আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পুলিশ নিয়োগে জেলাকরণের রেকর্ড : ৩২ হাজারের মধ্যে গোপালগঞ্জের ৮০০০ কিশোরগঞ্জের ৭০০০

আমরা হেরে যাইনি। এশিয়া কাপ না জিতলেও তোমরা আমাদের হৃদয় জয় করেছ। আমরা গর্বিত মহাজোট সরকারের চার বছরে পুলিশ বাহিনীতে দলীয় অনুগত ৩২ হাজার নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে ২৮ হাজার নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে এবং আরও চার হাজার ৩১ জনের নিয়োগ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে। পুলিশ সদস্য নিয়োগের ক্ষেত্রে জেলাভিত্তিক কোটা থাকলেও গোপালগঞ্জসহ বৃহত্তর ফরিদপুর ও কিশোরগঞ্জ অঞ্চলকে অগ্রাধিকার দিয়ে পুলিশ বাহিনীতে বিপুলসংখ্যক লোক নিয়োগ করা হয়েছে।

এসব অঞ্চলে কোটার বাইরে তিন গুণেরও বেশি লোক নিয়োগ করা হয়েছে। বৃহত্তর ফরিদপুর অঞ্চল থেকে ১০ হাজার ও কিশোরগঞ্জ থেকে ৭ হাজার পুলিশ সদস্য নিয়োগ দেয়া হয়েছে। শুধু গোপালগঞ্জ জেলা থেকেই নিয়োগ দেয়া হয়েছে ৮ হাজার। বাকি ২ হাজার নেয়া হয়েছে ফরিদপুর, মাদারীপুর ও শরীয়তপুর জেলা থেকে। কিশোরগঞ্জ জেলা থেকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে ৭ হাজার পুলিশ সদস্য।

আর বাকি ১৫ হাজার নিয়োগ দেয়া হয়েছে দেশের অন্যান্য জেলা থেকে। অভিযোগ রয়েছে, কোনো নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে শুধু দলীয় বিবেচনায় আওয়ামী লীগের অনুগতদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে। বিরোধী মতের লোকজনকে দমন-পীড়নে এসব পুলিশ সদস্যদের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে সরকার। সূত্র জানায়, ছাত্রলীগের বর্তমান ও সাবেক নেতাকর্মীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়া হয়েছে পুলিশ বাহিনীতে। তবে মন্ত্রী ও এমপিদের সুপারিশে দলীয় লোকজনকে নিয়োগ দেয়া হলেও লাখ লাখ টাকার উেকাচবাণিজ্য হয়েছে বলেও অনেক অভিযোগ আছে।

যোগ্যতার বিচার না করেই দলীয় বিবেচনায় নিয়োগ পাওয়া পুলিশ সদস্যদের পুলিশ বাহিনীর গুরূত্বপূর্ণ স্থানে বসানো হয়েছে। এসব পুলিশ সদস্য নিজেদের কখনও গোপালগঞ্জ বা কিশোরগঞ্জের লোক পরিচয় দিয়ে প্রশাসনের উচ্চপর্যায় পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ করছে। বিশেষ অঞ্চলের লোক হওয়ায় সিনিয়র কর্মকর্তারাও তাদের অপকর্মের প্রতিবাদ করার সাহস পায় না। চিহ্নিত এসব পুলিশ কর্মকর্তা সিনিয়রদের কমান্ডও মানছে না। এ কারণে পুলিশ প্রশাসনের চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়ছে।

