বন্যার জলে বহরমপুর ভাসছে, মেদিনীপুর খরার কবলে,
দু জন মৃত পুজোর ভীড়ের চাপে, দু’শ জন অনাহারে,
নতুন একটা আর্যুবেদীক বড়ি পেটের ক্ষুধা দিব্ব্যি ভুলিয়ে দেয়,
আকাশ থেকে নিয়ন পেপসি ডাকে জেনারেসন নেক্সট বেচতে চায়।
-অঞ্জণ দত্ত ।
অন্ধকারের বাতি জ্বালিয়ে বসে আছে সময়ের দেবতা। কোথাও এতটুকু আলোর আভাস মূহুতেই টেনে শুষে নিংড়ে নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে আঁধারের সাম্রাজ্য। দিবাকরের শেষ অস্তমিত হবার সাথে সাথে মানুষ তলিয়ে গেছে তমাশায়।
কুহক আর ধুম্রজাল। আলেয়া আর মায়া। প্রমানের চেয়ে বড় বিশ্বাস। আর বিশ্বাসের চেয়ে বড় নরক যন্ত্রণা। আজ দেবদূতের আহ্বানে আমরা একত্র হবার প্রচেষ্ঠায়।
হাত তুলব আকাশপানে। কিন্তু আকাশ কই? আমার ভূমিই বা কই? আর কেউ কি আছে? আমি কাউকেই দেখছি না। মাঝে মাঝে মানুষের আর্তনাদ শুনতে পাই। পরক্ষণেই তা মিথ্যার কুয়াশায় তলিয়ে যায়। সবাই মৃত।
সবাই না সব। কিন্তু হৃদয়ের অতল ধমনীতে একটুখানি রক্তের ধারা এ মৃত জগতের এক
ক্ষুদ্র অন্ধ গলিতে আমার প্রানের শেষ ধ্বনি তুলছে প্রতিক্ষনে। আমি শান্ত হতে পারছি না, জড় হতে পারছি না, শেষ নিশ্বাঃস ত্যাগ করতে পারছি না। তাই প্রচন্ড আর প্রবল ইচ্ছার আকাঙ্খায় ও নরকের শয়তানের কাছে বেচতে পারছি না আত্মা। আমার বেঁচে থাকাটাই আমায় কষ্ট দিচ্ছে।
জীবন্ত দগ্ধ করছে। আর আমার নিশ্বাস প্রতি মুহূর্তে বার্তা পাঠাচ্ছে সারা পৃথিবীতে অন্তত একজন জীবিত মানুষের জন্য।
আজ কিছু গল্প করবো। একটা জেনারেশনের গল্প। সময়ের গল্প।
একটা সাংস্কৃতির গল্প। এই গল্পটা তাদের নিয়ে যাদের বয়স আমার মত। আমার বয়স ২৩ বছর দুইমাস তিনদিন। এই বয়সের কাছ দিয়ে যাদের ঘোরাফেরা তাদের গল্প। তাদের অন্ধ ছোটার গল্প।
তাদের শুধু হারানোর গল্প। তাদের অপরাধী হবার গল্প। সংস্কৃতি ভঙ্গের অপরাধ। যে অপরাধ তারা করেনি। যে ছোটার কথা তারা ভাবেনি।
ভাবার অবকাশ পায়নি। তার আগেই তাদের ছুটতে বলা হয়েছে। বলা হয়েছে- ছোট। সে লাগামহীন ঘোড়ার মত ছুটতে শুরু করেছে। যে ছুটতে চায়নি।
যে চারপাশে তাকাতে চেয়েছে। তাদের চোখে ঠুলি বেঁধে কলুর বলদের মত চাপকানো শুরু করা হয়েছে। সমাজ সহস্র কন্ঠে তার তিরষ্কার শুরু করেছে। তাই সে ছুটেছে। সবচেয়ে বড় কথা এ গল্প তাদের একা হবার, তাদের নিঃম্ব হবার।
প্রানের স্পন্দন থেকেও চরম নিস্পন্দ থাকার গল্প।
