আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বড়ভাই



বন্ধু আক্কেল আলী এসেই বলল গল্প শুনাবে। একটা সত্য ঘটনা। উত্তরের অপেক্ষা না করে শুরু করে দিল। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি। হল এ থাকি।

আমার পাশের রুমে থাকতেন দীর্ঘদেহী আকর্ষনীয় চেহারার এম, এ চুড়ান্ত পর্বের একজন ছাত্র। সবাই তাকে বড়ভাই বলে ডাকতাম। বড়ভাই যেমন আপদে বিপদে সকলের খোজ নিতেন, সহযোগিতা করতেন তেমনি প্রায়ই আসর জমিয়ে রাখতেন। সুন্দর সুন্দর ও চমকপ্রদ অনেক গল্পও করতেন। মোটকথা, আমরা সবাই তাকে ভালবাসতাম বিশেষ করে তার সুন্দর মনের জন্য।

তেমনি একদিন গল্প করতে করতে বড়ভাই বললেন যে জীবনে অনেক সমস্যার সম্মুখিন তিনি হয়েছেন কিন্তু কখনো ঘাবড়াননি কোন সমস্যার সমাধান হয়েছে, আবার অনেক গুলোর হয়নি বলে অনেক ঝড় ঝাপটার সম্মুখীন হতে হয়েছে। কিন্তু কখনো তিনি বিব্রত হননি, বিচলিত বোধ করেননি, এটা তার গর্ব। রুমমেট রেজাউল বলল যে একবার চেষ্টা করে দেখা যাক না বড়ভাইকে বিব্রত করা যায় কিনা? বিচলিত হন কিনা? যে কথা সে কাজ। আমরা কয়েকজন মিলে শলা-পরামর্শ করলাম। স্থির হল... গোছল খানা, ডাইনিং হল, ক্যাফেটেরিয়া, কমনরুমে যে যেখানে যার সঙ্গে দেখা হবে, বড়ভাই কথা বলতে শুরু করলেই আমরা সবাই বলব, বড়ভাই বলছেন কি? আপনার কথার তো কোন আগামাথা পাচ্ছিনা।

আপনার কি মাথা খারাপ হল নাকি? এভাবে চলল তিন চারদিন। বড়ভাই হয়ত জিজ্ঞেস করছেন - ডাইনিং হলে খেতে যাব কিনা? অমনি জিজ্ঞেস করে বসলাম বড়ভাই আপনি কি অসুস্থ, আপনি না মাত্র খেয়ে এলেন? কি আবোল তাবোল বকছেন। মাথা ঠিক আছে তো? দুপা এগিয়ে অন্যকে বড়ভাই জিজ্ঞেস করলেন- ওরা আমার সঙ্গে অমন করে কথা বলে কেন, বলতে পার? অমনি সেও উত্তর দিল - বড়ভাই বলছেন কি? আপনার কথার মাথা - মুন্ডু তো কিছুই বুঝতে পারছি না। আপনার নিজের মাথা ঠিক আছে তো? এভাবে উনি যেখানে যার সঙ্গে কথা বলছেন সবার সেই এক কথা। যারা এই শলা পরামর্শের কথা জানেন না তারা নিজেরাই এগিয়ে হয়ত জিজ্ঞেস করছে - বড়ভাই কেমন আছেন? বড়ভাই ভাল আছি বলতে গিয়েও থমকে গেলেন এই ভেবে যে হঠাৎ এ প্রশ্ন কেন? এভাবে চলল।

চারদিনের মাথায় এসে বড়ভাই সত্যি চিন্তিত হলেন। সত্যিই অসুস্থ হয়েছেন কিনা নিজের মধ্যেই বিরাট প্রশ্নবোধক চিহৃ হয়ে দেখা দিল। তিনি একটু বিমর্ষ হলেন। কিছুটা ভীতও হলেন বোধহয়। পঞ্চম দিনে তার অবয়বে ভীতভাব ফুটে উঠল।

যাকে সামনে পান তাকেই জিজ্ঞেস করেন - তাকে সুস্থ দেখাচ্ছে কিনা । তার কথায় কোন অসংলগ্নতা লক্ষ্য করছেন কিনা? খাওয়া দাওয়া প্রায় ছেড়ে দিলেন। তার রুমমেটের কাছে জানা গেল যে রাতের ঘুমও তার নষ্ট হয়েছে। প্রায় সারারাতই রুমে ও বারান্দায় পায়চারী করে কাটিয়েছেন। আমরা যারা এ ঘটনার হোতা তারা একটু ভড়কে গেলাম।