মাঠপর্যায়ে পরিস্থিতি এমন এক স্তরে পৌঁছেছে যে, পুলিশ বাহিনী এখন কার কথায় চলছে, তা কেউ বলতে পারছে না। পুলিশ সদর দফতরে বিশেষ অঞ্চলের পুলিশ কর্মকর্তারা সিন্ডিকেট করে পুরো বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণ করছে। আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ না করে দমন-পীড়নে পারদর্শী পুলিশ সদস্যদের চিহ্নিত করে সরকার পুরস্কৃত করছে! বিএনপি নেতা ও বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুককে জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে প্রকাশ্যে অমানবিকভাবে হামলাকারী দেশজুড়ে সমালোচিত সেই ডিসি হারুনকে এবার প্রেসিডেন্ট পদক দিয়ে সরকার পুরস্কৃত করেছে। পুলিশ সপ্তাহ-২০১৩ উপলক্ষে গত মঙ্গলবার রাজারবাগ পুলিশলাইন মাঠে অনুষ্ঠিত সভায় ব্যাপক সমালোচিত ও ছাত্রলীগের সাবেক ক্যাডার হিসেবে পরিচিত ডিসি হারুনকে প্রেসিডেন্ট পদক প্রদান করেন খোদ প্রধানমন্ত্রী। এমনকি সে অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর ন্যক্কারজনকভাবে হারুনের প্রশংসা করে বলেন, জয়নুল আবদিন ফারুককে পিটিয়ে ডিসি হারুন যে সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছে, সে কারণেই তাকে এবার প্রেসিডেন্ট পদক (পিপিএম) প্রদান করা হয়েছে।

পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, ২০১০, ২০১১ ও ২০১২ অর্থবছরে পুলিশের জন্য নতুন করে ৩২ হাজার ৩১টি পদ সৃষ্টি করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী নীতিগত অনুমোদন দেন ২০০৯ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর। ওই প্রস্তাবে ১ হাজার ৬০০টি প্রথম শ্রেণীর পদের বিষয়ে উল্লেখ করা হয়। তবে মন্ত্রণালয় প্রথম শ্রেণীর পদ বাদ দিয়ে কেবল কনস্টেবল থেকে পরিদর্শক পর্যন্ত পদ সৃষ্টির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়। এর পরপরই ১৫ হাজার ৮১৬টি পদ সৃষ্টি করে পুলিশ বাহিনীতে নিয়োগ দেয়া হয়। বাকি ১৬ হাজার ২১৫টি পদে নিয়োগের পরিকল্পনা করা হয় ২০১৩ সালের মধ্যে।

গত বছর ১২ হাজার ১১৫ জন নিয়োগ দেয়া হয় এবং বাকি ৪ হাজার একশ’ জনের নিয়োগও চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। এ বিষয়ে ২০১১ সালের ১৫ মে পুলিশ সদর দফতর থেকে স্মারক নম্বর আরঅ্যান্ডএম/৩-২০১০(অংশ) নতুন পদের বিভাজন প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্র সচিবের কাছে চিঠি পাঠানো হয়। এতে পদওয়ারি বিভাজনের তালিকা দিয়ে কোথায় লোক নিয়োগ দেয়া হবে, তা উল্লেখ করা হয়। এরপর পুলিশ বাহিনীতে ৭৩৩টি ক্যাডারভিত্তিক নিয়োগের অনুমোদন দেয়া হয়। সূত্র জানায়, ৩২ হাজার ৩১টি ক্যাডার এবং নন-ক্যাডার পদ সৃষ্টি ছাড়া পুলিশ বাহিনীকে দলীয় অনুগত রাখতে এসবি ও সিআইডির সব ইউনিটকে বিশেষ ভাতা দেয়া, ট্যুরিস্ট পুলিশ, মেরিন পুলিশ, সিকিউরিটি ও প্রটোকল ব্যাটালিয়ন এবং ন্যাশনাল ব্যুরো অব কাউন্টার টেররিজম গঠন, সাব-ইনস্পেক্টর ও সার্জেন্ট পদকে দ্বিতীয় শ্রেণী এবং ইনস্পেক্টর পদকে নন-ক্যাডার প্রথম শ্রেণীর পদে উন্নীত করা, আইজিপির র্যাংক ব্যাজ থ্রি-স্টারে উন্নীত করা, গ্রেড-১ এ ১০টি পদ সৃষ্টি করা এবং একটি কমিটি গঠনের মাধ্যমে পুলিশের বিদ্যমান সমস্যার সমাধান প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে।

