আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

থেঁতলে গেল স্বর্ণা...........আরেকবার থেঁতলে গেল আমাদের বিবেক...!! (বিস্তারিত : আন্দোলন : সর্বশেষ)

ধর্মান্ধ মুমিনগন সাবধান ! আমি কালবৈশাখী ঝড় !
ভীষণ ভুল করেছে স্বর্ণা, ভীষণ ভুল ! সে ভুলের জন্য শুধু মৃত্যু নয় ; নৃশংসভাবে মৃত্যু হওয়া উচিৎ ছিল । প্রিয় ব্লগার বন্ধুরা হয়েছেও তাই। চরম শাস্তি পেয়েছে স্বর্ণা। তেঁতুল শফির দেশে বাস করে এত বড় সাহস সে দেখাল কেমন করে ? ময়মনসিংহ আনন্দ মোহন কলেজের বাংলা বিভাগের স্নাতক প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী স্বর্ণা তার বন্ধুর জন্মদিন উপলক্ষে ঘুরতে গিয়েছিলেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেনে। কে জানত বন্ধুর জন্মদিন তাঁর মৃত্যুদিন হয়ে থাকবে ! স্বর্ণার নিজ এলাকা নওমহলের বখাটে ছেলে আবদুস সামাদ রাজু তাকে প্রেমের প্রস্তাব দেয়।

কিন্তু স্বর্ণা তাকে ফিরিয়ে দেয়। এত বড় সাহস !! সে কি জানত না রাজু ক্ষমতাসীন দলের উর্ধ্বতন নেতাদের আশ্রয়ে থাকে ? সে কি জানত না যে মেয়েরা তেঁতুলের মত; যে যার ইচ্ছেমত তাকে ভোগ করতে পারবে। না স্বর্ণা জানত না। তাই বখাটে রাজুর ইটের আঘাতে তার মুখ ও মাথা থেঁতলে যায়। পাশে পড়ে থাকে রক্তমাখা ইট ।

কেউ কিছু বুঝে উঠার আগেই পগারপার হয় বখাটে রাজু। (ইটে থেঁতলে যাওয়া স্বর্ণার সেই ভয়ানক ছবিটিও আমার সংগ্রহে আছে। কিন্তু এতটাই বীভত্স যে সেটা আর প্রকাশ করলাম না। ) পাঁচ দিন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে অচেতন পড়ে থেকে সবাইকে কাঁদিয়ে ৬ সেপ্টেম্বর সকাল নয়টায় স্বর্ণা চলে যান না-ফেরার দেশে। ঘটনা পরবর্তী অবস্থা : বরাবরের মত মিডিয়া প্রাথমিক নিউজ কাভারেজ দিয়েই দায়িত্ব শেষ করল।

নারী সংগঠনগুলি মানববন্ধনক করল । প্রশাসন রাজুকে গ্রফতারের আশ্বাস দিলেন। ময়মনসিংহ সদরের সরকারদলীয় সাংসদ কলেজ প্রশাসনকে নির্দেশ দিল রাজুকে রক্ষা করার জন্য। আনন্দমোহন কলেজের প্রিন্সিপাল এম.এ. মান্নান সেটা অক্ষরে অক্ষরে পালন করে চললেন। রাজু বহাল তবিয়তে আশ্রয় নিল আওয়ামী নেতাদের কোলে।

আর ময়মনসিংহ শহরের নওমহলে স্বর্ণাদের বাড়িতে চলে শোকের মাতম । মা হালিমা আক্তার, বাবা আতাউর রহমান এবং একমাত্র বোন আফরিনার চোখের জলে ভেসে যায় সম্প্রীতির শহর ময়মনসিংহ। প্রতিবাদ : রাজুকে বাঁচানোর এতসব চেষ্ঠা-তদবিরে বাদ সাধলেন একজন। তিনি আনন্দমোহন কলেজের বাংলা বিভাগের প্রধান ড: রতন সিদ্দিকী। তিনি ময়মনসিংহের বেশকিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিয়ে এক প্রবল আন্দোলন গড়ে তুললেন।

