আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পড়িল কাঁদিয়া পুরুতমশাই, ফলমুল কিছু নাই। শেষমেষ নাকি দক্ষিনা যায়, বাঁচাও আমারে ভাই।

সুখের দিনে তোমার কথা ভাবি....দুখের সাথে একলা রয়ে যাই....

কেহ যদি চায় তবে তুরী মারিয়া আমার শরীর একস্থান হইতে অন্যস্থানে স্থানান্তরিত করিতে পারে নিমেষেই। কিন্তু আমার শরীর হইতে মস্তিষ্ক স্থানান্তরন সম্ভব নহে ইহা লইয়া কাহারও সন্দেহ ছিল না। আমার ডান হাত বাঁম হাত বলিয়া যাহারা সম্মান লাভ করে তাহাদের কেহ ভুল করিয়া আমার গালের মশা তাড়াইতে গেলে আমার জীবন সংশয় হইতে পারে তাহাতে সন্দেহ নাই। তথাপি সকলেই নির্দ্বিধায় আমার প্রভুত্ব মানিয়া লইয়াছিল। কারন আমার মগজ হইতে যেইসকল ভার্চুয়াল বস্তু নির্গত হয় তাহার ফলাফল বাস্তবে পরীক্ষা শেষে সকলেই নিশ্চিন্ত হইয়াছিল, সমস্যা সমাধানে আমার জুড়ি নাই।

পিচ্চি হইতে পরলোকের রিজার্ভেশন পাওয়া সকলেই সর্ববিধ সমস্যায় আমার শরনাপন্ন হইতেন। তাহার মাঝখানেও কিছু ত্যাঁড়া মানুষ ছিলেন যাহারা ত্যাঁড়ামিকেই তাহাদের জীবনাদর্শ বলিয়া গন্য করিতেন। ঠিক এইরুপ মানুষ ছিলেন আমাদের এলাকার পুরুতমশাই। পূর্বেকার পুরুতঠাকুরকে যমলোকে ভীষন প্রয়োজনের কারনে অকস্মাৎ চলিয়া যাইতে হয়। তাহার অবর্তমানে আমাদের ভক্তিরক্ষার দায়িত্ব যাঁচিয়া কাঁধে তুলিয়া নিতে অগ্রসর হন বর্তমান।

এনার ইতিহাস আছে। আমার বন্ধু সকল বর্তমান পুরুতঠাকুরকে পাড়াতুতো কাকু বলিয়া যথেষ্টই সন্মান করিত। তিনিও তাহাদের "গেঁয়ো যোগী ভিখ পায়না" প্রবাদ বাক্যের রক্ষাকারী সকল বলিয়া গন্য করিতেন। ইহা আমাদিগের অজানা ছিল। এক দিন দুই বন্ধু সিনেমা দেখিতে যাইতেছে।

মিঠুন দাদার সিনেমা। দেখিতেই হইবে। সিনেমা হল ৪ কিমি দূরে। টিকিট পাওয়া যাইবে না বলিয়া সাইকেলের বেগ কিঞ্চিৎ দ্রুত। পথিমধ্যে এক সাইকেল আরোহীকে তাহারা ওভারটেক করিল।

মিনিট পাঁচেক পর দ্রুতবেগে সেই সাইকেল আরোহী তাহাদেরকে ওভারটেক করিতে করিতে বেল বাজাইয়া বলিল, ইহা র‌্যালি র‌্যালি, বুঝলি! ("র‌্যালি" সেইসময়কার নামকরা সাইকেল কম্পানি)। সেই পুরুত মশাই। মনে করিয়াছেন তাহাকে ইচ্ছা করিয়া ওভারটেক করা হইয়াছে। সেই ঘটনার পর হইতে সকলে পুরুত কাকুর পিছনে লাগিল। দেখা হইলেই পিচ্চিরা বলিত, র‌্যালি র‌্যালি।

কম্প্লেন হইল। মিটমাট হইল। পরদিন হইতে রাস্তাঘাটে দেখা হইলেই আমাদের সকলেই সৌজন্য প্রদর্শন করিতে জিজ্ঞাসা করিতাম, কাকু কোথায় যাও? কাকু কোথায় গিয়াছিলা? একদিন উনি পত্নী-কন্যা লইয়া কোথাও যাইতেছেন। সাথে বিস্তর বাক্স প্যাঁটরা। আমার এক মিত্র যথারীতি জিজ্ঞাসা করিল, কাকু কোথায় যাও? তিনি হঠাৎ ক্ষেপিয়া গেলেন বলিলেন, যেথা ইচ্ছা সেথা যাই! তোদের কি! যেইখানে দেখা হইবে, খালি কোথায় যাও কোথায় যাও! আমি বম্বে যাই।

লোকজন জমিয়া গেল। আমরা থ হইয়া গেলাম। পুরুত কাকু ফিরিয়া আসিলে তাহাকে করা প্রশ্নের উত্তর আমার মিত্রগনই এইরুপ দিয়া দিতে শুরু করিল। কাকু কি বম্বে যাইতেছেন। (চলবে)


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।