আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রিয় বান্ধবী - ১

"পসার বিকিয়ে চলি জগৎ ফুটপাতে, সন্ধ্যাকালে ফিরে আসি প্রিয়ার মালা হাতে"

[আমার প্রিয় ব্লগার আনোয়ার সাদাত শিমুল আমাকে একবার অনুরোধ করেছিল এই লেখাটা পুনর্বার পোষ্ট করার জন্য। তার অনুরোধ রক্ষা করার জন্যই মুছে ফেলা পোষ্ট নতুন করে পোষ্ট করলাম। ] ১৯৯৫ সালের কথা। জানুয়ারী থেকে এপ্রিল, সময়ের হিসেবে পুরো চারমাস। ইউএনডিপি'র আর্থিক সহায়তায় মানব সম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে একটা প্রশিক্ষণ কোর্সে অংশ নিতে ছয় জনের একটা টীম থাইল্যান্ড এলাম।

ব্যাংকক শহরেই আমাদের অবস্থান। প্রশিক্ষণের ভেন্যু এশিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি সংক্ষেপে যার নাম "এআইটি"। প্রতিষ্ঠানটি ব্যাংকক শহরের একপ্রান্তে "থামাসাত" এলাকায় অবস্থিত। "থামাসাত বিশ্ববিদ্যালয়" নামে এখানে আরও একটা উচ্চমানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। "এআইটি" এশিয়ার অন্যতম সেরা কারিগরী ও প্রকৌশল বিষয়ক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

এই প্রতিষ্ঠানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বিষয়ের উপর প্রশিক্ষণ বা কোর্সে অংশ নিতে বিভিন্ন পর্যায়ের ছাত্র, শিক্ষক, বিশেষজ্ঞ, ব্যুরোক্র্যাটস, প্রকৌশলী, বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তারা এসে থাকেন। এখানে বিভিন্ন সরকারী প্রতিষ্ঠানের জন্য নিয়মিত ও খন্ডকালীণ প্রশিক্ষণ কোর্স, দীর্ঘমেয়াদী ও স্পেশাল প্রশিক্ষণ কোর্স ডিজাইন করা হয়। নির্ধারিত ভর্তি ও টিউশন ফী জমা দিয়ে নিয়মিত মাস্টার্স ও ডক্টরাল কোর্সেও ভর্তি হওয়া যায়। এখানে স্কলারশীপের সুযোগ খুব কম। তবে কোন প্রতিষ্ঠান অর্থায়নের বিষয়টি নিশ্চিত করলে বা স্পন্সর করলে ভর্তি হওয়া তেমন কঠিন নয়।

এখানে কোর্স কোঅর্ডিনেটর দ্বায়িত্ব পালন করেন অভিজ্ঞ সব শিক্ষকবৃন্দ। সময় সময় বিভিন্ন দেশ থেকে গেষ্ট লেকচারার আসেন খন্ডকালীন সময়ের জন্য ক্লাশ নিতে কিংবা থিসিজ পর্যবেক্ষণ করতে। সমকালীন সময়ে বিভিন্ন সমস্যা নিরসনে অবদান রেখেছেন এমন সব এক্সপার্ট বা রিসোর্স-পাসর্নরা প্রায়ই "এআইটি" সফরে আসেন বা তাদের আমন্ত্রন জানানো হয়। এই প্রতিষ্ঠানে আমার শিক্ষার বিষয় ছিল নগর পরিকল্পনা ও নগর পরিবেশ ব্যবস্থাপনা। নগর পরিকল্পনা বিষয়ের কোর্স কো-অর্ডিনেটর ছিলেন প্রফেসর ডঃ ক্যামেয়ার।

জার্মান এক অমায়িক ভদ্রলোক। ক্লাশে বেশ মজা করতেন। নগর পরিবেশ ব্যবস্থাপনা বিষয়ের কোর্স কো-অর্ডিনেটর ছিলেন প্রফেসর জে বি হুইটনি। অত্যন্ত রসিক ও প্রাণবন্তু এক আমেরিক্যান। আমার কোর্সমেট ছিল বিভিন্ন দেশের পায় ৩০ জন ছাত্র ছাত্রী।

এদের মধ্যে ৮ জন ছিল মেয়ে ও ২২ জন ছেলে। প্রথম সেমিস্টারে এই বিষয় দুটো সবারই কমন ছিল। একই কোর্সে বাংলাদেশের ২ জন মেয়ে ছিল ফারজানা ও নন্দিতা। সাথে আরও যে দুইজন বাংলাদেশী ছিল তারা আমার অফিসের দুই জুনিয়র সহকর্মী, শাহ্ আলম ও তৌফিক। দুজনের মধ্যে শাহ আলম বিবাহিত।

তৌফিক দেখতে সুন্দর ও অবিবাহিত হলেও পুরো কোর্স চলাকালীন সময়ের মধ্যে কোন মেয়ের কাছেই সে প্রিয়পাত্র হয়ে উঠতে পারেনি। বয় ফ্রেন্ড হতে পারেনি কোন মেয়ের। প্রেম-ভালবাসার ব্যাপারে তৌফিকের কিছুটা গোড়ামী লক্ষ্য করেছি। নইলে ফারজানার সাথে প্রেমটা হয়তো হয়েই যেত। ব্যাংকক আসার মাস খানেক পরেই ছিল "ভ্যালেন্টাইনস্ ডে"।

১৪ ফেব্রুয়ারীকে ঘিরে এআইটি'তে তখন বেশ একটা রমরমা অবস্থা। পুরো এআইটি'র ক্যাম্পাস জুড়ে ভালবাসা দিবসের চর্চা। শহরটা যেহেতু ব্যাংকক তাই প্রেম, ভালবাসা, রোমান্টিকতা সেখানে নিত্য বাতাসে ভেসে বেড়ায়। ভালবাসা দিবস এখানে আলাদা মাত্রা পাবে জানা কথা। সব মিলিয়ে বেশ রোমান্টিক আর আবেগীয় পরিবেশ।

আমার জীবনে প্রথম এমন উষ্ণ ও আবেগঘন "ভ্যালেন্টাইন'স ডে" দেখার সুযোগ হলো। যারা প্রেম-ভালবাসার ব্যাপারে একটু বেশী ষ্পর্শকাতর তারা এই দিনটির জন্য ব্যাকুল হৃদয়ে অপেক্ষা করেন। ক্যাম্পাসে বেশ কদিন আগে থেকেই চলছিল ভ্যালেন্টাইনস্ ডে'র প্রস্তুতি। এআইটি'র গিফট্ শপে নানারকম গিফট আইটেমের ছড়াছড়ি। ভালবাসার মানুষ কাছে থাকুক বা নাই থাকুক আমার আগ্রহের কোন কমতি ছিল না।

মন আমার তখন দারুন উত্ফুল্ল। আমি ভীষণভাবে অপেক্ষা করছিলাম সেই দিনটির জন্য। চলবে-

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.