আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আইসিটি আইনের ৫৭ ধারা: ‘আইন কানুন সর্বনেশে!’

বাংলাদেশে মাতাল হয়ে অন্যের সম্পত্তিতে অনুপ্রবেশ করে কাউকে উত্যাক্ত করা কিংবা অন্যকোন ভাবে কারো মানহানি করা কিংবা মরণাস্ত্র হাতে সহিংস দাঙ্গায় যোগ দেয়ার অপরাধের চেয়ে এখন অনলাইনে লেখালেখি করা বহুগুন বেশি শাস্তিযোগ্য অপরাধে পরিণত হতে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, অনলাইনে লেখালেখি সংক্রান্ত অভিযোগসমূহকে ‘আমলযোগ্য’ ও ‘অ-জামিনযোগ্য’ করায় এ অপরাধে কাউকে গ্রেফতারের জন্য আদালতের কোন ওয়ারেন্টের প্রয়োজন হবেনা, নিরাপরাধ প্রমাণিত হওয়ার আগ পর্যন্ত কোন জামিনও মিলবে না, এবং লেখালেখি সংক্রান্ত অভিযোগ যত ক্ষুদ্রই হোক, প্রমাণিত হলে এর সর্বোনিম্ন শাস্তি হবে ৭ বছরের জেল এবং অনধিক এক কোটি টাকা জরিমানা! আপনি যদি ওয়েব সাইটে বা অন্য কোন ইলেক্ট্রনিক বিন্যাসে’, অর্থাৎ ব্লগ, ফেসবুক বা ইউটিউবে কখোনও কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করে থাকেন, তাহলে আপনিও পড়তে পারেন এই ‘একুশে আইনের’ ফাঁদে।
২০০৬ সনের অক্টোবরে তৎকালীন বিএনপি সরকার মেয়াদের শেষপ্রান্তে এসে ‘তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন ২০০৬’ নামে একটি আইন করেছিল, যার হাস্যকর ৫৭ ধারাটি নিয়ে আগেও লেখা হয়েছে। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার মেয়াদের ঠিক শেষ প্রান্তে এসে সেই হাস্যকর ধারাটিকেই সংশোধনের নামে আরো ভয়াবহ করে ফেললো।
এটা ঠিক যে ব্লগ, ফেসবুক বা অনলাইনপত্রিকার নামে যা কিছু একটা ছাপিয়ে কাউকে হেনস্তা করা বা দেশে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করা যাদের উদ্দেশ্য, তাদের প্রতিরোধ করার জন্য আইনি কাঠামো সংশোধন, তথ্যপ্রযুক্তির উপর প্রশিক্ষণ ও অবকাঠামোগত সামর্থ্যবৃদ্ধির প্রয়োজন অবশ্যই আছে।

কিন্তু ‘তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন ২০০৬’ –এর ৫৭ ধারায় যে ভাবে অপরাধের ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে, তা এই অপরাধ দমনে ভুমিকা রাখবে না। উপরন্তু এই ধারায় আনীত অভিযোগকে সংশোধন করে একে আমলযোগ্য, অ-জামিনযোগ্য, এবং শাস্তির সর্বোনিম্ন সীমা ৭ বছর করে সাধারণের মধ্যে অনলাইনে মতপ্রকাশের বিষয়ে একটি গণভীতি সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।
আইসিটি আইন ২০০৬-এর ৫৭ (১) ধারায় বলা আছে—
এবার আসুন আইনটির সমস্যাগুলো একটু দেখে নিই—
অপরাধের সংজ্ঞা: কী লিখবো, কী লিখবো না? বাংলাদেশের পেনাল কোডে অপরাধের সংজ্ঞা এমনভাবে দেয়া হয় যেন অপরাধ করার আগেই একজন মানুষ বুঝতে পারে কী কী করলে তা অপরাধ বলে গন্য করা হবে। উদাহরন স্বরূপ পেনাল কোডের ১৭৭ ধারার কথা বলা যেতে পারে, যেখানে ইচ্ছেকৃত ভাবে ভুল তথ্য দেয়া বলতে ঠিক কী বোঝানো হয়েছে, তা স্পষ্ট করে শুধু বলাই হয়নি, দুইটি উদাহরন দিয়ে তার স্বরুপও ব্যাখ্যা করা হয়েছে। কিন্তু আইসিটি আইনের ৫৭ (১) অনুচ্ছেদে অপরাধের যে ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে তা একেবারেই স্পষ্ট নয় এবং অভিযুক্ত হবার পূর্ব পর্যন্ত কোন লেখকের পক্ষেই বোঝা সম্ভব নয় যে কী লিখলে তা অপরাধ বলে গণ্য হতে পারে।


