আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

টহলে থাকবে সেনাবাহিনী

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় সেনাবাহিনী না থাকলেও আগামী দশম সংসদ নির্বাচনে সেনাবাহিনীকে স্ট্রাকিং ফোর্স (টহল) হিসেবে মাঠে রাখতে চায় নির্বাচন কমিশন। অন্যদিকে সংসদ ভেঙে দিয়ে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে নানা যুক্তি ইসি থেকে সংগ্রহ করেছে সরকারি দল। গতকাল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির এক সদস্য ইসি সচিবালয় থেকে বিগত সংসদ নির্বাচনের সময়কালীন সরকার ব্যবস্থা ও নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করেন। এমনকি ইসির একজন যুগ্ম সচিব গতকাল আইন মন্ত্রণালয়ে গিয়ে সেনা মোতায়ের বিষয়ে বিভিন্ন ব্যাখ্যাও উপস্থাপন করেছেন। জানতে চাইলে একজন নির্বাচন কমিশনার গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সেনাবাহিনী ছাড়া জাতীয় নির্বাচন করা অসম্ভব।

আমরা চাই নির্বাচনে সেনাবাহিনী স্ট্রকিং ফোর্স হিসেবে কাজ করবে। তারা উপজেলা হেডকোয়ার্টারে থাকবে এবং বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে টহল দেবে। তবে তারা সার্বক্ষণিকভাবে কোনো কেন্দ্রে থাকবে না। আরপিও'তে অন্তর্ভুক্ত থাকলেও না সেনা মোতায়েনে 'অতীতের রেওয়াজ' অনুসরণের কথাও জানান তিনি। অন্যদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় সশস্ত্রবাহিনী রেখে সেনা মোতায়েন হলেও তারা শুধু 'দৃশ্যমান' থাকবে।

কার্যত কোনো 'অ্যাকশন' নিতে পারবে না- বলে দাবি করেছেন সাবেক এক নির্বাচন কমিশনার। সাবেক একজন নির্বাচন কমিশনার বলছেন, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় সশস্ত্রবাহিনী অন্তর্ভুক্ত না করায় সংস্থাটির সদস্যদের মোতায়েন করা হলেও কার্যত তারা থাকবে শো ফোর্স। গত মাসে আইনি সংস্কার প্রস্তাব পাঠিয়েছে ইসি। সেখানেও এ বিষয়ে কোনো সংশোধন আনার সুপারিশ করেনি। এ সরকারের মেয়াদে অনুষ্ঠিত সংসদের উপনির্বাচন ও স্থানীয় নির্বাচনে বিরোধী দলের দাবির পরও সেনা মোতায়েন করেনি নির্বাচন আয়োজনকারী সংস্থাটি।

জানা গেছে, সংসদ ভেঙে দিয়ে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে আগামী দশম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপনের জন্য বিগত ৬ষ্ঠ ও ৭ম সংসদ নির্বাচনকালীন সময়ের সরকার ব্যবস্থার বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। তথ্যে দেখা গেছে, বর্তমান প্রধান বিরোধী দল সংসদ ভেঙে দিয়ে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি এককভাবে ৬ষ্ঠ সংসদ নির্বাচন করেছে। এরপরে ৭ম সংসদ নির্বাচনের সময়েও সংসদ ভেঙে যাওয়ার পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন হয়েছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। অন্যদিকে ১৯৭৩ সালের ১ম সংসদ নির্বাচনে জাতীয় রক্ষীবাহিনী নিয়োজিত ছিল। এরপরে বিগত ৯ম সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত প্রায় সব নির্বাচনেই সেনাবাহিনী মোতায়েন ছিল।

কমিশনও বিগত নির্বাচনের ধারাবাহিকতা রক্ষা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় আগামী দশম সংসদ নির্বাচনে সেনাবাহিনী রাখতে চায়।

বিরোধী দলের সমালোচনার মুখে দাতাসংস্থাও ইসির বৈঠকে নির্বাচনে সেনা মোতায়েন নিয়ে কমিশনের অবস্থান জানতে চেয়েছে। কমিশন এ বিষয়ে তাদের মতামত তুলে ধরেছে সম্প্রতি। ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, দেশের ৩০০ আসনে নিয়োজিত থাকে বিভিন্ন বাহিনীর ৫ লাখেরও বেশি সদস্য। প্রায় অর্ধলাখ সশস্ত্রবাহিনী মোতায়েন রাখা হয় এ নির্বাচনে।

সংবিধান অনুসারে, নির্বাহী বিভাগের যে কোনো সংস্থা/বিভাগ কমিশনকে সহায়তা দিতে বাধ্য থাকবে। এক্ষেত্রে প্রয়োজনে সেনা মোতায়েনেও কোনো অসুবিধা নেই।

নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন নিয়ে গত রবিবার নির্বাচন কমিশনার আবু হাফিজ সাংবাদিকদের বলেন, সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হবে না আমাদের দেশে, তা তো হবে না। কিন্তু এমন কোনো সিদ্ধান্ত ইসি নেবে না, যা জাতির বিপক্ষে যায়। সবার অংশগ্রহণে নির্বাচনের জন্য যা যা করা দরকার তা-ই করা হবে।

বাস্তবতা বিবেচনা করেই সেনা মোতায়েনের ইঙ্গিত দেন তিনি। সংবিধানের ১১৯ ও ১২৬ [ইসির দায়িত্ব ও ইসিকে নির্বাহী কর্তৃপক্ষের সহায়তদান] তুলে ধরে সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন জানান, বিশাল চাহিদার বাস্তবতায় বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তায় সেনা মোতায়েনে বাধা নেই। তবে তাদের কার্যকর করা নিয়ে কথা থেকে যায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় যেসব বাহিনীর নাম রয়েছে তা নির্বাচনে গিয়ে আচরণবিধি লঙ্ঘনসহ নানা বিষয়ে কার্যকর ভূমিকা নিতে পারবে। সশস্ত্রবাহিনী মোতায়েন হলে তারা হবে দৃশ্যমান।

টহলে থাকবে। কোনো অ্যাকশন নিতে পারবে না। যদি কিছু অ্যাকশন নেয় তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। আরপিও-তে না থাকায় অ্যাকশন নিতে হলে তাদের সিআরপিসি মোতাবেক একজন ম্যাজিস্ট্রেটের অধীনে কাজ করতে হবে। এত ম্যাজিস্ট্রেট পাবে কোথায়? সাবেক এ সেনা কর্মকর্তা জানান, পুলিশ-র‌্যাব-বিজিবিসহ অন্যরা অ্যাকশন নিতে পারবে এখন।

কিন্তু কার্যকর ভূমিকা রাখার সুবিধার্থে আরপিওর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় সশস্ত্রবাহিনীকে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি ছিল বিগত কমিশনের। তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় অধ্যাদেশে সশস্ত্রবাহিনী অন্তর্ভুক্ত ছিল। কিন্তু বর্তমান সরকার প্রথম অধিবেশনে আইন করার সময় তা বাদ দেয়। বিদায়ের আগে তা অন্তর্ভুক্ত করার জন্য প্রস্তাবনাও তৈরি করা হয়েছিল।

 

 



সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।