এর মধ্যে আইজিপিকে থ্রি-স্টার (সিনিয়র সচিব) মর্যাদাসহ অধিকাংশই দলীয় বিবেচনায় পূরণ করা হয়েছে। তবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়াই তড়িঘড়ি করে এসব প্রতিশ্রুতির অধিকাংশই বাস্তবায়ন করায় প্রশাসন ক্যাডারে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। ২০১১ সালের ১২ মে ১০টি মহাপুলিশ পরিদর্শক (আইজিপি) এবং ২০টি অতিরিক্ত মহাপুলিশ পরিদর্শকসহ পুলিশ প্রশাসনে ৭৩৩টি ক্যাডারভিত্তিক পদের অনুমোদনের একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে সমস্যা সৃষ্টি হয়। প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে হঠাত্ এ ধরনের অনুমোদনে পুলিশ ও প্রশাসন ক্যাডারের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনায় জনপ্রশাসনের কর্মকর্তারা প্রকাশ্যেই একে অপরকে দোষারোপ করছেন।

এসব পদ সৃষ্টি করে দলীয় লোকজনকে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বসানো হয়েছে বলেও খোদ পুলিশ প্রশাসন থেকেই স্বরাষ্ট্র, জনপ্রশাসন ও অর্থ মন্ত্রনালয়ে অভিযোগ করা হয়। সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় এসেই পুলিশ বাহিনীতে বিপুলসংখ্যক পুলিশ নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়। পুলিশ প্রশাসনে দলীয় লোকজনের আধিক্য সৃষ্টি করে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য এ রূপরেখা করা হয় বলে সংশ্লিষ্ট মহলের অভিমত। স্বাধীনতার পর কোনো সরকারই পুলিশ বাহিনীতে একসঙ্গে এত সংখ্যক পুলিশ সদস্য নিয়োগ দেয়নি। এছাড়া ৩২ হাজার ৩১ জন পুলিশ সদস্য নিয়োগের ক্ষেত্রে কনস্টেবল থেকে পরিদর্শক (ইনস্পেক্টর) নিয়োগের কথা থাকলেও ১ হাজার ৬০০ জন প্রথম শ্রেণীর পদ সৃষ্টি করে দলীয় লোকজনকে বসানো হয়।

এরই মধ্যে ১৪০০ এএসপি নিয়োগের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। আরও ৪০০ জন নিয়োগের বিষয়টি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে বলে জানা গেছে। পদায়ন ও বেতনের নিশ্চয়তা ছাড়াই ২০১২ সালে ৩০তম বিসিএস ক্যাডার থেকে ১৮৭ জন সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) নিয়োগ দেয়া হয়। এভাবে অর্থ মন্ত্রণালয় ও সরকারি কর্মকমিশন পিএসসি একে অপরের প্রতি দোষারোপ করলেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ইঙ্গিতে এসব পুলিশ কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। নিয়োগপ্রাপ্তদের সবাই ছাত্রলীগের সাবেক নেতাকর্মী।

অর্থ, স্বরাষ্ট্র, জনপ্রশাসন ও পিএসসির অনুমোদন ছাড়াই প্রধানমন্ত্রী তার নির্বাহী ক্ষমতায় অধিকাংশ পুলিশ কর্মকর্তার নিয়োগ ও পদোন্নতি অনুমোদন করেছেন বলে পুলিশের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, মেধা ও যোগ্যতা ছাড়াই দলীয় ও অর্থের বিনিময় পুলিশ প্রশাসনে লোক নিয়োগের হিড়িক পড়েছে গত চার বছরে। একই সঙ্গে পুলিশ প্রশাসনে নিয়োগের ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধা, পোষ্য, নারী ও এলাকাভিত্তিক সুনির্দিষ্ট কোটা থাকলেও তা একেবারে উপক্ষো করা হয়েছে। এ নিয়ে খোদ পুলিশ প্রশাসনেই অষন্তোষ দেখা দিয়েছে। সূত্রমতে, কোটা অনুযায়ী বিভিন্ন জেলায় পুলিশ সদস্য নিয়োগের ক্ষেত্রে যে তালিকা ছিল, তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি লোক নিয়োগ দেয়া হয়েছে বৃহত্তর ফরিদপুর ও কিশোরগঞ্জ অঞ্চল থেকে।

