আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রাজনৈতিক দলগুলোর রাজনৈতিক কর্মসূচির প্রচার সেলের দায়িত্ব পালন করছে আমাদের তথাকথিত চুতিয়া মিডিয়া!!!

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর রাজনৈতিক কর্মসূচি প্রচার করার দায়িত্ব নিয়ে মিডিয়া সারা দেশে এক ধরনের অপসাংবাদিকতা করছে। সেই সুযোগে রাজনৈতিক দলগুলো গভীর রাতেও তাদের অনেক কর্মসূচি ঘোষণা করার মত ঔদ্ধত্য দেখাচ্ছে। যদি মিডিয়া এখানে দায়িত্বশীল হত তাহলে রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষে মাঝরাতে নতুন রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘোষণা করে, সেই কর্মসূচি যথাযথভাবে পালন করা অসম্ভব হত। কারণ, যে কোনো ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি দলীয় নেতাকর্মী এবং সাধারণ মানুষকে অবহিত করার জন্য ওই রাজনৈতিক দলগুলোকে সময় হাতে নিয়ে তা সর্বসাধারণের জন্য প্রচার করতে হয়। সেজন্য পত্রিকায় প্রেস রিলিজ পাঠাতে হয়।

এলাকায় এলাকায় মাইকিং করতে হয়। দলীয় নেতাকর্মীদের মুঠোফোনে জানাতে হয়। আর যারা কর্মসূচি চূড়ান্ত হবার আগে দলীয় সিদ্ধান্তমূলক সেই মিটিংয়ে হাজির থাকে, তারা দলীয় অপর কর্মীদের মধ্যে সেই খবর ছড়িয়ে দেন। রাজনৈতিক কর্মসূচির সেই নতুন খবরটি কেন্দ্রের দলীয় নেতাকর্মী থেকে একেবারে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের নেতাকর্মীদের কাছে পৌঁছাতেই একটা বিরাট সময় লাগে। তারপর নানান আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে যেমন মাইকিং, প্রচারপত্র বিলি করা, মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে সবাইকে অবহিত করা ইত্যাদি আনুষ্ঠানিকতার পর সবাই নিশ্চিত হন, অমুক দলের ওই সময় বা নির্দিষ্ট ওই সময় কি ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি রয়েছে।

সেক্ষেত্রে দলীয় নেতাকর্মীর পাশাপাশি সর্বস্তরের সাধারণ মানুষও সেই রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘোষিত হবার পর যার যার অবস্থান থেকে নিজেদের মত প্রস্তুতি নিতে সময় পান। যারা দলীয় নেতাকর্মী, তারা দলের ঘোষিত কর্মসূচি সফল করতে প্রচার প্রচারণায় নামেন। আর যারা সাধারণ জনগণ তারা তখন ঘোষিত কর্মসূচিকে ঘিরে যে ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া প্রয়োজন সেরকম প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। যদি হরতাল বা অবরোধের মত কর্মসূচি হয়, তাহলে সংসারের জন্য বাজার করা, খাবার মজুত করা, কোনো অফিসিয়াল কাজ থাকলে যেমন কোনো বিল পরিশোধের বিষয় থাকলে (বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি, টেলিফোন, আয়কর ইত্যাদি) সেগুলো রুটিন করে সমাধান করার সুযোগ পান। যাদের চিকিৎসার জন্য গ্রাম থেকে শহরে যেতে হবে কিংম্বা যাদের চিকিৎসা নেওয়া শেষে শহর থেকে গ্রামের বাড়িতে ফিরতে হবে, তারা একটা প্রস্তুতি নেবার সুযোগ পান।

যাদের ভর্তি পরীক্ষা আছে তারা আগাম যাবার জন্য সময় পান। যাদের ফাইনাল পরীক্ষা চলমান, সেই পরীক্ষা কখন হবে সেটা জানারও একটা সময় পান আগেভাগে। কিন্তু আমাদের মিডিয়াগুলো অপসাংবাদিকতার প্রতিযোগিতায় নেমে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর' মিডিয়া উইংয়ের কাহ করছে। এতে করে সর্ব স্তরের সাধারণ মানুষ রাজনৈতিক কর্মসূচির কাছে জিম্মি হয়ে পড়ছে। মাঝরাতেও তারা কর্মসূচি ঘোষণা করার সুযোগ পাচ্ছে মিডিয়ার এই ব্যাকআপ প্রচারণার কারণে।

