আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রাজনৈতিক দলের জন্য আটটি শর্ত এবং আটটি ভাবনা

[অন্যর দোষ না খুঁজে আগে যদি সবাই নজের দোষটা খুঁজত তাহলে বোধহয় সব সমস্যার সমাধান হয়ে যেত]............... [পথের শেষ নেই, আমার শেষ আছে, তাইত দ্বন্দ্ব] http://mamunma.blogspot.com/

সকল রাজনৈতিক দল কে নিবন্ধন করার জন্যে আটটি শর্ত পূরণ করতে হবে। অত্যাবশ্যকীয় ঐ আটটি শর্ত যা নির্বাচন কমিশন নির্ধারণ করতে যাচ্ছে প্রথমে সেগুলো একটু উল্লেখ করতেই হয়ঃ ১। গনতান্ত্রিক পদ্ধতিতে দল পরিচালিত হবে এই মর্মে গঠনতন্ত্রে সুস্পষ্ট বিধান থাকা । ২। দলের সব পর্যায়ের কমিটির সদস্যদের অনধিক তিন বছর অন্তর প্রত্য ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত করার বিধান থাকা।

৩। দলের কেন্দ্রীয় কমিটিসহ বিভিন্ন পর্যায়ের সব কমিটিতে মহিলাদের জন্য কমপে শতকরা ৩৩ ভাগ সদস্যপদ সংরক্ষণ ও ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত করার বিধান রাখা। ৪। কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যায়নরত ছাত্রদের সমন্বয়ে অঙ্গ অথবা সহযোগী সংগঠন তৈরী নিষিদ্ধ। ৫।

সরকারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কিংবা সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত বেসরকারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের সমন্বয়ে সংগঠন তৈরী নিষিদ্ধ। ৬। সরকারি কিংবা বেসরকারি আর্থিক, বানিজ্যিক বা শিল্পপ্রতিষ্ঠানের শ্রমিক-কর্মচারীদের সমন্বয়ে অঙ্গসংগঠন তৈরী নিষিদ্ধ। ৭। দলের সদস্যদের শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রনের জন্য সুস্পষ্ট বিধান থাকতে হবে।

৮। স্বাধীনতার পর কোন একটি নির্বাচনে কমপক্ষে একটি আসন প্রাপ্তি অথবা অন্তত একটি সংসদ নির্বাচনে সর্বমোট প্রদত্ত ভোটের শতকরা দুইভাগ প্রাপ্তি অথবা দেশের কমপক্ষে অর্ধেক জেলা ও উপজেলা কমিটি, দলের কার্যালয় থাকা; প্রত্যেক জেলায় কমপে একহাজার ভোটার ও উপজেলায় কমপে ২০০ ভোটারকে দলের সদস্য হিসেবে তালিকা ভুক্ত করা এবং কার্যকর কেন্দ্রীয় কমিটি ও কার্যালয় থাকতে হবে। সংস্কার স্বপ্নে বিভোর বাংগালীর নিশ্চয় এমন সুন্দর সুন্দর শর্ত পড়তে দারুন আনন্দ বোধ হতেই পারে। তারপরও সন্দেহবাতিক মন আমার এরই মাঝে নিচের ভাবনাগুলোঃ ভাবনা ১। গনতান্ত্রিক পদ্ধতি টা যে আসলে কি জানার বড় সাধ।

বিগত বহুকাল তো গনতন্ত্র ই ছিল সবার সুকর্ম এবং অপকর্মের মূল হাতিয়ার। আর এই গনতন্ত্র এমন কোন ইউনিভার্সাল কিছু নয়, এর মাঝেও বিস্তর ভার্সেটালিটি। তাহলে গনতান্ত্রিক পদ্ধতিতে দল পরিচালিত হবে ...খুব একটা স্পষ্ট হয়না বিষয়, তাই না? ভাবনা ২। অনধিক তিন বছর অন্তর দলের কমিটির সদস্য নির্বাচন করা হবে, কে করে দেবে? নিজেরাই যদি করে, ইনফ্লুয়েনসিয়াল পার্সনের বা দলের অর্থ বলিষ্ঠ পার্সনের পূর্বোপর ব্যবস্থায় বারবার উর্ধ্বে আসিন হওয়ার ব্যাপরটি কি থেকেই যায় না? ভাবনা ৩। মহিলাদের জন্য দলেও ৩৩ ভাগ মহিলা সদস্য সংরক্ষণ ব্যবস্থা সেই নারীদের আবারও হেয় আর তুচ্ছতার পরিচয় নতুন করে মনে করে দেয়া।