উদোর পিন্ডি বুদোর ঘাড়ে এখানে বয়স নির্বিশেষে এমনকি প্রাপ্তবয়ষ্ক কোন উদো’র ‘নীতিভ্রষ্ট বা অসৎ হইতে উদ্বুদ্ধ’ হওয়ার দায়ও তথ্য প্রকাশকারী বুদো’র উপরে চাপানো হয়েছে। অথচ কী ধরনের তথ্য প্রকাশ কাউকে ‘নীতিভ্রষ্ট বা অসৎ হইতে উদ্বুদ্ধ’ করতে পারে, তা উল্লেখ করে দেয়া হয়নি।
একই ভাবে কোন ধরণের মন্তব্যকে ‘কোন ব্যক্তি বা সংগঠনের বিরুদ্ধে উস্কানী প্রদান’ বলে চিহ্নিত করা হবে, তারও কোন সীমারেখা টানা নেই।
আদৌ কারো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগলো কিনা, অথবা কারো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার আদৌ কোন উদ্দেশ্য লেখকের ছিল কিনা, তাও যাচাই করার সুযোগ রাখা হয়নি। ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে বা করিতে পারে’ শুধু এমন অভিযোগেই শাস্তি প্রদানের সুযোগ রাখা হয়েছে।

অর্থাৎ, অনলাইনে কোন লেখা বা মন্তব্যের মাধ্যমে কাউকে উস্কানী দেয়া বা কারো অনুভূতিতে আঘাত করা যদি আপনার উদ্দেশ্য নাও হয়ে থাকে, এবং কারো অনুভূতি যদি আঘাতপ্রাপ্ত নাও হয়ে থাকে, তথাপি পুলিশ যদি মনে করে যে আপনার অনলাইন মন্তব্য কারো ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করিতে পারে’, সেক্ষেত্রেও আপনাকে ওয়ারেন্ট ছাড়াই গ্রেফতার করে অ-জামিনযোগ্যভাবে আটক করে রাখা সম্ভব। অথচ কথিত অপরাধকর্মের পেছনে অভিযুক্তের আসল উদ্দেশ্য বিচার করা একটি স্বত:সিদ্ধ আইনি চর্চা।
উদাহরন স্বরূপ— যদি প্রমাণিত হয় যে ‘ক’ কোন একটি লেখা সৎ উদ্দেশ্য নিয়ে লেখার পর ‘খ’ তার পত্রিকায় এটিকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করে জনরোষ সৃষ্টির চেষ্টা করেছে, তাহলে উদ্দেশ্য বিচারে এখানে ‘ক’ কে নির্দোষ ও ‘খ’ কে দোষী সাব্যস্ত করার প্রচলন রয়েছে। কিন্তু আইসিটি আইনের ৫৭ ধারায় পুরো দায় ‘ক’ এর উপর চাপানো হয়েছে।
শুধু তাই নয়, অবস্থা দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে, আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন অনলাইন অপরাধ দমনে নিজেদের ব্যার্থতা ঢাকতে গণভীতি সৃষ্টির মাধ্যমে সমস্ত অনলাইন মতপ্রকাশের উপরই এক ধরনের স্বনিয়ন্ত্রন আরোপের চেষ্টা করছেন।

অপরাধের অস্পষ্ট সংজ্ঞায়নের কারণে সাধারণ মানুষ হয়তো মতপ্রকাশে নিরুৎসাহিত হবে, কিন্তু আইপি লুকিয়ে বেনামে মতপ্রকাশ উৎসাহিত হবে, এবং অনলাইন অপরাধ বৃদ্ধি পাবে।
প্রমাণের আগ পর্যন্ত অপরাধী! সাধারণত: কোন ব্যক্তির অপরাধ প্রমাণ হবার আগ পর্যন্ত তাকে নির্দোষ বিবেচনা করার রীতি আছে এবং কাউকে অপরাধী প্রমাণের দায় সাধারণত: অভিযোগকারীর উপরেই বর্তায়। কিন্তু এক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তির নামে যে কোন মিথ্যে তথ্য প্রকাশ করে তাকে হয়রানি করা সম্ভব। কিন্তু অস্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত ধারাগুলো আমলযোগ্য ও অজামিনযোগ্য করে দেওয়ায়, একজন ব্যক্তি দোষী সাব্যস্ত না হওয়া পর্যন্ত তাকে কার্যত: ‘দোষী’ হিসেবেই আটক থাকতে হবে। তথ্যপ্রকাশের কথিত অপরাধকে বিচারের আগেই অজামিনযোগ্য করে না দিয়ে তা বিজ্ঞ আদালতের সন্তুষ্টির ওপর ছেড়ে দেওয়া উচিত ছিল।


