শুচিতা,
লিখব লিখব করে দিন মাস বছরের হাত ধরে পেরিয়ে গেছে
অনেক সময়,
আর এরই মাঝে,
বহুবার অমাবশ্যার আঁধারকে আঁচলে ঢেকে
আকাশে উঠেছে তপস্বী চাঁদ…৷
বহুবার শৈল্পিক মাকড়শা সুনিপুন,
বানিয়েছে তার সূক্ষ জালের মরণ ফাঁদ…৷
লেখা হয়ে ওঠেনি, কিন্তু আজ তোকে খুব লিখতে ইচ্ছে করছে…৷
আমাদের পেরিয়ে আসা শৈশব ছিল সরলানন্দময় সুন্দর,রুপকথার
মতো আবাল্য সেই দিনগুলোর সুবর্ণ স্মৃতি রোমন্থনের
অলস মাড়িতে হাতড়ানোর ইচ্ছে এখনও জাগে মাঝে মাঝে ৷
তোর কি মনে আছে বরফ-পানি খেলতে নিয়ে অনেকক্ষণ
বরফ বানিয়ে রাখায় সে কি কান্না তোর অথবা লুকোচুরি
খেলতে খেলতে সবার অগোচরে তোকে জড়িয়ে ধরা-চুমু খাওয়া !
আমাকে কানে ধরতে না চাওয়ার অপরাধে মাষ্টার মশাইয়ের হাতে
কতই না মার খেতে হয়েছিলো ক্লাস ফোরের ইংরেজি ক্লাসে…!
তোর কি মনে আছে চুপিসারে আমরা শিউলী ফুল কুড়াতে গিয়ে
দেখি গভীর রাতের ঝি ঝি ধরানো মোহময় নিরবতায় তখনো
সুগন্ধি ফুলগুলি বৃতির মায়া ছেড়ে ঝড়ে পড়েনি মাটিতে…!!
আমাদের সে শৈশব ছিল ফুল-মালা, দুষ্টুমি-খেলাধুলা, গল্প-হাসি,
আর আনন্দমাখা রুপকথার/সিনেমাটিক বাস্তবতা আর কৈশর আবিমিশ্র ৷
এরপর তুমি দ্রুত বদলাতে শুরু করলে তোমার শরীরের মতো,
তোমার সৌন্দর্য আর পরিপার্শ্ব জ্ঞাতসারেই অহঙ্কারী করে তুলল তোমাকে ৷
সময় গড়াতে থাকে, বাড়তে থাকে ব্যবধান, সময়ের এই গতিময়তায় তুমি গা থেকে মুছে ফেলে দিলে
ধুলো/মাটির মায়া-আবরন, তার পরিবর্তে
গায়ে মাখালে বোতলে ভরা সুগন্ধি আর চোখে রঙ্গীন স্বপন ৷ মধ্যবিত্তের টানাপোড়েন আর টানাটানি তোমার সহনশীলতার
সীমা অতিক্রম করে ৷
কলেজে জীববিজ্ঞানের টেবিলে তেলেপোকার ব্যাবচ্ছেদ আর কৈশোর পেরোনো তরুনের জীবন সমীকরণ মিলে মিশে একাকার তখন ৷
যেন হারানো লাটিমের মোহাচ্ছন্ন ঘুর্ণন আমার জীবনে এনে দিল
মাহাত্মা গান্ধির এক্সপেরিমেন্টাল দার্শনিকতা আর নারী বৈরাগ্য ৷
অনার্স শেষ না হতেই তোমার বিলাসী স্বপ্ন পূরন হলো ৷
সংক্ষিপ্ত এক পারিবারিক অনুষ্ঠান আর ওষ্ঠের ত্রি-কম্পনে
তোমার সে বহু কাঙ্খিত বিলাসী জীবনের সরল সূত্রপাত ৷
শুনেছি অচিরেই হয়েছো প্রবাসী পতির কোটপরা বিদেশি মেম ৷
তোমার বহু কাঙ্খিত যমজ সন্তান নিয়ে বেশ সূখীই হয়েছো ৷
কোন অভিযোগ ছিল না, নেই…৷
আমার অনার্সের রেজাল্ট বেশ ভালো হয়েছে, প্রাইভেট একটা ফার্মে
যোগও দিয়েছি কদিন হলো, ঢাকাতেও এখন কর্পোরেট কালচার, বুঝলে ?
কিন্তু এসব আমাকে টানে না, এখনও ইচ্ছে করে গ্রামে ফিরে যাই,
মনটা আমার আজও পড়ে আছে যে শাপলা আর শালুক শিকড়ে…৷
তোমাকে মনে পড়ে মাঝে মাঝে, চৈত্রের ঘুঘু ডাকা
নির্জন বিষন্ন দুপুরে
তবু বুকের ভেতর একরাশ হাহাকার ডুকড়িয়ে কেঁদে ওঠে…!
আর মনে পড়ে বোদলেয়ার:
তোমাকে হারালাম মানে আমরা দুজনেই
হারালাম
…………………………………………………………………
…………………………………………………………………
তবে আমাদের দুজনের মধ্যে তুমিই
হারাচ্ছো বেশি
কারন আমি অন্য কাউকে ভালোবাসতে
পারবো
যেমনটা বেসেছি তোমাকে
কিন্তু তুমি কখনোই পাবে না তেমন
ভালোবাসা
যেমনটি বেসেছি আমি ৷
জীবনের গতিময়তা আর বাস্তবতার সেন্ট্রিফিউগাল ফোর্সে
কেউ কেউ কেন্দ্রমুখী হয় সফলতা আর সূখের নিগরে, আর
কেউ কেউ ছিটকে পড়ে চলতে থাকে তবুও নিয়তির অপার পরিহাসে…৷
শিউলী তলার অপার্থিব রাত আর লুকোচুরি খেলার দিন
ফুরিয়ে আসে একসময় ৷
তোমার চোখের রঙ্গীন স্বপ্ন আর আমার জীবনের
এক্সপেরিমেন্টাল দার্শনিকতাও
সময়ের ধুলোয় একদিন ঢাকা পড়ে যাবে…
আমি ভালো আছি, ভালো থেকো...। ৷
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।