আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দেশের সর্ব বৃহৎ মৃৎশিল্পের নির্মাতা রাবির মামুনার রশিদ

www.runews.weebly.com

‘বাংলার মাটি নাকি সোনার চেয়েও খাঁটি। তাই এই মাটিকে নিয়েই আমি সারাজীবন কাটাতে চাই। বিশ্বের কাছে বাংলার মাটি যেন সোনার চেয়েও খাঁটি বলে মনে হয়, সেই লক্ষ্য নিয়েই আমি কাজ করছি। ’ কাজের কথা উঠতেই এভাবেই বললেন মামুনার রশিদ। পুরোনাম সৈয়দ মামুনার রশিদ।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগে গেলেই দেখা মেলে এই মানুষটির। চুপ করে এক দৃষ্টে তাকিয়ে আছেন নিজের গড়া ভাষ্কর্যের দিকে। দুহাত কাদায় মাখামাখি। গভীর দৃষ্টিতে তাকাচ্ছেন আর মাঝে মধ্যে হাত লাগাচ্ছেন ভাষ্কর্যের এখানে-ওখানে। তবে এখানেই তার বিশেষত্বের শেষ নেই।

ভুলোভালা এই মানুষটি গড়ে ফেলেছেন দেশের সবচেয়ে বড় মৃৎশিল্প। বাংলাদেশের মৃৎশিল্পের আদি ইতিহাস বেশ পুরাতন। এক সময় বাঙালীর উনুন থেকে শুরু করে ভাত রাধাঁও হতো মাটির বাসনেই। আবহমান কাল থেকে এদেশের কুমাররা চাক ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে একতাল মাটি থেকে বের করে এনেছেন নানান ধরণের শিল্প সামগ্রী। কুমারদের কাজ দেখেই আগ্রহ তৈরি হয় মৃৎশিল্পে কাজ করার।

নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে তিনি বললেন, বিভাগের ফিল্ড ওয়ার্কে একদিন গেলাম রাজশাহীর মোহনপুরের পালপাড়ায়। সেখানে গিয়ে দেখলাম সনাতন পদ্ধতিতে কুমাররা কিভাবে নিজেদের তৈরি জিনিসপত্র পুড়ায়। দেখলাম তাদের তৈরি বাংলার ঐতিহ্যবাহী মাটির পুতুল। দাম কম হবার কারণে আমরা একেকজন ১০/১২টা করে পুতুল কিনে ফেললাম। আমার স্যার বললেন, মামুন এরকম কিছু একটা নিয়ে কাজ করো না।

আমি বললাম, করব স্যার, তবে আমার নিজের মত করে। ’ সেই শুরু। তারপর আর ভাববার সময় ছিলো না। দেড়মাস একটানা খেটে খুটে ঐতিহ্যবাহী মাটির পুতুলের আকারে ঢাউস পুতুল পড়লেন। গ্রপ শিক্ষক দেখে বললেন, মামুন তুমি জানো না তুমি কি করেছ।

এটাই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় মৃৎশিল্প। তিনি বললেন, আমি কখনও ভাবিনি আমার এই কাজটা এত বড় মাপের হবে। স্যারের কথা শুনে বুঝলাম। ’ তবে এত বড় কাজের জন্য কম ‘হ্যাপা’ পোহাতে হয় নি তাকে। বিভাগের চুল্লিটি ছোট।

তাই দেড়-দুই ফুটের ওপর কাজ করা যায় না। কাজ করলে পোড়ানো সমস্যা। তাই শেষ পর্যন- নিজের শিল্পটি গড়েছেন ছোট ছোট খন্ডে। তারপর সনাতন পদ্ধতিতে পুড়িয়ে তৈরি করেছেন প্রায় ১০ ফুট লম্বা এই শিল্পের আদলটি। তিনি বললেন, আমি প্রতিদিন প্রায় ৮ ঘন্টা শ্রম দিয়েছি।

মাটি তো নরম। তাই একটু একটু করে গড়ে তারপর অপেক্ষা করেছি শুকানোর জন্য। ওই অংশ শুকিয়ে গেলে পরবর্তী অংশে হাত দিয়েছি। এভাবে তিল তিল করে প্রায় দেড়মাস ধরে তৈরি করেছি পুরো শিল্পকর্মটি। আর প্রায় অসম্ভব এই কাজে সব সময় উৎসাহ যুগিয়েছেন বিভাগের শিক্ষক নুরুল আমীন।

বিভাগের সকল শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও প্রেরণা যুগিয়েছেন কাজে। বিভাগের শিক্ষক ও শিল্প সমালোচক এ এইচ এম তাহমিদুর রহমানের ভাষায়, বিশ্বাস করা যায় না। প্রদর্শন কক্ষের ছাদ ছুঁই ছুঁই এই শিল্প কর্মটি যেন বাংলাদেশের মৃৎশিল্পের প্রতিনিধিত্ব করছে। ... আধুনিক শিল্পে রূপ ও আঙ্গিঁক নিয়ে পরীক্ষায় যে দুঃসাহস দেখা যায় মামুনের শিল্পকর্মে তা রয়েছে। সুব্রানিয়াম আধুনিকতার যে অবস'ানে পৌছেছিলেন তা শিখরসম।

সৈয়দ মামুনের শিল্পে সেই ইঙ্গিত পাওয়া যায়। ’ এতো গেল শিল্প সমালোচকের কথা। যিনি এই কীর্তির নির্মাতা তার কথা শুনুন। ‘ বাংলার ঐতিহ্যবাহী মাটিরপুতুল এখন বিলুপ্ত প্রায়। আমি আমার শিল্পের মাধ্যমে চেষ্টা করেছি সেই ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনতে।

সেই সঙ্গে বাংলার ঐশ্বর্যময় মৃৎশিল্পকেও আধুনিক করতে চাই আমি। ’ কিভাবে? ‘ এদেশের কুমার বা পালরা খুবই চড়া শ্রমে জিনিসপত্র তৈরি করে নিম্ন মুল্যে বিক্রি করে। মোহনপুরের পালপাড়ায় গিয়ে আমি মাটির পুতুল কিনেছিলাম একটাকা দিয়ে। তাই আমার পরিকল্পনা রয়েছে এসব মৃৎশিল্পীদের আধুনিক ধ্যান-ধারনা আর প্রযুক্তিগত শিক্ষা দিয়ে উন্নত করার। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক চারুকলা প্রদর্শনীর সকল মাধ্যমে শ্রেষ্ঠ শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন পুরষ্কার পেয়েছে সৈয়দ মামুনের গড়া ‘ পূর্নবিকশিত হওয়া’ শিরোনামের এই মৃৎশিল্পটি।

তবে এখানেই থেমে থাকতে চান না তিনি। বললেন, সোনার বাংলার মাটি নাকি সোনার চেয়ে খাঁটি। আমি আমার শিল্পের মাধ্যমে বিশ্বের দরবারে বাংলার মাটিকে সোনার মতই দামি করে তুলব। আমি এই মাটির স্পর্শ নিয়েই পৃথিবী ছাড়তে চাই। ’


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.