প্রধানমন্ত্রীর এলাকা গোপালগঞ্জকে কেন্দ্র করে ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুর ও রাজবাড়ী এলাকা থেকে ১০ হাজার পুলিশ সদস্য নিয়োগ ও পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। গোপালগঞ্জে কোটা অনুযায়ী ৮০০ লোক নিয়োগের নিয়ম থাকলেও ওই জেলা থেকে নেয়া হয়েছে ৮ হাজার। ২ হাজার নেয়া হয়েছে বৃহত্তর ফরিদপুরের বিভিন্ন জেলা থেকে। অন্যদিকে রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, স্পিকার আবদুল হামিদ অ্যাডভোকেট ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের অঞ্চল কিশোরগঞ্জ থেকে নিয়োগ ও পদোন্নতি দেয়া হয়েছে প্রায় ৭ হাজার পুলিশ সদস্য। দলীয় বিবেচনা ও বিপুল টাকার উেকাচবাণিজ্যে এসব পুলিশ সদস্যকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ আছে।

নিয়োগপ্রাপ্ত কয়েকজন পুলিশ সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পুলিশ নিয়োগের ক্ষেত্রে মন্ত্রী, স্থানীয় এমপি ও জনপ্রতিনিধিদের সুপারিশ বাধ্যতামূলক। আওয়ামী লীগ নেতাদের লিখিত সুপারিশ ছাড়া কোনো অবস্থাতেই নিয়োগ পাওয়া সম্ভব নয়; তাই দলীয় বিবেচনার বাইরে কোনো পুলিশ সিদস্য নিয়োগের সুযোগ ছিল না। এছাড়া মাঠপর্যায়ে কর্মরত সত্, যোগ্য ও কর্মঠ পুলিশ সদস্যদের পদোন্নতি না দিয়ে কোণঠাসা করে রাখা হয়েছে। এতে যোগ্য ও নীতিবান পুলিশ সদস্যদের মধ্যে দীর্ঘ দিন ধরে ক্ষোভ রয়েছে। সূত্র আরও জানায়, বিপুলসংখ্যক কনস্টেবল নিয়োগ ও দলীয় বিচেনায় উচ্চপর্যায় কিছু পুলিশ কর্মকর্তার সুযোগ-সুবিধা দেয়ার মাধ্যমে মহাজোট সরকার পুরো পুলিশ বাহিনীকে নিজেদের পক্ষে নিয়েছে ।

এনএসআইয়ের ৩৭ ডিএডি ছাত্রলীগ নেতা : এদিকে গত বছর জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) উপ-সহকারী পরিচালক (ডিএডি) পদে ছাত্রলীগের বর্তমান ও সাবেক কমিটির ৩৭ জন নেতাকর্মীকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এ নিয়ে মিডিয়ায় খবর প্রকাশ হলেও তাদের নিয়োগ বাতিল করা হয়নি। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, এনএসআইয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ গোয়েন্দা সংস্থাটির ডিএডি পদে নিয়োগের জন্য ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে একটি তালিকাও পাঠানো হয়। তালিকা অনুযায়ী গত বছর ২৬ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এনএসআইয়ের ডিএডি পদে ১৪২ জনের নিয়োগপত্র ছাড়া হয়। এদের নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধার চেয়ে দলীয় বিবেচনাই বেশি প্রাধান্য পেয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

অনুসন্ধানে নিয়োগ পাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ৩৭ জনের ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকার সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া গেছে। এদের ১৩ জনই ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা। তারা ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির বিভিন্ন পদে দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিল। বাকিদের মধ্যে তিনজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল শাখার নেতা, একজন ইডেন কলেজ শাখার সাধারণ সম্পাদক, ১৪ জন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল শাখার সাবেক নেতা। বাকি ছয়জন ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী।

