আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তাজউদ্দিন আহমেদ - নিঃসঙ্গ সারথি ও একটা তুষার ভেজা বিকাল

যুদ্ধাপরাধীর বিচার ও জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবী করছি

গতরাত থেকে শুরু হয়েছে তুষারপাত। সকালে তা থামলেও ঠান্ডা আর রাস্তার অবস্থা যা তাতে সকালেই বাইরে যাওয়ার চিন্তা বাদ দিয়েছিলাম। এর মধ্যে এলো ফোন। সাপ্তাহিক দেশে বিদেশের সম্পাদক কবি দেলওয়ার এলাহি বললো - কি ব্যাপার। চলে আসেন।

কোথায়? বললেন আলবার্ট ক্যাম্বলে লাইব্রেরীতে। কি বিষয় তা বললেন না। সমস্যা হলো দেলওয়ার এলাহি একজন বন্ধু মানুষ আর প্রচন্ড রাজাকার বিরোধী আবেগপ্রবন। না গেলে পরে বিরাট চিল্লাচিল্লি করবে। সুতরাং যেতেই হলো।

গাড়ী পার্ক করে লাইব্রেরীতে ঢুকার মুখেই দেখা হলো হাসান মাহমুদ আর নাট্যকার আখতার হোসেনের সাথে। ভিতরে গিয়ে দেখলাম হল প্রায় ভর্তি - দর্শক সারিতে বসে আছেন কথা সাহিত্যিক ফরিদা রহমান, নাট্যকার আহমেদ হোসেইন, প্রবাসী সাংবাদিক সলিম সামাদ আর আফসান চৌধুরী। মঞ্চের দিকে তাকিয়ে দেখি বিরাট ব্যানার। লেখা - "তাজউদ্দিন আহমেদ এর উপর আলোচনা। প্রধান আলোচক - শারমিন আহমেদ।

ও তানভির মোকাম্মেলের প্রামান্য চিত্র - নিঃসঙ্গ সারথির প্রদর্শনী। আলোচনার বিষয়ে একটু এলার্জি থাকলেও ডকুমন্টারীর লোভে বসে পড়লাম। আলোচনা শুরু হলো। একের পর একজন এসে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দিয়েই চলছেন। সবাই মুক্তিযুদ্ধ, ৩রা নভেম্বর জেল হত্যা আর যুদ্ধাপরাধী বিষয়ে বললেও বেশ প্রামান্য তথ্যসহ বক্তব্য রাখেন অর্থনীতিবিদ ড. ওয়াহিদুল হক ( যিনি গোলটেবিল বৈঠকে বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে প্রতিনিধি দলে ছিলেন) আর সাবেক সেনাকর্তা ও আগরতলা মামলার আসামী মাহফুজুল বারী।

বক্তারা খন্ড খন্ড ঘটনার মাধ্যমে তাজউদ্দিন আহমদের নেতৃত্বের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। মুলবক্তা তাজউদ্দিন আহমেদের কন্যা শারমিন আহমেদ। ভদ্রমহিলা প্রথমেই বলে নেন - উনার বাবার সম্পর্কে উনি যা জানেন তা বাবার মৃত্যুর পর বইপত্র আর উনার ডায়েরী পড়ে। তবে চমতকার ভাষায় শৈশবের কিছু ঘটনা বর্ননা করেন। আলোচনার পর শুরু হয় তানভির মোকাম্মেলের প্রামান্য চিত্র।

গাজীপুরের কাপাসিয়ার গজারী বনে ঘেরা দরদরিয়া এক গ্রাম থেকে উঠে এসে যিনি বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসাবে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দেন - তার জীবনী এক বসায় উপভোগ করার মতো। জানলাম একজন মেধাবী তাজউদ্দিন ম্যাট্টিক্যুলেশনে কলকাতা বোর্ড থেকে ১২ তম আর ইন্টামিডিয়েট পরীক্ষায় ২য় স্থান দখল করেও কিভাবে ধীরে ধীরে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। আওয়ামীলীগের জন্মলগ্ন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত একজন নীতিনির্ধারক হিসাবে নেপথ্য থেকে ভূমিকা পান করেন। পাকিস্থানী শাসনামলে অধিকাংশ সময় কারাবন্দী থাকার পরও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতি ও আইনে মাস্টার্স করেন। যিনি জীবনে কখনও অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেন নি - ৩রা নভেম্বর ১৯৭৫ সালে যখন নিরাপদ কারাগারে রাষ্ট্রীয় ঘাতকের গুলিতে আহত হয়ে পানি চাইলেন - তখন তাকে বেয়নটের আঘাত পেতে হয়েছে।

একজন সত নির্ভিক এবং নীতিবান রাজনীতিক, বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী - যিনি তার প্রজ্ঞা আর মেধার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের বিজয়কে নিশ্চিত করেছেন - তাকে কি আমরা জাতি হিসাবে প্রকৃত মর্যাদাপূর্ন আসনে বসাতে পেরেছি? একজন বাঙালী বিদ্বেষী নুরুল আমীনের কবরের উপর বিরাট মনুমেন্ট তৈরী করে - দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রীকে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তায় গুলি করার পর বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করার পর তার বিচার বন্ধ করার আইনপাশ করে রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশ কি একটা সভ্যরাষ্ট্র হিসাবে দাবী করতে পারে? একটা ভারাক্রান্ত হূদয় নিয়ে গলে যাওয়া প‌্যাচপ‌্যাচে তুষারে স্তুপ মাড়িয়ে অতিসাবধানে এলাম গাড়ীর কাছে চলে - আবার ফিরে যেত যেতে হবে প্রাত্যহিক জীবনে। ঝাঁকের কই ঝাঁকে মিশে যাবো... [যারা ডুকমেন্টারীটি এখনও দেখেননি, দেখার জন্যে অনুরোধ করছি। বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদের জীবনীর সাথে বাংলাদেশের জন্মের ইতিহাসের একটা দারুন দলিল এই ডকুমেন্টারী - তাজউদ্দিন আহমেদ - নিঃসঙ্গ সারথি"]

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.