আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ডানপিটে কৈশরঃ পর্ব এক

মিডিয়া

আজ এতো জলদি ফোন করলে যে, অপেক্ষা করতে করতে ঘুমই হলোনা। রাত জেগে ভোর বেলা যেই ঘুমটা লাগলো অমনি তোমার ফোন। - আজ তোমার ছেলেবেলার গল্প শোনানোর কথা । মনে আছে অলক, গত সপ্তাহে তুমি প্রমিজ করেছিলে। - আচ্ছা অলক ছেলেবেলায় তোমাকে নাকি তোমার বন্ধুরা ল্যাবরেটরি চোর বলে ডাকতো! - কে বললো তোমাকে এসব কথা ? - তোমার ডায়েরিতে লেখা ছিলো. একবার চুরি করে তোমার টেবিলে রাখা ডায়েরির কয়েকটা পাতা আমি পড়ে ফেলেছিলাম।

পুরো কাহিনীটা পড়ার সুযোগ হয়নি। অলক খানিক টা হেসে বললো, পুরোটা শুনবে? - ষষ্ঠ শ্রেনীর কথা। আমি তখন কুমিল্লা জিলা স্কুলের ছাত্র। ছাত্র যেমনই হই, ফার্স্টবেঞ্চে আমার বসা চাই। এই নিয়ে রীতিমত মারামারি বেঁধে যেত।

আমি ফরিদ দুইজনই ক্লাশে ফার্স্টবেঞ্চে বসার জন্য একটু বাড়তি কায়দা করতাম। সকালবেলা অংকের টিচার রশিদ স্যারের বাসায় পড়া শেষে স্কুলে গিয়ে ফার্স্টবেঞ্চে জায়গা রেখে তার পর বাসায় ফিরতাম। এবার ১২ টায় ক্লাস শুরুর ৫ মিনিট আগে আসলেও সিট নিয়ে কোন ঝামেলা নেই। মাঝে মধ্যে ঝগড়া বেঁধে যেত। কিছু ত্যাঁদর পোলাপান একটা খাতা দিয়ে জায়গা রাখলে বুঝে ফেলতো, আমরা আগে জায়গা রেখে গিয়েছিলাম।

ছুড়ে ফেলতো পিছনের সিটে। মাঝে মধ্যে মন খারাপ করে পিছনেও বসতে হয়েছে। একদিন প্রাইভেট টিউটরের পড়া শেষে সকাল ৯ টায় ফার্স্টবেঞ্চে জায়গা রাখতে স্কুলে গিয়েছি, যথারীতি ফরিদ আমি দুজনেই বাসায় ফিরছিলাম। হঠাৎ পেছন থেকে ফরিদের ডাক শুনেতে পেয়ে তাকিয়ে দেখি ফরিদ আমাদের বিজ্ঞানাগারের জানালা বেয়ে উঠার চেষ্টা করছে। কিছুদূর গিয়েই চিৎকার করে - দোস্ত, পাইছি।

অনেক দিন খুঁজে এই ফাঁক পাইলাম, আজকে ল্যবরেটরির ভিতরে কি আছে সেটা দেখবো। মাথা গলিয়ে ফরিদ ইতিমধ্যে ল্যবরেটরিতে ঢুকে পড়েছে। আমি লাফ দিয়ে জানালার কার্নিশ ধরার চেষ্টা করছি, অতপর সফল হলাম। নিচ থেকে জানালা দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখি ফরিদ তার গবেষণা শুরু করে দিয়েছে। কি শুনছো তো তুমি? টেলিফোনের অপর প্রান্তে নওরিতা বললো, একটু থামো।

আমি এককাপ চা নিয়ে আসি, মাত্র ঘুম থেকে উঠলাম। ঘোর কাটেনি, তবে তোমার গল্পটা খুব থ্রিলিং মনে হচ্ছে। নওরিতার ফিরে আসার ফাঁকে অলক প্রয়োজনীয় ইমেইল চেক করে নিলো। সামহোয়ারের পেজটা খুলে পোস্টগুলো স্ক্রল করতে করতে টেলিফোনের অপর প্রান্তে নওরিতার ফিরে আসার কণ্ঠ শুনতে পেলো। সালফিউরিক এ্যাসিড ,নাইট্রিক এ্যাসিডের মিশ্রণ বেসিনে ঢালছে ফরিদ, বেসিনের মুখটা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে কেমিকেল পাউডার দিয়ে।

এর মধ্যে কিছু দ্রবণ নিয়ে চীনা মাটির বেসিনে রাখা হয়েছে। সম্ভবত বিজ্ঞানী ফরিদ ঐদ্রবন দিয়ে কোন পরীক্ষা চালাবেন। এমন সময় জানালা দিয়ে আমি লাফ দিয়ে নামলাম, আমি কোনটা সালফিউরিক এ্যাসিড কোনটা নাইট্রিক এ্যাডিট সেগুলো না খুঁজে লিটমাস পেপার খুঁজছিলাম। ক্লাসের টিচার বলেছে সালফিউরিক এ্যাসিডের দ্রবণ লাল লিটমাসকে নীল ও নীল লিটমাসকে লাল করে। আজ সেই পরীক্ষা হবে।

