আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নতুন চায়নিজ সাহিত্য ও গ্লোবালাইজেশনের প্রেক্ষাপটে তার নতুন রূপ

সাহিত্যের সাইটhttp://www.samowiki.net। বইয়ের সাইট http://www.boierdokan.com

এশিয়ার দুই নতুন অর্থনৈতিক শক্তির উত্থানের সংবাদ এখন পুরনো হয়ে গেছে। বিশ্ব বহুদিন ধরে অম্ল-মধুর বিস্ময় সহকারে এ দুই দেশের উত্থান বিচার-বিশ্লেষণ করছে। এশিয়ার দেশ হিসেবে বাংলাদেশকেও এ বিষয়ে নজর রাখতে হচ্ছে। কারণ এ দুটি দেশ আমাদের প্রতিবেশী।

আমাদের সমাজ, সংস্কৃতি ও অর্থনীতির ওপর দেশ দুটির প্রভাব ব্যাপক। দেশ দুটি চায়না ও ইনডিয়া। কিন্তু ইনডিয়ান সংস্কৃতি বিষয়ে আমাদের সচেতনতা যতোটা বেশি চায়না বিষয়ে যেন ততোটাই কম। বলিউডের নাচ-গান নির্ভর মুভি, ইনডিয়ার ডায়াসপোরার নানা উদ্যোগ, ইনডিয়ান খাবার, তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ইনডিয়ানদের অংশগ্রহণ ইত্যাদি কারণে পশ্চিমি মিডিয়া এখন ইনডিয়ার ব্যাপারে বেশ আগ্রহী। এখন এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ইংরেজি ভাষায় ইনডিয়ান লেখকদের ব্যাপক অংশগ্রহণ।

বলা হচ্ছে, আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকার পর এখন ইনডিয়ান সাহিত্যের বিস্ফোরণ ঘটেছে। কয়েকটি বুকার ও আন্তর্জাতিক পুরস্কারের সুবাদে ইনডিয়ান ইংরেজি সাহিত্য এখন বিশ্ব সাহিত্যের কাতারে আলোচিত হচ্ছে। ইনডিয়ান ইংরেজি সাহিত্যের ঢেউ কম-বেশি আমাদেরও প্রভাবিত করছে। কিন্তু অন্য অর্থনৈতিক পরাশক্তি চায়নার খবর কি? চায়নার সংস্কৃতির একটি আবশ্যিক প্রভাব আমাদের ওপর আছে। ফলে চায়নার সাহিত্যের সাম্প্রতিক প্রবণতা নিয়ে আমাদের এবারের আয়োজন।

চায়নায় ‘নতুন সাহিত্য’ বলতে বৃহত্তর অর্থে যা পরিচিত তা সাংস্কৃতিক বিপ্লবের পরের সাহিত্য। বিপ্লবের পর চায়নিজ সাহিত্যের মূলধারাটি প্রায় নির্বিঘ্নভাবে বিকশিত হয়েছে ১৯৯০ পর্যন্ত। এর মধ্যে সেন্সরশিপ, পার্টি সাহিত্য, বিপ্লবী রোমান্টিকতা ইত্যাদি চায়নিজ লেখকদের ব্যস্ত রেখেছিল। অনেক চায়নিজ লেখক, কবি ও ঔপন্যাসিক দেশান্তরী হয়েছেন। দেশের বাইরে বসে দেশের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন।

নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন এ রকমই এক লেখক, গাও জিংজিয়ান। এ লেখকরা পশ্চিমে বা চায়নিজ ভাষী বাইরের অঞ্চলগুলোতে খ্যাতি অর্জন করলেও মেইন ল্যান্ড বা মূল চায়নিজ ভূমিতে তাদের প্রভাব সামান্য। সাবেক সভিয়েট ইউনিয়নেও এমন অনেক লেখকের দেখা মিলেছে যারা কোল্ড ওয়ারের সময়ই ব্যাপক প্রচারণা, পুরস্কার ও কভারেজ পেয়েছেন কিন্তু সভিয়েট ইউনিয়নের পতনের পর তাদের কথা সেভাবে আর শোনা যায়নি। চায়নার ক্ষেত্রে এ লেখকরা ততোটা বাজার পাননি। এর পেছনের কারণ হলো, চায়না নিজেই নিজেকে অনেকটা উন্মোচিত করেছে।

