আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দুঃখের বাসা যেন দুঃখীর আঁচলতলে



ছোটকালে জসীম আর আমার মাঝেই প্রতিযোগিতা হতো। রোল নং ১ নিয়ে আমরা বরারবই জোর চেষ্টা চালাতাম। লেখা পড়ায় ভাল ছিল সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু দারীদ্রতা তাকে তার ইচ্ছা গুলোকে প্রসন্ন হতে দেয়নী। খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে তাকে গাভীর জন্য ঘাস কেটে আনতে হতো।

তার পর রুটি নাস্তা খেয়ে পড়তে বসতো। বিকালে স্কুল থেকে এসেই চলে যেতে হতো দুধ বিক্রি করার জন্য। বিক্রির টাকা দিয়ে সবজী আর মাছ নিয়ে বাড়িতে ফিরতো। কৃষক বাবা যতটুকু সম্ভব ছেলেকে পড়ায় সাহায্য করতেন। অংকটা জসীম ভাল পারে না।

তাই প্রাইভেট স্যারের সহায়তা নিতে হবে। কিন্তু অভাবী কৃষক বাবার টাকা নেই। প্রাইভেট স্যাররের কিছুটা করুনা হল। অন্যদের থেকে অর্ধেক টাকা দিয়েই পড়তে পারবে জসীম। একদিন হঠাৎ জসীমের বাবা অসুস্থ হয়ে পড়লেন।

কোন কাজ করতে পারেন না। জসীমের বড় ভাই বিয়ে করে নিজের সংসার দেখে। বাবা মা ভাই বোনের খবরও নেয় না। সামান্য যতটুকু ক্ষেতি করার মত জমি ছিল, সেটা এখন জসীম কেই করতে হয়। লেখা পড়া যেন বন্ধ হয়ে যাবার পথে।

একদিকে সংসার অন্য দিকে তার লেখা পড়া। অনেক কষ্ট করে জসীম এস এস সি পরীক্ষাটা পাস করেছে। পরীক্ষার ফীস যোগিয়েছে ছোট ছেলে মেয়েদের প্রাইভেট পড়িয়ে। বড় বোনের বিয়ের জন্য প্রস্তাব আসছে। অবেশেষে সবার সম্মতিতে বিয়ের আয়োজন করতে হয়েছে।

কিন্তু এই বিয়েতে জসীম খুশি হতে পারে নি। পঙু স্বামীর কাছে বোনকে বিয়ে দিতে হচ্ছে বলে সে খুশি হয়নি। "আপু এই স্বামী তোমার পছন্দ হয়েছে?" প্রশ্নটার উত্তর পায়নি জসীম। বোন তাকে জরীয়ে ধরে শুধু কেঁদেছে। কান্নার ভাষা বুঝতে জসীমের কষ্ট হয়নি।

কিন্তু সে তো কিছু করতে অক্ষম। এত দুঃখের মাঝেও সে সুখি ছিল। কিন্তু স্রষ্টা তার এই সুখ টুকুও হয়তো পছন্দ হয়নি। বাবার মৃত্যুটা তাকে থমকে দিয়েছে। বাক রুদ্ধ করে দিয়েছে।

এতদিন যার ছায়ায় এত কষ্ট মাথায় উঠানোর সাহস পেয়েছে, সেই বাবা ই আজ নেই। ব্যাপারটা যেন জসীম কিছুতেই মানতে পারছে না। না মানলেও তাকে এই রুড় বাস্তবতাকে মেনে নিতে হবে। কষ্ট আর দুঃখের সাথে যুদ্ধ করে সে বড় হয়েছে। সে বুঝতে পেরেছে এই কষ্ট গুলোকে স্বাধারণ ভাবে না নিয়ে উপায় নেই।

কারণ, দুঃখের বাসা যেন দুঃখীর আঁচলতলে


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।