আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমাদের মুসলমানিত্বের মোজেজা এবং কামড়া-কামড়ির রকমফের?

আসুন,সরকারী কর্মচারীদের ঘুষগ্রহণসহ সকল দুর্নীতিবন্ধে সর্বাত্মক সহায়তা করি। কারন সরকারি কর্মচারীরা দেশপরিচালনার হাতিয়ার। তারা যদি না হয় দক্ষ ও সততার অধিকারী, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং বাংণাদেশকে কল্যাণরাষ্ট্রে পরিণত করার কাজটি হবে সুদূরপরাহত।

এই লেখার শিরোনামটা যুক্তিযুক্ত হইলো কিনা জানিনা, তবে আমার মতোন অজ্ঞলোকের পক্ষে ইহার চাহিতে ভালো শিরোনাম রচনা করা সম্ভবপর হইলোনা বলিয়া আমি আপনাদের নিকট করজোরে ক্ষমাপ্রার্থনা করিতেছি। পাঠক, ইহাতে কাহারো গাত্রদাহ শুরু হইয়া থাকিলে আমার করিবার কিছুই নাই বলিয়া আমি দুঃখিত! অবশ্য আমি সবাইকে এইমর্মে আশ্বাস দিতে চাহি যে, আমি কোনো বেকুব নাস্তিক নহি কিংবা ধর্মবিরোধী বা ধর্মনিরপক্ষও নহি।

আমি ফতোয়াবাজ বা গালিবাজও নহি যে, ধর্মের বিষয়ে যোগ্যতা না থাকিলেও ফতোয়া দিয়া বসিবো বা মুসলিমদের গালিগালাজ করিতে বসিয়াছি। তবে একজন সচেতন মুসলিম হিসাবে সরাসরি কুরআন-হাদিস এবং ইসলামী বই-পুস্তক পাঠ করিয়া যাহা শিখিয়াছি এবং বাস্তবে আমাদের মুসলিম ও আলেম ভাইদের অবস্থা-দুরবস্থা দেখিয়া-শুনিয়া ক্ষেপিয়া গিয়া এই প্রবন্ধ লিখিতে বসিলাম আরকি? তাই কেহ ইহাতে আঘাত পাইলে বা দুঃখ পাইলে নিজগুণে ক্ষমা করিয়া দিবেন; কিন্তু দোহাই, আমাকে গালিগালাজ করিবেন না। কারণ আমাদের সংবিধান বাক-স্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের পূর্ণ অধিকার আমাকে দিয়াছে কিন্তু কাহারো মানহানী করার অধিকার কাহাকেও দেয় নাই। এমনকি ব্লগের নীতিমালাও আমাকে এমন লিখনীর সুযোগ করিয়া দিয়াছে। আর ইসলামতো গালিগালাজকে হারাম বলিয়াই ঘোষণা করিয়াছে যদিও অনেক অতি মুসলমান মতের বিরুদ্ধে কোনো লেখা পড়িলেই যুক্তি ছাড়িয়া এমন ভাষায় গালিগালাজ শুরু করিয়া দেন যে, শয়তানও হার মানিয়া পালাইয়া যায় !! তাহাছাড়া, আমার আবার হাইপার টেনশন ও স্ট্রকের ব্যামো আছে কিনা--আপনাদের কোনো আক্কেল আলীর বেআক্কেল গালমন্দ খাইয়া হঠাত অক্কা পাইলে, তাহার দায়ভার কিন্তু আপনাদেরই লইতে হইবে-তাহাও সরাসরি অছিয়ত করিয়া গেলাম।

যাক, আসল কথায় ফিরিয়া আসি। নতুবা আবার আমার এতোসব ভূমিকা শুনিয়া কেহ আমার চৌদ্দগোষ্ঠি উদ্ধার করিতে লাগিয়া গেলে আমি তাহা আদৌ সহ্য করিতে পারিবোনা! তাই আমার ফালতু কথাবার্তা হইতে এক্ষণে আমি বিরত হইলাম এবং আসল আলোচনা শুরু করিলাম। ইসলামে কোনো জবরদস্তি নাই আমাদের নবী সাঃ এমন এক মুশরিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করিয়াছেন যাহারা আদৌ মুসলিম ছিলেন না। তাই ৪০বছর বয়স পূর্ণের আগে তিনি নবী হিসাবে প্রকাশিত হইতে পারেন নাই বলিয়া আপন আত্মীয়দেরও তখন ইসলামের দিকে ডাকিতে পারেন নাই। হাদিসে আছে যে, প্রত্যেকটি শিশুই ইসলামের ফিতরাত বা ন্যাচার বা প্রকৃতির উপর জন্মগ্রহণ করিয়া থাকে।

