আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জ্ঞানের শহরে

চলে যেতে যেতে বলে যাওয়া কিছু কথা

স্বপ্নটি দেখেছিলাম শহরের বড় লাইব্রেরীটিতে, বই পড়তে পড়তে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম যখন। দিনের বেলায় দেখা বলে দীবাস্বপ্নও বলা যায়। স্বপ্নটি ছিল চমতকার এবং উত্তেজনাপুর্ন। সেই থেকে শুরু। প্রতিদিন বই পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে পড়া আর একের পর এক চমতকার সব স্বপ্ন দেখা।

তবে স্বপ্নগুলোর মধ্যে ধারাবাহিকতা ছিল,ছিল পরষ্পর সম্পর্কযুক্ত। প্রথমদিনের স্বপ্নটি দিয়ে শুরু করা যায়। প্রথম দৃশ্যটিতে আমি একটি উপত্যাকায় উদভ্রান্তের মত এদিক ওদিক ঘুরে ফিরছিলাম। হঠাত করেই চোখে পড়ল বিশাল একটি ফটকের দিকে। দৌড়ে গেলাম ফটকের কাছে।

কিন্তু ফটকের দরজা কোনভাবেই খোলা গেল না। যখন নিরাশ হয়ে ফেরার কথা চিন্তাভাবনা করছি ঠিক তখনই কোত্থেকে জানি ফটকের সামনে আবির্ভাব ঘটল লম্বা দাড়িওয়ালা এক বুড়ো মানুষের। লোকটি এতই বুড়ো ছিল যে তার কোমড় বাকা হয়ে মাথা প্রায় মাটি ছুয়ে যাচ্ছিল। আমি বৃদ্ধ লোকটিকে শুধালাম ফটকের ঐপাশের জগতটার কথা। বৃদ্ধ উত্তরে ইশারা করলেন ফটকের একেবারে উপরের অংশে কিছু একটার দিকে।

দুর্বোধ্য ভাষার লেখাটি পরিচিত কোন ভাষা নয়। না বাংলা, না ইংরেজী না আরবী। কিন্তু লেখাগুলোর দিকে তাকাতেই বুঝতে অসুবিধা হল না এর অর্থ। যেন নিজের থেকেই বলে দিল এর অর্থ। যার অর্থ জ্ঞানের শহর।

ফটকের ঢুকার ইচ্ছে প্রকাশ করলে দুর্বোধ্য একভাষায় কথা বলা শুরু করলেন বুড়ো লোকটি। তবে কথাগুলো বুঝতে অসুবিধা হচ্ছিল না আমার। প্রথমেই নিজেকে পরিচয় দিলেন এই ফটকের প্রহরী হিসাবে। গত পাচ হাজার বছর ধরে পাহারা দিচ্ছেন এটি তিনি। এই ফটক দিয়ে জ্ঞানের শহরে প্রবেশ করতে চাইলে নিজের যোগ্যতার প্রমান দিতে হয়।

তিনি আরো জানালেন শহরটি গড়ে উঠেছে গত পাচ হাজার বছর ধরে। "বাছা তুমি কি সত্যিই এই শহরটিতে প্রবেশ করার মহা সৌভাগ্য অর্জন করতে চাও?" আমি উত্তর দিলাম "হ্যা" তারপর ফটকের সামনে দাড়িয়ে অদ্ভুদ কিছু মন্ত্র উচ্চারন করে গেলেন বৃদ্ধ। মন্ত্র পড়া শেষ হতেই ফটকটা যেন দুলে উঠল,জীবন্ত হয়ে উঠল এর অংগপ্রত্যংগ। ফটকের মাথার দিকের অংশটা থেকে ঘড়ঘর শব্দ বেরিয়ে এল। ফটকটা যেন কথা বলতে চাইছে।

সত্যি সত্যিই ফটকটা কথা বলে উঠল। "বৎস, জ্ঞানের প্রথম কথা কি বলতে পার কি?" "শেখা, পড়া, জানা" উত্তর ঠিক হল কিনা জানিনা ফটকের দরজা কিছুটা খুলে গেল যেন, কিন্তু প্রবেশ করার জন্য তখনও এটি প্রশস্থ ছিল না। আবার ফটকের মাথাটি কথা বলে উঠল। "জ্ঞানের উদ্ধেশ্য কি বলতে পার বৎস" প্রথমে মনে যা আসল তাই উত্তর দিলাম। "মনের অন্ধকার আর অগ্গানাতকে দুর করে জীবনকে সুন্দর আর সহজ করা।

" ফটকটি আরো একটু খুলে গেল, আন্দাজ করলাম এবারের উত্তরটিও সম্পুর্ন সন্তোষজনক হয়নি। "জ্ঞান পরিপুর্ন হয়েছে বুঝবে কি করে বাছা" ফটকের এবারের প্রশ্নটা কঠিন মনে হলেও আশাহত হলাম না আমি। কিছুক্ষন ভেবেচিন্তে উত্তর দিলাম, "যখন এমন উপলব্ধি ঘটবে যে কিছুই শেখা হয়নি, কিছুই পড়া হয়নি আর কিছুই জানা হয়নি। " এবার ফটকের দরজা পুরোপুরি খুলে গেল। ভয়ে ভয়ে প্রবেশ করলাম জ্ঞানের দরজা দিয়ে জ্ঞানের সেই শহরে যেটি গড়ে উঠেছে শত শত বছর ধরে।

চলবে..........

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।