আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিচারে আপন পর নেই....

কষ্ট হলেও সত্য বলা বা স্বীকার করার সাহসই সবচেয়ে বড় সততা।

অর্ধ দুনিয়ার অধিপতি হযরত উমর (রা)। খলিফার বিশাল সাম্রাজ্যে সততা, নীতি ও নৈতিকতার কোন ঘাটতি ছিল না। সে সময় জুলুমের বিচার ছিল, অন্যায়ের জন্য দণ্ড ছিল আর অসত্যের জন্য ছিল সমুচিত শাস্তি। খলিফার রাজত্বে মানুষের উপর মানুষের কোন কর্তৃত্ব ছিল না।

সুখ ও শান্তিতে মানুষের মন ছিল ভরপুর। তখন চলছিল ন্যায় বিচারের স্বর্ণযুগ। খলিফার সাম্রাজ্যে এক মহামতি কাযী ছিলেন। ন্যায়বান মানুষ হিসেবে তার বেশ নাম ডাক ছিল। সত্যনিষ্ঠ এ কাযী সারা দেশ জুড়ে খুবই পরিচিত ছিলেন।

নাম তার শুরাই ইবনে হারেজ। বিচারে তিনি কখনও পক্ষপাতিত্ব করতেন না। হোক সে খলিফা স্বয়ং অথবা তার কোন নিকটাত্মীয়। সবাইকে কাযী সাহেব সমান চোখে দেখতেন। আইনের কোন হেরফের করা হারেজের নিকট ছিল অসম্ভব।

একদিনের ঘটনা। কাযীর ছেলের সাথে অন্য এক জনের ঝগড়া হল। বাড়ীতে এসে ছেলে সব ঘটনা কাযী সাহেবকে খুলে বলল। কাযী ছেলের অভিযোগ মন দিয়ে শুনলেন। পুত্র বলল, আব্বাজান! সবইতো শুনলেন।

এ নিয়ে আমি মামলা করতে চাই। আপনি বলুন মামলায় জিতব কিনা। আর যদি হেরে যাই তাহলে মামলা করব না। শুরাই পুত্রের কথা শুনে চুপ রইলেন। তিনি চাইলেন ঘটনাটির একটা বিচার হোক।

তাই তিনি বললেন, ওহে পুত্র, তুমি বরং আদালতে গিয়ে মামলা রুজু করে দাও। পিতার কথায় পুত্র চিন্তমুক্ত হল। সে ঠিক ঠিক মামলা ঠুকে দিল। সে ধরেনিল মামলায় নিশ্চিত সে জিতে যাবে। বিচারের দিন তারিখ ঠিক করা হল।

কাযী বাদী ও বিবাদী উভয়ের বক্তব্য শুনলেন। এবার রায় ঘোষণা করার পালা। কাযীর ছেলে তো খুবই উচ্ছসিত। সে ভাবছে বিচারের রায় তারই পক্ষে যাচ্ছে। কিন্তু বিধি বাম।

রায় গেল পুত্রের বিপক্ষে। রায় শোনার পর পুত্রের মন খুব খারাপ হয়ে গেল। পিতা হয়ে পুত্রের বিরুদ্ধে রায় দেবে সে ভাবাই যায় না। বাড়ী ফিরে পুত্র পিতা কাযীর উপর ক্ষুব্ধ হল। বাড়ি গিয়ে পুত্র পিতাকে বলল, আব্বাজান! আপনি আমার উপর জুলুম করেছেন।

আমিতো আপনাকে জানিয়েই মামলা করেছি। অথচ জেনে শুনেই আপনি মামলায় হারিয়ে আমাকে লজ্জিত করেছেন। পুত্রের কথা শুনে কাযী হেসে ফেললেন। তারপর তিনি বললেন, হে বৎস! তুমি আমার প্রাণাধিক প্রিয়। কিন্তু তার চেয়েও প্রিয় হচ্ছেন আমার আল্লাহ।

আল্লাহর উপর আস্থার কারণে আমি পক্ষপাতিত্ব করতে পারি না। তাই মামলায় তুমি হেরে যাবে জেনেও তোমাকে মোকদ্দমা করার পরামর্শ দিয়েছিলাম। এতে বিবাদীর অধিকার রক্ষা করার সুযোগ হয়েছে। অতএব তোমার রাগ করার কোন কারণ নেই। বরং অন্যের ন্যায্য অধিকার রক্ষা হবার জন্য তোমার খুশি হওয়াই উচিত।

পিতার বক্তব্য শুনে পুত্র ‘থ’ হয়ে গেল। পিতার মত ন্যায়বান কাযীর পুত্র হতে পেরে তার মনপ্রাণ উচ্ছাসে ভরে গেল।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.