আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গণতন্ত্রের তন্ত্র-মন্ত্র - ১

মুক্তিযুদ্ধের সেই উত্তাল দিনুলোতে, অজস্র তরুণ কি অসম সাহসিকতা নিয়ে দেশমাতৃকাকে রক্ষা করেছিল! গণতন্ত্রের তন্ত্র-মন্ত্র - ১ --------------- ডঃ রমিত আজাদ গণতন্ত্র বর্তমান বিশ্বের সবচাইতে জনপ্রিয় রাজনৈতিক মতাদর্শ বা দর্শন। কি এই গণতন্ত্র, কোথা থেকে এর উদ্ভব, এই দর্শন প্রতিষ্ঠার পিছনে কারা ছিলেন, বিশ্বের অতিত ইতিহাসে গণতন্ত্র কখন কেমন ছিল, কি করে তা রাষ্ট্রযন্ত্রে স্থান পেল, কতটুকু সফল এই রাজনৈতিক মতাদর্শ, এর বিকল্প কিছু আছে কিনা; বিভিন্ন জ্ঞানী, খ্যাতিমান, রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবি ও লেখকেরা এই মতাদর্শের পক্ষে ও বিপক্ষে কি বলেছেন বা লিখেছেন এই সম্পর্কে ধারাবাহিক লিখে যাব। আপনাদের গঠনমূলক মতামত কামনা করছি। প্রথমে উল্লেখ করছি সুখ্যাত ভারতীয় লেখক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়-এর ইতিহাসের স্বপ্নভঙ্গ বইয়ের একটি অংশ: আমাদের দেশের গ্রামে-গন্ঞ্জে, আধা মফস্বলে আমি ঘুরেছি অনেক। আমি দেখেছি বাধের উপর বসে থাকা বিষন্ন মানুষ, যার কোন কাজ নেই, পেটে ভাত নেই।

দেখেছি খরায় বিবর্ণ ফসলের খেতের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা বিমর্ষ চাষীকে। বস্তির ধারে ছোট ছোট বাচ্চারা খেলা করে ধুলোর মধ্যে । শহরের চৌরাস্তায় গাড়িগুলো থামলে শিশু কোলে নিয়ে ভিক্ষে চাইতে আসে জননী। পুরিষের পাত্র মাথায় করে নিয়ে যায় হরিজন। এরা যেন অনন্তকালের স্রোতে এক-একটি বিন্দু।

কোনও পরিবর্তন নেই। আমাদের শৈশবে যেমন শিশুকোলে জননীকে ভিক্ষা করতে দেখেছি, আজও তাই দেখছি। গণতন্ত্র এই শিশু ও জননীকে মাথার উপর একটি আচ্ছাদন দিতে পারেনি, দিতে পারেনি একটি সম্মানজনক জীবিকা। কোন শিল্পী হয়তো সেই ভিখারিণীর মর্মন্তুদ ছবি আঁকেন, তার জন্য বাহবা পান, লেখা হয় কবিতা, মঞ্চস্থ হয় নাটক, তবু চৌরাস্তার মোড়ে শিশু কোলে জননীকে দেখতে পাওয়া যাবেই। ছোটবেলায় রাস্তার মুচিকে ঠিক যে অবস্থায় যে পোষাকে বসে থাকতে দেখতাম, এখনও তারা ঠিক সেরকমই রয়েছে।

বাড়িতে ধাঙরেরা আসে খালি পায়ে, নেংটি পড়ে, আমাদের ঠাকুরদারা যেমন দেখেছিলেন আমরাও সেরকমই দেখছি। প্রতিদিন যে মানুষটি আসে তার নামও আমরা জানি না, ওরা সবাই ধাঙর বা মেথর। আফ্রিকার কেনিয়া শহরে আমি জুতো পায়ে মেথর দেখেছি, পরনে প্যান্ট-শার্ট। আমাদের এখানকার যেকোন ধনী কিংবা সাম্যবাদীর বাড়ির মেথরের একই রকম চেহারা। কাশী শহরে ভিখিরির লাইনের মধ্যে এক বৃদ্ধকে দেখে আমি চমকে উঠেছিলাম, তার মুখে অজস্র আঁকিবুকি, সামনে হাত পেতে বসে সে ঘুমে ঢুলছে।

আমার মনে হয়েছিল ঐ ভিখিরির বয়স আড়াই হাজার বছর। গৌতম বুদ্ধ ওকে যেমন দেখেছিলেন, আমরাও সেই অবস্থাতেই দেখছি। কিছুই বদলাতে পারিনি। এই গণতন্ত্র আমাদের কোন ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যাবে? কোন পথে আসবে সমস্ত মানুষের মুক্তি? নাকি সেই মুক্তি কোন দিনই আসবে না? তার আগেই ধ্বংস হয়ে যাবে পৃথিবী কিংবা মানব সভ্যতা? যদি মানব সভ্যতার বিনাশ হয়ই, তবে তা পরমাণু অস্ত্র বা বিষবাস্পে হবে না। হবে বঞ্চিত মানুষের দীর্ঘশ্বাসে।

(চলবে) ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।