আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

খাবারের গন্ধে পেট ভরে না (বার্মিংহাম – ১৩)

ইচ্ছেমতো লেখার স্বাধীন খাতা....
আমাদের মতো ছাত্রদের এখানে পার্ট টাইম কাজের প্রধান ক্ষেত্র হচ্ছে, ম্যাকডোনাল্ডস, পিজা হাট, বার্গার কিং এসব ফাস্ট ফুডের দোকান। আর আছে আসদার মতো বিভিন্ন সুপার স্টোর। আসদা আমেরিকান সুপার স্টোর ওয়াল মার্টের ইউকে অংশ। এখানেও প্রচুর বাংলাদেশি, ইন্ডিয়ান ও পাকিস্তানিদের দেখা যায়। ঢাকায় থাকতেই অনুমান করেছিলাম বিদেশে গিয়ে চাকরি খোজার জন্য অনেক কষ্ট হবে।

সেজন্য মুচির কাছ থেকে জুতোর তলায় টায়ার লাগিয়ে নিয়েছিলাম। এখানে আসার পর দেখি বেশির ভাগ মানুষই কেডস পড়ে। ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় কেডস পড়তেই আরাম বেশি। সাধারণ চামড়ার জুতোগুলো ঠাণ্ডায় বরফের মতো হয়ে যায়। অনেক সময় পা জমে গিয়ে কনকন করতে থাকে।

প্রথম প্রথম অবশ্য আমি তলায় টায়ার লাগানো জুতো পড়েই বহু মাইল পথ হেটেছি। তলির কিছু হয়নাই। যদিও জুতার অবস্থা বারোটা বেজে গেছে। বাংলাদেশ থেকে আসা সিলেটিদের সবচেয়ে বেশি দেখা যায় রেস্টুরেন্ট ব্যবসায় বা রেস্টুরেন্টে কাজ করতে। বৃটেন জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অসংখ্য ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্টগুলোর মালিক প্রধানত বাংলাদেশের সিলেটিরা।

তবে রেস্টুরেন্টগুলোতে বেতন কম হয়, কাজও কঠিন। এ কারণে সেগুলোতে ছাত্ররা ঢুকতে চায় না। আমি অবশ্য সপ্তাহে দুই দিন পাওয়া গেলে ঢুকবো। কিন্তু তাও পাচ্ছি না। কয়েক জায়গায় যোগাযোগ করেছিলাম।

তারা জানিয়েছেন, আমি যদি ফুল টাইম কাজ করতে চাই তাহলে নিবে কিন্তু পার্ট টাইম নিবে না। দুপুর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ফুল টাইম রেস্টুরেন্টে কাজ করা মানে পুরোপুরি জীবন নষ্ট। ক্লাস-পড়াশোনা ইত্যাদির জন্য কোনো সময় থাকবে না। আবার অন্য কোনো কাজ খুঁজবো, তাও সম্ভব না। জব সেন্টারের লিস্ট থেকে বহু জবের খোজখবর পাওয়া যায় মাঝে মাঝে বৃটিশ বাংলাদেশীদের সঙ্গে দেখা হয়।

তাদের হিসাবের সঙ্গে আমাদের হিসাব কিছুটা আলাদা। যারা বৃটিশ নাগরিকত্ব পেয়েছে তারা অন্যান্য বৃটিশদের মতোই সব সুযোগ সুবিধা পায়। যদিও ফ্রি পড়াশুনার সুযোগ থাকার পরও অনেকে সম্পূর্ণ নিরক্ষর থাকে। একটা বর্ণও পড়তে পারে না। সরকার থেকে মোটা অংকের বেকার ভাতাও পাওয়া যায়।

মহিলাদের প্রতিবার সন্তান হলে বৃটিশ সরকার ৩ হাজার পাউন্ড (প্রায় চার লাখ টাকা) অনুদান দেয়। এছাড়াও সন্তানের ও মায়ের শিক্ষা-চিকিৎসা ইত্যাদি ফ্রি। ফলে এসব নিয়ে তাদের না ভাবলেও চলে। কিন্তু আমাদের ব্যাপারটা আলাদা। আমরা ফ্রি ডাক্তার দেখাতে পারলেও ওষুধ ঠিকই কিনতে হয়।

বাংলাদেশের তুলনায় এখানে ওষুধের দাম এতো বেশি যে, ঐ টাকায় বাংলাদেশে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখানো যায়। বাংলাদেশ থেকে আনা টাকা ফুরিয়ে আসছে। ফলে বেকার থাকতে আর ভালো লাগছে না। এ কারণে প্রায় প্রতিদিন সকালে বাসা থেকে বের হই। নতুন কোনো জায়গায় যাই।

বড় দোকানগুলোতে সিভি বিলি করি। কয়দিন আগে সিভি নিয়ে গিয়েছিলাম অনেক দুরের এক জায়গায়। কোস্টা কফির ম্যানেজার জানালো তোমরা চাকরি পেলে এখান থেকে বাসায় ফিরে যাবে কিভাবে? আমাদের শিফট যখন শেষ হবে তখন কিন্তু বাস বন্ধ হয়ে যাবে। বললাম, ম্যানেজ করে নিবো। তবু সে রাজি হলো না।

ঘুরতে ঘুরতে বিকাল হয়ে গেল। ক্ষিদাও কম লাগেনি। খাবারের দোকানগুলো থেকে ভেসে আসা মুখরোচক গন্ধে আমার অবস্থা খারাপ। শুনেছিলাম, খাবারের গন্ধে অর্ধেক খাওয়া হয়ে যায়। কিন্তু আমার সেরকম কিছু হলোনা বরং ক্ষিদাটা আরো বাড়তে থাকলো।

নির্মম সত্যটা বুঝতে পারলাম- খাবারের গন্ধে পেট ভরে না। (পুরনো লেখা)
 

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।