আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাংলাদেশ ও সংখ্যালঘু -২



জাতিগত: গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ রাষ্ট্রে বাঙালী জাতি ছাড়াও কমপক্ষে আরো ৪৫টি আদিবাসী জাতির বসবাস এবং তাদের সংখ্যা আনুমানিক ৩০ লক্ষ- যা পৃথিবীর অনেক দেশের মোট জনসংখ্যার চেয়েও বেশী। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার তুলনায় এসব জাতির লোকসংখ্যা স্বল্প এবং সাস্কৃতিক ভিন্নতার কারণে সরকারি নথিপত্রে এরা 'উপজাতি' হিসাবে আখ্যায়িত হন। এই পরিচিতি অমযার্দাকর এবং সকল জাতির সমানাধিকারের পরিপন্থী। বাংলাদেশ এর রাষ্ট্রীয় সীমানায় বসবাসকারী সকল জাতিরই দেশ। ভৌগলিক পরিবেশ অনুযায়ী জাতিগত সংখ্যালঘু দুই ধরনের ক. সমতল ভুমিতে বসবাসকারী এবং খ. পাহাড়ে বসবাসকারী।

(ক) সমতল ভুমিতে বসবাসকারী- সমতল ভুমিতে বসবাসকারী জাতিগত সংখ্যালঘুরা বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত,উত্তর এবং উত্তর-পূর্ব সীমান্তে অবস্থান করে। উদাহরণসরুপ কোচ, মুন্ডা, ওরাও, পাহাড়িয়া, রাজবংশী এবং সাঁওতাল এরা বগুড়া,দিনাজপুর, কুষ্টিয়া, পাবনা, রাজশাহী এবং রংপুর জেলার বিভিন্ন অংশে বসবাস করে। এ ছাড়াও উত্তর পূর্ব সীমান্তে বৃহত্তর সিলেট জেলায় খাসী, মনিপুরী, পাথর, এবং টিপড়া জনগোষ্ঠী বসবাস করে। গারো,কোচ এবং হাজং জনগোষ্ঠী ময়মনসিংহ, জামালপুর এবং টাঙ্গাইল জেলায় বসবাস করে। বরিশাল, পটুয়াখালী,কুমিল্লা, ঢাকা, ফরিদপুর, খুলনা এবং অন্যান্য জেলাতেও বিচ্ছিন্নভাবে এরা বসবাস করে।

(খ)পাহাড়ে বসবাসকারী - দেশের দক্ষিন-পূর্ব দিকে পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকার পাহাড়ে বসবাসকারী জাতিগত সংখ্যালঘু রয়েছে। বাংলাদেশের দক্ষিণ পূর্বাংশে খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান নিয়ে ৫,৩০০ বর্গমাইল এলাকা জুড়ে গঠিত পার্বত্য অঞ্চল। শুধু আয়তনের দিক থেকে দেশের মূল ভূখন্ডের প্রায় এক-দশমাংশ। অঞ্চলটির মধ্যবর্তী অংশে রয়েছে ৩৫০ বর্গমাইল ব্যাপ্ত কাপ্তাই লেক। এ ছাড়া ঐ অঞ্চলে ১৪০০ বর্গমাইল এলাকা জুড়ে রয়েছে মূল্যবান সংরক্ষিত বনাঞ্চল;অঞ্চলটিতে বসবাস করছে আদিবাসী জুম্মদের ১০ ভাষাভাষি ১৩টি জাতি।

পাবর্ত্য চট্টগ্রাম এলাকার জাতিগত সংখ্যালঘুরা দুই ধরনের ভিন্ন পরিবেশে বসবাস করে। চাকমা, মারমা এবং ত্রিপুরা এরা উপত্যকায় বসবাস করে এবং খামিস,ম্রো,লুসাই ,বনজোগী,কুকী,তনচংগা,চাক এবং রাইয়াং এরা পাহাড়ের চূড়ায় বসবাস করে। পার্বত্য চট্টগ্রামে যুগ যুগ ধরে বসবাসরত আদিবাসী পাহাড়ীদের সমাজ সংস্কৃতি,ভাষা, অর্থনীতির জীবনধারা বাংলাদেশের অপরাপর জেলায় বসবাসকারী সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীর সমাজ সংস্কৃতি, অর্থনৈতিক জীবনধারা থেকে সম্পূর্ণ পৃথক এবং সতন্ত্র সত্তার অধিকারী। ধর্মীয়: হিন্দুঃ হিন্দু- বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের মধ্যে হিন্দু সম্প্রদায় সবচেয়ে বড় অংশ। বেশীর ভাগ হিন্দু জাতিগত এবং ভাষাগত দিক থেকে বাঙালী যদিও উপজাতিদের মধ্যেও কিছু হিন্দু ধর্মাবলম্বী রয়েছে যারা হিন্দু সংস্কৃতি, আচার,বিশ্বাস ইত্যাদি পালন করে।

হিন্দুরা পশ্চিম বঙ্গের সীমান্ত শহর বিশেষ করে বরিশাল, খুলনা, ফরিদপুর এবং যশোর জেলায় বসবাস করে। সবচেয়ে বেশী হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক বসবাস করে কুমিল্লা শহরে। অতীতের জমিদার শ্রেণী যারা ভূস্বামী হিসাবে পরিচিত ছিল তারা সবাই প্রায় হিন্দু ছিল। ১৯৪৭ সালে দেশবিভাগের সময় এবং ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় তাদের অনেকে পশ্চিম বঙ্গে চলে যায়। এছাড়াও রয়েছে- খৃষ্টান বৌদ্ধ পরিসংখ্যানঃ ধমীর্য় সংখ্যালঘুর মধ্যে রয়েছে হিন্দু, বৌদ্ধ ও খৃষ্টান সম্প্রদায়ের লোক।

১৯৪১ সালে ধর্মীয় সংখ্যালঘু ছিল মোট জনসংখ্যার শতকরা ২৯.৭% ভাগ, ১৯৫১ সালে শতকরা ২৩.১% ভাগ, ১৯৬১ সালে শতকরা ১৯.৬% ভাগ, ১৯৭৪ সালে শতকরা ১৪.৬% ভাগ, ১৯৮১ সালে শতকরা ১৩.৩% ভাগ, ১৯৯১ সালে শতকরা ১১.৭% ভাগ এবং ২০০১ সালে শতকরা ১০.৩% ভাগ। (সূত্রঃ জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরো)। জাতিগত সংখ্যালঘুদের অধিকার: ১.সাংবিধানিক স্বীকৃতি ২.ভূমি অধিকার ৩.নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি চর্চার অধিকার ৪.আত্মনিয়ন্ত্রনাধিকার ৫.স্বায়ত্বশাসনের অধিকার ৬.ধর্মীয় স্বাধীনতা ৭.শিক্ষার অধিকার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.