আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নিভৃত সৈনিক-১



'বিশিষ্ট' বইমেলা 'ফরিদ ভাই' হবার কারণে নিয়মিত তাল বেতালের ইমেইল, বাক্সে এসে জমা হয়। এর মাঝে নিয়মিত অনুরোধ হল মাগনা বই পড়ার অনুরোধ আর চেনাজানা লেখকদের ঠিকানা ফুন নম্বরের অনুরোধ। কিন্তু নুড়িপাথরেও টাইম বেটাইমে এক দুটা হীরে জহরত বের হয়ে আসে। সেদিন মেইল পেলাম বেশ অবাক ধরণের। আমি ওমুক কাম না করলে দেশ স্বাধীন হইত না, এইরকম বলার মত মানুষ খুব বেশী নাই।

তবে এক দুজন যারা আছেন তাদের একজনের সন্ধান পাওয়া গেছে। বর্তমানে আমেরিকা প্রবাসী এই নিভৃত সৈনিক চাইছিলেন তার গল্পটি জাদুজালের পাতায় সংরক্ষিত থাকুক। বেশ বড় লেখা, তাই ভাগে ভাগে দেব আশা করি। ওনার গল্পটি আমার মনে হয়েছে বাংলাদেশের লিভিং হিস্ট্রির অংশ হওয়া উচিৎ। কিন্তু কোথায় সাবমিট করা যায় ঠিক নিশ্চিত না।

উপদেশ, মন্তব্যের আমন্ত্রণ রইল। (য়্যুটুবে ৭মার্চ দিয়া খুজন দিতেই arupkর করা একটা ভিডিও এসে পড়ল, কিন্তুক কুশ্চেন হল এইটা কি জাতীয় প্রচারমাধ্যমে সেই টাইমে ছাড়া হইসিল? এট্টু কেউ জানাইলে খুশ হইতাম) ============================= আমার এক ঘনিষ্ট বন্ধু সবসময় ঠাট্টাচ্ছলে বলে থাকে "দোস্ত তোর জন্য আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। তুই যদি সেদিন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ভাষন রেকর্ড করে প্রচার না করতিস, তবে দেশের লোক বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ডাক শুনতেই পেতো না, যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতও হতো না। " তবে আমি বলি ঠিক তা না, বাংলাদেশের স্বাধীনতা নয় মাসের মুক্তিযোদ্ধা মুক্তি সংগ্রামী মানুষের ত্যাগের জন্যই এসেছে। স্বাধীনতা যুদ্ধের পূর্ব থেকেই পট পরিবর্তনের প্রস্তুতি চলছিলো।

এবং এক্ষেত্রে জনমত তৈরীতে তত্‌কালীন রেডিও শুরু থেকেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছিলো। আমি তখন রেডিও পাকিস্তানের ঢাকার অনুষ্ঠান সংগঠকের পদে কার্জরত। আমার দায়িত্ব ছিল রেডিওর বাইরের সকল অনুষ্ঠান রেকর্ড করে প্রচারের ব্যবস্থা করা। আমার সঙ্গে অনুষ্ঠান প্রযোজক হিসাবে কাজ করতো মীর রায়হান। ইলেকশানে জেতার পর শেখ মজিবুর রহমানের পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার কথা, কিন্তু সবাই বুঝতে পারছিল পশ্চিম পাকিস্তানীরা কিছুতেই সেটা হতে দেবে না।

সেটা আঁচ করতে পেরেছিলেন বঙ্গবন্ধু এবং ছাত্র নেতারা। তখন থেকেই অসহযোগ আন্দোলনের ভূমিকা তৈরী হতে শুরু করলো। রেডিও পিছিয়ে থাকলো না। আমরা বলিষ্ঠ পদক্ষেপ হিসাবে "রেডিও পাকিস্তান ঢাকা"-র নাম পরিবর্তণ করে "ঢাকা বেতার কেন্দ্র" রাখলাম, এবং এই নামে প্রচার শুরু করে দিলাম। সে সময় এতবড় পদক্ষেপ নেয়া যে কত সাহসের কাজ ছিলো, এখন তা বুঝতে পারি।

