আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যীশু আর সক্রেটিস : পর্ব - ২

'কাটায়ে উঠেছি ধর্ম আফিম নেশা/ধ্বংস করেছি ধর্ম যাজকী পেশা,/ভাংগি মন্দির ভাংগি মসজিদ/ভাংগি গীর্জা--গাহি সংগীত' - নজরুল

(পূর্ব প্রকাশের পর) : পাপ কি? : ঈশ্বরের প্রতি অবমাননাকর যে কোন কাজই পাপ। : আমি জানি ঈশ্বর নিজে কখনো পাপ করতে পারেন না। আর পাপ করবেনই বা কি করে? তিনি তো আর নিজেই নিজের অবাধ্য হতে পারেন না। এজন্যই তিনি নিষ্পাপ, তাই বলে এটিকে তার একটি বড় গুন বলে মনে করারও কোন কারন নেই। এতে তার কোন কৃতিত্ব নেই।

যেমন ধরুন একখন্ড পাথর। পাথর কি নড়াচড়া করতে পারে? পারে না, কারন পাথরের সেই ক্ষমতাই নেই। এবার বলুন এই দেবদূতেরা কি করে? : দেবদূতেরা ঈশ্বরের দৈনন্দিন কাজগুলোই করে। : ঈশ্বর নাকি সর্বশক্তিমান। তাহলে নিজের সব কাজ তো তিনি নিজেই করতে পারেন।

নিজের কাজ করতে তার আবার অন্যদের দরকার হয় কেন? : তিনি এভাবেই করতে পছন্দ করেন। : তাহলে আপনি বলতে চাচ্ছেন যে দেবদূতেরা হল ঈশ্বরের দাস? : না, তা নয়। তারা স্বেচ্ছায় ঈশ্বরের সেবা করে। : আচ্ছা, ধরুন তারা যদি স্বেচ্ছায় তার সেবা করতে না চায়, তখন কি হবে? : অনেক দেবদূত আছে যারা শয়তানের ইঙ্গিতে চলে। একবার শয়তান ঈশ্বরের বিরূদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল, তখন ঈশ্বর তাকে যাবজ্জীবন শাস্তি দিয়ে স্বর্গ থেকে তাড়িয়ে দেন।

: স্বর্গ কি? : স্বর্গ আছে আকাশের অনেক উপরে। দারুন একটা জায়গা। এর রাস্তাগুলো সোনা দিয়ে মোড়ানো। সবকিছুই খুব সুন্দর আর শান্তিময়। ঈশ্বর তো সেখানেই থাকেন।

তাছাড়া যারা ঈশ্বরকে বিশ্বাস করে, তারাও মৃত্যুর পর স্বর্গে যেতে পারে। মানুষ সেখানে অমরত্ব লাভ করে। তাদেরকেও ডানা দেয়া হয়। তারা ঈশ্বরের এবাদত-বন্দেগি করে। মৃত্যুর পর সেখানে যাওয়া প্রত্যেক মানুষেরই জীবনের উদ্দেশ্য আর লক্ষ্য।

: মানুষের জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য যদি স্বর্গে যাওয়াই হয়, তাহলে তো তারা আত্নহত্যা করেই স্বর্গে যেতে পারে। : বাইবেলে বলা আছে, "আত্নহত্যা মহাপাপ"। : মানুষকে স্বর্গে পাঠানোই যদি ঈশ্বরের উদ্দেশ্য হত তবে কেন তিনি মানুষকে এই পৃথিবীতে পাঠাতে গেলেন? তিনি তো আমাদেরকে একবারেই স্বর্গে পাঠাতে পারতেন। সত্যিই আমার ভাবতে খুব কষ্ট হচ্ছে, মানুষকে এত কর্মক্ষমতা, এত ইচ্ছা আর জটিলতা দিয়ে বানানো হয়েছে শুধুমাত্র ঈশ্বরের কাছে মাথা নত করে তার এবাদত-বন্দেগি করার জন্য! না, অসম্ভব! আমি নিশ্চিত কোন পাষানও চাইবে না তার চাকর আজীবন সকাল-সন্ধ্যা শুধুমাত্র তারই কাছে মাথা নত করে থাকুক। এবার আমি বুঝতে পারছি শয়তান কেন এই নির্দয়, নিষ্ঠুর, দয়া-মায়াহীন সমাজে বিদ্রোহ করতে চেয়েছিল।