ডিএমপির ২৫ থানার ওসি গোপালগঞ্জের : ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ৪৯ থানার মধ্যে বর্তমানে ২০টি থানার ওসি ও ইনস্পেক্টরের বাড়ি গোপালগঞ্জে। বৃহত্তর ফরিদপুর, শরীয়তপুর, মাদারীপুর এলাকার রয়েছেন ১০ জন। অন্যদিকে মেহেরপুর, কিশোরগঞ্জ, জামালপুর, ময়মনসিংহ, হবিগঞ্জ, টাঙ্গাইল, গাজীপুর এলাকার রয়েছেন ৯ জন। খুলনা, বাগেরহাট, মাগুরা এলাকার ৫ জন। বাকি অন্য ওসি এবং ইনস্পেক্টররা বিশেষ অঞ্চলের বাইরের হলেও তাদেরও রয়েছে রাজনৈতিক পরিচয়।

এদের অনেকেই ছিলেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতা। ছাত্রজীবনে কেউ কেউ সরাসরি ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয় ছিলেন। দলীয় এসব কর্মকর্তার কারও কারও বিরুদ্ধে রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। ছাত্রজীবনে দল করার পাশাপাশি এদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি, অপহরণ ও নারীঘটিত অপকর্মেরও অভিযোগ রয়েছে। পুলিশে চাকরি নেয়ার পর শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগও রয়েছে কারও কারও বিরুদ্ধে।

কয়েকজনের রিরুদ্ধে আছে বিভাগীয় মামলা। কেউ কেউ এর আগের সরকারের আমলে বিভাগীয় মামলায় শাস্তি ভোগ ও ওএসডি ছিলেন। এসব পুলিশ সদস্যকে বাছাই করে বসানো হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ পদে। খুঁটির জোরে এসব পুলিশ সদস্য অনেক সময় দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে অতিউত্সাহী হয়ে ওঠেন। এ ধরনের পুলিশ সদস্য বিরোধী দলের কর্মসূচিতে নেতাদের ওপর হামলা চালিয়ে ব্যাপক সমালোচিত হয়েছেন।

ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে পদোন্নতি ও সুদৃষ্টির জন্য তারা বিরোধী দলের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে হামলা চালিয়ে অনুষ্ঠান পণ্ড করে দিয়েছে। তাদের হাত থেকে রক্ষা পায়ানি বিরোধী দলের চিফ হুইপ, এমপি, সাংবাদিক, আইনজীবী, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, নিরীহ মানুষ, এমনকি পর্দানশিন নারীও। পুলিশের অপকর্মের কয়েকটি নমুনা : বিরোধী জোটের গণতান্ত্রিক আন্দোলন ঠেকাতে মাঠে ব্যাপক তত্পর থাকতে দেখা যায় পুলিশের চিহ্নিত কিছু সদস্যকে। মারমুখী আচরণে এরই মধ্যে তারা ব্যাপক সমালোচিত হয়েছেন। এরপরও বিরোধী জোটের বিভিন্ন কর্মসূচিতে মূর্তিমান আতঙ্ক হয়ে তাদের মাঠে ব্যাপক তত্পর থাকতে দেখা যায়।

পুলিশের ডিসি হারুন অর রশিদ, ডিবির এডিসি মোল্লা নজরুল, মোহাম্মদপুর জোনের এসি বিপ্লব কুমার সরকার, গুলশান জোনের এসি আশরাফুল আজিম এরই মধ্যে ব্যাপকভাবে নিন্দিত হয়েছেন। এর মধ্যে ডিসি হারুন ও এডিসি বিপ্লবের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। তাদের এ কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে ডিএমপি হেডকোয়ার্টারের অতিরিক্ত কমিশনারের নেতৃত্বে তিন সদ্যদের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে পুরস্কৃত করা হয়। ২০১১ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর হরতাল চলাকালে রাজধানীর মতিঝিলে ইউসুফ আলী নামে এক পথচারীর বুকের ওপর বুট দিয়ে পৈশাচিক নির্যাতন চালায় মতিঝিল জোনের পেট্রোল ইনস্পেক্টর আবু হাজ্জাজ। ২০১২ সালের ২৯ জানুয়ারি চাঁদপুর ও লক্ষ্মীপুরে বিরোধী দলের গণমিছিলে পুলিশ গুলি চালিয়ে চারজনকে হত্যা করে।