গ্লোবালাইজেশন প্রক্রিয়ায় চায়না অংশগ্রহণ করেছে, বাজার উন্মুক্ত করেছে। দ্রুত সেখানে একটি বড় মধ্যবিত্ত ভোক্তা সমাজ গড়ে উঠেছে। বাজার সেখানে নতুন এক সংস্কৃতির জন্ম দিয়েছে। এ সংস্কৃতির মুখোমুখি দাড়িয়েছে এখন নতুন চায়না। ফলে নতুন সাহিত্যের জায়গায় স্থান করে নিয়েছে আরেক নতুন সাহিত্য।

চায়নার মতো রক্ষণশীল সমাজ দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে। আর সে পরিবর্তনের প্রভাবকে ধারণ করে এগিয়ে যাচ্ছে তার সাহিত্য। চায়নিজ সাহিত্যের সাম্প্রতিক প্রবণতা নিয়ে ঝ্যাং ইউর লেখা থেকে কিছু প্রবণতা বুঝে নেয়া যায়। চায়নার সাহিত্য চর্চায় সাম্প্রতিক পরিবর্তন ঝ্যাং ইউ গত ১০ বছর চায়নার সাহিত্য ও সংস্কৃতি অঙ্গনে বিপুল পরিবর্তন দেখা গেছে। চায়নার হাই স্পিড পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে একদিকে দৈনন্দিন গার্হস্থ্য জীবন এমন এক ‘নতুন সংস্কৃতি’ ও ‘নতুন যুগ’-এর দেখা পেয়েছে যা তাদের পরিকল্পনা ও কল্পনার বাইরে ছিল।

আরেক দিকে বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত পুজিবাদী উৎপাদন ও ভোগের ক্ষেত্রে চায়নার অবস্থান অকল্পনীয় সীমা স্পর্শ করেছে। এখন আমরা এক ‘নতুনতর চায়না’ ও তার ‘নতুন সংস্কৃতির’ মুখোমুখি। সাহিত্য অঙ্গনে অনেক পরিবর্তন ঘটেছে এবং ধারাবাহিকভাবে এগুলো আরো স্পষ্ট হয়ে উঠবে। কিছু প্রবণতাকে এখনই স্পষ্টভাবে চিনে নেয়া যায়। প্রথমত, লেখকদের মধ্যে এক ধরনের জেনারেশন পরিবর্তনের ঘটনা ঘটে গেছে।

অতীতের গুরুত্বপূর্ণ লেখকদের প্রভাব তিরোহিত হচ্ছে। নতুন প্রজন্মের লেখকদের স্থান ধীরে ধীরে বোধগম্য হয়ে উঠছে। ১৯৭০-এর দশকের লেখকদের থেকে নিজেদের ভিন্ন স্থানে দাড় করিয়ে নতুন লেখক গাও জিংমিং, হ্যান হ্যান এবং চান সুর লেখার পরিবর্তনগুলো স্পষ্টভাবে ধরা পড়ছে। দ্বিতীয়ত, বেস্টসেলারের ম্যাকানিজম কাজ করতে শুরু করেছে। জনপ্রিয় লেখকদের লেখা বেস্টসেলারের রমরমা বেড়ে চলেছে, আর আবশ্যিকভাবে সঙ্কুচিত হয়ে চলেছে ‘শুদ্ধ’ সাহিত্যের বাজার।

