আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দাসত্বের শিকল



একটা সময় এই পৃথিবীতে মানুষ বেচা কেনার ব্যবসা চলত। ক্ষমতাসর্ম্পন্ন মানুষরা সেসব মানুষ কিনে দাস করে রাখত। কারণে অকারণে তাদের ওপর চালাত নির্যাতন। মধ্যযুগে পৃথিবীর অন্যান্য এলাকার মতো ইউরোপেও জমে উঠেছিল এই ব্যবসা। আফ্রিকান দস্যুরা বিভিন্ন গ্রামে হামলা করে শত শত মানুষকে ধরে নিয়ে এসে বন্দি করে রাখত।

আর ইউরোপিয়ান ব্যবসায়ীরা তাদের কিনে এনে ইউরোপের বাজারে বেচত। তাছাড়া ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকেও তারা দাস কেনা-বেচা করত। শুধু ইউরোপে নয়, সারাবিশ্বের সমাজপতি, প্রভাবশালী ও দস্যুরা দুর্বলদের ধরে নিয়ে গিয়ে দাস বানাত এবং বিক্রি করত। ১০৬৬ সালের আগে অর্থাৎ রোমানদের সময়ে এবং তারও আগে ইংল্যান্ডে দাস প্রথার প্রচলন ছিল। অ্যাংলো-স্যাঙ্নরা এ প্রথার স্রসারণ করে।

কিন্তু ১০৬৬ সালে নরমান্ডি রাজা উইলিয়ামের ইংল্যান্ড বিজয়ের পর ইংরেজ খ্রিষ্টান দাস প্রথা বন্দ হয়ে যায়। তাই বলে দাস প্রথার বিলুপ্তি ঘটেনি। এ বর্বরতা নিয়ে রক্তাক্ত হয়ে আছে ইউরোপের ইতিহাস। সে ইতিহাসের পাতায় পাতায় দাসদের করুণ আর্তনাদ গুমরে গুমরে কাঁদে। ক্রমওয়েলিয়ানরা আয়ারল্যান্ড দখল করে নেওয়ার পর থেকে লাখ লাখ নারী, পুরুষ এবং শিশুকে জোর করে দাস বানানো হয়।

তাদের নিয়ে যাওয়া হয় ব্রিটিশ ওয়েষ্ট ইন্ডিজ ও ব্রিটিশ নর্থ আমেরিকায়। ১৬৫৯ থেকে ১৬৬৩ সাল পর্যন্ত ক্রমওয়েলিয়ানের সেনাবাহিনী হাজার হাজার আইরিশ ক্যাথলিককে দাস বানায়। কারণ তিনি ক্যাথলিক ধর্মাবলম্বীদের পছন্দ করতেন না। ১৬৩১ সালের ২০ জুন আয়ারল্যান্ডের কানটি কর্ক এলাকার আত্রক্রমণ চালায় আলজেরিয়ান দস্যুরা। তারা সেদিন দু’জন গ্রামবাসীকে হত্যা করে শতাধিক লোককে ধরে নিয়ে গিয়ে শিকলবন্দি করে।

পরে তাদের দাস হিসেবে প্রেরণ করে উত্তর আফ্রিকায়। গ্রামবাসী রাজার কাছে এ ঘটনা জানালে দশ বছর পর তাদের ফিরিয়ে আনা হয়। ১৫৫৪-৫৫ সালে ‘দ্য পাইওনিয়ার অব ইংলিশ হিসেবে পরিচিত হকিন্স ধনী ব্যবসায়ীদের নিয়ে দাস ব্যবসার একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলে। তিনটি জাহাজ নিয়ে যাত্রা শুরু করে আফ্রিকার উদ্দেশে। মাঝপথে তারা পর্তুগিজদের একটি জাহাজ ছিনতাই করে ছিনিয়ে নেয় ৩০০ দাস।

আর ১৫৬৪ সালে দ্বিতীয় যাত্রায় তারা প্রায় ৪০০ আফিদ্ধকানকে অপহরণ করে বিক্রি করে। ১৮ শতকে এসে দাস প্রথা ত্রিমাত্রিক রূপ নেয়। লিভারপুল শহরের জন্য এটি অনেক লাভজনক ব্যবসায় পরিণত হয় । ১৭ থেকে ১৯ শতক পর্যন্ত ছিল গৃহদাস প্রথাও। যেসব মানুষ হতদরিদ্র, যাদের বেঁচে থাকার বিক্লপ্প কোনো রাস্থা নেই, তারা অন্যের বাড়িতে দাস হয়ে থাকত।

বেওয়ারিশ শিশুদের ধনীরা লালন-পালন করে গৃহস্থলির কাজে ব্যবহার করত। তবে দাস প্রথার বিরুদ্ধে যে আন্দোলন সংগ্রাম হয়নি তা কিন্তু নয়। ইউরোপে এই অমানবিক প্রথার বিরুদ্ধে সর্বশেষ যে মানুষটি সংগ্রাম করে তিনি হলেন গ্রানভিলি সার্প। বাবা থমাস সার্পের ৩১ সম্মানের মধ্যে তিনি ছিলেন ২০তম। থমাস ছিলেন মানবতাবাদী, সমালোচক।

দাসপ্রথার বিরুদ্ধে আইনি লড়াই করে আঠারো শতকের মাঝামাঝি সময়ে তিনি এ প্রথাকে ইউরোপ থেকে বিদায় করতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.