আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

"বরিশাল ক্যাডেট কলেজ, বরিশাল-৮২১৬"-০১

http://mdtarik.blogspot.com/ আমি বাংলায় ভালবাসি, আমি বাংলাকে ভালবাসি, আমি তারই হাত ধরে সারা পৃথিবীর মানুষের কাছে আসি...
এই পর্বটি পড়ার আগে প্রথম পর্ব থেকে শুরু করতে পারেন ... ... পর্ব ০: প্রারম্ভিকা: আমার লেখার কারন ও আপনার অংশগ্রহণ -------------------------পর্ব ০১------------------------------------- বাবা আজ অনেক খুশি। বাবার অনেক দিনের স্বপ্ন আজ পূরন হয়েছে, ছেলে ক্যাডেট কলেজে চান্স পেয়েছে। আমিও খুশি, অনেক খুশি। ছোটবেলা থেকেই বাসার বাইরে থাকাই আমার অভ্যাস। সকাল ৭ টায় গন্তব্য জিলা স্কুল; স্কুল , কোচিং সবকিছু শেষ করে আমি ফিরতাম একেবারে সন্ধ্যায়।

বাবা মা দুজনেই চাকরিজীবী, তাই সন্ধ্যায় সবাই একত্রে বাসায় ফিরতাম। আবার পরদিন সকাল হলেই গন্তব্য: জিলা স্কুল...। ক্যাডেট কলেজ ভর্তি পরীক্ষার রেজাল্ট দেয়ার পরে কি করব বুঝতে পারছিলাম না... অর্থাৎ স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিব, নাকি চলতে থাকবে, বুঝতে পারছি না। ঐ সময়ে আমার সবচেয়ে আপনজন ছিলো জিলা স্কুলের সেই বন্ধুগুলো, ওদের ফেলে বাসায় বসে বসে ক্যাডেট কলেজের জন্যে দিন গুণবো- এটা সম্ভব ছিলো না; তাই ঠিকানা আবার জিলা স্কুল। যার সাথেই দেখা হয় একই কথা, কিরে ক্যাডেটে চান্স পাইয়া গেলি... যাবি কবে? আমি কেবল মনে মনে ভাবি, কিছুতেই যেতে মন চাইছে না; এই স্কুল, এই মাঠ, এই ক্রিকেট, দলবেধে কীর্তনখোলায় গোছল... এসব ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করছে না।

বেশ কয়েকবার ভেবেছিলাম, আব্বু-আম্মুকে আমার অনিচ্ছার কথাটা বলব, কিন্তু সাহস হয় নি। আমার খুব কাছের কিছু বন্ধু ছিলো সরোজ, পাভেল, অপু, মাহামুদ, রায়হানসহ আরও অনেকে। আমরা ছিলাম "সাইকেল গ্রুপ," যারা স্কুল ছুটির পরে সাইকেলে টো টো করতাম। খুব বেশি ভালবাসতাম ঐ লাল সাইকেলটাকে; ক্লাস ফাইভে ফাইনাল পরীক্ষায় ফার্স্ট হওয়ার পরে বাবা ঐ সাইকেলটা কিনে দিয়েছিলেন। আমি সবাইকে ছেড়ে চলে যাব- এটা মেনে নিতে পারছিল না বন্ধুরা অনেকেই।

কিন্তু আমাকে যে যেতেই হবে। সুতরং বিদায় বন্ধু... কান্নায় চোখটা ঝাপসা হয়ে আসছিল ... শেষ যেদিন স্কুলে গিয়েছিলাম, সেদিন কাউকে বলিনি যে আগামীকাল আমি চলে যাব, স্কুল থেকে ফেরার সময় সাইকেল চালাতে খুব কষ্ট হচ্ছিল... মনে হচ্ছিল যেন কেউ পেছন থেকে ডাকছে আমায়... "মিঠু, যেও না..." ইস্ সেই খেলার মাঠ,সেই বেলস পার্ক কিংবা পরেরসাগর মাঠের ক্রিকেট, সেই কীর্তনখোলা আজও হাতছানি দিয়ে ডাকে আমায়... ১২মে, ২০০১, আমি, বাবা-মা, ছোট বোন আর আমার কাকা, আমরা রওনা হলাম বিশাল একটা ব্যাগ নিয়ে, গন্তব্য: বরিশাল ক্যাডেট কলেজ । বাসা থেকে বের হবার সময় লাল সাইকেলটার দিকে বারবার তাকচ্ছিলাম, মনে হচ্ছিল, আর কোনদিন বুঝি আমি সাইকেল চালাতে পারব না। আমি অনেক বেশি উৎফুল্ল ছিলাম , শুধু একটা বিষয় ছাড়া, সেটা হচ্ছে প্রিয় জিলা স্কুল আর প্রিয় বন্দুরা... ওদের আজও অনেক ভালবাসি। এসব ভাবতে ভাবতে আমরা কখন যে নতুন বাজার টেম্পুস্ট্যান্ডে চলে এলাম! দাদুর মুখটা খুব মনে পড়ছিলো, বাসা থেকে যখন রিকসায় উঠি, দাদু কেমন যেন হা করে তাকিয়েছিলেন আমার দিকে, মুখে কোন কথা বলেন নি।

টেম্পু ছুটছে রহমতপুরের দিকে... ধীরে ধীরে পিছনে ফেলে যাচ্ছি আমার প্রিয় শহর বরিশাল... বাবা-মা দেখছে আমি বেশ উৎসাহি, এতে তারা বেশ খুশি, কারন আমি মন খারাপ করলে সমস্যা। নতুন পরিবেশ, সেখানে হাঁসিখুশি থাকতে পারলেই ভাল। আর একজনের জন্যে খুব খুব কষ্ট লাগছিল... সে আমার ছোট বোন, বড় আদরের ছোট বোন... "আশা"... আমরা নামলাম ক্যাডেট কলেজের অপজিটে, ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের "সাতমাইল" নামের জায়গাটিতে... বেশ রঙিন সাজে সেজেছে আজ বরিশাল ক্যাডেট কলেজ, ঠিক যেন বিয়েবাড়ি! "বরিশাল ক্যাডেট কলেজ" লেখা গেট দিয়ে আমরা ঠুকলাম সেই বহু প্রতিক্ষীত গৃহে... তারপর অনেক কথা... সব কি একবারে বলা যায়... সেদিনের "মিঠু" পরবর্তীতে কি করে "তারিক" হয়ে গেল, সে এক বিস্তর কাহিনী... [চলবে] ------পরের পর্বগুলি------ পর্ব-০২ পর্ব -০৩ পর্ব -০৪
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.