুরু করি। আমি তখন ক্লাস ফাইভে পড়ি, আদমজী ক্যান্ট পাবলিক-এ। বছরের মাঝখানে বাবার পোস্টিং হয়ে গেল বগুড়ায়। আমার মা একটা স্কুলে পড়ান এজন্য ঠিক হলো মা ঢাকায় থাকবে বোনকে নিয়ে নানার বাসায়।

আর আমার গতি হলো বাবার সাথে, বগুড়ায়। ছোটবেলায় যারা এরকম স্কুল বদলেছে তারা জানে ব্যাপারটা কত বিরক্তিকর। কিন্তু আমাকে তখনও মতামত প্রকাশের অধিকার দেয়া হয় নাই। আর আমি একটু মন খারাপ করেছিলাম কিন্তু মূলত খুশি হয়েছিলাম। কারণ আদমজীতে স্যাররা ভীষণ মারত! আমি তখন একটু একটু ফাঁকি মারা ব্যাপারটা শিখছি, প্রায়ই মার খেতে হত।

আমি চিন্তা করলাম বগুড়া তো আর ঢাকা না, ঐখানে লোকজন নিশ্চয়ই অনেক ভালো, মারামারি করে না। ফ্ল্যাটে পৌছেই আমার জায়গাটা পছন্দ হলো। মা আর বোনের জন্য আসার পথে বেশ মন খারাপ ছিল। কিন্তু এক মন খারাপ আর কতক্ষণ ধরে রাখা যায়। বিকালে ঘুরতে বের হলাম।

বগুড়া ক্যান্টনমেন্ট-টা তখন বেশ ছিমছাম ছিল। রাস্তাগুলো একদম সোজা, একটু পরপর চাররাস্তার মোড়। গাড়ি যায় পাঁচ মিনিটে হয়ত একটা সেজন্য আবার একজন এম.পি. মোড়ের আইল্যান্ডে দাঁড়িয়ে থাকে সারাদিন। আমি তো বের হয়ে দেখি একটা পার্ক, সাথে খেলার মাঠ। আমাকে আর পায় কে! পরদিন আমাকে নিয়ে ক্যান্ট পাবলিকে ভর্তি করে দিল।

স্কুলটা আদমজীর তুলনায় অর্ধেক। আর বাসার অনেক কাছে, হেঁটে যেতে মাত্র পাঁচ-ছয় মিনিট লাগে! এরকম তো আগে ঢাকায় জীবনেও দেখি নাই। আমার বেশ মজাই লাগলো। ক্লাসে গেলাম এক বেয়ারার সাথে। ঐখানে আরেক মজা।

একপাশে দুই লাইন মেয়ে! আদমজী পুরা পোলাদের স্কুল। আমার তখন মনে হচ্ছে আমার বাপে আমারে এ কোথায় এনে ফেলল !!! এমনকি ক্লাস টিচারটাও মহিলা! আমি তো মহা বিরক্ত এবং আশংকিত। যা হোক একদম শেষ বেঞ্চে গিয়ে বসলাম। দুয়েকদিন ক্লাস করেই কয়েকটা মজার জিনিশ খেয়াল করলাম। আমাকে নতুন ছেলে বলে স্যারম্যাডাম-রা তখন একটু ছাড় দিচ্ছে।

আমি ক্লাসের শেষ মাথায় একা একা বসি, কারও সাথে তেমন খাতির ও হয় নাই। বসে বসে কিছু জিনিশ চোখে পড়ল। এখানে টিফিন টাইমে ছেলেগুলা ঢাকার মত বান্দর হয়ে যায় না ( যেটা আমি প্রথম দিনেই ধাক্কা খেয়ে বুঝলাম! আমি এক ছেলেকে টিফিনে জিজ্ঞেস করলাম, চলো বোম্বাস্টিং খেলি। পোলা আমার দিকে এমন করে তাকাল!! ) বাইরে খেলা ধূলা যা হয় খুবই বিচ্ছিন্ন। মাঝখানে মেয়েদের দল হেঁটে গেলে কি আর খেলায় মনোযোগী হওয়া যায়? একটু বড় ক্লাসের ছেলেগুলাও বেশ পরিপাটি, আদমজীর সব বিগ ব্রাদাররা ছিল গুণ্ডাপাণ্ডা টাইপ।

এটা মনে হয় কো-এড আর অলবয়েজ স্কুলের পার্থক্য। যা হোক। ২য় টার্মের ফাইনাল হয়ে গেল এর মধ্যে। মোটামুটি করলাম। কারণ বাসায় আমাকে শাসন করার কেউ নাই।

বাবা দুপুরে অফিস থেকে আসে আড়াইটার দিকে। আমি একটার সময় ফিরে বসি টিভি নিয়ে। জীবনে প্রথম ডিশ নামক বস্তুর দেখা পেলাম। ফেভারিট চ্যানেল ছিল এটিএন, তখন এটা হিন্দি গানের চ্যানেল ছিল। সেই "তু চিজ বাড়ি হ্যায় মাস্ত্‌ মাস্ত্‌"- কে কি ভোলা যায়।

বাবার সাথে দুপুরে খেয়ে ঘুমের বদলে আমি বের হতাম বাইরে। পাড়ায় ততদিনে বেশ ক'জন "দোস্ত" হয়ে গেছে। অনেক ঝুলাঝুলি করে আমি একটা সাইকেল বাগিয়েছি নতুন। সেটা নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় এক মোড় থেকে আরেক মোড় পর্যন্ত রেস্‌। এই করতে করতে দূর্দান্ত রোদটা কমে আসত, আমরা পার্কে গিয়ে একটু জিরিয়ে আবার সাইকেল নিয়ে বের হতাম।

সমস্যা হলো পরীক্ষার পরে। আমার মাতা বগুড়ায় আসলেন বোনকে নিয়ে। এসেই তার মনে হলো ছেলে পুরা বান্দর হয়ে গেছে, সাইকেল আছে তাই সাইকেল চালায় নয়ত গাছে গাছেই ঝুলত! যা হোক , ৩য় পর্বের ক্লাস শুরু হল। আর সেই সাথে শুরু হল এক বিব্রতকর অনুভূতি নিয়ে বাকিটা জীবন পথ চলা। (চলবে)


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।