আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইচ্ছে খাতা - যেখানে লিখেছিলাম কিছু প্রেমের চিঠি।

আমি একাই পৃথিবী। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম http://www.facebook.com/kalponikvalo অনেক আগে এক সময় আমি ডায়রি লেখতাম। খুব যে শখ করে লিখতাম তা নয়। ক্লাসের মেয়েদের ইম্প্রেস করাই ছিল মূল লক্ষ্য। ক্লাসের অবসরে উদাস নয়নে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকতাম আর আড়চোখে খেয়াল করতাম কোন মেয়ে তাকাচ্ছে।

যেই বুঝতে পারতাম কোন মেয়ে তাকিয়েছে, ব্যাস ডায়রির মধ্যে মাথা গুজে লেখা শুরু করতাম। এমন একটা ভাব ধরতাম, দেখে মনে হতো আহা! কি আবেগী ছেলেরে বাবা। কি নিবিষ্ট মনে ডায়রির পাতায় কত কি যে লিখছে। তখনকার সময়ে এই ধরনের লুতুপুতু ছেলেদের ভালো চাহিদা ছিল। এই ধরনের উদাস ও বিরস বদনের ছেলেগুলোর দিকে মেয়েরা খানিকটা নরম দৃষ্টিতে তাকাতো।

কারো প্রতি নরম দৃষ্টি দেয়া মানে তার প্রতি মনটাও নরম। এটাই ছিল আমাদের জনপ্রিয় ব্যাখ্যা। কিন্তু বড় একটা সমস্যা ছিল। সমস্যাটা হচ্ছে আমার চেহারা নিয়ে। আমি হাজার চেষ্টা করলেও আমার চেহারা কোন ভাবেই গোবেচারা কিংবা বিষন্ন হতো না।

কেমন যেন শয়তান শয়তান লাগতো। আমার বন্ধুরা বলত, আমি নাকি যখন এইরকম বিষন্ন বদনে আকাশের দিকে বা জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকি, আমাকে দেখে নাকি দেখে মনে হয় ভয়ানক কোন দুষ্টামীর প্ল্যান করছি। আমার খুবই মন খারাপ হত। আমি বাসায় ফিরে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বিষন্ন হবার প্র্যাকটিস করতাম। কিন্তু কিছুই হয় না।

মরার উপর খাঁড়ার ঘা, আমাদের ক্লাসের জনৈক মেয়ে গিয়ে আবার স্যারদের কাছে কমপ্লেইন করলেন, আমি নাকি তার দিকে চেয়ে বাদরের মত ভেংচি কাটি। তারপর যথারীতি যা হবার তা হলো। আমাদের প্রিয় স্যাররা কখনও উত্তমমধ্যম বলে যে একটা বাগধারা আছে সেটার ধারে কাছে যেতেন না। তারা শুধু উত্তম আর উত্তম মাইর দিতেন। আমাদের ক্লাসে একটি মেয়ে ছিল, নাম নওরিন।

যতটা না সুন্দর দেখতে, তার চেয়েও চমৎকার ছিল তার গানের গলা আর লেখার হাত। আহা! মধু মধু! সেকি আবেগী গলা। কলেজের অনুষ্ঠানে একবার সে গাইল, 'একবার যদি কেঊ ভালোবাসতো, আমার নয়ন দুটি জলে ভাসত'। আমার বাঁয়ে বসে ছিল সাব্বির। গান শুনে মন্ত্রমুগ্ধের মত সে বিড় বিড় করছে, আমি আছি, আমি আছি।

ডানে বসে ছিল সুমন, সে হতাশ কন্ঠে বিড় বিড় করছে , নীলুফারকে এখন কেমনে না বলব? সেদিন বুঝলাম, হৃদয় ছোঁয়া কণ্ঠের প্রভাব কতখানি হতে পারে। শুনেছিলাম কিছুদিন পর নাকি নওরিন এর বাবা, ভাঙ্গারীর লোক ডাকিয়ে কয়েক কেজি 'বিশেষ খাম' বিক্রি করেছিলেন। বলাবাহুল্য এই কয়টি খামের ভিতর আমার কিছু "সাহিত্যকর্ম' (!!!) ছিল। যা কিনা অন্যরা আমাকে বিশেষ উপধৌকনের মাধ্যমে সংগ্রহ করেছিল। একজন মানুষ ভিন্ন স্বত্তার বিভিন্ন মানুষ হয়ে একই মেয়েকে প্রেম পত্র লিখছে- আমার নিজের বিবেচনায় ব্যপারটা খুবই ইন্টারেস্টিং ছিল।

