আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একটি মেয়ে যখন নারী

ধোঁয়ায় মোড়ানো পৃথিবী আমার। যেখানে নেই সত্য মিথ্যার তামায় মোড়ানো কোন খোলস। চারপাশে শুধু ধোঁয়া। ধোঁয়ার মাঝেই আমি তৈরি করেছি আমার স্বপ্নের আগামী। একটা মেয়ে বিয়ের পর পরিণত হয় নারীতে।

শুরু হয় তার নতুন জীবন। গড়ে ওঠে তার এক আলাদ জগৎ। হঠাৎ-ই অনাকাঙ্খীত কিছু দায়িত্ব এসে পড়ে তার কাছে। রাতারাতি সে তার নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে-ই বড় হয়ে যায় । শৈশব ও যৌবনের চপলতার ভাব কে অপ্রস্তুত ভাবেই দূরে ঠেলে দিতে হয় তাকে ।

তার-ই মাঝে ভর করে এক বিস্তর দায়িত্ব । মমতাময়ী, দায়িত্ববান ,গুনোবতী ইত্যাদি বহু রূপ প্রদর্শন করতে হয় তাকে শ্বশুরালয়ে এসে । অত্যন্ত আর্শ্চযতার সাথে তা দক্ষতার সাথে পেরে ও ওঠে বেশির ভাগ বাঙ্গালী রমনী। তাদের বিয়ের ৪-৫ মাসের মাথায় তাদের দেখে বুঝে ওঠা কঠিন হয়ে দাঁড়ায় যে এই মেয়ে কত উচ্ছাস পরিপূর্ন ছিলো। ছিলো তার মাঝে কত দূরন্তীপনা।

একজন নারীর জীবন বড় বৈচিত্র পূর্ন। আগের সবাই এ বর্তমানের অধিকাংশ নারী-ই পর নির্ভরশীল হয়। জীবনের একটা পযার্য়ে ছেলে-বেলা হতে চেনা-পরিচিত সকলকে ছেড়ে ,শৈশবের সকল স্মৃতিকে দূরে ঠেলে দিয়ে বিয়ে নামক এক সর্ম্পকের দাবীতে ও তাড়নায় চলে যেতে হয় সম্পূর্ন নতুন এক জগৎ তথা পরিবেশে । যে পরিবেশে সে সদ্য প্রসূত বাচ্ছার মত। তারপর ও এ-বাচ্ছা বড় হতে বেশি সময় নেয় না ।

এ-বাচ্ছা অবাক করার মত অতি দ্রুত বেড়ে ওঠে । তারা একেবারে অপরিচিত মানুষ গুলোকে হঠাৎ-ই আপন করে নেয়। নতুন এক জীবনে তারা খুজে নেয় তাদের দ্বিতীয় জীবনের সুখ ,দুঃখ ,কষ্ট কে। নারী স্বামীর বাড়িতে গোড়ে তুলে তার সংসার। রক্ষনাবেক্ষন করে সকল কিছ ।

কিছু সময়ের ব্যবধানে তার কোল আলো করে নবজাতক শিশু। এই তো এখানে সৃষ্টির আরেক লীলাখেলা। অচেনা অজানা একটা বাচ্চা-ই তখন তার জবনের অ-বিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে যায় । সৃষ্টিকর্তা ও কি আজব ইচ্ছা । সে বাচ্চা তার জন্মের মাএ ৭ দিনের মাথায় চিনে নেয় তার চির মমতাময়ী মা কে ।

যার কোলে-ই তার দুনিয়ার স্বর্গ । সৃষ্টিকর্তা সে সম্পর্ক কে আরো দৃঢ় করতে মায়ের বক্ষে সন্তানের অন্নর ব্যবস্থা করেদেন । আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে তার সন্তান। এগিয়ে যায় দিন গড়িয়ে চলে বছর। নারী তার স্বামী সেবা ও সন্তান লালনে সদা-সর্বদা পরিচালিত হতে থাকে ।