যেটি সুস্পষ্টভাবেই একটি অপসাংবাদিকতা। যে কাজটি ওই রাজনৈতিক দলের নিজস্ব কর্মপদ্ধতির মাধ্যমে সবাইকে অবহিত করার কথা ছিল, সেই দায়িত্বটি মিডিয়া নিয়ে মুহূর্তে তা ব্রেকিং নিউজ, এই মুহূর্তের খবর, টপ নিউজ, সর্বশেষ খবর ইত্যাদি বাহারি নামে প্রচার করে আসলে রাজনৈতিক দলগুলোর দলীয় কর্মসূচি প্রচারের দায়িত্ব নিয়ে সর্বস্তরের সাধারণ মানুষের ওই কর্মসূচিকে ঘিরে যে প্রস্তুতি সেটি নেবার কোনো সুযোগ দিচ্ছে না। অর্থ্যাৎ রাজনৈতিক দলগুলোর প্রচার সেলের দায়িত্ব আমাদের মিডিয়াগুলো সঙ্গে সঙ্গে প্রচার করছে। এটা অপসাংবাদিকতার একটা নজিরবিহীন নমুনা। এটা কোনো সুষ্ঠু সাংবাদিকতার উদাহরণ হতে পারে না।

আমাদের মিডিয়াগুলো যদি রাজনৈতিক দলগুলোর রাজনৈতিক কর্মসূচি মুহূর্তে এভাবে প্রচার করার দায়িত্ব নিয়ে থাকে, তাহলে সেখানে কিছু অবৈধ লেনদেনের ব্যাপার স্যাপার নিশ্চয়ই আছে। সাংবাদিকতার নামে আমাদের মিডিয়া এই অপকর্মটি সবার চোখের সামনেই রাখঢাক না করেই করছে। আমাদের মিডিয়াগুলো যদি রাজনৈতিক দলের রাজনৈতিক কর্মসূচি এভাবে মুহূর্তে প্রচারের দায়িত্ব না নিত, তাহলে রাজনৈতিক দলগুলোর ঘোষিত কর্মসূচি পালন করার জন্য দলের নেতাকর্মীদেরও প্রস্তুতির অংশ হিসেবে একটা সময় বরাদ্ধ থাকতো। সেটা যতোই কুইক পদ্ধতিই হোক না কেন, মিনিমাম এক-দুই-তিন দিন সময় হাতে রেখে তখন সেই কর্মসূচি ঘোষণা করতে তারা বাধ্য হত। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলোর মিডিয়া সেলের দায়িত্ব যেহেতু আমাদের মিডিয়াগুলো লেনদেনের মাধ্যমে নিয়ে নিয়েছে, তাই বিশেষ করে ইলেকট্রনিক মিডিয়া (প্রাইভেট টেলিভিশন, রেডিও, অনলাইন পত্রিকা, স্যোসাল নেটওয়ার্ক) এবং একদিন পর প্রিন্ট মিডিয়া সেই অপসাংবাদিকতাটি করে রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মসূচি প্রচার করে তাকে সফল করতে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ সহায়তা করছে।

যেখানে টাকা বিনিময় একটা প্রধান ব্যাপার অবশ্যই। যে কারণে মাঝরাতে কোনো ধরনের দলীয় মিটিং ছাড়াই এক ব্যক্তির পক্ষেই দলীয় কর্মসূচি ঘোষণা করার মত ঔদ্ধত্য আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো দেখাচ্ছে মিডিয়ার এই সুযোগটি গ্রহন করে। কারণ, কর্মসূচি যাই হোক না কেন মুহূর্তে তা যেহেতু প্রচার করা যাচ্ছে, সেহেতু সেই কর্মসূচি পালন করার জন্য সর্বস্তরের সাধারণ মানুষকে তখন অনয়াসে জিম্মি করা যাচ্ছে। তোমরা মানো আর না মানো এই আমাদের কর্মসূচি। যা রাজনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূতও বটে।

