আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রিয় বান্ধবী - ২

"পসার বিকিয়ে চলি জগৎ ফুটপাতে, সন্ধ্যাকালে ফিরে আসি প্রিয়ার মালা হাতে"

প্রিয় বান্ধবী - ২ এআইটিতে পড়তে আসা বেশ ক’জন বিদেশী ছাত্রীর সাথে আমার অল্পদিনেই বন্ধুত্ব হয়ে গেল। দীর্ঘ আলাপচারিতায় আমি তাদের কাছে একজন বিশ্বস্ত বন্ধু হিসেবে মর্যাদা পেলাম। তাই ঘনিষ্ঠভাবে মেশার সুযোগ পেলাম। এদের সবাই কিন্তু আমার ক্লাশমেট ছিল না। ক্লাশমেটদের মধ্যে বাংলাদেশের ফারজানা আর নন্দিতার সাথে আমার সুসম্পর্ক প্রথমদিন থেকেই।

পরে আরও যাদের সাথে বন্ধুত্ব হয় তারা হলো পিংকী (ফিলিপাইন), পিচা (থাইল্যান্ড), অ্যান (ভিয়েতনাম), ওয়েন্ডি (চীন), অনিতা (নেপাল), মনিকা দুজন (ভারত ও নেপাল)। তারা সবাই আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল। ক্যাম্পাসের ভাল সময়গুলো তাদের সাথেই কাটতো। লাইব্রেরী থেকে শুরু করে ক্যাফেটিরয়া সবখানেই আমাদের আড্ডা চলতো। মজার মজার সব অভিজ্ঞতার কথা সবাই শেয়ার করতাম।

পরবর্তীতে বেষ্ট ফ্রেন্ড বলতে যা বোঝায় সে ছিল ওয়েন্ডি। এআইটি ছেড়ে আসার সময় সবাই একসাথে আমাকে এয়ারপোর্টে সী অফ করতে এসেছিল। সেদিন কারো চোখের দিকে সরাসরি তাকাতে পারিনি। জীবনে প্রথম কিছু বন্ধুর ভেজা চোখ প্রত্যক্ষ করেছিলাম। আমি তাদের কাউকেই ভুলিনি।

তাদের নির্মল বন্ধুত্বকে কখনই ভুলতে পারিনি। এআইটি ক্যাম্পাসের বাইরে যে দু’জন আমার খুব ভাল বন্ধু ছিল কাকতালীয়ভাবে তাদের দুজনের নামই ছিল মনিকা। একজন নেপালের ও একজন ভারতের। তারা আমার অনেক জুনিয়র হলেও নির্মল এ বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। ওরা দুইজন এআইটি ক্যাম্পাস থেকে একটু দূরে থামাসাত বিশ্ববিদ্যালয়ে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তো।

এআটি ক্যাম্পাসে ওরা দুজন নিয়মিত লাঞ্চ ও ডিনার করতে আসতো পরিচয়টা সেই সূত্র ধরেই। দেশে ফেরার পরেও আমাদের মধ্যে চিঠি লেখালিখি হতো। মনিকা, ওয়েন্ডি দীর্ঘদিন আমাকে চিঠি লিখেছে, গিফট কার্ড ও শুভেচ্ছা কার্ড পাঠিয়েছে। মনিকা মাঝখানে ২/৩ বছর অষ্ট্রেলিয়া ছিল হায়ার স্টাডিজের জন্য। মনিকার সাথে পরিচয়ের আট বছরের মাথায় ওর বিয়ের ইনভাইটেশন কার্ড পেয়েছিলাম।

ছেলে ভারতীয়। নাম নরেশ। লন্ডনে পড়া শেষ করে একটা বৃটিশ কোম্পানীতে চাকরী পেয়ে যায়। পেশায় সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। দুজনেই আমাকে নিয়মিত মেইল পাঠাতো।

ওয়েন্ডির চিঠি পেতাম অনেক বিরতিতে। ব্যাংকক ছেড়ে চলে আসার পরেও নিয়মিত চিঠি দিলেও পরে তাতে ভাটা পরে। চার বছর পর্যন্ত যোগাযোগ ছিল। নীল খামে, নীল প্যাডের কাগজে, নীল কালিতে লেখা ওয়েন্ডির অনেকগুলো চিঠি পেয়েছি। তাতে যেমন আশার কথা থাকতো তেমনি নীল নীল বেদনার কথাও থাকতো।

চিঠি পড়া শেষ হলে আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবতাম। আকাশের মত বিশাল হলে অনেক নীল ধরে রাখা যায়। কষ্টকে তখন আর নীল মনে হতো না। আকাশের মেঘে কষ্টগুলো মিশে যেত। আমি নিজেই আকাশ হয়ে যেতাম।

কখনও বৃষ্টি হয়ে যেতাম। সব ভালবাসায় কিছু না কিছু কষ্ট থাকে। চলবে-

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.