সাথে থাকে সংসার নামক এক আজব সম্পর্কের অগনিত কর্ম। আমাদের দেশের বেশির ভাগ সংসারে একই নারী একাধিক সন্তান প্রসব করে। একে একে রত্তি রত্তি করে বেড় ওঠে সেই সন্তানেরা মায়ের বুকে। তাদের অসুস্থতা যেন মায়ের ই অসুস্থতা। রাতের পর রাত পার করে দেয় মা তার সন্তানের পিছনে।

হাজারো রজনী ফুরিয়ে যায় স্বামী, সন্তান ও সংসারের সুরক্ষার কামনায়। সন্তানরা একে একে হাঁটতে শিখে। আধো আধো বোলে ডাকতে শিখে মা, মা। এতেই সুখ সমুদ্রে ভেসে যায় সেই মা। যেন এই ডাক শোনার জন্যই তার এতো পরিশ্রম, এতো কষ্ঠ, এতো ত্যাগ, এতো রজনী বিসর্জন ।

হায়রে অত্যন্ত আজব স্রষ্টার সৃষ্টির খেলা। সেই সন্তানেরা দেখতে দেখতে বড় হয় পড়াশোনা করে । তারপর ও থেমে যায় না মা ও স্ত্রী রূপের একজন নারীর কর্মময় জীবন । সে স্ত্রী রূপে স্বামীর সকল প্রয়োজন মিটায় । আর মা রূপে তার কার্যের তো কোন পরিধী-ই থাকে না ।

সীমাহীন কার্য থাকে তার উপর । একটা সন্তান কেমন হবে তার অধিকাংশ-ই নির্ভর করে তার মায়ের উপর । দেখতে দেখতে সময় পেরিয়ে যায় ,বড় হয়ে ওঠে সন্তানেরা । তারা তাদের নিজস্ব স্থান হতে পরিনত হতে শুরু করে । এর ই মধ্যে সে নারী হয়তো বা তার জীবন সঙ্গীকে চিরকালের জন্য হারিয়ে ও ফেলে ।

বেশির ক্ষেত্রে তাই তো হয় । সন্তান মেয়ে হলে তার বিয়ে দেয় ,ছেলে হলে একপর্যায়ে বিয়ে করায় ও । প্রয়োজন বোধ ছেলেরা তাদের বউ নিয়ে আলাদা ও হয়ে যায় । আজ কেন যেন মনে হলো ব্যাপার টা লিখি । আজ সন্ধ্যায় হঠাৎ-ই আমার মা আসমানের আধো চাঁদের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে বলছিলেন “ চাদঁ দেখলে বড় কষ্ট হয়,চাঁদকে সবাই দেখে কেন ? আমি তো সবাই কে দেখতে পাইনা? সবাই কে আগের মত একসাথে থাকে না ? সবাই আমায় ছেড়ে আস্তে আস্তে চলে যায় কেন ?” শুনে আমার খুবই খারাপ লাগলো ।

মা আমি তোমাকে শান্তনা দেই নি। দেইনি এজন্য যে হয়তো আমি পূর্ন পুরুষ হয়ে আর সবার মত তোমাকে ছেড়ে চলে যাব। তবে একটা প্রশ্ন মনের মাঝে খুবই কম্পন সৃষ্টি করছে “মা জীবনের এ পর্যায়ে এসে তুমি কি একা?” বিধাতা জীবনের এক্ষনে এসে সকল মা-ই কি তাদের একা মনে করে? মা আমি তোমায় অনেক ভালোবসি । যে কোন অবস্থায় তুমি তোমাকে একা ভেবনা । হয়তো তোমার হারিয়ে ফেলা স্মৃতিকে কখনো ফিরিয়ে দিতে পারবো না ।

তবে আমার যোগ্যতানুসারে আমি তোমার নতুন কোন স্মৃতি হারিয়ে যেতে দিবনা । তুমি আমার অন্তরে চিরন্জীবি হয়ে থাকবে। যেমন আমার বাবা আমার অন্তরে আছেন। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.