বাংলাদেশে এখন মিডিয়াও দুইভাগে বিভক্ত। একপক্ষ আওয়ামী লীগের হাত ধরে মিডিয়া ব্যবসায় নেমেছে। তারা সবাই আওয়ামী মিডিয়া। আরেকপক্ষ বিএনপি'র হাত ধরে মিডিয়া ব্যবসায় নেমেছে, তারা সবাই জাতীয়তাবাদী মিডিয়া। সাংবাদিকদের মধ্যেও দুইটা প্রধান ভাগ।

একটি পক্ষ আওয়ামী সাংবাদিক। আরেকটি পক্ষ জাতীয়তাবাদী সাংবাদিক। ফলে সাংবাদিকতার সকল শিষ্টাচার ভুলে তারা নিজ নিজ দলের পক্ষে প্রচার সেলের দায়িত্ব নিয়েছে। এ যেনো সাংবাদিকতা নয়, এ হল দলীয় প্রচার মুখপাত্র। আমাদের মিডিয়াগুলো এখন দলের কর্মসূচির খবরের জন্য বসে থাকে।

সাংবাদিকদের উপস্থিতি না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি ঘোষিত হয় না। আমাদের বর্তমান সময়ের মিডিয়া কোনো মতেই সাংবাদিকতার মত মহান পেশাদারী কাজ করছে না। তারা দলীয় প্রপাগাণ্ডা প্রচারের জন্য এক একটি প্রচার সেল হিসেবে দলীয় প্রচার শাখার দায়িত্ব পালন করছে। এটাকে সাংবাদিকতা বলা যাবে না। মিডিয়া আর যে কাজটি করছে সেটি হল ধার করা সংবাদ অনুসন্ধান না করেই বা সেই বিষয়ে খোঁজখবর না নিয়েই প্রচার করে দিচ্ছে।

যেমন ধরুণ, আওয়ামী লীগের ধানমণ্ডি পার্টি অফিসে একটি রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘোষণা করা হল যে- আগামী ৭ ডিসেম্বর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের বিশাল জনসভা। এই সংবাদ সংগ্রহ করার জন্য সেখানে বিটিভি, দেশ টিভি, সময় টেলিভিশন, বৈশাখী টেলিভিশন আর এটিএন বাংলা উপস্থিত ছিল। কিন্তু আপনি খেয়াল করবেন, যারা সেখানে উপস্থিত ছিল না, তারাও সেই খবরটি আপডেট নিউজে মুহূর্তে প্রচার শুরু করে দিচ্ছে। আপনি রিমোট ঘুরিয়ে যে চ্যানেলেই যান না কেন, সবাই সেই খবরটি ধার করে প্রচার শুরু করে দিল। আবার ধরুণ, নয়া পল্টনে বিএনপি'র পার্টি অফিসে একটি রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘোষণা করা হল যে- আগামী ৮, ৯ ও ১০ ডিসেম্বর সারা দেশে টানা ৬০ ঘণ্টার হরতাল।

সেখানে সেই সংবাদ সংগ্রহের জন্য উপস্থিত ছিল এনটিভি, আরটিভি, এটিএন নিউজ, একাত্তর টিভি, ইনডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশন। কিন্তু আপনি খেয়াল করবেন, যারা সেখানে উপস্থিত ছিল না, তারাও সেই খবরটি আপডেট নিউজে মুহূর্তে প্রচার শুরু করে দিচ্ছে। আপনি রিমোট ঘুরিয়ে যে চ্যানেলেই যান না কেন, সবাই সেই খবরটি ধার করে প্রচার শুরু করে দিল। এই যে সংবাদ সংগ্রহ না করে অন্যদের খবর দেখে মুহূর্তে তা আপডেট আকারে প্রচার করা এটি কেমন সাংবাদিকতা? সেই সংবাদ অন্যদের কাছ থেকে সংগ্রহ করে, সেই সংবাদের বিষয়ে বিস্তারিত অনুসন্ধান চালিয়ে, সব খোঁজখবর নিয়ে, বাকি চ্যানেলগুলো'র সেই খবরটি প্রচার করতে তো মিনিমাম একটা সময় লাগার কথা। কিন্তু তারা সেটি না করে অন্যদের দেখাদেখি মুহূর্তে সেই খবর নিজেদের খবর হিসেবে চালিয়ে দিচ্ছে।