রেডিওর অনুষ্ঠান, বার্তা, এবং প্রকৌশল বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারী, এক কথায় সমগ্র রেডিওর কর্মকর্তা কর্মচারীর সহযোগীতা ছাড়া যা কিছুতেই করা সম্ভব ছিল না। এই সাহসিকতা করার পিছনে বিশেষভাবে যাঁদের নাম করতে হয়, তারা হলেনঃ জনাব আশরাফুজ্জামান খান - পরিচাল জনাব আহমাদুজ্জামান - সহকারী পরিচালক জনাব মবজুলুল হোসেন - সহকারী পরিচালক জনাব মফিজুল হক - সহকারী পরিচালক জনাব সাইফুল বারি - বার্তা পরিচালক জনাব জালালউদ্দীন রুমী - অনুষ্ঠান সংগঠক জনাব আশফাকুর রহমান - অনুষ্ঠান সংগঠক জনাব তাহের সুলতান - অনুষ্ঠান সংগঠক জনাব শামসুল আলম - অনুষ্ঠান সংগঠক জনাব কাজী রফিক - অনুষ্ঠান সংগঠক জনাব বাহরামউদ্দীন সিদ্দিকী - অনুষ্ঠান সংগঠক জনাব মীর রায়হান - অনুষ্ঠান প্রযোজক জনাব ফয়েজ আহমদ চৌধূরী - সহকারী বার্তা পরিচালক এবার আসি ১৯৭১ সালের ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষন প্রসঙ্গে। প্রচার করা হলো বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষন সরাসরি ঢাকা বেতার কেন্দ্র প্রচার করবে তত্‌কালীন রেস কোর্স ময়দান থেকে। সব ব্যাবস্থা নেয়া হলো। পরিচালক আশরাফুজ্জামান খান সব রেডিওর কর্মচারীদের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিলেন।

রেসকোর্স মাঠে মঞ্চের উপরে পরিচালক আশরাফুজ্জামান, সহকারী পরিচালক আহমাদুজ্জামান এবং আমি নাসার আহমেদ চৌধুরী থাকবো। প্রকৌশল বিভাগ থেকে জনাব সামাদ সাহেবের নাম মনে পড়ে। মঞ্চের নিচে জনাব শামসুল আলম, কাজী রফিক, রেডিওর ডিউটি রুমে বাহরামউদ্দিন সিদ্দিকী, সাভার প্রচার কেন্দ্রে প্রকৌশল বিভাগের কর্মচারীর সঙ্গে মীর রায়হান। সকাল থেকেই ঘন ঘন প্রচার করা হচ্ছিল বঙ্গবন্ধুর ভাষন সরাসরি রেসকোর্স মাঠ থেকে প্রচার করা হবে। রেসকোর্স মাঠে লোকে লোকারণ্য, তিল ধারণের জায়গাও ছিল না।

আমরা বেশ আগেই মঞ্চে উঠে মাইক্রোফোন সেট করে ফেললাম। আমি আমার সঙ্গে নিলাম পোর্টেবল ই.এম.আই. টেপ রেকর্ডার। নির্ধারিত সময়ের অনেক পরে বঙ্গবন্ধু মাঠে এলেন। সেই সময় আকাশে প্লেন দেখা গেল। সেই প্লেনে লেঃ জেনারেল টিক্কা খানের আসার কথা, সারা মাঠে উত্তেজনা বিরাজ করছিলো।

বঙ্গবন্ধু মঞ্চে উঠে ভাষন শুরু করতে যাবেন। এমন সময় রেডিওর ডিউটি রুম থেকে ইন্টারকমের মাধ্যমে বাহরাম সিদ্দিকী মঞ্চে আমাদেরকে জানালো যে এই মাত্র মেজর সিদ্দিক সালেক জানিয়েছেন, কোনমতেই শেখ মুজিবুরের ভাষন রেকর্ড করা যাবে না, প্রচার করলে রেডিও উড়িয়ে দেয়া হবে। সঙ্গে সঙ্গে সরাসরি প্রচার বন্ধ করে দেয়া হলো। বঙ্গবন্ধু তার ঐতিহাসিক বর্ক্তিতা শুরু করে দিয়েছেন, আমি আমার সাথে ছোট্ট টেপ রেকর্ডারে রেকর্ডিং শুরু করে দিলাম। সহকারী পরিচালক আহমাদুজ্জামান একটি ছোট্ট চিরকুটে "আর্মি ভাষন প্রচার করতে দিচ্ছে না" লিখে মঞ্চে উপবিষ্ট পরিচালক আশরাফুজ্জামানের হাতে দিলেন।

আশরাফুজ্জামান সাহেব সেটা টাঙ্গাইলের এম.পি.-র (আমার এখন নাম মনে পড়ছে না) হাতে দিলেন। তখন বর্ক্তৃতা অনেকখানি প্রচার হয়ে গেছে। তিনি বঙ্গবন্ধুর হাতে চিরকুটটি পৌছে দিলেন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।