আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আবুলের টেনশন



খুব টেনশনে পড়ে গেছে আবুল। এতোদিন যা হবার হয়েছে। যা হারাবার হারিয়েছে; শেষ পর্যন্ত এই গুরুত্বপূর্ণ জিনিসটাও যে তাকে হারাতে হবে সে বুঝতেই পারে নি। অবশ্য নিজে নিজে সে কখনোই বিষয়টি বুঝতো না; যদি না মফিজ তাকে ধরিয়ে দিতো। আজ বেনসন খেয়েও তার টেনশন কমছে না।

যদিও এর আগে সে কোনো দিন বিড়ি-সিগারেট খায় নি। এমন জিনিস হারালে মানুষ কতো কিছুই তো করে বসে। কতো কে-ই তো মরে বসে। আর যা-ই হোক আবুল তো মরে নি। বরং লড়ে চলেছে।

সমাধানের জন্য ছুটে চলেছে এখান থেকে সেখানে। ছুটির দিন। অফিস-টফিস নেই। বাসায় বসে গেস্টের মতো রেস্ট নিচ্ছিলাম আর মুরগীর রোস্ট খাচ্ছিলাম। বার্ড ফ্লু আতঙ্কে ডাক্তাররাও মুরগী কিনছেন না।

শুধু সেদ্ধ করে খাওয়ার পাওয়ারফুল গালগল্প মারছেন বিভিন্ন সেমিনারে। আবার বাড়িতে ফিরে তারাই হাঁড়িতে মুরগী তুলছেন না। আপনারা বলবেন এতে আমার সমস্যা কি? আমি বলবো আমার কোনো সমস্যাই না। বরং সুবিধা। কম দামে মুরগী কিনছি আর ধুম করে খাচ্ছি।

হঠাৎ বাসার কলিং বেলটি বেজে উঠলো। খাওয়ার সময় এসব ঝামেলা সহ্য হয় না। তবু উঠে গিয়ে দরজাটা খুললাম। অনেক দিন পর আবুলকে দেখলাম। ওকে দেখেই আমার বিরক্তি কেটে গেলো।

জোর করে ভাত খাওয়ানোর চেষ্টা করলাম। দেখলাম কি যেনো চিন্তায় বিভোর সে। খাওয়াটা সেরে আবুলের মাথা নেড়ে জিজ্ঞেস করলোম, সমস্যা কি? -সমস্যা জটিল, বস। -আমাকে বলা যাবে না? - বলার জন্যই তো এসেছি। - কি রে তোর পকেটে কি? সিগারেট নাকি? তা কবে ধরলি? ছাড়বি কবে? নাকি ছাড়বিই না? - কম কষ্টে তো আর সিগারেট ধরি নি বস।

এমন জিনিস হারালে তোমারও কেমন কেমন লাগতো। - কি হারিয়েছে বল না। আবুলের চোখে জল টুল টুল করতে লাগলো। টিস্যু দিয়ে কিছু জল মুছে নিলো সে। এবার তার দুঃখের কথা বলতে লাগলো।

মেলায় গিয়েছিলো মফিজের সাথে। ফেরার পথে মাথায় পায়খানা করেছিলো এক কালো কাক। স্ব-সম্মানে মুছে নিয়েছিলো আবুল। রাস্তার পাশের মানুষজন মৃদু হাসলেও সে কিছু মনে করেনি। রাস্তার মধ্যেই শুরু হলো বৃষ্টি।

তখন ওরা পা টিপে ধীরে ধীরে হাঁটছিলো মহিলা কলেজের সামনে দিয়ে। ছাত্রীরা ইঁদুরের মতো লাইন ধরে বাসায় ফিরছিলো। মেয়ে দেখলেই আবুলের হার্টবিট বেড়ে যায়। এবারো বাড়লো। ঘটনাটাও ঘটলো।

কাদায় পিছলে কয়েকটা মেয়ের সামনে ধ্রাম করে চিৎপটান। প্যান্টের নিচের অংশ ফটাশ করে গেলো ছিঁড়ে। মেয়েগুলোও বজ্জাতের হাড্ডি। হাসলো হি হি করে। আবুলের গা জ্বলে গেলো ওই হাসিতে।

বাসায় ফিরে প্যান্টটা সেলাই করে নিয়ে আসছিলো। মফিজ এবার তার ঘাড়ে হাত রেখে বললো, দোস্ত প্যান্ট তো খুব খ্যাঁটাখ্যাট সেলাই করলি। যে ইজ্জতটা কাদায় হারালি তা কি খুঁজে পাবি? আবুল ওই রাস্তার কাদায় রাতের আধারে একা একা অনেক খুঁজলো তার ইজ্জত। কিন্তু কিছুতেই খুঁজে পেলো না। আবুলের কান্নার বেগটা এবার বেড়ে গেলো।

আমি ব্যাপারটা বুঝলাম। আবুলটা তো আবুলই রয়ে গেছে। - তোর ইজ্জতটা কোথায় রেখেছিলি বলতো। - কেনো প্যান্টের পকেটে? -ভালো করে মনে কর। - কাদায় পড়ে তোপ্যান্টটাই ছিঁড়লো।

মনে হয় পান্টের পকেট থেকেই ওখানে পড়ে গেছে। বলেই হাহুতাশ করে কাঁদতে লাগলো। আমি বললাম, বাসা থেকে বের হওয়ার সময় কি ইজ্জতটা সাথে নিয়ে বের হয়েছিলি? আবুল মাথা চুলকিয়ে বললো, ঠিক মনে করতে পারছি না। - ভালো করে মনে কর। - মনে তো পড়ছে না।

-ইজ্জত নামের ওই বস্তুটা কি কখানো দেখেছিস? চিন্তায় পড়ে গেলো আবুল। গম্ভীরভাবে বললো, ঠিক মনে আসছে না। যেটা তুই দেখিস নি কোনোদিন সেটা হারালি কিভাবে? - কিন্তু মফিজ্যা যে বললো কাদার সাথে আমার ইজ্জত মিশে গেছে। আমি আবুলের মাথায় হাত বুলিয়ে বললাম, তুই নিশ্চিন্তে বাড়ি যা। আগামীকাল পত্রিকায় একটি হারানো বিজ্ঞপ্তি দিয়ে দেবো।

যদি কোনো সহৃদয় ব্যক্তি পেয়ে থাকেন তো ফিরিয়ে দেবেন। আবুল তো খুশিতে গদগদ। মনে হলো নিমিষেই কেটে গেলো ওর টেনশন। দারুণ খুশি মনে বাসায় ফিরে গেলো সে। আমারও খাওয়ার পরে পেটটা ভারী হয়ে এসেছিলো।

খুব ঘুম ঘুম লাগছিলো। চুপ করে ঘুমিয়ে পড়লাম বিছানায়।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।