লক্ষ্মীপুর সদর থানার ওসি গোলাম ছরোয়ার এ গুলি চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। এ ঘটনায় ৪৬ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। গত বছর ১০ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর গুলশানে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদের নাতি রাকিব হোসেনকে নির্মম নির্যাতন চালায় ডিএমপির গুলশান জোনের ডিসি লুত্ফুল কবির, এসি আশরাফুল আজিম, গুলশান থানার ওসি শাহআলম, এসআই সৌমেন বড়ুয়া ও মোস্তাফিজুর রহমান। গত বছর মার্চে রাজশাহীতে ফেনসিডিলের চালানসহ ধরা পড়ে তিন গোয়েন্দা সদস্য। গত বছর ২৩ মার্চ গোপালগঞ্জের অধিবাসী ঢাকার ধানমন্ডি থানার ওসি মনিরুজ্জামান বিয়ের উত্সবে আতশবাজির তুচ্ছ ঘটনায় নোয়াখালী সদরের এমপির সঙ্গে চরম দুর্ব্যবহার করেন।

ওসি ওই এমপিকে হুমকি-ধমকি দিয়ে বলেন, ‘তার বাড়ি গোপালগঞ্জে। এমন এমপি জীবনে বহু দেখেছেন। ক্ষমতা থাকলে যেন তার বিরুদ্ধে কিছু করেন। আওয়ামী লীগদলীয় এমপি মোহাম্মদ একরামুল করিম চৌধুরীকে এভাবে হুমকি দেয়ায় ওসির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে এমপি পদত্যাগেরও ঘোষণা দেন। একই বছর এপ্রিলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র আবদুল কাদেরকে আটকের পর ছিনতাইকারী বলে আটক করে খিলগাঁও থানার ওসি হেলাল তার কক্ষে কাদেরের পায়ে নির্মমভাবে ছুরিকাঘাত করে।

২০১২ সালের ২২ এপ্রিল বিএনপির হরতাল চলাকালে খুলনায় সরকারি বিএল কলেজের মাস্টার্সের ছাত্র এসএম মাহমুদুল হক টিটো ও আযম খান কমার্স কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ফেরদৌসুর রহমান মুন্না নামে দুই ছাত্রদল নেতাকে পিকেটিংয়ের অভিযোগে নগরীর টুটপাড়া মোড় থেকে আটক করে পুলিশ। এরপর খুলনা মডেল থানায় নিয়ে গামছায় চোখ বেঁধে ফ্যানের হুকের সঙ্গে দড়ি দিয়ে ঝুলিয়ে বেদম প্রহার করেন তত্কালীন ওসি এস এম কামরুজ্জামান। গত বছর ১০ জুন নরসিংদীতে একজন বিচারককে লাঞ্ছিত করে কিছু পুলিশ সদস্য। ৩০ মে গাজীপুর পুলিশলাইনের এসআই নিপেন্দ্র কুমার ১০ লাখ টাকার বিনিময়ে ব্যবসায়ী মামুন ভুইয়াকে আটকের পর সন্ত্রাসীদের হাতে তুলে দেয় বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। অক্টোবরে কুষ্টিয়ায় পুলিশ হেফাজতে মা ও মেয়েকে বর্বর নির্যাতন চালায় পুলিশ।

একই বছর ঢাকার আদালতে মায়ের সামনে তার মেয়েকে পুলিশ কর্তৃক নির্যাতনের প্রতিবাদ করায় সাংবাদিকদের ওপর নির্যাতন চালায় পুলিশ। ২০১১ সালের ২৬ আগস্ট সাবেক ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশিষ্ট আইনজীবী মমতাজউদ্দিন (এম ইউ) আহমেদ (৫২) পুলিশের হাতে আটকের পর নির্মম নির্যাতনে মারা যান। এ ঘটনায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র সচিব ও অ্যাটর্নি জেনারেলসহ তিন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন তার স্ত্রী সেলিনা আহমেদ।  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৫ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.