আপনি এখন পর্যন্ত যা বললেন তাতে আমি শয়তানের এই বিদ্রোতে তার সাথেই আছি। যদিও নিজেকে আমি অন্যদের মতোই যথেষ্ট ভদ্র মনে করি, তারপরও কথার নড়চড় হলেই যে কেবল শাস্তির ভয় দেখায়, তার কাছে মাথা নত করে সারাদিন কেবল তার গুনগান করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তারপর বলুন, শয়তান কেন বিদ্রোহ করেছিল? সে কি জানত না ঈশ্বর মহাশক্তিধর, ঈশ্বরের সাথে সে কিছুতেই পেরে উঠবে না? : ঈশ্বরের মতো ক্ষমতা না থকেলেও তার একটা জিনিস খুব বেশি ছিল, আর তা হল আত্নবিশ্বাস। তাছাড়া সে একাই স্বর্গকে শাসন করতে চেয়েছিল। ঈশ্বরের ক্ষমতা সম্পর্কে সে কিছুটা জানত, জানত যে ঈশ্বরের ক্ষমতা তার চেয়েও বেশি কিন্ত ক্ষমতার লোভে সে এতটাই অন্ধ হয়ে গিয়েছিল যে যেকোন ঝুঁকি নিতে সে রাজি ছিল।

: শয়তানকে তো তাহলে খুবই সাহসী বলতে হয়, ঈশ্বরকে পরাজিত করতে পারবে না জেনেও সে তারই সাথে শত্রুতা করেছিল! : সে ঈশ্বরের অবাধ্য হয়েছিল। সে পাপী। : তাহলে বোঝা যাচ্ছে যে শয়তান আর ঈশ্বরের মধ্যে পার্থক্য কেবলমাত্র তাদের ক্ষমতায়। : ঈশ্বর নির্ভূল। তার অসীম ক্ষমতা।

তিনি সর্বজ্ঞানী, তিনি নিষ্পাপ। : তা তো অবশ্যই, তিনি নিষ্পাপ কেননা তিনি তো নিজেই নিজের বিরুদ্ধে যেতে পারেন না। আসল কথা হল এই দুজনের মধ্যে মূল্য পার্থক্য তাদের ক্ষমতায়। আমার কি মনে হচ্ছে জানেন? শয়তান ঈশ্বরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে কোন ভুল করেননি, ভুল করেছেন তার কাছে হেরে গিয়ে। ধরুন যদি শয়তানই জিতে যেত, তখন কিন্তু ঈশ্বরই পাপী হতেন কেননা তিনি তার চেয়েও ক্ষমতাবান শয়তানের বিরূদ্ধাচরন করেছিলেন।

তার মানে যদি শয়তান জয়ী হতো তাহলে সেই ঈশ্বর হতো, তাই না? কিন্তু এমনটিই যে হয়নি তাইবা কে বলতে পারে? আপনার কাছে ঈশ্বরের যে বর্ণনা শুনলাম তাতে আমার কিন্তু এমনটিই সন্দেহ হচ্ছে। : ঈশ্বরের ক্ষমতা অনেক বেশি, তিনি পাপের উর্ধ্বে। তিনি ন্যায়পরায়ন। অসীম ক্ষমা, শান্তি আর দয়ামায়া ধারক তিনি। শয়তান নিষ্ঠুর, সে স্বার্থপর, সে ধ্বংসকারী।

: তারপর স্বর্গ থেকে ছুড়ে ফেলার পর শয়তানের কি হল? : ঈশ্বরের তাকে নরকে নিক্ষেপ করেন, সেখানেই সে আজীবন শাস্তি ভোগ করছে। : নরক কি? মানে বলতে চাচ্ছি এই নরক জায়গাটা ঠিক কেমন? আর নরক যদি এতই কষ্টের জায়গা হয় তবে শয়তান ওখানে থাকে কেন? : শয়তান নরকে বন্দী। সে বাইরে যেতে পারে না। শয়তান আর যেসব মানুষ ঈশ্বরকে বিশ্বাস করে না অর্থ্যাৎ নাস্তিক - তাদের সবাইকে শাস্তি দেওয়ার জন্যই ঈশ্বর নরক বানিয়েছেন। এটা অনন্ত জ্বলতে থাকা এক অগ্নিকুন্ড।

