আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ছাত্র শিবিরের বিশ্বাসঘাতকতা

অতি দক্ষ মিথ্যুক না হলে সত্যবাদিতা উৎকৃষ্ট পন্থা জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের বর্ষীয়ান নেতারা বিশ্বাস করেন " ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের অখন্ডতা চেয়ে জামায়াতে ইসলামী পূর্ব পাকিস্তান কোনো ভুল করে নি। " ১৯৭১ এ পাকিস্তানের অখন্ডতা রক্ষা ও প্রায় কাফের বাঙালীদের ক্ষীণ মুসলমানিত্ব অক্ষত রাখতে গিয়ে এবং কাফির হিন্দুস্তানের চক্রান্তে প্রাণপ্রিয় পাকস্তানকে রক্ষা করতে তারা দলীয় ভাবে বাঙালি নিধনে নেমেছিলেন। দেশের অধিকাংশ মানুষের রাজনৈতিক আকাঙ্খার সাথে বিরোধিতা করে তারা দেশের জনগণের আকাঙ্খার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করার অপরাধ করেছিলেন এবং সেটা স্বীকার করতেও তারা কুন্ঠিত নন। রাজনৈতিক মতাদর্শ, ব্যক্তিগত বিশ্বাস, দলীয় সিদ্ধান্ত ইতংবিতং বলেও তারা যে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধপক্ষ ছিলেন এ সত্য মিথ্যে হয়ে যাবে না। ১৯৭১ এ তাদের দলীয় মুখপত্র দৈনিক সংগ্রামের পাতায় তাদের বর্ষীয়ান নেতাদের বিভিন্ন রাজনৈতিক বক্তব্য, রাজাকার বাহিনীর কুচকাওয়াজ সমাপ্তির পর আনুষ্ঠানিক ভাবে তাদের দেশের অখন্ডতা রক্ষার সেনানী হিসেবে চিহ্নিত করে জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্র মজলিসের নেতাদের দেওয়া বক্তব্যগুলো ইতিহাসের পাতায় এবং বিভিন্ন গবেষকের ব্যক্তিগত সংগ্রহে রয়ে গেছে।

তারা ইচ্ছা করলেও বিশ্বাসঘাতকতার দায় এড়াতে পারবে না। ১৯৭১ এর নভেম্বর ডিসেম্বরে যখনই দেশের কোনো একটা অঞ্চল মুক্ত হয়েছে, এইসব স্বাধীনতা বিরোধীরা পালিয়েছেন কিংবা আত্মসমর্পন করেছেন কিংবা নিজেরাই প্রাণভয়ে জেলখানায় লুকিয়ে ছিলেন, যারা হাজতে জায়গা পান নি তারা সীমান্ত গলে পালিয়েছেন কিংবা দেশের অন্য অঞ্চলে গিয়ে পরিচয় লুকিয়ে বেঁচে ছিলেন ৬ বছর, বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করে বাংলাদেশের মাটিতে জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক কর্মকান্ড শুরু হওয়ার পর এদের অনেকেই অজ্ঞাতবাস থেকে স্বনামে স্বরূপে ফিরে এসে জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতিতে জড়িত হয়েছেন। স্বাধীনতাবিরোধী হিসেবে ১৯৭২ এর দালাল আইনে তাদের অনেককেই গ্রেফতার করা সম্ভব হয় নি, অনেকেই বিচারের অপেক্ষায় থাকতে থাকতে দায়মুক্তি অধ্যাদেশের বদৌলতা হাজত থেকে মুক্তি পেয়ে কিছুদিন পরেই জামায়াতে ইসলামীর নেতা হয়ে উঠেছেন, সামরিক শাসকদের বদৌলতে এরা নির্বিঘ্নে নিজেদের সংগঠিত করতে সক্ষম হয়েছেন। ব্যপক বাঙালি নিধনের অপরাধবোধ তাদের বিন্দুমাত্র অনুতপ্ত করেছে জামায়াতের কর্মকান্ডে সেটা বিশ্বাস করা কঠিন। তবে বাংলাদেশে বেড়ে ওঠা ছাত্র শিবির দেশের ইতিহাসের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে যেভাবে এইসব স্বাধীনতাবিরোধীদের পক্ষে রাজপথে সন্ত্রাস চালাচ্ছে সেটা এক ধরণের অপরাধ।

"ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়" এ মতবাদে ছাত্রশিবির বিশ্বাসী এমনটা প্রতীয়মান হয় না তাদের কর্মকান্ডে। ব্যক্তির অপরাধের দায় ব্যক্তিকেই নিতে হবে, ন্যায়বিচার ভিত্তিক রাষ্ট্রে প্রতিটি নাগরিকই অপরাধের উপযুক্ত বিচার পাবে, রাষ্ট্র তাদের বিচারের মুখোমুখি করবে- সৎ লোকের শাসন, ইসলামী শাসন এইসব রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়ে রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠা পেতে চাওয়া দলটির নেতা কর্মীরা নিজেরাই তাদের এই রাজনৈতিক অঙ্গীকারে বিশ্বাসী নয়। যেকোনো মূল্যে স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী নেতাদের মুক্তির দাবীতে হরতাল ডেকে, বাসে আগুণ দিয়ে, স্থানীয় মানুষের সম্পদের ক্ষতি করে তারা নিজেদের রাজনৈতিক অঙ্গীকারের প্রতি তাদের অবিশ্বাস প্রতিনিয়ত প্রকাশ করছে। দেশের প্রচলিত বিচার ব্যবস্থার প্রতি তাদের আস্থা নেই , ছাত্র শিবিরের প্রাক্তন নেতাদের অনেকেই দলীয় বৃত্তি পেয়ে ইংল্যান্ডে কিংবা ইউরোপে শরীয়া আইনের উপরে পড়াশোনা করেছেন, তারা বর্তমানে দলের আপাত ধর্মনিরপেক্ষ ফ্রন্টে সক্রিয়, বিভিন্ন মনোমুগ্ধকর নামে এনজিও কিংবা নাগরিক অধিকার ফোরাম খুলে তারা ইসলামের জয়গান গাইছেন, কিন্তু একজন হত্যাকারীর কিংবা হত্যাকারীর সহযোগীর শরীয়া মতে কি বিচার হওয়া উচিত এ বিষয়ে তারা কোনো মন্তব্য করছেন না। ইসলামী শরীয়া আইন বলছে হত্যাকারীর শাস্তি মৃত্যুদন্ড যদি না হত ব্যক্তির পরিবার তাদের ক্ষমা করে।

জামায়াতে ইসলামী ইসলামী শাসনে বিশ্বাসী হিসেবে দাবী করে কখনও বাংলাদেশের জনগণের সামনে ক্ষমা প্রার্থনা করেছে? বাংলাদেশের জনগণ কি তাদের ক্ষমা প্রদর্শণ করেছে? মানবতাবিরোধী অপরাধে সরাসরি সংশ্লিষ্ঠতা, হত্যাকান্ড ও অগ্নি সংযোগে সহযোগিতা এবং সহায়তা দেওয়া, গুম খুন অপহরণ এবং স্বাধীনতাকামী ব্যক্তিদের উপরে বিভিন্ন নির্যাতন চালানো কিংবা সেসব অপরাধে সরাসরি সহযোগিতা দেওয়ার অভিযোগগুলো তারা স্বীকার করেন নি, কিন্তু স্বাধীনতার ৪ দশক পরেও এই যুদ্ধের ক্ষত নিয়ে বেঁচে আছে মানুষ, তারা কি এইসব অপরাধীদের ক্ষমা করেছে? যদি একজন ব্যক্তিও এ অপরাধীদের ক্ষমা করতে অস্বীকার করে তবে শরীয়া আইনের বিচারে এইসব অপরাধীদের কতল করার বিধান আছে। কোরআনের ঘোষণা অস্বীকার করে তারা আসলে নিজেদের কোরাআন ও সুন্নাহের প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের কর্মী হিসেবে দাবী করতে পারে না। ছাত্র শিবির বাংলাদেশের সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করছে এবং সেজন্য তারা অনুতপ্ত না। বর্ষীয়ান নেতাদের রাজনৈতিক বিশ্বাস অনুসরণের কোনো দায় তাদের নেই কিন্তু তারা যেভাবে অন্ধ অনুসরণ করে নিজেদের রাজনৈতিক ভবিষ্যত ধ্বংস করছে সেটা দু:খজনক। বাংলাদেশ সরকার ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে চায় না।

