আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাংলাদেশ দলকে অভিনন্দন

অতি দক্ষ মিথ্যুক না হলে সত্যবাদিতা উৎকৃষ্ট পন্থা

দিনের প্রথম বল থেকে শেষ বল অব্ধি ধুঁকতে থাকা ভারতীয় দলকে দেখে কখনও মনে হয় নি তাদের জেতার কোনো সম্ভবনা আছে। এর পরও যখনও ক্রিকইনফো র আনন্দ বসু লিখেন বাংলাদেশের মতো টিমের কাছে হারার কারনেই ভারতের সুপার এইটে উঠার সহজ পথটা কঠিন হয়ে গেলো আঁতে ঘা লাগে সাংঘাতিক। আবহাওয়া আর পিচের অবস্থা দেখে টসে জেতা রাহুল দ্রাবিড় কেনো প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিলো এটা আমার জানা নেই। এমন সিক্ত আবহাওয়া আর ভারী মাঠে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত সব সময়ই আত্মঘাতী। তবে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ব্যাটিং লাইন আপ বলে প্রচারিত ভারতের হয়তো ধারনা ছিলো তারা অন্য সব দলের মতোই বাংলাদেশকে রানের পাহাড়ে গুড়িয়ে দিবে।

সেটা আবহাওয়ার কারণে মোটেও সম্ভবপর ছিলো না। বৃষ্টিতে ভারী হয়ে যাওয়া মাঠ আর পিচের আদ্রতার সাথে মেঘলা আবহাওয়া বিষয়টা দুরহ করে তুলেছিলো অনেকগুন। এমন আবহাওয়ায় নিয়ন্ত্রিত বোলিং, সুইংয়ের কার্যকরী ব্যবহার আর সঠিক লাইন মেনে বল করে যাওয়া সফল হওয়ার পূর্বশর্ত। সে কারণেই আমি সব সময়ই শাহাদাত হোসেনকে নেওয়ার ঘোর বিরোধী। ছেলেটা জোর পতিতে বল করলেও বল করার সময় মাথার ব্যবহার করে না।

বাংলাদেশের মধ্যম গতির বোলাম মঞ্জুরূল হক কিংবা তাপস বৈশ্য আমার প্রথম পছন্দ। দুদিকেই সুইং করতে পারা বোলাড়দ্বয়ের একজন এখন টিমের সদস্য নেই, অন্য জন ঘোষিত 12 জনের দলে থাকলেও খেলার সুযোগ পান নি। মাশরাফি আর সৈয়দ রাসেলের নিয়ন্ত্রিত বোলিংএর পরে রাজ্জাক আর বাম হাতি স্পিনকে জনপ্রিয় করে তোলা মোহাম্মদ রফিকে বোলিংয়ে ধুকতে থাকা ভারতীয় দলের জন খানিকটা করূণা হলো। বেচারারা ভুল করে বাঘের লয়াজ দিয়ে কান চুলকানোর ইচ্চা প্রকাশ করেছিলো। যদিও মাশরাফি বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল বোলার, তবে সৈয়দ রাসেল আর মোহাম্মদ রফিক আসলে মুল বোলিং সহায়ক ভুমিকা রেখেছে।

তারা এমন বোলিং না করলে কখনই সম্ভব ছিলো না মাশরাফির সাফল্য পাওয়া। আর সাকিব আল হাসানের এক ঘেয়ে বোলিংও উপভোগ্য যখন কোনো দল সমস্যায় পড়ে তখন সব বোলারই সমান ভয়ংকর হয়ে উঠে। আব্দুর রাজ্জাক রাজের ইকোনমি রেট, মোহাম্মদ রফিকের ইকোনমি রেট আর সাকিব আল হাসানের ইকোনমি রেট চমৎকার। সাকিবের বোলিংয়ের প্রধান অস্ত্র ওর বল ছোড়ায় কৌণিক অবস্থান। ক্রীজের কোণা থেকে ছুড়ে দেওয়া বলগুলো লক্ষভেদী, তবে যদি তেমন ত্রস্ত না থাকতো ভারতীয় দল তবেশোল্ডার সামনে এনে এমন বলকে ব্যবহার করতে পারতো ঠিক ভাবে।

একমাত্র পায়ের ব্যবহার করেই এমন বোলিং মোকাবেলা করা সম্ভব, যা খেলার কোনো সময়ই ছিলো না ভারতীয় দলের। হাবিবুল বাশারের ক্যাপ্টেন্সি নিয়ে আমার একটাই অভিযোগ, যথেষ্ট আক্রমনাত্বক নয়। অবশ্য বাংলাদেশের অতীত যেমন তাতে এমন আক্রমনাত্বক হওয়ার বিলাসিতা হয়তো শোভা পায় না তার। বিপক্ষকে গুড়িয়ে দেওয়ার বদলে রান কমিয়ে রাখার প্রাণান্ত চেষ্টা তার। তাই এমন বিপর্যস্ত অবস্থা থাকার পরও মিড উইকেট আর কাভারে কোনো রকম ফিল্ডার না রেখেই ইনিংসের 30 ওভার বল করা হয়েছে।