‘হাকিম হইয়া হুকুম করে, পুলিশ হইয়া ধরে’ কাউকে গ্রেফতারের জন্য পুলিশকে সাধারনত: আদালতের কাছে অনুমতি নিতে হয়। কিন্তু খুন, খুনের প্রচেষ্টা, ধর্ষণ বা ধর্ষণ প্রচেষ্টার মতন গর্হিত অপরাধকে ‘আমলযোগ্য’ বিবেচনায় আদালতের অনুমতি ছাড়াই পুলিশ সন্দেহভাজন কাউকে গ্রেফতার ও তদন্ত করতে পারে। আইসিটি আইনে অনলাইনে মতপ্রকাশকে ‘আমলযোগ্য’ করা হয়েছে। ফলে একজন পুলিশ কর্মকর্তা নিছক সন্দেহের বশবর্তী হয়ে বা ইচ্ছাকৃতভাবে অনলাইনে মতপ্রকাশের কারণে যে কাউকে ওয়ারেন্ট ছাড়াই গ্রেফতার করে এবং নির্দোষ প্রমাণের আগ পর্যন্ত জামিনবিহীনভাবে আটক রেখে কার্যত: একাধারে ‘জাজ, জুরি ও এক্সিকিউশনারের’ ভূমিকা পালন করতে পারেন। এখানে কোন কবিতা, গল্প বা প্রবন্ধের অর্থ বিচার করে তা 'আমলযোগ্য' অপরাধ কিনা, তার এখতিয়ারও বিজ্ঞ আদালতের বদলে পুলিশের হাতে দেয়া হয়েছে।


লঘু পাপে গুরুদন্ড ইলেক্ট্রনিক বিন্যাসে তথ্য প্রকাশের কারনে কারো কতটুকু মানহানি ঘটলো, বা আইন শৃঙ্খলার কতটুকু অবনতি ঘটার সম্ভাবনা সৃষ্টি হলো, তার মাত্রা পরিমাপের সুযোগ বিজ্ঞ আদালতকে না দিয়ে, এই আইনের ন্যূনতম সাজা সাত বৎসর রাখা হয়েছে। এক্ষেত্রে অতিস্বল্প মাত্রার অপরাধে কেউ দোষী হলে তাকে কমপক্ষে সাত বৎসর জেলে থাকতে হবে, যা লঘু পাপে প্রচন্ড রকমের গুরুদন্ডের সামিল। কয়েকটা উদাহরন দিলে বিষয়টি স্পষ্ট হবে-
বাংলাদেশে আপনি যদি মদ খেয়ে মাতাল হয়ে কারো বাড়িতে প্রবেশ করে (trespass) কাউকে বিরক্ত বা উত্যক্ত করেন, তাহলে পেনালকোডের ৫১০ ধারা অনুযায়ী আপনার শাস্তি হবে সর্বোচ্চ ২৪ ঘন্টার জেল বা ১০ টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ড (বিজ্ঞ আদালতের মতানুসারে সর্বনিম্ন শাস্তি আরো কম হতেই পারে)। কিন্তু আপনি যদি অনলাইনে এমন কিছু প্রকাশ করেন, যা ‘মিথ্যা ও অশ্লীল বা সংশ্লিষ্ট অবস্থা বিবেচনায় [এমনকি প্রাপ্তবয়ষ্ক] কেহ পড়িলে, দেখিলে বা শুনিলে নীতিভ্রষ্ট বা অসৎ হইতে উদ্বুদ্ধ হইতে পারেন’, তাহলে সংশোধিত আইসিটি আইন অনুসারে আপনার শাস্তি হবে সর্বোনিম্ন ৭ বছর থেকে সর্বোচ্চ ১৪ বছরের জেল এবং অনধিক এক কোটি টাকা জরিমানা!
আপনি যদি কোন দাঙ্গা বা রায়টে যোগ দিয়ে সরাসরি কোন সহিংসতায় অংশগ্রহণ করেন, তাহলে আমাদের পেনালকোডের ১৪৭ ধারা অনুসারে আপনার সর্বোচ্চ শাস্তি হবে ২ বছরের জেল। এই দাঙ্গায় আপনি যদি এমন কোন মরণাস্ত্র নিয়ে বের হন যা দ্বারা কাউকে হত্যা করা সম্ভব, তাহলে পেনালকোডের ১৪৮ ধারা অনুসারে আপনার সর্বোচ্চ শাস্তি হবে ৩ বছরের জেল (সর্বনিম্ন শাস্তি বিজ্ঞ আদালত নির্ধারণ করবেন)।