ফরিদ এ্যাসিড ঢালছে আর আমি দেখতে থাকলাম এ্যাসিডের দ্রবণে লিটমাস পেপার কিভাবে চোখের পলকে নিজের রঙ বদলায়.. নওরিতা তোমার কি কখনোও মনে হয়েছে সাত বছর আগে যে নওরিতাকে আমি জানতাম বিলেতে আসবার পর সেই নওরিতা লিটমাস পেপারের মত রঙ বদলেছে? নওরিতা আলতো কণ্ঠের জবাব, কেন ওভাবে বলছো অলক! আমি কি সবসময় তোমার পাশে থাকিনি ? হঠাৎ তোমার এমন মনে হবার কারণ কি? অলক খানিকক্ষণ থেমে আবার শুরু করে, ফরিদ বেশ কিছু টেস্টটিউব জড়ো করেছে, আমারও লোভ হলো বাসায় টেস্টটিউব নেবো। খানিকটা পানি দিয়ে ওটাতে মানিপ্ল্যান্ট গাছ লাগিয়ে বারান্দাতে সাজিয়ে রাখা যাবে। সাথে কয়েকটা চিনামাটির বেসিন। হঠাৎ বাইরে থেকে চোর চোর বলে চিৎকার করছে দারোয়ান। ফরিদ একলাফে জানালা দিয়ে বের হয়ে দৌড়।

আমি ঘটনা কিছুই বুঝে উঠতে পারছিনা। যখন সিদ্ধান্ত নিলাম লাফিয়ে পড়বো তখন দেখি জানালার নিচে দারোয়ান বাবা হাজির। ফরিদও পালাতে পারেনি। দারোয়ান দুজনকে ধরে হেড টিচারের বাসায় নিয়ে গেলো। বাইরে থেকে গেট বন্ধ।

এখন অপেক্ষা কখন হেড টিচার আসেন। এই সময়ে ফরিদ বুদ্ধি বাতলে দিলো নাম ঠিকানা মিথ্যা বলতে হবে। যথারীতি প্ল্যান অনুযায়ী আমরা আগালাম। হেড টিচার সালাম স্যার ফরিদ কে জিজ্ঞেস করলেন, কিরে ল্যাবরেটরীতে কি করতে ঢুকেছিলি? - স্যার একটু দেখতে, ওখানে ভিতরে কি আছে দেখার খুব শখ। - ভেতরে কি আছে সেটা দেখতে কি জানালা ভেঙ্গে পেছন দিয়ে ঢুকতে হয়? ফরিদ তার বাবার নাম বললো কামাল উদ্দীন।

তার পর বাসা বললো উল্টা পাল্টা করে। আমি সাহস করে নাম ধাম ভুল বললেও বাসার এড্রেস দিতে গিয়ে বলে ফেলেছি , সায়েন্স টিচার কাশেম স্যারের বাসার পাশেই আমার বাসা। যথারীতি আমরা ক্লাসে আসি। হেড টিচার আবদুস সালাম স্যার আর আমাদের খুঁজে পাচ্ছেনা। আমাদের দেয়া নাম, ক্লাস ও রোল নং অনুযায়ী আমাকে আর ফরিদ কে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা।

কাশেম স্যারকে ডাকা হলো, আপনার বাসার কাছে ষষ্ঠ শ্রেনীতে কে পড়ে? স্যারকে নিয়ে হেড টিচার প্রতিক্লাসে টহলে বের হলেন। যথারীতি আমি ধরা খেলাম। তার পরদিন ফরিদও। আমাদের দুজনকেই কেন টিসি দিয়ে বের করে দেয়া হবে না এই মর্মে বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হলো। জানানো হলো, ৭ দিনে মধ্যে অভিভাবক এসে এর ব্যাখ্যা দিয়ে টিসি নিয়ে যাবেন।

ইতিমধ্যে স্কুলে রটে গেছে ল্যাবরেটরিতে আমরা চুরি করতে গিয়ে ধরা খেয়েছি। আমাদের টিসি দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। ফরিদদের ছিলো আইসক্রিম ফ্যাক্টরী। ফরিদ ফেক্টরী ম্যনেজার কে বাবা সাজিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিলো। আমি বললাম আমার বাবা সিলেটে পোস্টিং, উনি আগামী এক মাস আসবেন না।

মামাকে বললাম হেডটিচারের সাথে দেখা করতে। বাসায় বললাম আমরা ল্যবরেটরিতে ঢুকেছিলাম একটু দেখতে ... জানো নওরিতা মুচলেকায় কোন কাজ হয়নি, আরো অনেক ঘটনা ঘটিয়েছিলাম স্কুলে। আচ্ছা সেই গল্প আরেক দিন করবো। সবচেয়ে মজার ঘটনা কি জানো নওরিতা সেই ফরিদ আর আমি এখন দুজনেই লন্ডনে । ফরিদের একটা ফুটফুটে মেয়ে হয়েছে গেল সপ্তাহে আমি ওকে দেখতে গিয়েছিলাম।

সত্যিই পৃথিবী গোল।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।