ক্ষমা না চাওয়া পর্যন্ত প্রত্যেক পাপী ব্যক্তিকেই তিনি এখানে আটকে রেখে প্রেতাত্নাদেরকে দিয়ে শাস্তি দেন। : আপনি বলেছেন ঈশ্বর দয়ালু, তিনি যদি সত্যিই দয়ালু হয়ে থাকেন তবে তার সাথে যুদ্ধ হেরে যাওয়া একজন শত্রুকে তিনি এত শাস্তি দিচ্ছেন কেন? বলুন কেন তিনি শয়তানকে ক্ষমা করে দিচ্ছেন না? আপনি মানুষের কথাই ধরুন, তারা কোন দেশকে পরাজিত করার পর বন্দীদের ক্ষমা করে দেয়। তাহলে দেখা যাচ্ছে মানুষই ঈশ্বরের চেয়ে বেশি ক্ষমাশীল, ঈশ্বরের মতো তারা পরাজিতকে আজীবন শাস্তি দেয় না। আপনি তার ন্যায়বিচার, দয়া-মায়া, ক্ষমা আরো কত গুনের কথা বললেন, তাহলে ঈশ্বর তার এই গুনগুলো শয়তানের প্রতি দেখাচ্ছেন না কেন? আপনিই তো বলেছেন ঈশ্বর শান্তিপ্রিয়, ক্ষমাশীল; ঈশ্বরের এই যুদ্ধংদেহী আচরন কিন্তু আপনার কথার সত্যতা প্রমাণ করে না। : ঈশ্বরের এক আশ্চর্য উপায়ে তার কাজকর্ম করেন।

: তাছাড়া শয়তান যদি নরকে বন্দী হয়েই থাকে তবে মানবজাতিকে এত দুঃখ:দুর্দশা, মহামারী সে দিচ্ছে কি করে? আর ঈশ্বর সত্যিই যদি সর্বক্ষমতাবান হয়ে থাকেন, তিনি যদি সত্যিই ভাল হয়ে থাকেন তবে কেনইবা তিনি শয়তানকে বাধা দিচ্ছেন না? বলুন, শয়তান কেন এখনো টিকে আছে? কেন ঈশ্বর শয়তানকে ধ্বংস করে দিচ্ছেন না? : পাপের শাস্তি। ইডেন গার্ডেনের সেই পাপের শাস্তি মানুষকে দেবার জন্যই তিনি শয়তানকে বাধা দিচ্ছেন না। শয়তানের মাধ্যমে তিনি দিয়ে মানবজাতিকে শাস্তি দিচ্ছেন। : ইডেন গার্ডেন কি? : ঈশ্বর প্রথম পুরুষ আদম আর নারী ইভ-কে সৃষ্টি করে এই ইডেন গার্ডেনে রেখে দেন। সৃষ্টির আদিতে তারা ছিল নিষ্পাপ, ঠিক শিশুর মতো।

এমনকি দৈহিক ভালবাসা সম্পর্কেও বিন্দুমাত্র ধারনা ছিল না তাদের। ঈশ্বর তাদের এইভাবেই সৃষ্টি করেছিলেন। এক অপরূপ স্বর্গ এই ইডেন গার্ডেন। প্রয়োজনীয় সবকিছুই তারা এই বাগান থেকে পেত। গাছ থেকে ফল পেড়ে খাওয়া ছাড়া বলতে গেলে তাদের কোন কাজও করতে হতো না।

তারা দু'জন ছিল একে অপরের সঙ্গী। ঈশ্বর মাঝেমধ্যে যখন তাদেরকে দেখতে ইডেন গার্ডেনে আসত তখন তারা ঈশ্বরের পূজা করত। : এবার বলুন, ঈশ্বর কেন মানুষকে সৃষ্টি করেছেন? : কারন ঈশ্বর নিসঙ্গ ছিলেন। : যদি নিজেকে তার একা-একাই লাগত, তবে তো তিনি আরো কয়েকটি অ্যাঞ্জেল সৃষ্টি করলেই পারতেন। এরা তো প্রায় তারই মতোন।