কিন্তু তাহার মাতাপিতাই তাহাকে ইহুদী, খ্রিষ্টান বা মুসলিম বানাইয়া ফেলে। যদি না আল্লাহ তাহাকে নবী হিসাবে মনোনীত করিতেন, তিনিও কিন্তু তাহার মাতাপিতার ধর্মই গ্রহণ করিতেন, এটাই স্বাভাবিক! কারন পৃথিবীতে বিরোধী পরিবার খুঁজিয়া পাওয়াই মুশকীল? যাহাই হউক, নবী সাঃ নবুয়ত পাইবার পরই প্রথম মুসলিম হিসাবে ইসলামপ্রচার শুরু করিলেন। কিন্তু কাহাকেও তাহার মতের পক্ষে আনিতে কখনোই তিনি জোর-জবরদস্তি করেন নাই। বরঙ তাহার এবং নবমুসলিমদের চরিত্র এবং সদ্ব্যবহার দেখিয়াই সাধারনত কাফির-মুশরিকগন ইসলামগ্রহন করিতে লাগিলেন। ইহাই প্রকৃত ইতিহাস, ইহাই বাস্তবতা।

কিন্তু এখন আমরা কী দেখি? আমরা কি নিজেদের তদ্রূপ পবিত্র চরিত্রগঠন করিতে পারিয়াছি; নাকি নিজেদের শুধরাইবার লক্ষে নিয়মিত আত্মসমালোচনাো করিয়া থাকি ? ইসলাম কি শরীরে ধারণ করিবার কোনো বস্তু! ইসলাম হইলো দৃঢ় আস্থা, বিশ্বাস আর বাস্তব কর্মের অপর নাম। নবী করীম সাঃ নবী হইবার পূর্বে নামাজ-রোজা, হজ্জ, যাকাতের বিধান কিছুই পান নাই বলিয়া তাহা পালন করেন নাই বটে; তবে দলমত-ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে মানবতা বা মানুষের সেবা করিতে তিনি আদৌ পিছুপা হন নাই। নবুয়ত পাইবার পরেও তিনি শুধু কলেমার দাওয়াত প্রদান করিতে করিতে কিংবা ইসলামী আন্দোলনের নামে মানবসেবার দায়িত্ব ভুলিয়া নিজেকে বড় মুসলিম ভাবিয়া সময় কাটান নাই। বরং নবুয়তপূর্ব জীবনের মতো সমান্তরালভাবে মানবতার সেবাও করিয়া গিয়াছেন যেমন বর্তমানে খ্রিষ্টান মিশনারীরা করিয়া থাকে। এমনকি তিনি তাহার সাড়ে তিনহাত শরীরে পোশাকী ইসলাম কায়েমের চেষ্টাও করিয়াছেন বলিয়া ইতিহাসে কোনো তথ্য এই অভাগা ওণ্টোট খুঁজিয়া পান না।

মক্কার শিশু ইসলামের যুগে কিংবা অপূর্ণাঙ্গ ইসলামের জমানায় তিনি এই ধরণের কোনো হাদিসও বলিয়া যান নাই কিংবা এই বিষয়ে অযথা সময়ও নষ্ট করেন নাই। অথচ নবুয়ত পাইবার আগেই সেই অন্ধকার যুগে তিনি আল আমীন (বিশ্বস্ত), আস সাদিক (সত্যবাদী) ইত্যাদি উপাধীর অধিকারী হইয়াছিলেন, যাহা আমরা কল্পনাও করিতে পারি কি? তখন তিনি পোশাক-আশাক, দাঁড়ি-টুপি নিয়া টুঁশব্দও করেন নাই, কিন্তু কেনো তাহা জানেন কি? কারন আল্লাহর তার গড়া এই দুনিয়ায় মহাঠাণ্ডা এবং মহাগরমের পরিবেশে আর বহু সূর্যোদয়-বহু সূর্যাস্তের মাঝখানে নির্দিষ্ট কোনো পোশাকের নমুনা ঠিক করিয়া দেওয়া বেওকুবী বলিয়া মনে করিয়াছেন!! তাহা না হইলে নবী সাঃ আর মক্কার কাফিররা একই পোশাক পরিয়া কবরে চলিয়া যাইতেন? সেইজন্যই ইসলাম কী জিনিস, তাহা তিনি কথায় নহে স্রেফ কাজের মাধ্যমেই বুঝাইয়া দিয়াছেন। কিন্তু আমাদের অবস্থা হইলো গিয়া উল্টা বুঝিলো রাম এর মতোই আরকি!! অসহায়ের সেবা করা আর বিধর্মীর বকরীর দুধ দোহাইয়া দেওয়ার মতো কাজও অবলীলায় তিনি করিয়া দেখাইয়া গিয়াছেন যে, মুসলিম এমনই চরিত্রের হইতে হয়। পোশাকে যে ইসলামের আসল রূপ প্রকাশিত হয়না বরং কাজেই তাহার আসল পরিচয়, তাহা তিনিই আমাদের প্রমাণ দিয়াছেন। তাই বলিতে হয়, ইসলাম শরীরে ধারণ করিবার মতো বস্তু নহে বরং সমাজে, রাষ্ট্রে আচারে-ব্যবহারে প্রমাণ পেশ করিবার ও ধারণ করিবার জিনিস! (দুই) সাড়ে তিনহাত শরীরে ইসলাম কায়েম? আসলে ইসলাম হইলো একটা ধারাবাহিক পদ্ধতির নাম, যাহা আস্তে আস্তে পর্যায়ক্রমে পরিপূর্ণ বিধান হিসাবে আত্মপ্রকাশিত এবং নবী সাঃ এবং মহান সাহাবীদের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হইয়াছে।