তৃতীয়ত, সাহিত্যের জগতে পূর্ণদৈর্ঘ্য উপন্যাসের অবস্থান ধীরে ধীরে আরো স্পষ্ট হচ্ছে। সাহিত্যিক উৎপাদন হিসেবে এ ধরনের উপন্যাস ধীরে ধীরে বাজারের মূল কাঠামোকে দখল করে ফেলছে। চতুর্থত, অনলাইন সাহিত্যের বিকাশ এক অপূর্ব ফল দিতে শুরু করেছে। গ্লোবালাইজেশন ও বাজার নির্ভর বিনিময় এ পরিবর্তনগুলোকে সম্ভবপর করে তুলেছে। এসব পরিবর্তন সন্দেহাতীতভাবে চায়নার মে ফোর্থ মুভমেন্টের নীতি-আদর্শকে অতিক্রম করেছে এবং সাহিত্যকে নতুন পর্বে নিয়ে গেছে।

সৃষ্টিশীল কাজগুলোতে প্রতিফলিত হয় মধ্যবিত্ত সমাজ নির্ভর প্রবণতাগুলো ও এগুলো প্রতিদিনের নতুনত্ব দিয়ে চালিত হয়। আর এটি মাথায় রেখেই নতুন সাহিত্য তত্ত্ব ও নতুন সাহিত্য সমালোচনা তত্ত্বের ব্যাখ্যা ও বিকাশ সূচিত হয়েছে। যারা অন্য অনেক দারুণ ও নতুন পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। সাহিত্যের মধ্যবিত্ত নির্ভরশীলতা প্রমাণ করে, সৃষ্টিশীলতা ও পাঠ অভ্যাসের ক্ষেত্রে মধ্যবিত্তের প্রভাব দিনে দিনে আরো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। এ সমস্যার সঙ্গে চায়নিজ সমাজের পরিবর্তন গভীরভাবে যুক্ত।

সাহিত্যিক কাজগুলো সমাজ ও সমাজের নতুন পরিবর্তনকে রূপদান করছে। যা আবার নতুন কল্পনা ও ভবিষ্যতের নির্দেশনাও দিচ্ছে। এ নতুন ধারা ও নতুন সাহিত্যিক প্রতিকল্পকে সহজভাবে দেখলে বোঝা যায় : প্রথমত, এ ফেনোমেনার ভেতর সবচেয়ে শক্তিশালী উপাদান হলো নতুন শহুরে উপাদান। শহুরে উপাদানগুলো সাহিত্যিক কল্পনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। চায়নিজ সাহিত্যে গ্রাম ও শহরের সংঘর্ষ সব সময়ই কেন্দ্রীয় মনোযোগের বিষয়।

শুধু যে বিপুল সংখ্যক লেখক শহুরে এলাকায় একত্রিত হয়েছে তা নয়। (এবং এ কারণে গ্রাম জীবন নিয়ে তাদের স্মৃতি সাহিত্যিক কল্পনার অফুরন্ত উৎস হিসেবে থেকে গেছে)। শহরগুলো গ্রামের বিপরীতে নিজের অস্তিত্ব নিয়ে দাড়িয়ে আছে। গ্রাম শহরকে অনেকভাবে প্রভাবিত করছে। ইতিপূর্বে নিউ সেনসেশন রাইটার্স ও ঝ্যাং আই লিং বাদে আর কোনো লেখকের লেখাতেই শহুরে অভিজ্ঞতার দেখা মেলেনি।

আর আজকের যে শহুরে মধ্যবিত্ত অভিজ্ঞতার কথা বলা হচ্ছে তা অতীতের থেকে একেবারেই আলাদা। গ্রামের কাছ থেকে তালাক প্রাপ্ত এক নতুন শহুরে অভিজ্ঞতা এখনকার সাহিত্যের কেন্দ্র। ভোগবাদিতার প্রাবল্য সত্ত্বেও দৈনন্দিন জীবনের বর্ধিত গুরুত্ব সংস্কৃতির কেন্দ্রীয় মনোযোগ পেয়েছে। এটাকেই কিছুটা পবিত্র বলে গণ্য করা হচ্ছে। অন্যদিকে আগের দিনে আধুনিকতার যে উপাদানগুলোকে মহামূল্যবান মনে করা হতো সেগুলো পরিণত হচ্ছে সাধারণ বিষয়ে।