অ্যাঞ্জেল মানুষের চেয়ে এত উন্নত হওয়া সত্ত্বেও কেন তিনি অনেক নীচু শ্রেণীর এই মানবজাতিকে সৃষ্টি করতে গেলেন? কারনটা কি এই যে, তার প্রয়োজন হয়েছিল কতগুলো তোষামদকারী চাকরের, যারা তাকে শুধুমাত্র ভক্তি-শ্রদ্ধা করবে, ভয় করবে? : তিনি আমাদের স্রষ্টা, এজন্যই আমরা তাকে ভক্তি-শ্রদ্ধা, ভয় করি। : সত্যি করে বলুন তো যদি কোন সন্তান জানতে পারে যে তার পিতা অপরাধী, তবুও কি সে তার পিতাকে মানতে বাধ্য থাকবে আর তাছাড়া কোনটা ঠিক কোনটা ভুল তা বিচার করার অধিকারই কি সেই ব্যক্তির আছে? আজ আপনাকে বলতে হবে ইডেনের বাগানে মানুষ কি এমন পাপ করেছে, কেন সে ঈশ্বরের অবাধ্য হয়েছে? : ইডেনের বাগানের মাঝখানে ঈশ্বর জ্ঞানবৃক্ষ রোপন করেন। ঈশ্বর আদম আর ইভ-কে সাবধান করে দেন যেন তারা সেই গাছের ফল না খায়। তখন শয়তান সাপের ছদ্মবেশ ধরে ইডেনের বাগানে যায়। এই ফল খেলে অসাধারন জ্ঞান লাভ করা যাবে - এই বলে সে প্ররোচিত করে ইভকে।

শয়তান বলে ঈশ্বর তাদেরকে এই ফল খেতে বারন করেছেন কেননা তিনি ভয় পাচ্ছেন যদি তারা এই ফল খায় তবে তারা ঈশ্বরের সমকক্ষ হয়ে যাবে। এরপর ইভ আদমকেও এই ফল খেতে রাজী করায়। ফল খাওয়ার পরই তারা জানতে পারে দৈহিক ভালবাসা কি। এটাই ছিল তাদের অপরাধ। : কিন্তু জ্ঞান তো কোন খারাপ জিনিস নয়, তবুও ঈশ্বর কেন চাইলেন না যে আমরা জ্ঞানলাভ করি? বলুন, ঈশ্বর কেন আমাদের জ্ঞানলাভ করা থেকে বিরত রাখতে চেয়েছিলেন? চিরদিন আমাদেরকে তার পদতলে একান্ত অনুগত চাকর করে রাখাই কি ছিল তার উদ্দেশ্য? বরং আমার মনে হচ্ছে আমাদেরকে সাহায্য করার জন্য শয়তানকেই আমাদের ধন্যবাদ দেওয়া উচিত।

শয়তান হচ্ছেন অনেকটা দেবতাদের আদেশ অমান্য করে মানুষকে আগুনের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়া সেই গ্রীক পুরানের দৈত্য প্রমিথিউসের মতো, মানুষকে সাহায্য করার জন্য শয়তানের মতো তাকেও আজীবন শাস্তি দেওয়া হয়। আপনিই বলুন না, জ্ঞান, আগুন, ভালবাসা ছাড়া মানুষের জীবন কি এতো মূল্যবান হতো? : কিন্তু শয়তান তো ইভকে মিথ্যা বলেছিল, ফল খেয়ে আমরা কখনোই ঈশ্বরের সমকক্ষ হতে পারতাম না। শুধুমাত্র ঈশ্বরের কৃতিত্ব নষ্ট করার জন্যই শয়তান আমাদেরকে মিথ্যা বলেছিল। : আপনার কথামতো ঈশ্বর যদি সত্যিই সর্বক্ষমতাবান হয়ে থাকেন তবে কেন তিনি শয়তানকে বাগানে এসে ইভকে প্রলুব্ধ করতে দিলেন? মানুষ ঐ ফল খাক তা যদি তিনি না চেয়েই থাকেন তবে কেন তিনি বাগানে ঐ গাছটি রোপন করলেন? যদি না চেয়ে থাকেন যে মানুষের যৌনজীবন থাকুক তবে যৌনতার জন্য প্রয়োজনীয় অঙ্গগুলো তিনি কেন দিয়েছেন আমাদের? যদি না চেয়ে থাকেন যে মানুষ এই পাপ করুক তবে কেন তিনি মানুষকে জ্ঞান, অভিজ্ঞতা, রোমাঞ্চ আর যৌনাকাঙ্খা দিয়েছেন? : ঈশ্বরের উদেশ্যে ছিল মানবজাতিকে পরীক্ষা করা। এজন্যই তিনি শয়তানকে বাগানে আসার অনুমতি দিয়েছিলেন।

(চলবে) [wjsK= Click This Link আর সক্রেটিস : পর্ব - ১

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.