আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীদের না জানাই দেশদ্রোহীতা

যখন বিকাল হতে থাকে, হতে হতে সূর্যটা ঢলে পড়ে, পড়তে থাকে

১. ''ব্যক্তি না পারলেও রাষ্ট্র পারে ধর্ম নিরপেক্ষ হতে” এই কথা আপ্তবাক্য হিসাবে ধরার আগে “পরম সত্য বইলা আসলে কিছু নাই...সত্য সকল সময়েই পরিবর্তনের সম্ভাবণা নিয়াই বিরাজ করে” – এই বক্তব্য সত্য ধরে নিলে ব্যক্তির ধর্ম নিরপেক্ষ হবার বিষয়টা অসম্ভব হয় না! একটা ধর্মের আইডেন্টিটি থাকা স্বত্বেও সে যদি অন্য ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা প্রকাশ করে, নিজের ধর্মের নিয়মনীতি রাষ্ট্রতখতে সমাসীন না করে তাকেই আমরা ব্যক্তিবিশেষের ধর্ম নিরপেক্ষতা হিসাবে জ্ঞান করি। এখন শব্দ ম্যারপ‌্যাচে জামাল ভাস্কর আর সন্ধ্যাবাতী রাতভর এটা নিয়ে বাক্যব্যয় করুক কোন অসুবিধা নাই, দৃষ্টান্ত অন্য কোথায় দেখানোর দরকার নেই, দৃষ্টান্ত আমাদের ভেতরেই আছে। পাশাপাশি সামাজিক বসবাসেই সেটা রয়েছে। ২. ''মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতায় তখন আরেকটা অংশও ছিলো, তৎকালীন চীনপন্থী কম্যুনিস্ট দলগুলি, যারা বিশ্বাস করতো এই দেশের স্বাধীনতার সংগ্রাম আসলে ভারত আর রাশিয়ার সামাজিক সাম্রাজ্যবাদী চক্রান্ত। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা করলেও এই অংশ রাজাকার বাহিনীর সাথে কখনো মার্চ করে নাই।

তাগো মূল শত্রু ছিলো মুজিব বাহিনী...মাঝে মাঝে পাকি বাহিনীর বিরুদ্ধেও তারা বিভিন্ন অপারেশনে গেছে...” এইধারাদেরও হয়তো কেউ কেউ মুক্তিযুদ্ধের শত্রু হিসাবে বা রাজাকার হিসাবে চিন্থিত করার সুযোগ খুজতেন যদি আজকে তাদের অবস্থান জামাতের চেয়ে ভাল থাকতো। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে চৈনিকদের মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী অবস্থান ইতিহাস নির্ণয় করতে পারে চরমতম একটা ভুল সিদ্ধান্ত হিসাবে যা ক্রমশ তাদের নিজেদের অবস্থান অশক্ত করে দিয়েছ। তবে রাজাকারদের জন্য যতটুকু গালি আজকে উদগীরণ হচ্ছে তা তাদের বিষয়ে না হবার কারণও অস্পষ্ট নয়। চৈনিকরা সেসময়ে পাকিদের সাথে ছিল না, সাধারণ বাঙালীদের অত্যাচার করেনি। তাদের মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী অবস্থানের চেয়েও ছিল সাম্রাজ্যবাদী, কায়েমী শাষনের আরেকটা নজির স্থাপনের বিরোধিতা।

এটাকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী বলার আসলে তেমন সুযোগ নাই। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বলতে যদি বাঙালির অর্থনৈতিক, সামাজিক মুক্তি বুঝে থাকি, সেটাই ছিল তখন চৈনিকদের মূললক্ষ্য। এ যুক্তিতে ভর করে আবার রাজাকারদের পাকিস্থানপ্রকোষ্ঠে থাকাটাকে অর্থনৈতিক মুক্তির তাদের দশর্ন ধরে সেটাকে ভ্যালিডেট করা যায় না, কারণ তাদের ইসলামীক আদর্শ তখন জান্তার সাথে গাঁট বেধেছিল। তবে সেসময়টাতে “সত্য সকল সময়েই পরিবর্তনের সম্ভাবণা নিয়াই বিরাজ করে” এ ধারণায় যে চৈনিকরা বিশ্বাসী হয়ে উঠতে পারে নি এটুকু বলা যায় স্পষ্টভাবেই। নইলে স্বাধীন দেশের আন্দোলন তাদের মূল্য লক্ষ্যের সাথে একীভূত করে নিলেও আদর্শ পূরণে যে অনেক পিছিয়ে পড়তেন এটা ভাবার আর কোন সুযোগ নেই এখন।

