আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তোমরা আমায় চিনতে পেরেছো কি? অশ্রুসিক্ত নয়নে শহীদদের স্মরন করছি।

One of the things I keep learning is that the secret of being happy is doing things for other people.

( যে মাটির নীচে ঘুমিয়ে আছে লক্ষ মুক্তি সেনা, দে না,তোরা দে না, সে মাটি আমার অংগে মিশিয়ে দে না। ) ধূসর সময়ের প্রান্তরে প্রান্তরে- গহীন সময়ের আলো আর অন্ধকারে, এক অশ্বথ বটের নীচে আমি শুনি শতাব্দীর নিঃশ্বাস- শুনি নিভৃত কুহকের ডাক,আর দেখি সজল বিলের গাংগচুর জলা হাঁস হৃদয় মন্দিরে খুঁজি চারহাজার বছরের মাটির আঘ্রান- কত সাধু আর তাপসীর প্রান আকুল করা সুধা,হাজার বছরের গান, আজ আমি সেই হ্বদয় মত্থিত সুর আর রাখালির বাঁশীর কথা বলছি- তোমরা আমাকে চিনতে পেরেছো কি? ফাল্গুনের ছায়া মাখা রোদে, ঝরনার চঞ্চলতায়- চক্রবালের নীরব জনপদে- বিলীন পটভূমির ইতিহাসের প্রথম উতস থেকে- মনে পড়ে সেই আর্য আর দ্রাবিড়, আমি আজ সেই খুঁজে ফেরা শৈশবের কথা বলছি- তোমরা আমাকে চিনতে পেরেছো কি? দুহাজার ছয়শত আট সাল আগে, অংগ,ভংগ,মগধের নিরজনে, সুজলা,সুফলা,শশ্য,শ্যামলা,গিরি ,কুন্তলায়, নির্ঝর বহমান নদী আর হ্রদে, পাখীর কলতানে, অবারিত নীলের বিস্তৃত আকাশের ঠিকানায়, জনপদের সেই অবিস্মরনীয় সূর্য্য পরিক্রমায় প্রতিনিয়ত আমার বেড়ে ওঠার কথা বলছি- তোমরা আমাকে চিনতে পেরেছো কি? আমি ছিলাম,রামায়নে,মহাভারতে, যেখানে বিম্বিসারের,অজাতশত্রুর,শাসনের দীপ্তিতে আশ্চর্য্য প্রশান্তিতে ভরিয়ে রেখেছিলো আমার মন, যতিহীন জীবনের সেই প্রানের স্পন্দন, স্ম্বতি আর সহস্র লগনের কথা বলছি, তোমরা আমাকে চিনতে পেরেছো কি? তারপর সহসা একদিন- বুকের উপর ছুটে চলা স্রোতস্বীনি গংগার ঢেউ উন্মত্ত ক্রোধে তেজী অশ্বের লাগাম টেনে দাঁড়িয়ে কেউ ২৩৩৪ বছর আগে-নন্দ রাজ্যের রুপালী জোছনায়, আমার সূর্যনদীর পাড়ে,সূর্যসন্তানেরা ,সূর্যপরিক্রমায়- গেয়েছিলো সেই রামধুনর সাতরংগা বিজয়ের গান আর আমি মহাবিস্ময়ে দেখেছিলাম তোমার ভীতু প্রস্থান- মহাবীর আলেকজান্ডার ,তুমি গুটিয়ে নিলে তোমার চরন- আমার গৌরব,আমার অহংকার ,আমার চির দীপ্তিমান উজ্জ্বলতায় আমি আজ সেই তেজোদীপ্ত বিজয়ের কথা বলছি, তোমরা আমাকে চিনতে পেরেছো কি? তারপর ছায়া ঢাকা, পাখী ঢাকা, শান্ত ,সূর্যে চন্দ্রে সুনিবিড় কেটে যায় কত বছর ,কত যুগ-কত রংগের আবীর, মায়ায় মায়ায় ভালোবাসার সেই পূর্ণ তিমির, মূর্য,গুপ্ত রাজ্যের ইতিকথা,কত তমালের আর হিয়াল মনে পড়ে চন্দ্র গুপ্ত মূর্য,মহান অশোকের পর ৬০৬সাল। মহান শশাংকের পর আসে ধর্মপাল। খিলজি আসে, সালতানাত হয়, আফগান,মুঘল,তূর্কির অধিকার- শের শাহ ছুটে চলে সোনারগা থেকে পেশোয়ার, কত ইট কত সুড়কি,স্মৃতির সেই গ্রান্ড ট্রাংক রোড,আর স্মৃতির মিনার, আমাকে বলা হয়েছিলো- আমি যেন এক পুরো জান্নাত, প্রাচুর্য্যের সমাহার, আজ আমি সেই ঐশর্য্যের কথা বলছি তোমরা আমাকে চিনতে পেরেছো কি? এবার ,সেই ঐশ্চর্য্যের লোভে আসে ধূর্ত শিয়াল,স্বপ্ন হননের ছল, অন্ধ কুটুরে আমার দীপ্তি নিঃশেষিত হয়,কাঁপে আমার অন্চল, বাণিজ্য বেসাতির নামে বিবস্ত্র করে আমার সবুজ আঁচল বিশাল আকাশের নীলিমায় চন্দ্রহরনের সময় সেতো ১৬৭৩ সাল, এক কলংকের তিলক -কলকাতা থেকে মাত্র ৩০ মাইল দূরে চন্দ্রনগরে -ফ্রেন্চ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। শিয়ালের পর আসে হায়েনার দল, ১৬৯০ সাল-শুরু হয় আমার বুকে বৃটিশ ইস্ট ইন্ডিয়ার গ্লানি ।

