আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ধর্মান্ধরা মুড়ি খাও। মহিলারা নামাজের নেতৃত্ব দিতে পারবে না কেন?

যে ঘড়ি তৈয়ার করে - সে - লুকায় ঘড়ির ভিতরে

১. ইউনিভার্সিটি অফ মিশিগান থেকে পিএইচিধারী এবং একই সাথে আল আজহারের ডিগ্রীধারী আমিনা ওয়াদুদের একটা সাক্ষাতকার (হোয়াট ইজ এনলাইটেনমেন্ট ম্যাগাজিনে) পড়ার আগে জানা ছিলো না এই ভদ্রমহিলাই ২০০৫ সালের মার্চ মাসে নিউ ইয়র্ক সিটিতে মহিলা ও পুরুষদের একসাথের এক জমায়েতে নামাজের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। স্বভাবতই আমি কৌতুহল বোধ করি। আমার কাছে মহিলাদের নামাজে নেতৃত্ব দেওয়ার মধ্যে তেমন কোন সমস্যা মনে হয় না। এটা স্রেফ একটা সোশ্যাল ট্যাবু মাত্র এবং ইসলামের মাজহাব তৈরীর সময়েও সেই ট্যাবু থেকেই আইন তৈরী হয়েছে যা বলে মহিলারা পুরুষের নামাজের নেতৃত্ব দিতে পারবে না। অনেক মাজহাবে বলে নারীরা কেবল নারীদের নামাজে নেতৃত্ব দিতে পারবে, তাও যদি নফল হয়।

আবার কোন মাজহাব বলে ফরজ পারবে। আশ্চর্য লাগে যখন জানি যে নবী স্ত্রী আয়েশা নামাজে আজান দিয়েছেন, ইমাম হয়ে নামাজ পড়িয়েছেন। অবাক হই যখন জানি নবী নিজে মহিলা সাহাবী উম্ম ওরাকাকে নামাজ শিখিয়ে তার ট্রাইবে ইমাম হিসেবে পাঠিয়েছেন। তারপরেও ধর্মান্ধরা তাদের ট্যাবু ছাড়তে পারে না। আরে আশ্চর্য্য প্রার্থনা হইলো প্রার্থনা।

তাতে একজন নারী যদি প্রার্থনার বাক্য উচ্চারন করে তাতে পার্থক্যটা কি হয়? অনেকে নারীর শারীরিক আকর্ষনের খোটা দিয়ে বসেন। ভাবখান এমন যেন নারী পোষাক ছাড়াই ঐখানে দাড়াবে। হাস্যকর চিন্তা, হাস্যকর আউটলুক। ২. আমিনা ওয়াদুদ প্রথম না। সাম্প্রতিক সময়ে আসরা নোমানীও মহিলা ও পুরুষ একসাথে প্রার্থনার শীর্ষে দাড়িয়ে প্রার্থনা করিয়েছেন।

কিন্তু প্রতিবারই সমালোচনার ঝড় গেছে। মহিলা ইমাম, তওবা তওবা টাইপ মনোভাব। কনসপিরেসি থিওরীও বেরিয়ে এসেছে: আরে এগুলো হলো পাবলিসিটি স্টান্ট, ইহুদীদের ইসলাম ধর্ম নষ্ট করার পায়তারা ইত্যাদি ইত্যাদি। অথচ কারোরই ইসলামের ইতিহাস ঘেটে দেখার মুরোদ নেই এই চিল্লানোর আগে। একবিংশ শতাব্দীতে ইসলাম ও মুসলিম আর তাই সমার্থক শব্দ না, বরং বিপরীতার্থক শব্দ।

ক্যামনে কি, খুইলা বলি সংক্ষেপে। ৩. নবী মুহাম্মদকে, যার প্রতি সালাম, তাকে যদি ফেমিনিস্ট বলা হয় তাইলে খুব ভুল হবে না। নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠাই শুধু না, নারীদের অধিকার সম্পর্কে নতুন ধারনা এবং শত বছরের সামাজিক রীতিকে ভাঙ্গতে তিনি শুধু থিওরীটিক্যাল প্রস্তাবই করেন নাই; সফলও হয়েছেন সুবিশাল ক্যানভাসে। যেখানে কেনাবেচার হাটে পশুর কাতারে নারীকে বিক্রি করা হতো, সেইখানে চিন্তাভাবনা ছাড়াই মেয়ে শিশুকে জ্যান্ত পুতে ফেলা হতো সেই সমাজে নারীদের ডিগনিটি বা সন্মান আবার পুনরুদ্ধারকারী হিসেবে নবী মুহাম্মদের রেডিকেল ভিশন ছিলো অত্যন্ত বোল্ড এবং সময়ের থেকে অনেক এগিয়ে। অনেক গুরুত্বপূর্ণ সময়ে তিনি তার স্ত্রীদের পরামর্শ নিয়েছেন।