গ্লোবালাইজেশনের যুগে মধ্যবিত্তের উত্থান মানেই দৈনন্দিন জীবনের গুরুত্ব বেড়ে যাওয়া। দৈনন্দিন জীবনের আকাক্সক্ষাগুলো সাধারণ গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে এবং জীবনের লক্ষ্যে পরিণত হতে পেরেছে। বৃহত্তর আধুনিক ন্যারেটিভের মধ্যে যে দৈনন্দিন জীবন একদিন অবজ্ঞার শিকার হয়েছিল তা এখন সাহিত্যিক কল্পনার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এতে এখন মূল্যবোধ ও মহানুভবতার রঙ চড়ছে। দৈনন্দিন জীবনের নতুন এ সৌন্দর্যকে আবিষ্কার করার প্রবণতা নতুন সাহিত্যকে চালিত করছে।

খুুটিনাটি বিষয়ে বিস্তারিত বর্ণনা ও প্রতিদিনের জীবনের অনুপুঙ্খ স্থান করে নিচ্ছে সাহিত্যে। এভাবে মধ্যবিত্তের তাৎক্ষণিকতা ও রক্ষণশীলতার সম্পর্ক সাহিত্যে সেকিউলারিজমকে শক্তিশালী করছে। উল্লেখ্য, গ্লোবালাইজেশন, বহুজাতিক পুজির অধীনে এটাই মধ্যবিত্ত শ্রেণীর প্রধান বৈশিষ্ট্য। ডান হোক কি বাম, সব ধরনের মৌলিক আদর্শগত নীতি প্রান্তে সরে যাচ্ছে। নতুন জন্ম পাওয়া সাহিত্য লেখক-পাঠক সবাইকে তরুণ ও নতুন সংস্কৃতি দিয়ে স্নান করিয়ে দিচ্ছে।

আজকের নব জন্ম পাওয়া সাহিত্য হলো নতুন জনসংস্কৃতি ও গ্লোবালাইজেশনের ফলে জন্ম নেয়া বাজারের ফল। মূলধারার সাহিত্যকে এটি প্রভাবিত করতে পারে না। কিন্তু সাহিত্যের বাজারের মুখ ঘুরিয়ে দিতে পারে। অনাকাক্সিক্ষতভাবে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর সাহিত্যিক তারকারা অহঙ্কারী ও খেপাটে পদ্ধতিতে সাহিত্যকে নবজন্ম দানের কাজটি করছেন। এতে প্রাধান্য পাচ্ছে তাদের ব্যক্তিগত চরিত্র ও বোধ।

তরুণ লেখকদের হঠাৎ খ্যাতি সাহিত্যের সাধারণত্বকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে এবং সাহিত্যের মূল্যমান ও অর্থ সবই এখন সেলিব্রেটি খ্যাতির নিচে চাপা পড়েছে। এ নতুন সাহিত্য তরুণদের একান্ত নিজস্ব সৃষ্টি। এ ধারার লেখাগুলো স্পষ্টভাবে টিনএজারদের প্রবণতাগুলোকে ধরার চেষ্টা করে যারা ইলেকট্রনিক গেমস ও ইন্টারনেটে অভ্যস্ত। এ ধারার লেখাগুলোর বৈশিষ্ট্য : প্রথমত, গল্পের প্লট অধিকাংশ সময়ই ভাঙা ভাঙা। চরিত্রের ব্যক্তিগত জগৎটি উন্মোচিত হয় তার টুকরো টুকরো অনুভূতির বিন্যাসের মধ্য দিয়ে।

