আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অন্যের জন্য



আবিরের মুখ দেখেই বুঝলাম কিছু একটা হয়েছে। বাঁশ ঝাড়ের নীচে ছোট্ট সাঁকোর উপর বসে ছাকুতে ধার দিচ্ছে। আমাকে দেখেই ওর পকেট থেকে ১০ টাকার নোটটা বের করলো। ওটা সকালে ওকে দিয়েছিলাম। বুঝলাম কাজ হয়নি।

আমি ওর পাশে বসে আস্তে করে বললাম, কিরে তোর কি হয়েছে? সাঁকোর সিমেন্ট বারে চাকুতে ধার দিতেই থাকলো। আমার দিকে না তাকিয়েই বললো, রাশেদ ভাই, আপনার ট্যাকাডা ল্যান। আমি বললাম, টাকা তোর কাছেই রাখ। কাজের খবর কি, তাই বল। টাকা রাখতে বলাতে ও একটু খুশি হলো।

ওর পকেটে টাকাটা রেখে দিয়ে বলল, ও রাশেদ ভাই, আমড়া খাবিন? শানুদের গাছোত থিনি চুরি করিচি। বলেই হাঁফ প্যান্টের পকেট থেকে একটা আমড়া বের করে চাকু দিকে কাটতে লাগলো। আমি একটু অধৈর্য্য হয়ে বললাম, রিমুর কাছে যেতে পেরেছিলি? ও মাথা নাড়িয়ে বললো, হুঁ। -" চিঠিটা দিয়েছিস" -" হুঁ, কিন্তু একটা অকাম হয়া গ্যাছে........" -" কি অকাম?" আমার মাথা ঘুরতে লাগলো। -" রিমুর মায়ে দেকা ফেলিচে আর চিঠিডা ক্যাড়া লিছে।

" আমার সমস্ত শরীর ঘামে ভিজতে লাগলো। কি দরকার ছিলো এ কাজের। রাতের বেলা তো মোবাইলে কথা হয়-ই। বহুদিন পর ভার্সিটি থেকে বাড়িতে এসে রিমুকে চিঠি লেখার শখ জাগলো। আবির ছেলেটা চিঠিপত্র লেন দেন, কথা ট্রান্সফারের ব্যাপারে খুব দক্ষ।

গ্রামে যারা প্রেম করে তাদের আস্থার পাত্র হলো আবির। একাদশ শ্রেণীতে পড়ে গ্রামের কলেজেই। দশ টাকা, পাঁচ টাকাতেই কাজ হয়। খুব দক্ষতার সাথে কাজ করতে পারে বলে এ কাজে ওর খুব সুনাম। তবে মাঝে-মধ্যে ধরা যে পড়েনি তা নয়।

হালকা-পাতলা মারধোরও খেয়েছে। ওর মা একবার ওকে দুই ঘন্টা কান ধরে দাঁড় করিয়ে রেখেছিলো। ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার আগে যখন মোবাইল ছিলো না, তখন ওই আবিরই ছিলো যোগাযোগের হাতিয়ার। যাহোক-" এখন কি হবে রে আবির?" -" রিমু আপুর মায়ে হামাকে বাড়ির দিকে গ্যালো। রাশেদ ভাই, আজক্যা মায়ে হামাক মারবেই।

" এ কথা বলতেই আবিরের মা অগ্নিমূর্তি ধারণ করে আমাদের দিকে আসতে লাগলো। আমাদের দুজনের অবস্থাই করুণ হয়ে গেলো। ওর মা এসেই ধুম-ধাম করে ওর পীঠে কয়েকটা কিল দিয়ে গালি দিতে শুরু করলো-" হারামজাদা, মানষের জন্যি অকাম করবু, আর হামাক কতা শোনা লাগবে। আজ অমুকের কতা, কাল তমুকের কতা। " অবিরাম গালি বর্ষণ দেখে আমি একটু সাইড কাটলাম।

ওর মা আমাকে কিছুই বললো না। ওর হাতের আমরা পুকুরে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে ওর মা চিতকার করে বললো, "হারামজাদা, মানষের চিঠি ঢওয়াবু আর গ্যাল শোনমো হামি। মানষের জন্যি এ্যাতো দরদ ক্যা, অ্যাঁ। পারলে নিজে কারো সাতে ইয়া করবু । সেডার জন্যি অন্যের কতা তাও হজম হ্যবে।

"#

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।