খাদিজার ভূমিকা তার সামাজিক জীবনে, এমনিক নবী হওয়ার পরেও অনেকাংশে ছিলো এ্যাডভাইজারের। সেই নবী মুহাম্মদের সময়ে নারী পুরুষ নির্বিশেষ সবার জন্য শিক্ষা অত্যবশ্যকীয় ঘোষনা করেছেন যা এখনো আধুনিক এই সময়ে আমরা বাস্তবায়ন করতে ব্যর্থ হয়েছি। সব মিলিয়ে নবী মুহাম্মদ যে একজন ফেমিনিস্ট, নারী অধিকার সচেতন কোন সন্দেহ নেই। শতবছরের সোশ্যাল বায়াসনেসের কারনে জাহিলিয়াতের সময়ে নারীদের প্রতি যে ধরনের আচরন ছিলো, আরব বিশ্ব সহ মুসলিম অনেক জায়গাতে ঘটনা তাই একই রকম আছে। কিন্তু নবী মুহাম্মদের সময়ের কিছু ইতিহাস কিন্তু অন্য কথা বলে।

বিশেষ করে নারী নেতৃত্বে গোত্রের নারী পুরুষ নির্বিশেষে প্রার্থনার উদাহরন কিন্তু সেই সময়ের। ৪. উইবেক ওয়ালথারের উওমেন ইন ইসলাম বইয়ে ইসলামের প্রাচীন ইতিহাসে লিপিবদ্ধ ঘটনা থেকে জানা যায় উম্ম ওরাকা বিনতে আবদাল্লাহর কথা। তাকে নবী নিজে শিক্ষা দিয়েছেন এবং তার পুরো গোত্রের জন্য নামাজের নেতৃত্বের অনুমতি দিয়ে পাঠিয়েছিলেন। এবং ইনিই সেই উম্ম ওরাকা যে কুরআন লিপিবদ্ধ হওয়ার সময়ে ভূমিকা রেখেছেন সংরক্ষিত এবং টুকরো টুকরো কুরআনের বানীকে একত্রিত করায়। ইসলামের একেবারে শুরুর দিকে মহিলারা আজান দিয়েছেন, মহিলারা মদীনায় মসজিদ বানাতে সাহায্য করেছেন।

নবী স্ত্রীদের মধ্যে অনেকেই নবীর ট্রাডিশন বা হাদীস লিপিবদ্ধ করাতে বিশাল ভূমিকা রেখেছে। তাদের বক্তব্য ইসলামের ইতিহাস তৈরী করেছে। উদাহরন আছে নবীর নাতনী উমাইয়া, যে নবী কন্যা জয়নাবের মেয়ে, সেই নাতনীকে কোলে নিয়েই নামাজে যেতেন নবী। তাকে কোলে নিয়েই নামাজে দাড়াতেন, সিজদার সময়ে নামিয়ে রাখতেন, সিজদা থেকে উঠে আবার কোলে নিতেন। নবীর সময়ে মসজিদে নারী পুরুষ একই লাইনে দাড়িয়ে নামাজ পড়েছে।

মাঝখানে একটা আইড় (আইল) তার এ পাশে পুরুষ, ওপাশে নারীরা দাড়িয়ে প্রার্থনা করেছে নবীর সময়ে। আর এখন আমরা মহিলাদের মসজিদে জায়গাটুকু দিতেও কুন্ঠা বোধ করি। আর নারীর ইমাম হওয়াতো বহুত দূরের কথা। উম্ম ওরাকা বিনতে আবদাল্লাহর উদাহরনটা ছাড়াও আরো উদাহরন আছে যেখানে নারীরা নামাজে নেতৃত্ব দিয়েছে। আছে নবী পতনী আয়েশার কথাও।

The hadith of `A’ishah and Umm Salamah (may Allah be pleased with them). `Abdur-Raziq (5086), Ad-Daraqutni (1/404) and Al-Bayhaqi (3/131) reported from the narration of Abu Hazim Maysarah ibn Habib from Ra’itah Al-Hanafiyyah from `A’ishah that she led women in Prayer and stood among them in an obligatory Prayer. Moreover, Ibn Abi Shaybah (2/89) reported from the chain of narrators of Ibn Abi Layla from `Ata’ that `A’ishah used to say the Adhan, the Iqamah, and lead women in Prayer while standing among them in the same row. ৫. এই যখন ইতিহাস তখন ভাবতে খারাপই লাগে আমরা প্রোগ্রেসিভ না হয়ে আরো জাহেলিয়াতের দিকে গিয়ে নিজেদের আরো ধার্মিক প্রমাণে ব্যস্ত হয়। হাস্যকর আমরা।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।