শুরু হয় আমার অশ্রুপাত, বিষাদের নিরালয় শূন্যে হাহাকার করে প্রান সিরাজ পলাশীতে, আর কাশিম বক্সারে নির্মমভাবে হেরে যান। কাঁদে বাংলা, বিহার ,উড়িষ্যা-এই ছিলো আমার ললাটে আমার দুঃখ, আমার আলো বাতাসে বেড়ে ওঠা- মীর জাফর শব্দের সাথে আমার পরিচয় ঘটে, আজ আমি সেই স্বর্নীল আকাশে, বেদনাবিঁধুর ক্রন্দনভরা মেঘাচ্ছন্ন দিনলিপির কথা বলছি, তোমরা আমাকে চিনতে পেরেছো কি? শতেক বছর পরে আবারো ১৮৫৭ সাল, দাম্ভিক ব্রিটিশ রাজ,চলে শোসনের কূটচাল ভাংগন, ভাংগন,ভাংগনের খেলা সেতো ১৯০৫ সাল। কিন্তু একি কৃষ্টি ,সভ্যতা, হাজার বছরের মিলিত রুপ ,জোয়ার ভাটার টান সূর্য্য ,চন্দ্রের আলো ফারাক হতে পারেনা। এ যে আমারই সন্তান, আবার মিলিত হয় একি মোহনায় ১৯১২ সাল। তবু, আমার নীলিমায় উড়ে দেশী,বিদেশী শকুন- আর নক্ষত্র খচিত হয় কত হাজারো নাম মুক্তির মন্দিরে বলি হতে থাকে কত ক্ষুধিরাম, তেপান্তর ঘটে কত মহান বীর সেনানীর ফাঁসীর মন্চে ঝুলে কত সূর্যসেন,কত সূর্যসন্তান আমি আজ সেই বীরের শোনিত ধারার মর্মন্তুদ অগ্নির কথা বলছি, তোমরা আমাকে চিনতে পেরেছো কি? এরপর হানা দেয় ধর্মের কূটকৌশল, নীল আকাশে অবিরাম গাংগচিলের গোংগানি, আমি আবারো ভাংগনের ক্রন্দন, বিবেদের বিষময় শংকচূড় শব্দশুনি- দ্বিখন্ডিত হই ,আরেকবার সেতো ১৯৪৭ সাল।