কিন্তু আপনি যদি ‘ওয়েব সাইটে বা অন্য কোন ইলেক্ট্রনিক বিন্যাসে’ এমন কিছু প্রকাশ করেন যা থেকে আইন শৃঙ্খলার অবনতি ঘটার ‘সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়’, তাহলে আইসিটি আইন অনুসারে আপনার শাস্তি হবে সর্বোনিম্ন ৭ বছর থেকে সর্বোচ্চ ১৪ বছরের জেল এবং অনধিক এক কোটি টাকা জরিমানা!
আপনি যদি কোন ভাবে কাউকে চিঠি লিখে বা ফোন করে বা সরাসরি হত্যা করার বা ব্যপক ক্ষতিসাধন করার হুমকী প্রদান করেন, তাহলে পেনালকোডের ৫০৬ ধারা অনুসারে তার শাস্তি সর্বোচ্চ ২ বছর, আর যদি এই হুমকী বেনামে করে থাকেন, তাহলে পেনালকোডের ৫০৭ ধারা অনুসারে শাস্তি সর্বোচ্চ আরো ২ বছর। কিন্তু আপনার অনলাইন কোন লেখাকে কেউ যদি ‘উস্কানী’ হিসেবে নিয়ে থাকে, তাহলে আইসিটি আইন অনুসারে আপনার শাস্তি হবে সর্বোনিম্ন ৭ বছর থেকে সর্বোচ্চ ১৪ বছরের জেল!
অথবা, আপনি যদি মুদ্রিত কোন মাধ্যমে কিছু প্রকাশ করে বা অন্য যে কোন উপায়ে কারো মানহানি করেন বা কুৎসা রটনা, তাহলে পেনালকোডের ৫০০ ধারা অনুসারে আপনার সর্বোচ্চ শাস্তি হবে ২ বছরের জেল (এবং সর্বনিম্ন শাস্তি বিজ্ঞ আদালত নির্ধারণ করবেন)। কিন্তু অনলাইনে আপনার কোন লেখায় কেউ যদি প্রমাণ করে যে তার মানহানি ঘটেছে, তাহলে সংশোধিত আইসিটি আইন অনুসারে আপনার শাস্তি হবে সর্বোনিম্ন ৭ বছর থেকে সর্বোচ্চ ১৪ বছরের জেল এবং অনধিক এক কোটি টাকা জরিমানা!
শুধু তাই নয়, সর্বোনিম্ন শাস্তি নির্ধারণে বিজ্ঞ আদালতের ক্ষমতা সীমিতও করা হয়েছে। এছাড়া, গ্রেফতারের অনুমতি ও জামিন দেয়ার ক্ষমতা রহিত করে আদালতের ক্ষমতা ব্যাপক ভাবে খর্ব করা হয়েছে বলে প্রতীয়মান হতে পারে।
তথ্য অধিকার ও গণতন্ত্র বিরোধী? তথ্য অধিকার আইন ২০০৯ বাক-স্বাধীনতাকে নাগরিকগণের অন্যতম মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেয় এবং জনগণের তথ্য অধিকারকে সরকারী ও বেসরকারী সংস্থার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধি ও দুর্নীতি হ্রাসের জন্য অপরিহার্য হিসেবে চিহ্নিত করে স্ব:প্রণোদিত তথ্যপ্রকাশ (proactive disclosure)-কে উৎসাহিত করে।