কেউ ব্রেকিং নিউজ আকারে। কেউ আপডেট নিউজ আকারে। কেউ সর্বশেষ খবর আকারে। এটা কি কোনো সুস্থ সাংবাদিকতার নমুনা? এটা তো সরাসরি খবর জালিয়াতি। তাদের কোনো রিপোর্টার বা কোনো ফটোজার্নালিস্ট ওই খবর সংগ্রহ করার জন্য সেখানে উপস্থিত ছিল না, কিন্তু খবরটি তারা মুহূর্তেই প্রচারের মত ঔদ্ধত্য কোথায় পেল? বাংলাদেশে অপসাংবাদিতকার আরেকটি দিক সবচেয়ে ভয়াবহ।

এটাকে ঠিক কোন বিশষণে বিশেষায়িত করা যাবে বর্তমান সময়ের সাংবাদিকতাকে তা নিয়ে হয়তো অনেক গবেষণা করতে হবে। ধরুণ, এখন সারা দেশে বিএনপি নের্তৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের ৭২ + ৫৯ = ১৩১ ঘণ্টার অবরোধ চলছে। এখন এই অবরোধ চলাকালীন দেশের কোথায় কখন ককটেল ফাটানো হবে, কোথায় গাড়িতে আগুন দেওয়া হবে, কোথায় রেললাইন খুলে ফেলা হবে, কোথায় যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেওয়া হবে ইত্যাদি বিভৎস ঘটনাগুলো আমাদের কথিত সাংবাদিকরা আগাম জেনে যাচ্ছেন কিভাবে? তাদের কাছে নাকি আগে এসব ঘটনার জন্য বিভিন্ন ধরনের অচেনা মোবাইল নাম্বার থেকে ফোন আসতো যে, অমুক সময় অমুক স্থানে এই ধরনের একটি ঘটনা ঘটবে। আপনার ওই সময় ক্যামেরা নিয়ে হাজির থাকেন। তাহলে লাইভ কাস্ট করতে পারবেন!!! সাংবাদিকরা যদি দলীয় সেই খবরটি আগেই জেনে যায়, যদি সেই খবরটি হয় সর্বস্তরের সাধারণ মানুষের জানমালের নিরাপত্তায় হুমকি স্বরূপ, তাহলে ওই সাংবাদিক সেই খবরটি কেন পুলিশকে অবহিত করছে না? তাহলে সেকি দলীয় কর্মী নাকি সাংবাদিক? যে খবরটি সর্বস্তরের সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা বিঘ্ন করতে পারে বলে আগেই ধারণা দেওয়া হচ্ছে, সেই খবরটি সংগ্রহ করার জন্য যারা সেখানে লাইভ কাস্ট করার সুযোগ নিয়ে বিষয়টি পুলিশকে অবহিত করছেন না, তাহলে ধরে নিতে হয়, ওই সাংবাদিক দলীয় এজেন্ডাই বাস্তবায়ন করছেন।

পাশাপাশি তিনি মিডিয়ার অন্যান্য সাংবাদিকদের একটি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিচ্ছেন, এরকম একটি নাশকতার খবর আমরা লাইভ কাস্ট করতে পেরে গর্বিত, তোমরা এটি লাইভ কাস্ট করতে পারোনি। দেখো আমরা কত্তো বড় সাংবাদিক!!! দেখো আমাদের সোর্স কত্তো বড় রিলায়েবল!!! রাতারাতি ওই সাংবাদিক হিরো সাজার চেষ্টা করছেন। অথচ ওই নাশকতার খবরটি সে সংগ্রহ করার আগে উচিত ছিল পুলিশকে অবহিত করা। যে অমুক স্থানে এ ধরনের একটি নাশকতার খবর আমাদের কাছে অমুক নাম্বার থেকে জানানো হয়েছে, আমরা তাদের চিনি না কিন্তু তারা দাবী করছে, এ ধরনের একটি নাশকতা ঘটবে। তখন পুলিশ সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার জন্য সেখানে আগাম নজরদারী করার সুযোগ পেতো।