প্লটগুলো বিশেষভাবে ধোয়াশা। অধিকাংশ সময় সেখানে দৈনন্দিন জীবনের টুকরোগুলোর বিবরণ ও কখনো কখনো অনুভূতির উত্থান-পতনের বর্ণনা থাকে। দ্বিতীয়ত, এ লেখাগুলো সাধারণত ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ও টুকরো টুকরো ঘটনার মধ্যে সীমাবদ্ধ। যেমন আগের প্রজন্মের প্রতি অসন্তোষ, বয়ঃসন্ধির কিশোরদের অস্থিরমতি অবস্থা ও দৌড়ঝাপ। তৃতীয়ত, এতে থাকে এক ধরনের বিদ্রোহী প্রবণতা ও নিশ্চিতির মিশ্রণ।

এ সাহিত্যের বিষয়গুলোতে থাকে বর্তমান পুজিবাদী সংস্কৃতির বিরুদ্ধে কিছু কিছু বিদ্রোহী মনোভাব। পশ্চিমি টিনএজ উপসংস্কৃতির প্রভাবে রক অ্যান্ড রোল, ‘বিপথগামী প্রজন্ম’, নিজের ওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব আরোপ, ফ্রি চয়েসের সুযোগ, অধিক মাত্রায় আবেগের প্রকাশ এগুলোই অধিক গুরুত্বপূর্ণ। চতুর্থত, এ নতুন জন্ম পাওয়া সাহিত্য আরো এক ধরনের নতুন উপসাহিত্যের জন্ম দিয়েছে যাতে জনসংস্কৃতি ও শুদ্ধ সাহিত্যের মিশ্রণ ঘটেছে। এটা একই সঙ্গে বিদ্রোহী ও মূলধারার মহত্বকেও স্বীকার করছে। বিদ্রোহী ভাব নিয়ে আগের প্রজন্মের বিরুদ্ধে কথা বলার প্রবণতাটি এ লেখকদের প্রতি ভোগবাদী টিনএজ পাঠকের দৃষ্টি ফিরিয়েছে।

আবার এ ব্যাপারটি অবিভাবকদের দ্বারা কিছুটা সমর্থিতও। তারা এটাকে ইতিবাচক দৃষ্টি থেকেই দেখে। কারণ লেখা ও পড়া উন্নতিরই লক্ষণ। এ নতুন বাস্তবতায় চায়নিজ সাহিত্য সমালোচনা ও সাহিত্য তত্ত্ব এক নতুন প্রশ্নে মুখোমুখি দাড়িয়েছে। তারা দ্বিধান্বিত যে, মে ফোর্থ মুভমেন্টের পর যে ‘নতুন সাহিত্য’ তৈরি হয়েছিল তারপর আরো একটি লাফ দেয়ার প্রয়োজন হয়ে পড়েছে কি না।

চায়নিজ সাহিত্য মূলগতভাবে হেগেলিয়ান পদ্ধতিতে পৃথিবীর ইতিহাসের ঐতিহাসিক লক্ষ্য ও বাস্তব পদ্ধতি অনুসরণ করে এগিয়েছে। এটা মে ফোর্থ আন্দোলনের ধারা। আমরা আমাদের পশ্চাৎপদতাকে পৃথিবীর ইতিহাসের একটি পর্বে চিহ্নিত করেছি। ফলে কয়েকটি প্রজন্মের কঠোর বিদ্রোহ ও শ্রমের মাধ্যমে আমাদের ঐতিহাসিক গুরুত্ব অর্জন করতে হয়েছে। ঐতিহাসিক লক্ষ্যটি হলো, চায়নার সম্পদ ও ক্ষমতা অর্জন এবং ব্যক্তির মুক্তি।

চায়না একদিকে এর আদি ও আধুনিক ইতিহাসে বিষণœতা এবং বঞ্চনায় পূর্ণ। অন্যদিকে শ্রেণী হিসেবে এর নিজের দুর্বল বোধ জাতি হিসেবেও এর দুর্বল বোধকে প্রভাবিত করেছে। সমাজের নিচের দিকে নিপীড়কদের বিরুদ্ধে লড়াইটি প্রলম্বিত হয়েছে বৈশ্বিক সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে। এটাই আমাদের দুর্বল হওয়ার বোধকে শক্তিশালী করেছে। আধুনিক হওয়ার পথে অসম্পূর্ণতা সব সময়ই আমাদের সমাজে সংস্কৃতির কেন্দ্রীয় বিষয়।