কিন্তু তথ্য প্রযুক্তি আইনে তথ্য প্রকাশ সংক্রান্ত অপরাধের অস্পষ্ট সংজ্ঞায়ন, অভিযোগের জামিন অযোগ্যতা ও সর্বনিম্ন শাস্তির অস্বাভাবিক মাত্রা তথ্য অধিকারের মূল চেতনার পরিপন্থী, যা স্ব:প্রণোদিত তথ্যপ্রকাশকে নিরূৎসাহিত করবে এবং মতপ্রকাশে ভীতির সৃষ্টি হবে যা বাকস্বাধীনতা, উন্নয়ন ও গনতন্ত্রকে ব্যহত করবে। এটি একই সাথে বাংলাদেশের সংবিধান, তথ্য প্রযুক্তি নীতিমালা ও সরকারের ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ রুপকল্পের মূল চেতনার পরিপন্থী।
মতপ্রকাশের বিকল্প মাধ্যম আইনটি প্রণয়ন ও সংশোধনে দেশের যে দুইটি বড় রাজনৈতিক দলই যুক্ত ছিল, তাদের সংগঠন ও ক্ষমতায়নে তারুণ্যের প্রতিবাদের অবদান অপরিসীম। স্বৈরশাসন থেকে অনির্বাচিত সরকারের শাসনামল—সব সময়ই তরুণ সমাজ তাদের প্রতিবাদের ভাষা অব্যাহত রেখেছে, বর্তমানে যার অন্যতম মাধ্যম হলো অনলাইনের প্রকাশনা। বিভিন্ন প্রভাবশালী গোষ্ঠীর একচ্ছত্র আধিপত্যথেকে জনমতপ্রকাশের মাধ্যমকে মুক্ত করার ক্ষেত্রেও ব্লগ বা অন্যান্য বিকল্প অনলাইন মাধ্যম অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে।

কিন্তু অন্যান্য নিবর্তনমূলক আইনের মতন এই আইনটিও আগামীতে রাজনৈতিক হয়রানির খড়গ হিসেবে নির্ভিক তরুণদের অ-জামিনযোগ্য ভাবে বন্দী রাখার উপায় হিসেবে ব্যবহৃত হবে বলে আমরা আশংকা করছি।
অসংসদীয় চর্চা
যেখানে সংখ্যাগরিষ্টতার কারণে আইন পাশে সরকারের কোন সমস্যা হয় না, সেখানে এমন একটি জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সংসদে আলোচনার মাধ্যমে আইনটির সংশোধন হবে, এমনটিই ছিল আমাদের প্রত্যাশা। কিন্তু অধিবেশন শুরুর মাত্র তিন সপ্তাহ আগে সংসদের পরিবর্তে অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে আইন সংশোধন হলো। কারণ হিসেবে ২০ শে আগস্ট জারিকৃত এই অধ্যাদেশে বলা হয়েছে— “যেহেতু সংসদ অধিবেশনে নাই এবং রাষ্ট্রপতির নিকট ইহা সন্তোষজনকভাবে প্রতীয়মান হইয়াছে যে, আশু ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য প্রয়োজনীয় পরিস্থিতি বিদ্যমান রহিয়াছে” কিন্তু, পত্রিকার খবর অনুযায়ী, এই অধ্যাদেশ জারীর দুই দিন আগেই, অর্থাৎ ১৮ই আগস্টেই রাষ্ট্রপতি সংসদের ১৯তম অধিবেশনের আহ্বান করেছেন। যেহেতু মাত্র তিন সপ্তাহ পরেই সংসদ অধিবেশন ছিল, তাহলে ঠিক কী জরুরী প্রয়োজনে তড়িঘড়ি করে অধ্যাদেশের মাধ্যমে আইনটি সংশোধন করা হলো তা বোধগম্য নয়।


শুধু তাই নয়, আইসিটি মন্ত্রণালয়ের ওয়েব সাইটে দিন-তারিখের উল্লেখ ছাড়া একটি নোটিশ খুঁজে পেলাম যেখানে ৩০শে এপ্রিল ২০১৩-র মধ্যে আইনটি সর্ম্পকে অনলাইনে মতামত চাওয়া হয়েছিল।

Archive.org বা গুগল ক্যাশে এই তারিখবিহীন নোটিশ ঠিক কবে দেয়া হয়েছিল, তা বোঝা যায়নি। তবে, প্রশ্ন হলো, এপ্রিলেই যদি খসড়াটি জনমতের জন্য প্রস্তুত হয়ে থাকে, তাহলে সংসদের বাজেট অধিবেশনে আইনটি উত্থাপিত হয়নি কেন?
আর, অনলাইনে মতামত দেয়ার বিরুদ্ধে গুরুদন্ড প্রস্তাব করে যে আইন, সেই আইন সম্পর্কেই অনলাইনে মতামত দেয়াটা কি ফাঁদে পা দেয়ার মতন হয়ে যাবে না? মতামত দেয়ার কারণে যদি আবার ৭ বছরের জেল দিয়ে দেয়?
আমাদের প্রত্যাশা সরকারের বোধদয় ঘটবে এবং আমাদের দাবী আসন্ন সংসদ অধিবেশনে আইসিটি আইনের ৫৭ ধারা ও আনীত সংশোধনী বাতিল করা হোক।

সোর্স: http://www.sachalayatan.com/     দেখা হয়েছে ১১ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.