সত্যিই কি অমন হাসি খুশি দিলখোলা মানুষটাকে পাগল বানিয়ে ছাড়লাম! সত্যিই যদি বড়ভাই পাগল হয়ে যায় তবে সে অপরাধের প্রতিকার কি হবে? এত জঘন্য অপরাধ ক্ষমার অযোগ্য। আবারও শলা-পরামর্শ হলো। বড়ভাইর অবস্থা আরও খারাপ হওয়ার আগেই কিছু একটা ব্যাবস্থা করতে হবে। বড়ভাইকে আরও অসুস্থ হতে দেয়া যাবে না। সঙ্গে সঙ্গে তিন চার জন মিলে ছুটলাম ডাক্তারের কাছে।

তাকে সবকথা খুলে বলতে তিনি ভয়ানক রেগে গেলেন। বললেন, আপনাদের লেখাপড়া করা উচিৎ হয়নি। আপনারা শুধু বিবেক বর্জিতই নন আপনারা অমানুষ। একবারও কি চিন্তা করেছেন যে আপনাদের এ অবিবেচকের মত কাজটি শুধুমাত্র একটা সম্ভাবনাময় জীবনকে ধ্বংস করার উপক্রম করেন নি, একটি পরিবারকেও হয়তবা অশেষ দুঃখ -দুর্দশার মধ্যে ঠেলে দেবে। বন্ধুর চিকিৎসার জন্য এসেছেন, আসলে চিকিৎসা হওয়া উচিৎ আপনাদের কজনার।

আমরা এতক্ষন অধবোদনে দাড়িয়ে ছিলাম, পরে ক্ষমা চেয়ে ডাক্তার সাহেবকে অনুরোধ করলাম বড়ভাইএর চিকিৎসার জন্য আমাদের সাথে আসতে। ডাক্তার সাহেব এলেন। দেখেশুনে কিছু ঔষধ দিলেন। এবং তাৎক্ষনিক ভাবে ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রেখে গেলেন। ঘুম ভাঙ্গলে আবার ঘুম পাড়াবার জন্য ঔষধ ব্যবস্থা করতে বলে গেলেন।

তার ধারনা অন্তত চব্বিশ ঘন্টা একটানা ঘুম তার দরকার। আমরা কজন পালা করে বড়ভাইয়ের কাছে থাকলাম। লক্ষ্য রাখলাম, ডাক্তারের কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করার চেষ্টায় রত থাকলাম। প্রায় ত্রিশ ঘন্টা একটানা ঘুমের পর বড়ভাই জাগলেন। আমরা কাছেই ছিলাম।

আমাদের দেখে জিজ্ঞেস করলেন, কি ব্যাপার তোমরা সবাই! রেজাউল বলল, বড়ভাই আজ না আন্তঃ হল ফুটবল ফাইনাল খেলা। মাঠে যাবেন না? বড়ভাইএর যেন সম্বিত ফিরে এল , বললেন- তাইত, চল যাই। কিন্তু আমার যে খুব ক্ষুধা পেয়েছে। একসঙ্গে তিন-চারজন বলে উঠলাম – চলুন, মাঠে যাওয়ার পথে ক্যাফেটেরিয়ায় খেয়ে চলে যাব। এরপর লক্ষ্য করলাম, বড়ভাইএর সে অবস্থাটা কেটে গেছে বটে কিন্তু পূর্বের সেই উচ্ছলতা যেন হারিয়ে গেছে।

কেমন যেন একটু গম্ভির হয়ে গেছেন। সেইদিন প্রতিবেশী বন্ধুকে এ ঘটনার কথা শুনিয়েছিলাম, শুনেই সে বলল - তোমরা কজন মিলে একটি সম্ভাবনাময় জীবনকে নষ্ট করে দিয়েছিলে প্রায়। তবুও শেষ মুহুর্তে বোধদয় হওয়ায় চুড়ান্ত ধ্বংস এড়ানো গেছে কিন্তু আমাদের দেশেরও প্রায় একই অবস্থা। কিছু সংখ্যক লোক মিলে দেশের সমগ্র মানুষকে পাগল বানিয়ে ছাড়বে বলে মনে হচ্ছে। একই সুরে সবাই একই কথা বলছে, পক্ষ - বিপক্ষ সবাই।

কিন্তু এতে করে সাধারন মানুষের কোন কল্যান নিশ্চিত হওয়ার সম্ভাবনাও দেখছিনা। তাইত ভাবি চুড়ান্ত অমঙ্গলের আগে সবার বোধদয় হোক। দেশ ও সাধারন মানুষের মঙ্গল আনুক।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।