আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মুখের উপর ঘুষখোর বলায় শান্তি আছে। ট্রাই করে দেখতে পারেন।

এখানে পিঁপড়ার কামড় ফ্রি!! গতকাল গত হওয়া নানীজানকে কবরে শুইয়ে দিয়ে বাড়িতে সবাইকে সান্তনা দিয়ে চোখে জল আর ঠোটে হাসি মাখিয়ে ফিরব যখন প্রয়োজনের তাগিদে ঢাকায় তখন বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা। ঢাকার উদ্দেশ্যে চট্রগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা মহানগর গোধূলিই ভরসা। ট্রেন ব্রাহ্মনবাড়িয়া স্টেশন থেকে ছাড়ে সন্ধ্যা ৭টায়। কোন মতে স্টেশনে পৌছাতেই ঘড়িতে দেখলাম ৭টা ৩৫ বাজে। তখন স্টেশনে দাঁড়ানো গাড়িতেই চড়ে বসলাম আমি আর খালাতভাই আজিজুল।

টিকেট কাটার সময় যেহেতু হাতে নেই তাই ভাবলাম ট্রেনের ভেতরেই কেটে নিব। দাড়ানোর জায়গা মিলল টয়লেটের পাশে দরজ়ার এপারে। ঝিকঝিকিয়ে ট্রেন নরসিংদী পৌছাতেই বিশাল বপুর অধিকারি টিটি মহোদয়ের আগমন। চেহারায় স্পষ্ট সাহেবি ভাব। আমার পাশে দাঁড়ানো অনেকেই টিকেট কাটেননি।

তাদের দেখলাম ৫০-১০০টাকা করে মহোদয়ের হাতে তুলে দিতে। জানতে পারলাম যেহেতু তারা কমলাপুর নামবেন তাই বিমানবন্দর স্টেশন থেকে তাদের জন্য টিকেটের ব্যবস্থা করা হবে। সে দায়িত্ব টিটি মহোদয়েরই। আমার টিকেট দেখতে চাইলে বললাম আমার জন্য দুইটা টিকেট কাটেন। তিনি পকেটের মোবাইল খুলে ২গুনন ১৪০দিয়ে বের করলেন ২৮০টাকা দিতে হবে আমাকে।

আমি তার হাতে ৫০০টাকার নোট দিতেই তিনি কি যেন হিসেব কষলেন এবং পরক্ষনেই আমার হাতে ৩৫০টাকা ধরিয়ে দিয়ে বললেন আপনার দুইটা টিকেট বিমানবন্দর থেকে দেয়া হবে। আমি তাকে বললাম আমার তো ২৮০টাকা লাগার কথা আপনি রাখলেন ১৫০টাকা,কেন? তার উত্তর- আপনাকে সরকারি খাতায় টিকেট কাটালে ২৮০টাকা লাগত,বিমানবন্দর থেকে ম্যানেজ করে দিব তাই ১৫০টাকা রাখলাম। পরক্ষণেই তার সাথে আমার বাকযুদ্ধ শুরু। আমার কথা হচ্ছে যেহেতু আমি ভ্রমণ করছি বাংলাদেশ রেলে তাই আমার পকেটের বের হয়ে যাওয়া টাকা সরকারের কাছেই পৌছানো উচিত আপনার পকেটে নয়। তাই আমার জন্য লিগ্যালি ২টা টিকেট কাটান।

তিনি খুব বিরক্ত মুখে টেকেট কেটে আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললেন বোকা ছেলে লাগত ১৫০টাকা এখন গেল ২৮০টাকা। মুখের ভাবে স্পষ্ট তুই শালা বোকার হদ্দ। আমার যেহেতু কথার উত্তর দেয়ার বাজে স্বভাব আছে তাই তাকে বলতে দ্বিধা করলাম না- দেখেন টিটি সাহেব, আমরা যারা মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে আমাদের না আছে কারিকারি টাকা, না আছে বাবার বিশাল সম্পত্তি। যা আছে সেই আত্মসন্মান বোধ আর সততা যদি আপনার মত দুর্নিতিবাজ মানুষের জন্য খুইয়ে দেই তাহলে আমার মত নিঃস্ব আর ক’জন থাকবে বলেন? আপনি নিজেই আমাকে শেখাচ্ছেন কিভাবে ঘুষ নিতে হয়,নিজে নিচ্ছেন ঘুষ আর মুখে ফেনা তুলছেন গেল,দেশটা রসাতলে গেল। আপনি নিজেকে একটু পরিবর্তন করেন দেখবেন আপনার দেখাদেখি অন্তত আপনার ছেলেটা কিংবা মেয়েটা সৎ হবে।

এতক্ষন লেকচার দেয়ার সময় শুধু টিটি সাহেবের মুখের দিকেই তাকিয়ে ছিলাম। পাশ ফেরাতেই দেখি পাশের তিন ভদ্রলোক যারা আগে ৫০-১০০টাকার বিনিময়ে ঘুষিয় টিকেট নেয়ায় মনস্থির তারাও ১৪০টাকা করে প্রতিজন দিয়ে টিকেট কাটিয়েছেন। টিটি মহোদয় বিরক্ত মাখা মুখে সামনের বগিতে যাচ্ছেন। আর তার পাশের দুই কনস্টেবলের দৃষ্টি এমন যে আমাকে পারলে লবন ছাড়াই চিবিয়ে খায়। হয়তো সামনেও ম্যানেজকরা টিকেট বিক্রি করবেন।

দিন শেষে নিজেকে বরং সুখিই লাগছিল আমার এই ভেবে যে- অন্তত তিন জনতো তাদের ভুল বুঝেছেন। এটাইবা কম কি? ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.