এবার রক্তচূষা ব্রিটিশ বেনিয়ার সম্পদ লুন্ঠিত প্রস্থান। ১৯৫৮সালে আমার কলংকিত নাম চাপিয়ে দেয়া হয়, আমি হই ভাগ্য বিড়ম্বিত ইস্ট পাকিস্তান। শূন্য হতে থাকে আজন্মলালিত আমার মাতৃত্বের বুক- সন্তান হারা আমি-শোকে শোকে পাথর হয়ে যাই। প্রতি ইন্চি বর্গমাইল লুন্ঠিত হয়, হানা দেয় বর্গি- স্ফীত চর্বির সারমেয় শাবকের দাঁতালো নখর ৬৮হাজার বর্গমাইলের মাটিতে বিদ্ধ হয়। এরপর আমার শস্য, আমার বসতভাটি,আমার উচ্ছ্বাস, আমার কন্ঠ ,আমার অধিকার ,আমার সুখ, আমার নিঃশ্বাস, আমার স্বপ্ন,আমার আহলাদ, আমার কৃষ্টি,আমার তৃষ্না, আমার সভ্যতা,আমার সংগীত,আমার আরতি, আমার জোছনা, আমার শ্যামলিমা, আমার নদী, আমার ঘাস, আমার হাসি, আমার তিথী, আমার জীবন,আমার বেড়ে ওঠা, আমার সাচ্ছন্দ্য, আমার মৃত্তি, আমার জল ,আমার পাঠাঘার,আমার শিল্প,তিলে তিলে লুন্ঠিত হয়।

আজ আমি সেই জুলুমের ,নিপীড়নের ,নির্যাতনের, বন্চনার,শোষনের,নিস্পেশনের,ছলনার,কথা বলছি তোমরা আমাকে চিনতে পেরেছো কি? তারপর আমি দেখলাম- বুকে আমার বয়ে চলেছে অবিরাম রক্তগংগা, রক্তের পদ্মা ,মেঘনা,যমুনা,কুশিয়ারা ,আড়িয়াল খা, লাশের ভরা নদী, বিরান মাঠ, মৃতের অরন্যে লাশের পাহাড়, খুনের জোছনা-চারপাশে নিদারুন নিস্তব্ধতা আমার সন্তানের লাশের গন্ধে ভারী হলো আমার নিঃশ্বাস। ১৯৭১ সালের মার্চ থেকে ডিসেম্বর- স্বজন হারানো দুঃখের পালা। মাতার সন্তান হারানো দুঃখ, কিন্তু এতুটুকু ভাংগেনি আমার বিশ্বাস, আহা ,সেদিন বিজয়ের সেই লগনে আবার আমার নব জন্ম প্রাপ্তি, শকুন,হায়েনা, ধূর্ত, নরপিশাচের কবল থেকে আমার মহা মুক্তি। আমি হলাম ধরনীর এক বীর প্রসুতি মা, মায়ের জন্য জীবন দেয়া রক্তবীজের সেই সব সূর্যসন্তান, কোথায়- দোয়েলের সুরে,রাখালীর বাঁশীতে,নৌকার পালে, আম্র মুকুলে? নক্ষাত্রোলিকত আকাশে আকাশে-সোঁধা মাটির সবুজ শ্যামলিমায়? আজ আমি সেই হারিয়ে যাওয়া চির দীপ্তিমান নক্ষত্রদের কথা বলছি- তোমরা আমাকে চিনতে পেরেছো কি? না,না পারোনি, তোমরা আমাকে এতুটুকু চিনতে পারোনি? আমার দুঃখ, আমাকে চেনার সেই সূর্যসন্তানেরা আর নেই । ওরা পরম শান্তিতে আজ আমার বুকে- ঘুমিয়ে আছে, ঘুমিয়ে আছে, ঘুমিয়ে আছে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।