আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাদশাহ হয়েও বড় নন...

কষ্ট হলেও সত্য বলা বা স্বীকার করার সাহসই সবচেয়ে বড় সততা।

দিনটি ছিল শুক্রবার। জুমার নামাযের দিন। মসজিদে উপস্থিত হাজার হাজার মুসল্লী। জুমার নামাযে ইমামতি করবেন হযরত উমর ফারুক (রা)।

অর্ধ দুনিয়ার খলিফা তিনি। খুতবা পাঠ করার সময় হয়ে এল। খলিফা মিম্বারে গিয়ে উঠলেন। খুতবা শোনার জন্য গোটা মসজিদ জুড়ে পিন পতন নীরবতা। এমন সময় সহসা মসজিদের এক কোণ হতে এক যুবক উঠে দাঁড়াল।

সে কিছু বলতে চায়। সবাই চমকে উঠল। এখন খুতবা পড়ার সময় অথচ যুবকটি কি যেন বলতে চাচ্ছে। এতে কেউ কেউ বিরক্তও হল। খলিফা কিন্তু অন্যরকম।

তিনি যুবকের কথা শুনতে চাইলেন। যুবককে কথা বলার অনুমতি দেয়া হল। সে বলল, ভাইসব! গতকাল আমরা সবাই বায়তুল মাল হতে এক টুকরো করে কাপড় পেয়েছি। কিন্তু খলিফা আজ যে নতুন জামা গায়ে দিয়েছেন তা তৈরী করতে অন্ততঃ দু’টুকরো কাপড় লেগেছে। খলিফা বলেই কি তিনি এক টুকরো কাপড় বেশি নিলেন? ব্যাপারটা আমার জানা প্রয়োজন।

তিনি যতক্ষণ না প্রশ্নের জবাব দেবেন ততক্ষণ পর্যন্ত তার খুতবা শুনব না। যুবকের কথা শেষ হতে না হতেই হযরত আবদুল্লাহ উঠে দাড়ালেন। হযরত উমরের পুত্র আবদুল্লাহ। তিনি পিতার পক্ষে কথা বলার জন্য অনুমতি চাইলেন। খলিফা তাকে অনুমতি দিলেন।

তিনি বললেন, হে যুবক, লাইনে দাঁড়িয়ে সবাই যখন কাপড় নিচ্ছিল আমি নিজেও এক টুকরো কাপড় গ্রহণ করি। যুবক বলল, ‘ঠিকই! আমি নিজেও সেটা দেখেছি। ’ আবদুল্লাহ তখন বললেন, আব্বাজানের পুরনো জামাটি গায়ে দেয়ার অযোগ্য হয়ে পড়েছিল। তাই আমার নিজের কাপড়ও তাকে দিয়ে দিয়েছি। আবদুল্লাহর কথা শেষ হতে না হতেই উমরের চাকরও উঠে দাঁড়াল।

সে বলল, ‘আমি অনেক করে বলে কয়ে আমার কাপড়টিও খলিফাকে দিয়ে দেই। তিনি তিনটি কাপড় দিয়ে জামা তৈরি করায় তা অতটা লম্বা হয়েছে। ’ আবদুল্লাহ ও চাকরের কথা শুনে যুবকটি ভুল ভাংগল। সে লজ্জিত হল। সে এবার খলিফাকে খুতবা পাঠ করার অনুরোধ করল।

কিন্তু খলিফা যুবকটিকে কিছু জিজ্ঞেস করতে চাইলেন। তিনি বললেন, হে যুবক! আমি যদি সত্যি সত্যিই বায়তুল মাল হতে বেশি কাপড় নিয়ে জামা তৈরী করতাম তাহলে তুমি কি করতে? যুবকটি তাৎক্ষণিকভাবে তরবারি দেখিয়ে বলল, এ তরবারি দিয়ে আমি আপনার মস্তক দ্বিখণ্ডিত করে দিতাম। এবার খলিফা কৃত্রিম রাগতঃ স্বরে বললেন, হে যুবক! তুমি কি জান তুমি কার সাথে কথা বলছ? যুবক নির্দ্বিধায় নির্ভয়ে জবাব দিল, আমি নিশ্চয়ই জানি। আমি বিশ্বের মহান শাসক, খলিফা হযরত উমর (রা) এর সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলছি। যুবকটির ঔদ্ধত্য ও ধৃষ্টতাপূর্ণ কথা শুনে মসজিদের মুসল্লীরা দুঃখ পেল।

উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ল সবার মধ্যে। কিন্তু আমিরুল মো’মেনীন তাতে মোটেও অখুশি হলেন না। তিনি বরং যুবকের সাহসের প্রশংসা করলেন। সত্য কথা বলার জন্য আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করলেন।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।