আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আহাম্মকের আমলনামা তথা হাবিল-কাবিল-সিবিল সমাচার

হাঁটা পথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে হে সভ্যতা। আমরা সাত ভাই চম্পা মাতৃকাচিহ্ন কপালে দঁড়িয়েছি এসে _এই বিপাকে, পরিণামে। আমরা কথা বলি আর আমাদের মা আজো লতাপাতা খায়।

এক. এদেশে সব্বাই মন্দ, তেনারা কেবল ভালো, শতাব্দীর আন্ধার জ্বালিয়ে বলেন, দেখ কেমন আলো! এই হইল ঘটনা এবং এই ঘটনার কোনো মা-বাপ নাই। এনারা আরশ থেকে পড়েছেন বলে সিবিল, বাকি সব হাবিল-কাবিল।

আদমের এই দুই পুত্র দুনিয়ায় প্রথম রক্তপাত ঘটিয়েছিল, হালে তাদের পুত্র-তস্যপুত্ররা দুই দলে আছেন। আর সিবিলরা আছেন নির্দলে। তাঁরা নির্দল-নিরপেক্ষ। তাই নির্দলীয় সেনাবাহিনীর সমর্থক। তাঁরা মন্দ কী জানেন না, কিন্তু টাকায় আধ টাকার সুদি কারবার করেন।

তাঁদের কায়েন্ট কোম্পানি শিশুশ্রমে মুনাফা করে সেই মুনাফার ভাগ দিলেও তাঁদের নোবেলের মহিমা কিছু মাত্র কমে না। তাঁরাই ফেউ হয়ে বাঘ আসার রাস্তা খোলাসা করেন কিন্তু এখন আবার তারাই গণতন্ত্র গণতন্ত্র বলে চোঙ্গা ফোঁকান। ফৌজিদের আর কী অপরাধ! নোবেল বিজয়ী বীর সওদাগর পুত্র যখন ভিটে-মাটি-বন্দর সব বিক্রি করার ওকালতি করেন, খায়েশ দেখেন ফৌজি কুলাঙ্গারদের কাঁধে চড়ে সত মানুষের রাজনীতির শিখণ্ডী হতে! ক্লিন্টন-সারকোজি-ব্লেয়ার-জর্জ সরোস তার বন্ধু। দুনিয়ার তাবদ মাল্টি ন্যাশনালকে বাংলাদেশে ব্যবসা করার মুতসুদ্দিগিরিই যার বড় সাফল্য, এই আমলে তেনারাই নাকি গণবন্ধু। এইসব ব্র্যাক-সিপিডি-গ্রামীণরাই কি দেশকে এক গহ্বর থেকে আরেক পগারে ফেলার দুতিয়ালি করেন নাই? রাজনীতিবিদরা খারাপ, তা ভাই তোমরা কারা? কার টাকায় তোমার বাণিজ্য? কাকে তোমরা এক ঘাটে কিনে আরেক ঘাটে বেচে আসছ? তোমরা কি আফগানিস্তান দখল হবার পর সেখানে ব্যবসা খোলো নাই।

তোমাদের একজন, যিনি নাকি আইনের জাহাজ সংবিধানের ওঝা, তিনিই কি দখলদারদের হয়ে সংবিধান রচনার ঠিকাদারি পান নাই সেখানে? তিনিই কি বাংলাদেশে এশিয়া এনার্জি, নাইকো প্রভৃতিদের আইন উপদেষ্টার চাকরি করেন না? টিআবির পীর যিনি তিনিও কি এই সরকারের মদদদাতা সাজেন নাই?বহুজাতিক লুটেরা কোম্পানির কর্মচারি ও স্থানীয় এজেন্টরাই যদি বাংলাদেশের বিবেক হবে তবে আর কারজাইকে গালি দেয় কোন বেকুবে। দুই. বিউটেনিস গেছে এখন এসেছে মরিয়ার্টি। ইনি নতুন বড় লাট, এসেই চট্টগ্রাম বন্দরের তদারকি করে গেলেন। বন্দর ইজারা হয়ে গেছে তলে তলে, ট্রেন চলাচলের ছলে ভারতের সঙ্গে ক'দিন আগে ট্রানজিটও হয়ে গেল। আমেরিকার সন্ত্রাস দমনের পররাজ্যগ্রাসী যুদ্ধে বাংলাদেশ হাবিলদারিতে যোগ দিল।

আর থাকেটা কী? এসবই দুর্নীতি দমনের বাড়তি ফজিলত। ফৌজি কাছা খুলতে আর কিছু বাকি নাই। তেনাদের ক্ষমতার বাসনা আর পরাশক্তির হাবিলদারির নাম বিদেশে শান্তির মিশন আর দেশে দুর্নীতি দমন। চোর-বাটপার বেলেঙ্গা রাজনীতির ব্যাপারিদের অপকর্মের নাম দুর্নীতি আর তেনাদের অজাচারকে বলে দেশোদ্ধার। ইদানিং তাদের সত্যপ্রীতি জন্মেছে।

