আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অবিচার ও দুঃস্বপ্নের ফিরিস্তি- শেষ পর্ব

.......অতঃপর মৃত্যুর প্রতীক্ষা

(একটা মধ্যম মানের মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয় তাদের পোস্ট গ্রাজুয়েট রিসার্চ প্রোগ্রামের ওয়েব পেইজে গবেষণারের চারটা ছবি দেখে থমকে গেলাম। এ আর কেউ নয়, আমাদের সোহেল ভাই ...চারটি ছবিতেই তন্ময় হয়ে কাজ করছেন। ) ডরমেটরি থেকে গবেষণাগারের সামান্য দূরত্ব হেটে যেতে তার মনে হত তিনি পা ভেঙ্গে পড়ে যাবেন। সামান্য অবসরে নদীর ধারে চুপচাপ মন খারাপ করে বসে থাকতেন। প্রিয়তমাকে এভাবে হারানোর প্রচন্ড মানসিক কষ্ট ভুলে থাকতে অনেক রাত ধরে ঘন্টার পর ঘন্টা গবেষণা গারে বসে কাজ করতেন।

এভাবে কাজ করতে করতে তিনি তার বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অন্যতম সেরা একটা উদ্ভাবন ঘটান। তার স্টেটে ভীষণ ভাবে আলোচিত হয় তার আবিষ্কারের কথা। আমাদের দেশে প্রথম আলো, ডেইলি স্টার সহ শীর্ষ স্থানীয় পত্রিকায়, ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে ফলাও করে ছাপানো হয় বাংলাদেশি বিজ্ঞানীর সাফল্য। সে বছর সেরা তাকে আমাদের দেশের সেরা বিজ্ঞানীর মর্যাদা দেয়া হয়। কষ্টের এক বড় পাথর নিয়ে তিনি অনুভূতি শূণ্য হয়ে পড়েন।

সামনে কোন ভবিষ্যত, কোন আলো দেখতে পাননি। নিজের সুপারভাইজারের শত অনুরোধ, বিভিন্ন নাম করা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করার অফার ফেলে তিনি দেশে ফিরে আসেন। প্রথমেই দেনমোহরের বাকি টাকা পরিশোধের জন্য মেয়ের বাসায় যান। মেয়ের ছোট ভাইয়ের হাতে চেকটা দেন। খুব ভক্ত সে সোহেল ভাইয়ের।

সোহেল ভাইকে অকাতরে শুনাল তার বোনের কাহিনী। ডিভোর্সের যৌক্তিকতা দেখানোর জন্য শতটা মিথ্যা অভিযোগ করেছে সে সবার কাছে। বোন যখন বলেছে, "তোদের তো সে পছন্দ করতোনা...এত খারাপ লোক....".... ছোট ভাই প্রতিবাদ করেছে, "সোহেল ভাই আপনি প্রতিবার বাজারে গেলে আমাকেই ত নিয়ে যেতেন...নিজের জন্য স্যুট কিনলে, আমার জন্য একটা কিনে দিয়েছেন......আমরা বুঝেছি আপু মিথ্যা বলেছেন".......মেয়ে বলেছে......সে ছোট ছিল তাই বুঝে শুনে বিয়ে করতে পারেনি...................................... মেয়েটি যতদূর জানা যায়...তার সহপাঠী, বুয়েটের শিক্ষক কাউকে বিয়ে করেছে, এখন মার্কিন প্রবাসী....অর্কুটে সার্চ দিয়ে বের করে ফেলি তার প্রোফাইল........হাজারটা বন্ধু নিয়ে পর্দানশীল সে ধার্মিক নারী সুখেই আছে বিবাহিত জীবন নিয়ে। সোহেল ভাইয়ের সে সময়কার গবেষণাগারে ক্লিন শেভড, ফর্সা, ভরাট গালের স্বাস্থ্যবান হ্যান্ডসাম যুবকের সাথে আজকের শ্মশ্রুমন্ডিত, শ্যামলা, ভগ্নস্বাস্থ্যের মানুষটিকে কিছুতেই মেলাতে পারিনা। বাবা মা পাত্রী খুজছেন....কিন্তু কে করবে স্ত্রী পরিত্যক্তা মানুষকে বিয়ে।

ধর্মকর্মেই এখন তিনি সুখ খুজেন....মাঝে মাঝে নিজের সাফল্যের ধারায় সেই পুরনো পৃথিবীতে ফিরে আসতে চান তিনি....বহু আগের এম আইটির সেই প্রফেসরের মেইল টি আমাকে দেখান,...সুযোগ হারানোর হতাশায়.. চুপ চাপ বসে থাকেন.....মাঝে মাঝে দাড়ি ভেঙ্গে কষ্টকে ভুলে থাকার হাসি....চোখ দুট জ্বল জ্বল করতে থাকে... তার ধান মন্ডিতে তার বিশাল বড় শূণ্য বাড়ি ঘুরে গাড়িতে চেপে বসি.......প্রতিটা কথা হয় ইংরেজি......একসময় তিনি থেমে যান...ড্রাইভার সুযোগ বুঝে সুরা রহমানের ক্যাসেট ছেড়ে দেয়........রাতের অন্ধাকারে সোহেল ভাইয়ের চেহারার দিকে তাকানোর ধাক্কা সহ্য করার মত সাহস হয়নি আর।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।