তবে এতে নারীদের রাজনীতি করার লক্ষ্যে দৌড়াদৌড়ি বেড়ে যাবে বোঝা যায়। এতে স্বামী জেলে থাকলেও স্ত্রীর দলে প্রভাব টিকিয়ে রাখার ব্যবস্থা টা সুষ্ঠ হবে, তাই না? এটা একখানা সুবিধা বৈ কি এই শর্তের। প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে এত মহিলা জড়ানোর ফলে আন্দোলনের ক্ষেত্র আরও জোরদার হতে পারে, নারীদের সাহস আর আন্দোলনের পারদর্শিতা তো সর্বজন দৃষ্ট। ভাবনা ৪। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রদের সমন্বয়ে অঙ্গ বা সহযোগী প্রতিষ্ঠান থাকবে না , বিষয়টা খুবই চমৎকার সংস্কার নিঃসন্দেহে, কিন্তু যদি নামে না থেকে বেনামে থাকে, পুরানো প্রাকটিসের প্রভাব তো আর কাগুজে আইনে পরিবর্তন হবেনা।

যদি সরকারী দল কোন অরাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের প্রতি সুদৃষ্টি নিক্ষেপ করে, তখন? ভাবনা ৫। সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি নির্ধারণ হয় যেখানে সরকারের মাধ্যমে প্রত্যক্ষ ভাবে , সে তো তাহলে তাবেদারী করবেই আর তার তাবেদারী করবেই তার অধীনস্ত শিক্ষকরা। তবুও ভাল শর্ত -শিক্ষদের রাজনৈতিকি দলের লেজুড় হওয়া বন্ধ করাটা, কারন এই শর্ত বাস্তবায়ন সম্ভব হলে শিকরা পড়ানোতে মনোযোগী হবে নিশ্চিত। ভাবনা ৬। সরকারি কিংবা বেসরকারি আর্থিক, বানিজ্যিক বা শিল্পপ্রতিষ্ঠানের শ্রমিক-কর্মচারীদের সমন্বয়ে অঙ্গসংগঠন তৈরী নিষিদ্ধ করার শর্তটি খুবই আশাব্যঞ্জক।

এতে নিঃসন্দেহে প্রতিষ্ঠান বা কারখানায় কর্মের মাঝে সুস্পষ্ট একটা স্পিরিট আসতে পারে। পারে না আসবেই। তদবির আর দলের জোড় খাটিয়ে কর্ম বিরতি আর গোপন সুবিধা বর্জন হবে। কিন্তু তারপরও যদি অরাজনৈতিক সংগঠন এর হোতারা সরকারী দলের কাছে জিম্মি হয়ে যায়, তখন ? ভাবনা ৭। দলের সদস্যদের শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রনের জন্য সুস্পষ্ট বিধান থাকতে হবে বলে যে শর্ত রাখা হয়েছে সেটার ব্যাপারে কথা থেকে যায় এই কারনে যে ঐ বিধান কে মেইনটেন করবে দল নিজে না রাষ্ট্র? দল তার এন্ট্রি পার্টির কাছে হেয় হওয়া থেকে বিরত থাকার জন্যে এবং দলের কোন বিশিষ্ট এবং যোগ্য কর্মীকে অসুন্তষ্ট করার খাতিরে শৃঙ্খলা বহির্ভূত কর্ম করলে সেটা কে দেখবে ? ভাবনা ৮।

জেলায় ১০০০ ভোটার বা উপজেলায় ২০০ ভোটার সদস্য হিসেবে তালিকা ভুক্তির বিষয়টা একটু খটকার উদ্রেক করে যেন। কেনই বা উদ্রেক হবেনা, ২০০ লোক নিশ্চয় বেকার হবেনা। কেউ চাকুরী জীবী বা কেউ ছাত্র। আবার ২০০ পোষ্টের জন্য মারামারি দরকষাকষি হতেই পারে। মানুষ তো।

তার মানে প্রত্য ভাবে ২০০ এর অন্তত ১০ গুন মানুষ মানে ২০০০ মানুষ সরাসরি রাজনীতির সাথে যুক্ত থাকবে । এর প্রভাব তাদের কর্মেক্ষেত্র বা শিক্ষালয়ে পড়াটা খুব একটা অস্বাভাবিক না মনে হয়। অতীতে বড় দলগুলোর স্থানীয় নেতা , পাতি নেতা দের দৌড়াত্ম বলে একটা শব্দ তো ছিল। হয়তো ভানা গুলোর অনেকখানিই বেশ সিলি। তবুও ভাবনা বলে কথা।

সংস্কার পরিপূর্ণ হলে তার জোয়ার তো শান্তি আনবেই। কিন্তু যদি প্যাচিয়ে যায়, তখন। কারন বাংলাদেশের আইনগুলো ( সর্বেক্ষেত্রে ) এত বিস্তৃত আর জটিল যে সুযোগ আর ফাঁক বের করার একটা প্রয়াস খুঁজেই নেয় কুট বুদ্ধিমানরা।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.