আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কৃষক আন্দোলনের ইতিহাসে জমিদার নবাব আলী সফদর খান

সময়... অনাদি... হতে... অনন্তের... পথে...

নবাব আলী সফদর খান ছিলেন অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে প্রাতবাদী ব্যক্তিত্ত্ব। জমিদার নবাব আলী আমজাদ খানের নাতি ও নবাব আলী হায়দার খানের পুত্র আলী সফদর খান রাজা সাহেব নামেই পরিচিত ছিলেন বেশি। সামরিক স্বৈরাচার, সাম্রাজ্যবাদ, পুজিবাদ এমনকি নিজের পরিবারের সামন্তবাদী শোষণের বিরুদ্ধে লড়াই করে তিনি পরিণত হয়ে উঠেছিলেন একজন জনদরদী মেহনতি মানুষের প্রতিবাদী নেতা হিসেবে। ১৯১৯ সালের ১৯ জুলাই মাতামহ মোর্শিদাবাদের নবাব ওয়াসেফ আলী মির্জার বাড়ি প্যালেস ওয়াসেফ মঞ্জিলে জন্ম গ্রহণ করেন তিনি। প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করেন, শিলং এর সেন্ট এন্ড মান্ডস ইংলিশ স্ড়্গুলে।

কলকাতার মাদ্রাসায়ে আলিয়া এবং দার্জিলিং এর সেন্ট পালসেও কিছুদিন লেখাপড়া করেন। বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে যোগ দেওয়ায় একবার বহিষ্ড়্গারও হয়েছিলেন স্কুল থেকে। কলকাতায় জীবনের এক পর্যায়ে কমিউনিষ্ট নেতা স্নেহাংশু আচার্যের সাথে পরিচয় হয় রাজা সাহেবের। তারই প্রভাবে আকৃষ্ট হয়ে সিদ্ধান্ত নেন রাজনীতি করার। চলে আসেন সিলেটে।

কৃষক নেতা সৈয়দ সয়ফুল হোসেন এবং আব্দুল মালিক তাকে পরিচয় করিয়ে দেন জননেতা পীর হাবিবুর রহমান, নুরুল ইসলাম, তারা মিয়া, আসাদ্দার আলীসহ আরো অনেক নেতাদের সাথে। তাদের পরামর্শেই তৎকালীন গোবিন্দ পার্কে বর্তমানে হাসান মার্কেট আওয়ামীলীগের এক জনসভায় আওয়ামীলীগে যোগ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন। পূর্ব বাংলার প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে মুসলিম লীগের প্রার্থী বাবা নবাব আলী হায়দার খান এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে যুক্তফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থী মহিবুস সামাদের প েনির্বাচনী কাজে বলিষ্ট ভূমিকা পালন করেছিলেন তিনি। তখন থেকে বামপন্থী ও প্রগতিশীলদের আরো কাছে চলে যান রাজা সাহেব। সর্ম্পক বাড়তে থাকে কমিউনিষ্টদের সাথেও।

তারই সুবাদে ৫৭ সালে কমিউনিষ্ট পার্টির সদস্যপদ লাভ করেন তিনি। প্রাদেশিক কমিটির সদস্য ও সিলেট জেলা কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন। পরবর্তিতে ন্যাপ (ভাষাণী) এর কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামেই কৃষকরা সাথে ছিলো তার। তাই তার অধিক পরিচয় ছিলো একজন কৃষক নেতা হিসাবেই।

১৯৬৬ সালে পৃথিম পাশায় অনুষ্ঠিত কৃষক সম্মেলনে রাজা সাহেব জেলা কমিটির সভাপতি নির্বাচীত হন। ১৯৬৭ সালে লস্ড়্গরপুরে অনুষ্ঠিত সমিতির কেন্দ্রীয় সম্মেলনে কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন তিনি। নবাব আলী সফদর খান রাজা সাহেবের নেতৃত্ব ছিল বালিশীরা, কড়াইয়া, ফুলবাড়ীসহ প্রতিটি কৃষক আন্দোলনেই। স্বাধীনতা যুদ্ধেও তার অংশগ্রহণ ছিল বীরত্বপূর্ণ। যুদ্ধকালীন সময়ে পাক হানাদার বাহিনীর হাত থেকে প্রাণে রা পেতে ভারতগমনরত জনতাকে সীমান্ত পাড় করে দিতে রাজা সাহেব বিরাট ভূমিকা রেখেছিলেন।

স্বাধীনতা যুদ্ধের নয় মাস মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে সাহায্য করেছিলেন তিনি। যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে দেশে ফিরে আসা শরনার্থীদের পুনর্বাসনে রাজা সাহেবের ভূমিকাও ছিল উল্লেখযোগ্য। মৌলভীবাজার জেলার অত্যান্ত জনপ্রিয় কৃষক নেতা ছিলেন নবাব আলী সফরাদ খান রাজা। উপজেলার পৃথিম পাশার জনাব আলী আমজাদ খান নবাবের নানার পরিবার ছিলো বৃহত্তর সিলেট জেলা, এমনকি গোটা বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী পরিবার। নবাব পরিবারের সন্তান হয়েও জমিদারি প্রথার বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিলেন তিনি।

এই খ্যাতিমান নেতা ১৯৭৪ সালে ১৬ জুলাই মৃত্যুবরণ করেন। কুলাউড়ার জনপ্রিয় এই নেতার ৩৩ তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি আজ নেই, আছে তার কর্ম তাইতো কৃষক আন্দোলনের ইতিহাসে নবাব আলী সফদর খান রাজা সাহেবের নাম লিখা থাকবে চির স্মরণীয় হয়ে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।