কিন্তু হিরো হবার বাসনা নিয়ে ওই সাংবাদিক আসলে কিছু সত্যকে আড়াল করে দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতেই তুমক স্থানে গিয়ে সেই নাশকতার খবরটি লাইভ কাস্ট করার সুযোগ নিয়েছেন। সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার বিষয়টিকে অগ্রাহ্য করে তিনি হিরো হবার চান্স নিয়ে মানুষকে সেই সন্ত্রাসী ঘটনায় বলি হবার সুযোগ করে দিচ্ছেন। তাহলে সে কি সাংবাদিক? নাকি সাংবাদিকতার লেবাজ ধরে দলীয় কর্মকাণ্ড প্রচার করার জন্য প্রচার সেলের ইনফ্রন্ট ডিভিশানের দায়িত্ব পালন করছেন? এখন নাকি মোবাইল থেকে আগের মত বেশি ফোন করে এসব খবর জানানো হয় না। এখন কেবল একটি এসএমএস করে জানানো হয়। আর এসএমএস পাঠানোর পর ওই সিম কার্ডটি খুলে ফেলা হয়।

নতুবা ফোনটি বন্ধ করে ফেলা হয় বা ফোনটি নষ্ট করে ফেলা হয়। কারণ, পুলিশ নাকি সাংবাদিকদের ফোন ট্রাক করে বেশ কিছু ঘটনার সঙ্গে জড়িত সহিংস কর্মকান্ডের যারা হোতা তাদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছিল। তাই এখন পুলিশ যাতে সাংবাদিকের ফোন নাম্বার থেকে কথিত সেই ফোনওয়ালা বা এসএমএসকারীদের যাতে প্রাক করতে না পারে, তাই সিমকার্ড খুলে ফেলা হচ্ছে বা ফন নষ্ট করে ফেলা হচ্ছে বা জায়গা বদল করা হচ্ছে। পুলিশকে ট্রাফ দিয়ে অন্যত্র সেই নাশকতাটি তারা সফলতার সঙ্গে করছে। আর সেই খবরটি যাতে টেলিভিশনে দেখানো হয় সেজন্য মুহূর্তে সেখানে রাজনৈতিক দলের প্রচার শাখার ইনফ্রন্ট ডিভিশানের সৈন্যরা মানে আমাদের তথাকথিত হিরো সাংবাদিকরা ক্যামেরা নিয়ে হাজির হয়ে সেই নাশকতার খবরটি জাতির সামনে তুলে ধরছেন।

অর্থ্যাৎ শস্যের মধ্যেই যেখানে ভূত আছে সেখানে সাংবাদিকতা তো একটি অছিলা। সে আসলে দলীয় প্রপাগাণ্ডায় দলের স্বার্থে কাজ করছেন। গলায় ঝুলিয়ে রাখছেন সাংবাদিকতার পরিচয়পত্র। আমাদের দেশে গোটা মিডিয়া এখন বড় দুইদলের প্রচার শাখার দায়িত্ব নিয়েছে। তারপর মিথ্যা সংবাদ প্রচারের কথা তো ভুরিভুরি উদাহরণ আছে।

যেমন ধরুণ, গতকাল সকালে রাজধানীর ডেমরা সংলগ্ন নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের তারাবো নতুন সেতুর কাছে হিউম্যান হলারে দেয়া আগুনে দগ্ধ হন শিরিন আক্তার (১৯) নামের এক অন্তঃসত্ত্বা নারী। তার স্বামী মো. শাহীন সাংবাদিকদের এমন মিথ্যা তথ্য দিয়েছিলেন। পরে পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে আসে, ওই সময় ওই এলাকায় কোনো হিউম্যান হলারে আগুন দেয়া হয়নি। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে শাহীন স্বীকার করেন, তার স্ত্রী বাসার চুলার আগুনে দগ্ধ হয়েছেন। বিনা খরচে চিকিৎসা পাওয়া যাবে আর সরকারের কাছ থেকে সাহায্যও মিলবে এমন একটি সুযোগ কাজে লাগাতে তিনি মিথ্যা বলেছিলেন।