বিপক্ষকে স্বস্তি দেওয়ার জন্য কিংবা রান বাঁচানোর জন্য হলেও এমন পদ্ধতি আমার পছন্দ না। একেবারে কলজে চেপে রস বের করে ফেলতে হবে প্রতিপক্ষে, এমন নিষ্ঠুর মানসিকতার জন্য যদি একটা চার খেতেই হয় আমার আপত্তি নাই। হাবিবুল বাশার তা না করে যেভাবে ফিল্ডিং সাজিয়েছেন তাতে রাজ্জাকের কিংবা রফিক সাকিবের বোলিংএ বাড়তি কিছু রান এসেছে। আর সবশেষে মাশরাফীর বলে যখন মুনাফ প্যটেলের ব্যাটের কোনায় লেগে চার হলো উইকেটের পেছন দিয়ে তখন এমন রক্ষনাত্বক ফিল্ডিং সাজানোর জন্য হাবিবুলের উপর বিরক্তি এসেছে। পেস বোলিংয়ে শেষ ব্যাটসমানদের ব্যাটের কোনায় লেগে রান হয়ে যাবে এটাই স্বাভাবিক, এসব রান না দেওয়ার জন্য হলেও স্লীপে আর গালিতে একজন রাখা দরকার।

তবে সবশেষে যখন 191এ থেমে গেলো ভারতের ইনিংস তখন প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয় নি যে বাংলাদেশের ব্যাটিং দেখতে হবে। বাংলাদেশ জিতবেই এটাই নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিলো প্রথমার্ধে। ম্যাচের দ্বিতীয় ভাগে যখন ভারত ফিল্ডিংয়ে নামলো তখন সেটা ছিলো ভারতীয় দলের লাশ। ওদের ভেতরে কোনো রকম জিতবার বাসনাও ছিলো না,হারটাকে সহনীয় করার চেষ্টা ছিলো। শাহরিয়ার নাফিস চমৎকার ব্যাটসম্যান, তার আউট হওয়াটা টেমন আকর্ষনীয় ছিলো না।

এর পরের অংশটা ছিলো উপভোগ্য, টামিম ইকবালের সাহসী ব্যাটিং আর মুশফিকুর রহিমের বিচক্ষণতার মিশেল। বাংলাদেশের জয়ের জন্য প্রধান অবদান হলো এই মুশফিকুর রহমানের। তার ধীর গতির ধরে খেলার বিষয়টা অন্তত অন্য দিকে ব্যাটসম্যানদের সহায়তা করেছে। সামান্য কিছু উততএজনা ছাড়া ওর ব্যাটিং ছিলো একেবারে শীতল, একেবারে প্রফেশনাল ব্যাটিং, যেমনটা দরকার তেমনটাই। টামিম ইকবাল মারকুটে ব্যাটসম্যান তবে এখনও পরিপক্কতা আসে নি তার ভেতরে।

সহজেই উত্তেজিত হয়ে পড়ে। এর পরও সেই অভিজ্ঞতার অভাবকেও ব্যবহার করতে পারে নি ভারতের বোলাররা। জহির খানকে পিটিয়ে 15 রান নেওয়ার পর কিংবা ফিফটি পুরণ হওয়ার পর তার অবিবেচক ব্যাটিংটার কৈশোরিক আবেগের কারণের ঘটেছে। সাকিব আল হাসান আর রহিমের ব্যাটিংটা ছিলো খুনে আনন্দের। তাদের টুকটুক করে রান নেওয়া আর ভারতীয় বোলারদের হতাশার দৃশ্য আমোদক।

উত্তেজক না। বরং এটা বৃষ্টির দিনের গরম চা আর পিয়াজুর মতো জমিয়ে উপভোগ করার বিষয়। শেষ দিয়ে সাকিবের আউট হওয়ারা উচিত হয় নি, আরও একটু ধরে খেললে হয়তো বাংলাদেশ 7 উইকেটে জয়ী হতো। তা হলো না। সুমনের স্টুপিড স্ট্যাম্পিং দেখে বিরক্ত লাগলেও তখন কোনো ভাবেই বাংলাদেশ হারার সম্ভবনা ছিলো না।

এমন উত্তেজিত হয়ে শোডাউন করারও কোনো প্রয়োজন ছিলো না। সুমনের অভিজ্ঞতা প্রচুর হলেও এখনও ইনিংসের প্রথম 20 রান করা সুমনের জন্য সবচেয়ে কঠিন বিষয়। এর পরও বাংলাদেশ জিতেছে, জিতেছে সব খানেই আর বাংলাদেশকে সাহায্য করতেই মনে হয় লাঞ্চের পর রোদ ঝলমল করে উঠলো। উইকেটের আদ্রতা কমে গেলো। সিম ব্যবহার করলে বল স্কিড করার যেই প্রবনতা থাকে।

যেটা ইংল্যান্ডের উইকেটের প্রধান বৈশিষ্ঠ্য সেটা ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধে ঘটে নি। বরং বল ঠিক মতোই এসেছে ব্যাটে। শুধু একটু ধৈযর্্য ধরে খেললেই রান আসবে। বাংলাদেশ দলের তামিম, আশরাফুল আর সুমন এই অধীরতার খেসারত দিলো আসলে। যাই হোক আমি আনন্দিত, আনন্দিত বাংলাদেশের সবাই।

তাই সেই ঘুম ঢুলুঢুলু চোখেও যখন বিচানায় ঘুমের প্রস্তুতি নিচ্ছি তখন থালা ঘটি বাটি চ্যাপ্টা করতে করতে শুরু হওয়া বিজয় মিছিল তেমন বিরক্তির কারণ হয় নি। বাংলাদেশ এখন জিততে শিখছে ওদের প্রতিটা জয়ে যদি আমরা এমন উন্মাদনা দেখাই তাহলে আমাদের ঘরে আর ঘটি বাটি থাকবে না। বলা যায় না এই বিশ্বকাপেই হয়তো বাংলাদেশ ইংল্যান্ড আর নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে সকল দেশকে হারানোর প্রক্রিয়াটা সমাপ্ত করবে। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারানোটা খুবই সম্ভব বাংলাদেশের পক্ষে যদি বাংলাদেশ নিজের খেলা খেলে। বাংলাদেশ দলের জন্য শুভ কামনা।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.