আড্ডার মাঝে স্ববিরোধী কথা বলার জন্য আমি বিখ্যাত। আবার সে কাজটাই করতে হচ্ছে আমায়। আমার জেনারেশনের প্রাপ্তির সংখ্যাটা যে কোন সময়ের চেয়ে অনেক বেশি। so fast।
আইষ্টাইনের ল ব্রেক করে আলোর চে অনেক দ্রুত গতিতে চলি আমরা। তৃতীয় বিশ্বের একটা অজ পাঁড়াগা দেশে চাইলেই এখন মুঠোয় ভরে দেখতে পারি ব্রিটনি স্পিয়ার্সের কোমর। খবরের কাগজের জন্য সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়না। সে পাওয়া যায় রাত্রি বারোটাতেই। প্রতি মাসে এ্যড হয় cpu parts ।
কোন অজানা বিষয় জানতে মুহূর্তেই সার্চ দেই মুঠোফোনের গুগলে। লেটেষ্ট সিনেমা বা বেষ্ট সেলার বই কোনটার জন্যই বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হয় না। we the boss! We the dj!
But what we gets?
আমরা কি মুহূর্তকাল থেমে আমাদের প্রিয় বন্ধুকে বুঝতে চাই? পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারি? যদি পারি, তবে তাকে অধস্তন করার, ব্যবহার করার মানুষিকতা কেন? যদি প্রিয় মানুষটির প্রতিই এক অপার্থিব আকর্ষণ হয় তবে চোখ আর হৃদয় অপলক কি খোঁজে আশপাশ? নিজের মাঝে এত সুপ্রিজম, হিরোইজম কেন সবার? আমি ঁহরপ এই যে মানুষিকতা তার সাম্রাজ্যেও প্রতিষ্ঠিত হয়ে দেখতে পাই- একা, চরম একাকীত্ব, | যদি নাই হয় তবে কি প্রয়োজন নিকিতার? কি প্রয়োজন জল আর ঘাসের? আচ্ছা আপনি নাই বা জড়িয়েছেন এগুলোর সাথে আপনাকে, তবে আপনার লক্ষ্য কি- পড়া, অধ্যাবসায়? কিন্তু কেন - সার্টিফিকেট, স্কলারশীপ? Ultimate target – the money. But after that what’s you get.
নিজের জন্য একটা দিন বাঁচলাম আর কই? মনে করতে পারিনা শেষ সূর্যদ্বয়ের কথা,শেষ বৃষ্টিতে ভিজে দামাল কিশোরের মত নাচবার আনন্দ। ঘাসে খোলা পায়ে হেঁটে একটা পুরোমাঠ পাড়ি দেয়া সে তো গল্প। চিৎ হয়ে শুয়ে আকাশ দেখাটা একটা ¯^cœ| অলসভাবে অজস্র তারা গোনাটা।
অকারনে কাউকে ডেকে বসিয়ে তার গল্প শোনাটা। কই সে সময়? সব সময় তো বিক্রি হয়ে গেছে। নিজের সবটা সময় একটা ছকে বাঁধা সিস্টেম। সব ডাটা দেয়া আছে। ওভাবেই কাজ করতে হবে।
অন্যথা হলেই.. সে চিন্তাটা সম্ভব নয়। একটা রোবটের সাথে তবে পার্থক্যটা থাকলো কোথায়? বড়জোড় বলা যায় সাইবার্গ( মানুষের মস্তিষ্কে সিপিইউ ট্রান্সফার করা রোবট:কল্পিত। ) আর আমার এই কথাগুলো বলাটা চরম পাগলামী। why u look back?