আনন্দমোহন কলেজের সামনে বিপুল ছাত্রসমাবেশে ড: রতন সিদ্দীকি প্রকাশ্যে ঘোষণা করলেন স্বর্ণার খুনীকে গ্রেফতার না করলে তিনি বাংলা বিভাগের সকল ক্লাস বন্ধ করে দিবেন। টনক নড়ল প্রশাসনের। অধ্যক্ষের কক্ষে ডাক পড়ল তার। অধ্যক্ষ তাকে প্রকাশ্যে এধরনের বক্তব্য দেয়ার জন্য তিরস্কার করলেন। রতন সিদ্দিকী ঘোষণা করলেন তিনি সরকারী আইন ভঙ্গ করেননি।

একজন পিতা হিসাবে সন্তানের হত্যার বিচার চেয়েছেন। অধ্যক্ষ্য বলেন রাজু আনন্দমোহন কলেজের ছাত্র নয়। রতন সিদ্দিকী প্রমাণ করে দেন যে আবদুস সামাদ রাজু আনন্দমোহন কলেজের ব্যাবস্থাপনা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। ধরা খেয়ে যান প্রিন্সিপাল। পরদিন ব্যবস্থাপনা বিভাগ রাজুকে বহিস্কার করে।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে রাজুর ছাত্রত্ব বাতিল করার জন্য আবেদন জানায় কলেজ কতৃপক্ষ। চলতে থাকে আন্দোলন। যদিও শহরটি ঢাকা না হওয়ায় মিডিয়া তেমন গুরুত্বই দেয়নি এই আন্দোলনকে। ৯ সেপ্টেম্বর প্রখ্যাত নাট্যকার মমতাজউদ্দীন আহমেদ বাংলা বিভাগের একটি অনুষ্ঠানে এসে ছাত্রদের উদ্দেশ্য ঘোষণা দেন “স্বর্ণা আমার মেয়ে। ওকে হত্যা করেছে এক নরপশু।

ঐ নরপশু ধরা না পড়ে সর্বোচ্চ সাজা না হওয়া পর্যন্ত তোমরা রাজপথ ছাড়বা না। ” বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী চিত্কার করে তাকে সমর্থন জানায়। অবশেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয় আন্দোলনকারীদের কাছ থেকে সময় প্রার্থনা করে। তাতে সম্মত হয়ে আন্দোলনকারীরা চারদিনের টানা আন্দোলন স্থগিত করে। প্রশাসনকে সাতদিন সময় বেঁধে দেয়।

এই সাতদিনে রাজু গ্রেফতার না হলে ময়মনসিংহের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্লাস বর্জনের হুমকি দেয়া হয়। প্রচারণা : সরকারদলীয় নেতারা খুনী রাজুকে বাঁচাতে এখন প্রচারণা চালাচ্ছে যে স্বর্ণার চরিত্র খারাপ । সে একধিক সম্পর্ক করতো। রাজুর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করায় তাকে হত্যা করে ঠিক কাজই করেছে রাজু। হায়রে মানুষ, আমরা আসলে কত খারাপ !!! সর্বশেষ : সাতদিনের আল্টিমেটামের আজ দুইদিন শেষ হল।

এখনও গ্রেফতার হয়নি রাজু। তাকে বাঁচানোর অব্যাহত চেষ্ঠা চলছে। অপরদিকর আন্দোলনকারীরা তাদের সিদ্ধান্তে অনড়। সকল ব্লগারদের অনুরোধ জানাচ্ছি এই ভয়াবহ হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে সোচ্চার হবার জন্য। আমরা যারা মুক্তচিন্তা করি স্বর্ণা আমাদের বোন।

এই প্রতিবাদ ভার্চুয়াল জগৎ থেকে শুরু করে সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়ার দায়িত্ব আমাদের। আজ যদি আমরা চুপ করে থাকি তবে আগামীকাল ওরা ঘরে ঢুকে খুন করবে আমার বোনকে।
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।