রাষ্ট্রের কর্ণধারদের নিজস্ব বিবেচনায় ধর্মভিত্তিক রাজনীতির অস্থিত্ব প্রয়োজনীয়, কিন্তু চলমান বিচার প্রক্রিয়ার বিরোধিতা করে নিজেদের রাজনৈতিক মৃত্যুর পথটা আরও দ্রুত পেরোতে চাইছে ছাত্রশিবির। ছাত্র শিবিরের বরং এই চলমান বিচার প্রক্রিয়ায় আনন্দিত হওয়া উচিত ছিলো, বিশেষ ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রমকে জামায়াতে ইসলামীর কর্মীদের অভিনন্দিত করা উচিত ছিলো, নিয়মতান্ত্রিক ভাবে জামায়াতে ইসলামীর অতীতের অপরাধের দায়মুক্তির একটা সুযোগ করে দিয়েছে এই ট্রাইব্যুনাল , এখানে বিচার শেষ হওয়ার পর যুদ্ধাপরাধের সাথে সংশ্লিষ্ঠতার দায়মোচন হতো তাদের, তারা আরও সংগঠিত হয়ে নিজেদের রাজনৈতিক শেকড় বিস্তার করতে পারতো। সেসব সুযোগ গ্রহন না করে তারা ব্যক্তির অপরাধকে সামষ্টিক অপরাধের আড়াল দিচ্ছে, নৈরাজ্যে তৈরি করে ব্যক্তির ঘৃণ্য অপরাধকে অস্বীকার করছে, অপরাধীর ন্যায়বিচারের পথে বাধা তৈরি করছে । গত ২ মাসে তারা যেভাবে নৃশংসতার চর্চা করছে তাতে তাদের রাজনৈতিক শক্তির মহড়া হিসেবে দেখানো হলেও মূলত মৃত্যুশষ্যায় চঞ্চল বিভ্রান্ত একদল মানুষ হিসেবেই তারা উপস্থাপিত হচ্ছে জনগণের সামনে। ব্যক্তিগত লাভে ও লোভে জামায়াতে ইসলামীর ঝান্ডার নীচে মাথা গলানো মানুষেরা বাদ দিলে ব্যপক পর্যায়ে জনমানসে জামায়াতে ইসলামীর তেমন প্রভাব নেই।

সাধারণ মানুষ তাদের নেতাদের অপরাধের মাত্রা ও ধরণ সম্পর্কে সচেতন এবং ভুক্তভোগী হিসেবে তারা এসব অপরাধের ন্যায়বিচার দাবী করে। চলমান ট্রাইব্যুনালের বিরোধিতা না করে তারা সক্রিয় সচেতন সমর্থন দিলে সাধারণ ধর্মভীরু মানুষদের কাছে দলের আবেদন বাড়তো নি:সন্দেহে। রাজনৈতিক মুঢ়তায় ৪ দশক আগে যারা দেশের জনগণের আকাঙ্খার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলো, সেই চর্চা এখনও অব্যহত রেখেছে নতুন প্রজন্মের জামায়াত ও শিবির কর্মীরা। তাদের শেষ পর্যন্ত বিশ্বাসঘাতক হিসেবেই বেঁচে থাকতে হবে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.