আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রাজা উজিরের স্বর্গে যাত্রা এবং...

দেখো ওই দিগন্ত সীমানায়, যেখানে মাটিকে চুমু খায়...

পুরোনো আরো একটি গল্প আজ নতুন করে আপনাদের বলবো। গল্পটি হলো... ওস্তাদ আর সাগরেদ এক সঙ্গে ঘুরে বেড়ায়, পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত। ঘুরতে ঘুরতে তারা হাজির হলো এক সবুজ শ্যামল দেশে। আহা !?! তার আকাশে বাতাসে সেকি সৌরভ সুভাস। সাগরেদ তিড়িং-বিড়িং করে নাচতে লাগলো।

ওস্তাদ বললো- এ দেশের মানুষগুলো কতোই না সুখী। যে দেশের আকাশে বাতাসে এতো সৌরভ তারা কি কখনো অসুখী হতে পারে। সাগরেদ সঙ্গে সঙ্গে সায় দিয়ে বললো অবশ্যই অবশ্যই না, তারা সুখী, আলবাত সুখী। ভীষণ মন খারাপ ওস্তাদের আর সাগরেদ খুশী, মহা খুশী। দুপুরের খাবার নিয়ে বাঁধলো যত সব গণ্ডগোল।

সবকিছুই ঘি দিয়ে রান্না করা। বত্রিশ (৩২) জায়গায় ঘুরেও সাধারন খাবার জুটলো না ওস্তাদের কপালে। আর এদিকে সাগরেদের পোয়া-বার অবস্থা। চিন্তায় পড়ে গেলেন ওস্তাদ। অনেক ভেবে চিন্তে ঠিক করলেন দেশটি সম্পর্কে সঠিকভাবে খবর নিতে হবে আগে।

বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যার আগে পেয়েও গেলেন অনেক কিছু। সাগরেদকে বললো- চল এক্ষুণি এ দেশ ছাড়তে হবে। যে দেশে তেল আর ঘি এর দাম এক সে দেশে আর নয়। আমার মনে হয় আমরা ‍"আজব দেশের তাজব রাজার দেশে" এসে গেছি। এখানে বেশীক্ষণ থাকা মানে নিজদের পায়ে নিজেরা কুড়াল মারা।

সাগরেদ কিছুতেই রাজি হচ্ছে না দেশ ছাড়তে। বাধ্য হয়ে ওস্তাদ একাই চলে গেলেন। দিন যায়. মাস যায়.. বছর গড়ায়...। ঘিয়ে ভাজা খাবার খেতে খেতে সাগরেদের শরীর-স্বাস্থ্য হয়ে ওঠে নরম তুলতুলে আর নাদুসনুদুস। হঠাৎ বদলে যেতে থাকে দেশের পরিবেশ।

দেশে দেখা দেয় খাদ্য অভাব দুর্ভিক্ষ। টনক নড়ে তাজব রাজার। ডাকা হলো উজির-নাজির-পাইকপেয়াদা আর রাজ জ্যোতিষীদের। রাজার শেষ ভরসা যারা। মিটিং চললো টানা ৩ দিন ৩ রাত।

৪ দিনের মাথায় এক রাজ জ্যোতিষী জানালো প্রায় ১ বছর ধরে আমাদের দেশে একজন ভিনদেশী বাস করছে। সেই হলো বর্তমান অবস্থার জন্য দায়ী। রাজার হুকুমে ধরে আনা হলো সাগরেদকে। সভা-পরিষদে সিদ্ধান্ত হলো তাকে শূঁলে চড়ানো হবে। রাজ জ্যোতিষী ঠিক করে দিলো সেই মহেন্দ্রক্ষণ।

মহেন্দ্রক্ষণ এসে গেলো। রাজ্যের উৎসুক জনতা হাজির হতে থাকলো শূঁল মঞ্চের চারদিকে। সৌভাগ্যক্রমে সেদিন ওস্তাদ বাড়ী ফিরতে ছিলো আজব দেশের ভিতর দিয়ে। লোক মুখে শুনতে পারলো আজ এক ভিনদেশীকে শূঁলে চড়ানো হবে। বুকের ভিতরটা আনচান করে ওঠলো।

আমার সাগরেদ নয়তো আবার। তিনিও গেলেন শূঁল মঞ্চের কাছে, পিলে চমকে ওঠলো। আরে এতো আমার সাগরেদ। যে করেই হোক তাকে বাঁচাতে হবে। যেই ভাবা সেই কাজ।

চিৎকার করে উঠলো ওস্তাদ, জাঁহাপনা তাকে নয়, আমাকে শূঁলে চড়ান। আমি শাস্ত্র-জ্ঞানে পণ্ডিত, এ দিনে অপেক্ষায় এতোদিন। এই মহেন্দ্রক্ষণে যে শূঁলে চড়বে, সে বিনা হিসাবে স্বর্গে যাবে। হতছাড়া এ অধমকে কখনোই স্বর্গে যেতে দিবেন না। তাজব রাজার মনে স্বর্গে যাবার স্বাদ জেগে উঠলো।

হুংকার দিয়ে বললো এই তুই কি সত্যি কথা বলছিস। ওস্তাদ বললো- জাঁহাপনা কেউ কি বিনা লাভে নিজের জীবনের মায়া ত্যাগ করে মরতে চায়। উজির বললো হুজুর মনে হয় সে সত্যি কথা বলছে, কেউ জীবনের মায়া ত্যাগ করতে পারে না। রাজা বললো- উজির সাহেব আপনি যখন বলছেন আমি ওর কথা বিশ্বাস করলাম। কিন্তু আমার অনেকদিনে শখ স্বর্গে যাওয়ার।

আজ যখন হাতের কাছে সুযোগ আসলো তবে হাত ছাড়া করবো কেন। আর ভালো করেইতো জানেন আপনাকে ছাড়া আমি এক মিনিটও থাকতে পারিনা। এক সঙ্গে আমরা আজ স্বর্গে যাব। ওস্তাদের চালাকি সাগরেদ বুঝতে পেরে সেও চিৎকার করতে লাগলো না আমি স্বর্গে যাবো, স্বর্গে যাবো। তাজব রাজা হুকুম দিলো এ আহাম্মকটাকে সরিয়ে, উজির সাহেবকে আগে শূঁলে চড়া তারপর আমাকে... আর সুযোগ বুঝে ওস্তাদ সাগরেদকে নিয়ে সরে পড়লো তাজব রাজার আজব দেশ থেকে।

(ফুটনোট: বর্তমানে তেলে দাম ১৩৫/- টাকা লিটার, তেল আর ঘিয়ে দাম এক হয়ে যাবে সে দিন আর বেশী দূরে নয়। এ দ্রব্য মূল্য বৃদ্ধির রাজা-উজিরের হাত থেকে সাগরেদ রূপী আমাদের বাঁচাতে কোন ওস্তাদ কি আমরা পাবো?)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.