২৩ বছরে পর্যায়ক্রমে নাজিল হওয়া এমন পরিপূর্ণ একটা জীবনবিধান কি কাহারও পক্ষে একেবারে এবং একসাথে ধারণ করা কখনোই সম্ভবপর? ইহা কোনো বস্তু বা পোশাক নহে যে, তাহা তাৎক্ষনিকভাবে হাতে ধারণ করিলেই বা গায়ে পরিলেই দায়িত্ব পালন হইয়া গেলো। নবীও তাহা করিতে পারেন নাই, সাহাবীরাও পারেন নাই। এমনকি তাহারা আমরণ নিজেদের আদর্শ হিসাবে ইসলামকে পালন করিতেই চেষ্টা করিয়াছেন এবং নিজেদের পরিপূর্ণ মুসলিম হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করিবারই অব্যাহত প্রচেষ্টা চালাইয়াছেন মাত্র। তবুও কেহই কখনো নিজেকে পরিপূর্ণ মুসলিম হিসাবে দাবী করিবার সাহস প্রদর্শন করেন নাই। হাদিস এবং ইতিহাস হইতে ইহাই জানা যায়।

তাহা হইলে বর্তমান জাহিলিয়াতের যুগেও নিজেকে কেহ কি পরিপূর্ণ মুসলিম হিসাবে দাবী করিতে পারেন নাকি সম্ভবপরও? অথচ আহাম্মক অনেকের মুখেই কতো যে বাহাদুরী শুনিতে পাই। তাহারা নিজেকে সঠিক ইসলামের দাবীদার জাহির করিয়া অন্য আলিম বা মুসলিম কিংবা ইসলামী আন্দোলনকারীকেও ভ্রান্ত, ভণ্ড বা কাহারো দালাল বলিয়া থাকেন এই ভাষায় যে, যাহার সাড়ে তিনহাত শরীরে ইসলাম নাই বা ইসলাম কায়েম করেন নাই তিনি বা তাহারা কিভাবে ইসলাম কায়েম করিবেন? তাহাদের কথা শুনিয়া আমার শুধু হাসি পায় যে, তাহারা কতোবড় বোকা আর অজ্ঞ!! আসলে তাহারা লম্বা কোর্তা, দাঁড়ি-টুপি বা পাগড়ি পরাকেই শুধু পরিপূর্ণ ইসলামপালন বলিয়া ভ্রম করিয়া থাকেন বলিয়া এই নালায়েকের ধারণা। কেননা আমি ইতিহাস হইতে জানিয়াছি যে, আবু জেহেল আর নবী সাঃ, আবুবকর রাঃসহ আরবের সবাই তখন কোর্তাজাতীয় একই লম্বা পোশাক পরিতেন। এখনও তাহাই পরিয়া থাকেন এমনকি মুসলিমদের মতো দাঁড়িও অনেক কাফিরের ছিলো এবং এখনও আছে। তাই বলিয়া আবু জেহেলদের কেহই কিন্তু কখনোই মুসলিম হিসাবে চিহ্নিত করেন নাই!! আমার বড়ই দুঃখ হয়, চারিদিকের বেশুমার মদ-জুয়া, সুদ-ঘুষ, ধর্ষণ, হারাম, অশ্লীলতা আর পাপাচারের বিষাক্ত বাতাসের সমুদ্রে বসবাস করিয়া আমাদের অনেকেই কী না মহা আত্মতৃপ্তিতেই আছেন আর নিজেকে খাটি মুসলিম ভাবিয়া বেশ প্রসাদ লাভ করিতেছেন? আর ফতোয়াবাজী করিয়া ক্ষেত্রবিশেষে জোরে আমিন আর আস্তে আমিন বলা বা নাভীর ওপরে হাতবাঁধা নাকি নাভীর নিচে হাতবাঁধার ঝগড়ায় লিপ্ত হইয়া ভাইয়ে ভাইয়ে রক্তারক্তিও করিয়া থাকেন? নিজেদের পাশেই মানবতার লাশ কিংবা কান্না দেখিয়াও চক্ষু বুঝিয়া অথবা অনাহারে-অর্ধাহারে অপুষ্ট মা-শিশুর কাতরানি কিংবা নারী-শিশুদের ধর্ষণের বিরুদ্ধেও কোনো প্রতিবাদ না করিয়া জীবন কাটাইতেছেন।

বরং নিজেরা একে অন্যের নিন্দা-গীবত গাহিয়া কিংবা শুধু অতীত ইসলামের উজ্জ্বল ইতিহাসের কিচ্ছা রোমন্থন করিয়া আত্মপ্রসাদ লাভ করিয়া যাইতেছেন!! (ধারাবাহিক)

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১০ বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।