আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ফেব্রুয়ারি: পলাশের লাল নাকি অসাধু ভ্যালেন্টাইন?

আ মা র আ মি

লিখেছিলেন সেলিম রেজা নিউটন, ছাত্র ইউনিয়নের একুশের প্রকাশনা জয়ধধনিতে( নয়া জামানার আন্দোলনের ইশতেহার নামের লেখার অংশবিশেষ) পরবর্তিতে লেখাটির এ অংশ একটি লিফলেট হিসেবে প্রকাশ করা হয়। ব্লগে গত ফেব্রুয়ারীতে এটি পোস্ট করেছিলো বাকি বিল্লাহ। লেখাটির প্রয়োজন আজও ফুরায়নি ভেবে এ ফেব্রুয়ারীতে আমি। "শরীরের রক্ত ঢেলে নির্মাণ করা আমাদের ইতিহাস বেদখল হয়ে যাচ্ছে প্রতিদিন। হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে ফাল্গুন।

হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে ফেব্রুয়ারী। আমাদের ফেব্রুয়ারী লড়াইয়ের মাস,শপথের মাস, এটা কোন ফালতু সেন্টিমেন্টের কথা নয়। এটা হলো আমাদের ইতিহাসের মোড় ফেরানো আবেগ-সংগ্রামের-দহনের-তাড়নার ব্যাপার। বাহান্নর একুশে থেকে শুরু করে তিরাশির ১৪ ফেব্রুয়ারী আমাদেরকে ফেরায়-জাগায়-শেখায়। এটাই আমাদের ইতিহাস।

ফেব্রুয়ারী আমাদের খুবই অন্যরকম মাস। সেই ফেব্রুয়ারী হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে। ফেব্রুয়ারীর বুক মাড়িয়ে দাপাদাপি চলছে গত ক-বছর ধরে। সাধু ভ্যালেন্টাইনের নাম নিয়ে কতিপয় সংবাদপত্র চালু করেছে অসাধু ব্যবসা। ভালোবাসার জন্য আলাদা একটি দিবস উদযাপন, ভালোবাসার নামে ব্যবসায়িক বাজারী বেলেল্লপনা! মিডিয়া শেখাচ্ছে কেমন করে ভালোবাসতে হবে, কেমন করে ভালোবাসার মানুষকে হাই-হ্যালো বলতে হবে, বলার সময় বুকের বোতাম খোলা রাখা ঠিক হবে কি হবেনা।

গায়ের কাপড় কিভাবে কতটা সাজাতে-সরাতে-পরাতে হবে ইত্যাদি-প্রভৃতি। অথচ প্রকৃত ভালোবাসার সাথে আমাদের বিরোধ ছিলোনা কখনো। ফাল্গুন-ভালোবাসা-সালাম-বরকত-ফেব্রুয়ারি-রক্তপলাশ-আরেক ফাল্গুন-বাসন্তী শাড়ি-কালোব্যাজ-শহীদ মিনার মিলেমিশে একাকার হয়ে আছে আমাদের অস্থিতে-মজ্জায়-হৃদয়ে-গানে-কবিতায়। কোন ঘাপলা ছিলোনা কোথাও। আমরা, আমাদের পূর্ব মানুষেরা , ভালোবেসে হাত ধরাধরি করে মিছিলে গিয়েছি, জেলে গিয়েছি, গুলি খেয়েছি।

প্রেমিকের জন্য প্রেমিকা, বান্ধবীর জন্য বন্ধু, ভাইয়ের জন্য বোন, বোনের জন্য ভাই অপো করেছি, কেদেছি-হেসেছি-উল্লাস করেছি সম্মিলিতভাবে মঞ্চে-রাজপথে-উদ্যানে-উঠোনে-ক্যাম্পাসে। সে এক ফাল্গুন ছিলো। সেই ফাল্গুনের বুকের মধ্যে আগুন ছিলো। সে আগুন ছড়িয়েছিলো সবখানে। সেই আগুনে উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছিলো তিরাশির রাজপথ।

১৪ ফেব্রুয়ারি, ১৫ ফেব্রুয়ারি, ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ। কয়েক হাজার তরুণ-যুবার মিছিল। জাফর-জয়নাল-কাঞ্চন-দিপালী সাহা। ঢাকা-চট্টগ্রাম-বাংলাদেশ। বিভৎস এরশাদের খাকি চকরাবকরাদের বিরুদ্ধে, দালাল-ফড়েদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের প্রথম প্রহর ছিলো সেটা।

ক্যাম্পাসে আর্মি ঢুকেছিলো। লাঞ্ছিত করেছিলো ছাত্র শিক কর্মচারীদের। কার্জন হলে-সায়েন্স এনেঙ্-কলাভবনে হালাকু খান। মহসিন-জহুরুল হক হলে চেঙ্গিস খান। লাঞ্ছিত হয়েছিলো বাংলাদেশ।

৯০ এর ৬ ডিসেম্বর যে সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য পতন ঘটিয়েছিলো বেহায়া এরশাদের তার পূর্বসুরী ছিলো তিরাশির মধ্য ফেব্রুয়ারি। আজকের বাংলাদেশে যারা ভুলে গেছে ঐ দিন তারা হতভাগ্য-অভিশপ্ত-অকৃতজ্ঞ। আমরা কি ভুলে যাবো ১৪ ফেব্রুয়ারি। সেলিম-দেলোয়ারের বুকের ওপর লেফটেন্যান্ট জেনারেল ট্রাক। ফুলবাড়িয়ার রাস্তায় চাপচাপ জমাট মগজ?"


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।