বরঞ্চ বলা যায় তাদের লাভই হতো বেশী। হয়তো দেশের অবস্থাটা এখন এমন হতো না! অবশ্য সেসবই সম্ভাবনার কথা বলা। ৩. ''ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থার কথা যে কয় তারে রাজাকার বইলা ধইরা নেওয়া” তাত্বিকভাবে অসত্য হলেও অবস্থান ভেদে সেটা সত্য হতে পারে। বাংলাদেশে জঙ্গীবাদের বড় সংগঠনের কাছে গোলাম আজমের বই পাওয়া যায়, জামাত সবচেয়ে বড় ধর্মনির্ভর দল, অন্য ধর্মীয় দলগুলির নেতারাও ৭১ এ বিরোধী ছিল প্রমান থাকার পরে এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের ক্ষেত্রে একশভাগই সত্য। অন্য দেশে ভিন্ন হতে পারে, যেহেতু তত্ব একদেশে জন্ম নেয় না, কিন্তু সত্য এক এক দেশে আলাদা হতে পারে।

সেই একই কারণে ...ধর্মনিরপেক্ষ না হইলেই রাজাকারী মতাদর্শ... এটা বলতে চিন্তা করতে হয় না। অর্থনৈতিক বন্টনে সমাজতন্ত্রী না হইলেই আল-বদর.. এমন কেউ ভাবে না, যেমন ভাবে না বাঙালী জাতীয়তাবাদের বাইরে হলেই রাষ্ট্রদ্রোহী। কারণ আদিবাসীরা আছে। “কিন্তু আসলে যারা একসময় মুক্তিযুদ্ধে জীবনবাজী রাখছেন তাদের অনেকেই আজ এইসব থেইকা শতহস্ত দূরে” তাতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কোন ব্যতয় ঘটে না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা একজন মানুষের রক্তমাংসে নষ্ট হলেও চেতনার রঙের সাথে তার কোন সম্পর্ক নাই।

মানুষটা পচে গেছে বরঞ্চ এটুকুই বলা যায়। ৪. এই প্রজন্মের যেই প্রতিনিধি এখনো খালি পারিপার্শিক প্রভাবে এইরম ভাবে – তাদের ক্যাটেগোরাইজ অবশ্যই করতে হবে, নইলে কেন তাদের ক্যাটাগরাইজ করা হচ্ছে এটা বোঝাবে কে? সরকার? আপনি, আমি, রাষ্ট্র? সহজে বোঝানোর জন্য এটাই মোক্ষম অস্র। কোথায় রাজাকার নিরাময় কেন্দ্র, কোথায় মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস? এ প্রশ্ন যখন আপনারই তখন সেই মুষ্ঠিমেয় বিচ্ছিন্ন মতাদর্শিকদের জন্য কোন সিমপ্যাথী কাজ করতে পারে না আমাদের মত সাধারণ, অজ্ঞ, ভাল বলতে না পারা মানুষদের। যারা জানে না তাদের না জানাটাই অপরাধ, ইশ্বর যখন না জানার জন্য শাস্তির বিধান করতে পারে, রাষ্ট্র যখন না জানার জন্যও শাস্তির বিধান রাখতে পারে, তবে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস না জানার জন্য রাষ্ট্রদ্রোহী ভাবাই যেতেই পারে। তোমার রাষ্ট্র, তুমি জানবে না কে এ রাষ্ট্রের বিরোধিতা করেছে যখন, তখন তোমার জন্য কিসের সিমপ্যাথী? সম্মিলিত ঘৃনাই পারে রাজাকার মতাদর্শী হবার পথ রোধ করতে।

কোনভাবেই তাদের না জানার জন্য নিরাপরাধ ভাবার সুযোগ নেই। নেভার এভার। এটা বাংলাদেশ, এটা কোন বিনারক্তপাতে জন্ম নেয়া রাষ্ট্র নয়, মনে রাখতে হবে আমাদের মাবোন, ভাই বাবা এদেশের জন্য জীবন দিয়েছেন! ৫. সুতরাং এই ঘৃনা প্রকাশই নতুন প্রজন্মের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কীত ধারণাকে পুনগর্ঠনে সাহায্য করবে, যারা ব্রেইন ওয়াশড তাদের টার্গেট ধরার কোনই সুযোগ নাই, প্রয়োজনও নাই। তারা শুধুই প্রতিপক্ষ, আক্রমনের লক্ষ্য! ৬. জামাল ভাস্করের এ সম্পর্কিত পোস্টের পরিপ্রেক্ষিতে লেখা।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.