দোষ স্বীকার করলেই মাফ। খোদ খোদারও এত দয়াবান হওয়ার ক্ষমতা নাই। ট্রুথ কমিশনের নামে ফৌজি লিঙ্গ সমাজের আরো ভেতরে ঢূকবে; এতে আর বিষ্ময় কী? ছোটো লাট আনোয়ার চৌধুরী যাবার আগে কেঁদে-কেটে বাঙালির লুঙ্গি ভিজিয়ে ফেললেন। এক ব্লগে দেখলাম এই দেশি ভ্রাতার বিদায়ে ডিজিটাল কান্নার বান বইছে। জিগাইলাম, মহাত্মন, কীসের তরে তব শোক? কয়, উনি বাংলাদেশের বন্ধু।

তাঁর আমলে কত দেশি ভাই বিলাত গেছে জানেন? কারে কি কব? ইংরেজ আমলে এর থেকে বেশি বাঙাল বিলাত গেছে। তাই বলে কি ইংরেজ শাসন জায়েজ? দাস্য মনোবৃত্তি কয় প্রজন্ম গেলে পরে সারে? বিউটেনিস যাবার পর দুইবার এসেছেন। কেন? না ওনার কুকুর রেখে গেছেন, ঐবার তারে দেখতে আইছেন আর এইবার আইছেন নিতে। মানুষ থুইয়া কুকুর প্রীতি মার্কিন জালিয়াতদেরই সাজে। অধমের মনে তখন একখানা জিজ্ঞাসা বেজেছিল।

কোন কুকুর নিতে আসছেন উনি, বাবর না তারেক? কারে তার বেশি দরকার? তিন. কেউ গোস্তাখি নিয়েন না। মেজাজটা এরকমই। যদি বলেন কাঁদেন ক্যান? বলব, কাঁদি না, মুখটাই এরকম। দুঃখে বারায় হোল, লোকে কয় পাগল। আমাদের অবস্থা সেইরকমই।

সেনাশাসনে তো কারো কোনো অসুবিধা হচ্ছে বলে মনে হয় না। এই আমলে ব্যবসায়িরা শ্রেফ দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে রেখে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটে নিল। বাইরের কোম্পানিগুলো নির্বিবাদে মুনাফা লুটে যাচ্ছে। ঢাকা শহরে কি নতুন গাড়ি নামা বন্ধ হয়েছে? মধ্যবিত্তের একটা অংশের উচ্চবিত্তে প্রমোশন কি ঠেকে আছে? ঠেকে আছে ধনীর দুলাল-দুলীলীদের ফুর্তিফাতা? সব চলছে? বাকি সব মফিজদের বদনা হাতে দৌড়াদৌড়িই সার। এসবের মধ্যে সুখে আছে সিবিলরা।

এনাদের কল্যাণেই নব্য মহাজনরা ভিভিআইপি হয় আর ভূমি সংস্কার দাবি করা বিপ্লবীরা মাথার পেছনে গুলি খেয়ে মরে থাকে বাঁধের ওপর। এরা সাম্রাজ্যবাদের রাজনৈতিক দল। রাষ্ট্রের ভেতর তারা আরেক রাষ্ট্র বানিয়ে এখন ফৌজি সংস্কারের পার্টনার হয়ে টেলিভিশন আলো করে পত্রিকার পাতা ভরে বকে যাচ্ছেন। প্রশ্ন হলো, তোরে জিগায় ক্যাডা? তারা যা করার না তা করছেন, যা ভোগ করার না তা ভোগ করছেন। ইডিপাস মাতৃ জননাঙ্গ দর্শন করেছিল বলে প্রায়শ্চিত্ত হিসাবে নিজের চোখ অন্ধ করে ফেলেছিল।

এনারা যে দানব জন্ম দিয়ে সেই দানবকে দিয়ে দেশকে ধর্ষণ করাচ্ছেন, সেই পাপজন্মের প্রায়শ্চিত্ত কী দিয়ে করবেন? পাঁচ. আমাদের মধ্যেও যে সিভিল সোসাইটির মহিমাপ্রীতি নাই, তা নয়। সবাই খারাপ খালি এনারা ভাল, এই ধারণা বেশ চাল্লু। আমাদের জন্য এই গল্পটি বলেছিলেন রাজনারায়ণ বসু। একবার ঠনঠনের মাহারাজাকে এক জোড়া জরির নাগড়াই উপহার দিলেন উলুখাগড়ার নবাব। বংশে তিনিই প্রথম মাহরাজা।

ফলে এসব সামগ্রীর কী ব্যবহার তা মহারাজের জানা ছিল না। বন্ধুমহলে পরামর্শ করেও লাভ হলো না। তো একদিন সেই জরির নাগড়াইয়ের এক পাটি মাথায় পাগড়ির ডগায় বেঁধে আয়নায় দেখলেন, বেশ দেখাচ্ছে। তো হৃষ্টচিত্তে তিনি সেই নাগড়া জুতো বাঁধা পাগড়ি মাথায় করে দরবারে দেখা দিলেন। সকলে ধন্য ধন্য করলো।

অতএব এ বিষয়ে আমাদের নির্বিরোধ মধ্যবিত্তরা নতুন নন। কোথাকার জিনিষ কোথায় রাখতে হয় তার বুঝ আসতে আমাদের আরো বাকি। আমাদের মতি হোক।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।