এখন গোটা জাতি ওই খবরটি আমাদের তথাকথিত মিডিয়ার কল্যানে প্রথমে কিভাবে জানলো? মিডিয়া প্রচার করলো- এবার অবরোধের আগুনে পুড়লো এক অন্তঃসত্ত্বা নারী!! খবরে চমক যেমন আছে তেমনি আছে সহানুভূতি পাওয়ার ছলনা। এটা কি সাংবাদিকতা? অর্থ্যাৎ ওই সময় রাজধানীর ডেমরা সংলগ্ন নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের তারাবো নতুন সেতুর কাছে কোনো সাংবাদিক উপস্থিতই ছিল না। পুলিশ বলছে সেখানে কোনো হিউম্যান হলারে আগুন দেওয়া হয়নি। তাহলে সাংবাদিকরা সেই খবরের সত্যতা যাচাই না করে সেটি এভাবে প্রচার করলো কোন এজেন্ডা নিয়ে? এটাকে কি সাংবাদিকতা বলা যায়? হলুদ সাংবাদিকতায়ও একটা ন্যূনতম যাচাই বাছাইয়ের ব্যাপার থাকে, সেখানে কিছু মিথ্যা কিছু সত্য মিশিয়ে এক ধরনের জগাখিচুরি বানিয়ে একটা একপেশে খবর প্রচারের উদ্দেশ্য থাকে। কিন্তু এটি কি ধরনের খবর? আর আমাদের মিডিয়া সেটি যাচাই বাছাই না করেই প্রচার শুরু করে দিল??? ছোটবেলায় আমরা বইয়ে পড়তাম- সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই।

তাহলে কোথায় মনুষত্ব? আমাদের সাংবাদিকতায় কোথায় মানবিকতা? আমরা বিশ্বজিৎকে কুপিয়ে হত্যা করার সময় সেই খবর মিডিয়াকে লাইভ কাস্ট করতে দেখেছি। একজন সাংবাদিকও বিশ্বজিৎকে তাৎক্ষণিক হাসপাতালে নিয়ে যাবার মত দুঃসাহস দেখায়নি। বিশ্বজিতের মৃত্যু নিশ্চিত হবার মুখে একজন গরিব রিক্সাচালক সবার চোখের সামনে সেই দুঃসাহসটি দেখিয়েছিলেন। সাংবাদিকরা সেই দুঃসাহসটি দেখালে হয়তো বিশ্বজিৎ রক্তক্ষরণ না হয়ে মৃত্যু যাত্রা থেকে বেঁচে যেতেন। আমাদের মিডিয়া আসলে কোন রঙ্গ খেলছে? আমাদের মিডিয়া একুশ শতকেও যদি দায়িত্বশীল না হয় তাহলে আর কবে হবে? ডিজিটাল দুনিয়ার সুযোগ নিয়ে আমাদের মিডিয়া কি আমাদের সবাইকে পন্য বানিয়ে এক অসভ্য ব্যবসায় নেমেছে? দলীয় এজেন্ডার পাশাপাশি তারা দেশের সর্বস্তরের সবাইকে পন্য বানিয়ে খবর অনুসন্ধান করছে? কারণ, তাদের চাই টাটকা খবর!!! বাসী বা পচা খবরে মানুষ চমক পাবে না।

তাই সবাইকে পন্য বানিয়ে মিডিয়া কোথায় যাচ্ছে? সবাইকে মনে রাখতে হবে আমরা প্রথমে মানুষ, তারপর আমার পেশা। তারপর আমার চাকরি। তারপর আমার আয় রোজগার! কিন্তু মানবিক গুনাবলী তাই বলে নিঃশ্ব হয়ে যাবে? এটা কোন ধরনের সাংবাদিকতা? ধিক্কার জানাই, এসব কুলাঙ্গারদের যারা সাংবাদিকতার পরিচয়পত্র গলায় ঝুলিয়ে সাংবাদিকতার নামে দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে। ধিক্কার জানাই, এসব অসুস্থ সাংবাদিকতার অপসংস্কৃতিকে যারা এটি করে ব্যবসা করছেন। ধিক্কার জানাই, আমাদের মিডিয়া ব্যবসায়ীদের, যারা ব্যবসার খাতিরে সবকিছুকেই পন্যের আকারে হিসেব কষেন।

ধিক্কার জানাই, এসব কুলাঙ্গারদের যারা মানবিকতার সকল গুন ভুলে হিরো হবার বাসনা নিয়ে বিভৎস খবরের জন্য লোলুপ হায়ানার মত ওৎ পেতে থাকে। আমি এমন সাংবাদিকতাকে ধিক্কার জানাই, ধিক্কার জানাই, ধিক্কার জানাই...

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.