পরিচিত বন্ধু মহলে কয়েকটি সফল প্রেমের চিঠি রচনার করার কারনে আমি অল্প বিস্তর বেশ খ্যাতিও পেয়েছিলাম। তো যাই হোক একবার একটি মেয়েকে দেখে আমার নিজের মধ্যেই প্রেমবোধ ব্যাকুল ভাবে নাড়া দিয়েছিল। খুবই সাধারন একটা মেয়ে। তাকে দেখে বুঝলাম, মেয়েদের আসল সৌন্দর্য তাদের শ্যামলা বর্ণে, গৌর বর্ণে নয়। এই মেয়েকে নিয়ে অনেকগুলো প্রেমের চিঠি লিখেছিলাম।

বাঙ্গালীর লেখালেখি কিংবা কাব্যচর্চার হাতে খড়ি হয় কোন প্রেম বা বিরহের মত নির্মম জিনিসের হাত ধরে। আমারও এর ব্যতিক্রম ছিলাম না। ডায়রীর পাতায় পাতায় ছিল, সেই তরুনীর প্রতি আমার ভালোবাসার কথা। কিন্তু বরাবরের এই দূর্বল আমি কখনই জানাতে পারি নি আমার মনের কথা। চিরকালই সেটা রয়ে কাল্পনিক কোন ভালোবাসা।

অনেকদিন পর আজ সে পুরানো ডায়রীটা একটা ট্রাংকে খুঁজে পেলাম। নানা রকম হিবিজিবি ও আপাতদৃষ্টিতে অপ্রয়োজনীয় কিছু জিনিসের নিচে চাপা পড়ে ছিল। এর মধ্যে ছিল একটা ব্যবহৃত টিস্যুপেপারও । কোন এক প্রিয় মানুষ তার চোখের কাজল মুছে ছিল সেই টিস্যুপেপারে। তাতে ছিল খানিকটা লিপিস্টিকের দাগও।

অবজ্ঞাভরে ফেলে দেয়া টিস্যুই পরম আদরে স্থান পেয়েছিল আমার কাছে। কুড়িয়ে নিয়ে রেখেছিলাম বুকের বা পাশের বুক পকেটে। মাঝে মাঝে সেখানে হাত বুলিয়ে চরম আনন্দ পেতাম। যেন তাকে স্পর্শ করছি, তার গন্ধ পাচ্ছি, যেন তার ঠোঁটে হাত বুলাচ্ছি। আজ সেই কাজল কালো দাগ কিছুটা ধূসর হয়েছে, কালচে লাল হয়েছে সেই লিপিস্টিকের দাগ।

কিন্তু টিস্যুপেপার খানা হাতে নিতেই ছলাৎ করে উঠল বুকের রক্ত। নিজেকে আবারো মনে হল বড় অসহায়। আমার ধারনা আমি একজন "মায়াবান"। একজন মায়াবতীর পুংলিংগ। কারন আমার সাথে যা কিছুই থাকে তার উপর কেমন যেন একটা মায়া পড়ে যায়।

কোন কিছুই ফেলতে পারি না। কিন্তু এবার মায়া ত্যাগ করতেই হবে। আম্মু সম্প্রতি হুলিয়া জারি করেছেন, আমি স্বচ্ছায় সব পরিষ্কার না করলে, তিনি আমাকে সুদ্ধ ঘরের বাইরে ফেলবেন। তার ধারনা যদিও আমি মানুষ কিন্তু আমার বির্বতন হয়েছে হয়ত ইঁদুর থেকে। এই কারনেই এত 'কাগজপত্র', 'নোংরা'র সাথে বসবাস।

দু'একদিনের মধ্যেই ঢাকার বাইরে যেতে হবে। ভাবছি সাথে এই ডায়রী আর সেই সব হিবিজিবি কাগজ পত্রগুলো সাথে করে নিয়ে যাব। চলতি পথে কোন এক সুন্দর নদীর কিনারে দাঁড়িয়ে ভাসিয়ে দিব আমার এই প্রেমের চিঠিগুলো। নদীর স্রোতে ভেসে ভেসে চলে যাবে হয়ত আমার সেই প্রিয় মানুষের কাছে। মিষ্টি অভিমানে আমার চিঠিগুলোতে হাত বুলিয়ে পরম মায়ায় হয়ত বলবে, 'আহারে! আহারে!' ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৪ বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.