আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নতুন আমল পার করছি পুরনো শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে - ১

হয়তো আমি কোন কিছু সম্পর্কে নিশ্চিত নই

একটি নব্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত দেশকে প্রায় সব সময়েই শূন্য থেকে শুরু করতে হয়। পূর্ববতী শাসক বা শাসনব্যবস্থা নতুন করে গড়ে ওঠা দেশটির জন্য ইতিবাচক কোনোকিছু ইচ্ছাকৃতভাবে রেখে যেতে চায় যায় না। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা ঘটেছে। বিদেশি শাসনের ধারাবাহিকতায় বৃটিশদের কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পাকিস্তান আমলের বাংলাদেশ যা কিছু পেয়েছে, সার্বিক অর্থে তাকে কোনোভাবেই ইতিবাচক বলা যাবে না। পাকিস্তান থেকে স্বাধীন হওয়ার পর নতুন বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও একই কথা বলা চলে।

কিন্তু একটি ক্ষেত্রে বিশেষভাবে লক্ষণীয় যে, পাকিস্তান আমলে যেমন বাংলাদেশকে পুরনো বৃটিশ শিক্ষাব্যবস্থাকে গ্রহণ করে নিতে হয়েছিলো, তেমনি স্বাধীন হওয়ার পর বর্তমানেও বাংলাদেশকে সেই পুরনো শিক্ষাব্যবস্থা নিয়েই চলতে হচ্ছে। বৃটিশদের তৈরি করা শিক্ষাব্যবস্থা বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক না নেতিবাচক, সে বিষয়ে আলোচনা বর্তমান সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে অনেকখানিই নিরর্থক। কারণ বৃটিশরা যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে ওই শিক্ষাব্যবস্থা বাংলাদেশসহ তৎকালীন ভারতীয় উপমহাদেশে চালু করেছিলো, তা ছিলো পুরোপুরি তাদের উদ্দেশ্য সাধনের জন্য। তাছাড়া সেই সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে এ ধরনের শিক্ষাব্যবস্থাকে আধুনিক বলা গেলেও বর্তমান সময়ে তা কতোটা উপযোগী, সেটাও বিচার্য। ক্রমাগত পরিবর্তিত না হলে কোনো শিক্ষাব্যবস্থা একটি দেশের জন্য ইতিবাচক ফল বয়ে আনতে পারে না।

কিন্তু কিছু অবকাঠামোগত ও কৌশলগত পরিবর্তন ছাড়া বাংলাদেশে এখনো বৃটিশ ধাঁচের সেই একই শিক্ষাব্যবস্থা বর্তমান। সাম্প্রতিক সময়ে সেসিপ, প্রাথমিক শিক্ষার বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পও আসলে বৃটিশ ধাঁচের মানসিকতার মাধ্যমেই পরিচালিত হচ্ছে। ফলে শিক্ষার নতুন নতুন লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য দিন দিন আমাদের শিক্ষানীতি বা শিক্ষা কমিশন রিপোর্টে যুক্ত হলেও কার্যত আড়াইশ বছরের পুরনো বৃটিশ মানসিকতায় গড়ে তুলছি নিজেদের। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর নতুন করে শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলার কাজ শুরু হয়েছিলো। সে জন্য প্রথমেই গঠিত হয়েছিলো একটি নতুন শিক্ষা কমিশন।

ড. কুদরাত-এ-খুদার নেতৃত্বে সেই কমিশন তৎকালীন সময়োপযোগী একটি প্রস্তাব সরকারের কাছে পেশ করলেও রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কারণে সেটি আলোর মুখ দেখেনি। এরপর প্রায় প্রতিটি সরকারই তাদের মতো করে এবং তাদের পছন্দসই ব্যক্তিদের নিয়ে শিক্ষা কমিশন গঠন করেছে এবং সেখানে তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য প্রতিফলিত করার চেষ্টা চালিয়েছে। যদিও পরের প্রতিটি শিক্ষা কমিশনই ভূমিকা ও প্রারম্ভিক আলোচনায় কুদরাত-এ-খুদা কমিশনের আলোকে তাদের রিপোর্ট প্রণয়নের কথা উল্লেখ করেছে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সেগুলো কুদরাত-এ-খুদা কমিশনের চেতনা থেকে অনেক দূরে অবস্থান করেছে। রাজনৈতিক ব্যবস্থায় ক্রমাগত স্থিতিহীনতা ও অস্থিতিশীলতার কারণে কোনো সরকারই তাদের শিক্ষানীতি চূড়ান্তরূপে বাস্তবায়ন করতে পারেনি। একটি সর্বজনীন শিক্ষানীতি না থাকার কারণে স্বাধীনতার কয়েক দশক পরও স্থিতিশীল কোনো শিক্ষাব্যবস্থা আমরা পাইনি।

ফলে শিক্ষাব্যবস্থা আধুনিকীকরণ, সময়োপযোগী ও মানসম্পন্ন করার নামে বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা-নীরিক্ষা চলছে প্রায় সবসময়ই। উন্নত দেশগুলোর আলোকেও বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা পরিচালিত করার প্রয়াসও বিভিন্ন সময়ে লক্ষ্য করা গেছে। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন জ্ঞান-বিজ্ঞানে সমৃদ্ধ ওইসব দেশের শিক্ষাব্যবস্থার বিভিন্ন পদ্ধতি আমাদের দেশের অর্থনীতি-সমাজ বাস্তবতার নিরিখে কতোটুকু উপযোগী হবে, তা বিবেচনা না করেই খেয়ালখুশিমতো পদ্ধতি চালু করার রেওয়াজও স¤প্রতি শুরু হয়েছে। ফলে স¤প্রতি সময়ে বাংলাদেশের শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে জোরেসোরে। শিক্ষার প্রাথমিক লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে জ্ঞান অর্জন ও জীবিকা অর্জন।

এই দুটি পরিপূরক বিষয়ের মধ্যে একদিকে বাদ দিলে বর্তমান বাস্তবতায় অন্যটি মূল্যহীন হয়ে পড়ে। কিন্তু বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা পর্যালোচনা করে দেখলে দেখা যাবে, দুটোর কোনোটিই এখানে সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে না। জ্ঞান অর্জন শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য থাকলেও শিক্ষার্থীরা কতোটুকু জ্ঞান অর্জন করতে পারছে, তা যেমন প্রশ্নসাপেক্ষ; তেমনি প্রশ্নসাপেক্ষ জীবিকা অর্জনের জন্য শিক্ষাব্যবস্থার প্রয়োগকৃত কৌশল। (একটি অ্যাসাইনমেন্টের অংশ হিসেবে এই লেখাটি তৈরি করা হয়েছিলো। পরবর্তীতে তার কিছু অংশ ছাপা হয়েছিলো পাঞ্জেরী শিক্ষা সংবাদ-এ, আমার আসল নামে।

তবে বর্তমান লেখাটি অনেকটাই সম্পাদিত। আগে প্রকাশিত লেখার সাথে কোথাও কোথাও দ্বিমতও থাকতে পারে। )

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৬ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.