আমরা যে লক্ষ্য অর্জন করেছি তা পৃথিবীর ইতিহাসের এমন এক অবস্থান যা কোনোদিনই পূর্ণ হওয়ার নয়। এটাই বিংশ শতকের চায়নায় প্রধান আলোচ্য বিষয়। চায়নায় গ্লোবালাইজেশন ও বাজার নির্ভর হওয়ার প্রথম পর্যায়ে ১৯৯০-এর দশকে নতুন চায়নার উন্নয়ন এ প্রসঙ্গকে জয় করেছে। সাম্প্রতিক উন্নয়নগুলো দুই পদ্ধতিতে সফল হয়েছে : বিশ্ব পরিস্থিতির সঙ্গে যুক্ত হওয়া এবং সাধারণ মানুষকে সম্পদ উপার্জন ও জীবন পরিবর্তনে যুক্ত করতে পারার মাধ্যমে। চায়না এমন একটি অভূতপূর্ব উন্নয়ন সম্ভব করে তুলেছে যা গত একশ বছরে সম্ভব হয়নি।

আর এ উত্থান সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ। এ অভাবিত উন্নয়ন চায়নার দুর্বল ও বিদ্রোহী আগের অবস্থানে পরিবর্তন এনেছে। নতুন শতকের আগমনে নতুন পরিবর্তন স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। চায়নার সাহিত্যিক চিন্তা নতুন কিছু ভিত্তির ওপর এগোবে। প্রথমত, এটি নতুন সাহিত্য বিষয়ে পুনর্বিবেচনা ও প্রশ্ন উত্থাপন করবে।

সাহিত্যের ইতিহাসের পুনর্লিখন শুরু হয়েছিল ১৯৮০-র দশকে উত্তর আধুনিক সাহিত্য ও সাহিত্য তত্ত্ব বিচার শুরু হয়েছিল ১৯৯০-এর দশকে। আর এখন পর্যন্ত ২০ শতকের সাহিত্যের পুনর্বিবেচনা শেষ হয়নি। এ ধারার পুনর্বিবেচনা সাহিত্যিক আধুনিকতার মাধ্যমে চিহ্নিত। দ্বিতীয়ত বাজার নির্ভর গ্লোবালাইজেশনের পরিস্থিতিতে নতুন যে সাহিত্যিক প্রবণতা তৈরি হয়েছে তাকে নতুনভাবে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করার প্রয়োজন পড়বে। সাহিত্য তত্ত্ব প্রসারিত হবে সংস্কৃতি পাঠের আরো বৃহত্তর পরিসরে।

আলোচনা করতে হবে জনসংস্কৃতি, বিশেষ করে ক্রেতা সংস্কৃতির সঙ্গে সাহিত্যের সম্পর্ক ও এর ওপর গ্লোবালাইজেশনের প্রভাব। সাহিত্য সমালোচনার পরিসর অতিক্রম করে একে কালচারাল ফেনোমেনা হিসেবে পাঠ করতে হবে। এটাই নতুন ভাবগত পরিস্থিতিতে চায়নার আজকের সংস্কৃতি। এ ধরনের সাহিত্য তত্ত্বই দরকার। কারণ এটা চায়নার সমস্যাও।

ফলে সাহিত্য সমালোচনা যখন সাংস্কৃতিক পর্যালোচনার বিষয় হয়ে পড়ে তখন সেটা শুধু ফ্যাশন নয়, অবশ্য প্রয়োজনীয়ও বটে। ঝ্যাং ইউ : সাহিত্য তাত্ত্বিক ও বেইজিং ইউনিভার্সিটির প্রফেসর। ভূমিকা ও অনুবাদ : মাহবুব মোর্শেদ

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.