আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার দুর্গা আপা

কৃষ্ণশুভ্রারা বেঁচে থাকুক দূরে সুদূর স্বপ্নসীমান্তে

দুর্গা নামটা আমার কাছে এক কষ্টের নাম, দীর্ঘশ্বাসের নাম। যারা বিভূতিভুষণের ভক্ত তারা হয়ত এর মাঝেই বুঝে গেছেন আমি কী বলতে চাচ্ছি। হ্যা, আমার কাছে দুর্গা যতটা না এক মহীয়সী দেবী তার চেয়ে অনেক বেশি এক উচ্ছ্বল চপলা বঙ্গকিশোরী। যার চোখে আছে স্বপ্ন আর আছে অপার কৌতুহল। তার মাঝে আমি খুজে পাই বাংলার শ্বাশত কিশোরীর দুরন্ত স্বত্তা।

প্যাচাল বেশি পেরে ফেলছি বুঝতে পারছি। আর অনেকে হয়তো এরই মাঝে বিরক্তিতে ভ্রু কুচকাচ্ছেন। এসব কী লিখছে এই ছাগল। পথের পাচালী নামক উপন্যাস নিয়ে তো অনেক সমালোচনা গ্রন্থই আছে। এখানে এসে সস্তা কী বলে এই নির্বোধ।

তাদের কাছে আমি করজোড়ে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। না, কোন সাহিত্য সমালোচনা করা আমার উদ্দেশ্য নয়। আমি আসলে এতগুলো কথা বলে আমার নিজের অনুভুতির তীব্রতাকে আপনাদের সামনে তুলে আনতে চাইছিলাম মাত্র। আসলে অপুর মত আমার ও এক বড় বোন ছিল। ছিল বলছি কেন আছে এখনও আমার হৃদয়পটে।

সে আমার আপন বোন হ্য়ত নয় কিন্তু কোন অংশেই অপুর দুর্গা দিদির চেয়ে কম নয়। আমার চার বছরের বড় ছিল সে। তার মা একটি স্কুলের শিক্ষিকা। সকালে তাই তাকে আমাদের বাড়িতে রেখে যেতেন আমার দাদীর কাছে। আমরা আমাদের শৈশবের বড় অংশ পার করেছি একসাথে।

আমাদের মধ্যে কখনও ঝগড়া হত কখনও মিল। কখনও খেলা ছুটাছুটি করা। মফঃস্বল শহরের সেই আনন্দ ঢাকার শহুরে পরিবেশে বেড়ে উঠা অনেকেই অনুভব করতে পারবেন না। আমার সেই দুর্গা আপু আমাকে ছোটবেলায় প্রথম কবিতা পড়তে শিখান। আমাকে কোলে শুইয়ে তিনি আবৃত্তি করতেন নজরুলের সঞ্চিতা।

সেই খাদু দাদু সেই লিচু চোর সেই ঝিঙেফুল আজও আমার স্মৃতিতে অম্লান। ক্লাশ এইটে আমি প্রথম পথের পাচালী পড়ি। তখন আমি মফঃস্বল ছেড়ে ঢাকায়। এই উপন্যাস আমাকে ফিরিয়ে নিয়ে যেত সেই শৈশবে সেই সোনালি দিন সেই দুরন্ত পনা আর আমার সেই দুর্গা আপু। পথের পাচালীর দুর্গা যখন মারা যায় আমি খুব কেদেছিলাম।

আমার মনে হয়েছিল আমার দুর্গা আপু বুঝি আর নেই। আমার দিকে তাকিয়ে অনেকে অবাক হয়ে হেসেছিল। আমার মা বুঝাল এসবইতো শুধুই উপন্যাস মাত্র। দুর্গা মরেছে, তোমার বোন তো মরে যায়নি। আমি মায়ের আচলে চোখ মুছে শান্ত হলাম।

তাইতো এত পাগল কেন আমি। নিজের পাগলামিতে লজ্জা পেয়ে গেলাম। ***এই ঘটনার দশ বছর পর গত বছর আমার দুর্গা আপু ইহধামের মায়া কাটিয়ে পাড়ি দিয়েছেন অজানার উদ্দেশ্যে সূদুর পরপারে। নাহ,এবার আমি কাদিনি কাদতে পারিনি। কে যেন আমার গলার স্বরকে স্তব্ধ করে দিয়েছিল আমার হৃদয়কে করে দিয়েছিল অশ্রুশূন্য।

তবুও যেন চোখ বেয়ে দু তিন ফোটা কী যেন পড়ে। নাহ চোখে মনে হয় কিছু পড়েছে বলে আমি সবার সামনে থেকে দূরে চলে যাই।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.