কিন্তু আমাদের এই দাসত্ব কার জন্য? নিজের তো নয়। এই যে এত বিলাস, নেট ভরা ডাটা আর ডিসের হাজার চ্যানেল।
কিন্তু সময়গুলো কাটে কই? এমন স্মৃতি কই আমাদের যা হৃদয় মনকে প্রবল ভাবে নাচিয়েছে। পা ফসকালেই মৃত্যু জেনেও যে যুবক যাবে এভারেষ্ট পদানত করতে সে কই? কই সে কিশোর, অল্প পুঁজি পকেটে করে একটা সাইকেল নিয়ে যে বেরিয়ে পড়বে দেশ ঘুরতে? কোথায় সে যৌবন যে অন্যায়ের সাথে আপোষহীন সংগ্রামে লড়ে যাবে আমৃত্যু?
আছে তো শুধু ভয়। এই বুঝি সব হারাতে হবে। কিন্তু কেন? আমরা কি এই চাই?
আমাদের চাওয়ার মূল্য নেই । আমাদের পথ বাতলে দিচ্ছে আমাদের পরিবার।
যে পরিবার সমাজের দৃষ্টিভঙ্গীর সাথে সম্পর্কযুক্ত ক্ষুদ্র অঙ্গ। সমাজ আমাদের জন্য একটা সহজ রাস্তা তৈরী করে দিয়েছে। সে রাস্তা আমাদের নিয়ে যাচ্ছে বিশ্বায়নের পথে। সেই বিশ্বায়ন যার কাছে সব কিছুই পন্য। এমনকিছু নেই যা বিক্রিযোগ্য নয়।
আমরা সবাই বিক্রেতা আবার আমরাই ক্রেতা। মাঝখানদিয়ে আমরা প্রয়োজনীয় এবং প্রয়োজনহীন। ব্যবহৃত এবং শোষিত। ব্যক্তিসাত্বন্ত্র, আবেগ আর নীতিবোধ মূল্যহীন। আমাদের দোষ দেয়া হচ্ছে আমরা আমাদের সংস্কৃতি নষ্ট করছি।
কিন্তু যারা বলছে তাদের সমাজই আমাদের সে পথে ঠেলে দিয়েছে। আমরা দেহের বিলাসের জন্য সব বিক্রি শিখে গেছি। সেও এই সমাজই আমাদের জোর করে শেখাচ্ছে। কিন্তু অর্থ, বিলাস সব প্রাপ্তির পর আমাদের গ্রাস করছে হতাশা, ক্লান্তি, একাকীত্ব। আমাদের আপন মানুষগুলো আমাদের থেকে দূরে চলে যাচ্ছে।
আর অনেকে এই গতির সাথে দৌড়াতে না পেরে বসে পড়ছে রোড আইল্যান্ডে। এই যে অনিশ্চয়তা, অপ্রাপ্তি, হতাশা, ক্লান্তি, একাকীত্ব এই নিয়ে যদি কেউ নেশার জগতে ডুব দেয় তবে কি তাকে খুব বেশি দোষ দেয়া যাবে। কিন্তু আমাদের সমাজ যে অক্ষম মানুষটাকে তৈরী করছে, তার জন্যই তৈরী রেখেছে অপবাদের হাজার বুলেট। এই অন্ধকারে আমরা কি করবো?
আপনার যা ইচ্ছা করেন। আমি আর দৌড়াতে প্রস্তুত নই।
কলমের আঁচড়ে ইচ্ছা করলেই হাজারো পথ দেখানো যায়। কিন্তু তা অকার্যকর। তাই আপনার যা ইচ্ছা করেন। আমি বসে পড়বো। পারলে উল্টোদিকে দৌড় দেব।
ফ্রান্সের নষ্ট ছেলেরা একদিন ফ্রান্স কে রক্ষা করেছিল। দেখি, বিশ্বায়নের এই অন্ধ দৌড়ে আমাদের জেনারেশনটাকে বাঁচানো যায় কি না? হয়তো আবার আমাকে পথে আনা হবে। তবু থেমে পড়বো। আমাকে দেখে আরেকজন থামবে বলে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।