আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

টেস্টিং কেস



কেমন যেন উসখুস করছে সজল। একবার সোফায় বসছে_ কি যেন ভাবছে_ আবার পায়চারী করছে। পাশেই দীর্ঘক্ষণ ধরে মোবাইল ফোনে ম্যারাথন আলাপচারিতা চালাচ্ছে ওর খালাতো বোন রুমকি। রুমকির রসিয়ে রসিয়ে কথা বলা দেখে সজলের পিত্তিটা একটু একটু করে জ্বলছিল। সজলের হাবভাব দেখে রুমকি ফোন রেখে বলল, কিরে কিছু বলবি? সজল খুব আগ্রহভরে তার কাছে এসে বসল।

তারপর বিজ্ঞের বলল, ব্যাপারটা হলো যে........ব্যাপারটা আর বলা হলো না সজলের এরই মধ্যে রুমকির মোবাইলটা " দুনিয়া কা মজা লে লো" বলে বেজে উঠল। ঢঙ্গিয়ে ভঙ্গিয়ে কথা চলল মাত্র আধা ঘন্টা। এরপর রুমকি বলল- হ্যাঁ বল, কি যেন বলছিলি? সজল হাত কচলিয়ে ইনিয়ে বিনিয়ে বলল, তোদের এখানে বেড়াতে এসে ভালো লাগছে না। সব কিছুতেই কেমন যেন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। _কেন? কিছুক্ষণ আগে আসা একটা এসএমএস খুব গুরুত্বসহকারে পড়তে পড়তে বলল রুমকি।

_ কেন আবার। তোকে একটা কথা বলি? _দেখ সজল, হ্যাঙলামি না করে তাড়াতাড়ি বলে ফেল তো। আমার একটা জরুরি ফোন আসবে। সজল এবার ঘাড়টা এদিক ওদিক দুবার ঘুড়িয়ে নিল। তারপর সোজাসুজি বলল, প্রেম করবি আমার সাথে? সজলের কথাটা শোনার পর রুমকির মধ্যে কোন ভাবান্তর পরিলক্ষিত হলো না।

এমন ভাব দেখে সজল বলল, কি হলো? _তোর সাথে প্রেম করব? সজল তুই আমাকে হাসালি। _ এতে হাসির কি হলো, শুনি। _না এটা হাসির কোন বিষয় নয়। তবে কান্না করার মতও কোন বিষয় না। বুঝলি? রুমকির উত্তরে সজল কিছুটা হতভম্ব হয়ে রহস্যমাখা কন্ঠে বলল, কি রে রুমকি তুই তো এমন ছিলি না।

আমার যতদূর মনে পড়ে তোর তো না বলার অভ্যেস ছিল না। _ আরে বাবা সেই ক্লাস সেভেন্ থেকে শুরু করেছি। ওসব করতে করতে একেবারে হাঁপিয়ে উঠেছি। সজল এবার মিনতির সুরে বলল, আর একটা প্রেম করেই দেখ না। আমি বললাম তোর ভালো লাগবে।

_ কার সাথে? _কেন আমার সাথে। রুমকি কাকে যেন একটা মিস কল দিয়ে বলল, নারে তুই কিছু মনে করিস না। তোকে দেখলে না আমার কেমন জানি বমি বমি লাগে। _আমারও তো তোকে দেখলে বমি বমি লাগতো। কিন্তু বড়ই খরার মধ্যে আছি।

যাকে বলে পেমের খরা। ভালবাসার খরা। উপায় কিছু দেখছি না। কি করব তুই-ই বল? সজলের একথা শুনে রুমকি তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে বলল, হারামী জানোয়ার তুই গলায় দড়ি দে। রুমকির গালি হজম করে সজল কিছুটা অভিমানের সাথে বলল, তোদের এখানে আট দশ দিনের জন্য এসেছি।

তুই এরকম করবি জানতাম না। _ তো কি রকম করব? _রুমকি তুই আমার সাথে টেস্টিং কেস হিসেবে প্রেমটা শুরু করতে পারিস। যদি ভালো না লাগে তো বাদ দিবি। তখন আমি আমার রাস্তা দেখব। _ ও... তাই না।

আর ভালো গেলে গেলে? কাজ হবে ভেবে সজল একটু নড়েচড়ে রুমকির গা ঘেঁষে বসে বলল, ভালো লাগলে তোদের এখানে যে আট দশ দিন আছি_তার পুরোটা সময়ই আমার সাথে প্রেম করতে পারিস। _ কেন? আট দশ দিন কেন? রুমকি বড় বড় চোখ করে বলল। _কারণ আট দশ দিন পর বাসায় ফিরে আমার অনেক কাজ আছে। বগুড়া থেকে চুমকি, রাজশাহী থেকে রেশমী আমার বাসায় আসবে। এছাড়া ময়না, টিয়া, সোহাগী, আল্লাদীকেও অনেক দিন ধরে এ্যাপোয়েন্ট দিয়ে রেখেছি।

রুমকি কি যেন ভেবে বলল, কিন্তু.......... _ কিন্তু কি? এই আট দশ দিনের বেশি সময় চাও? তোমার পেছনে খরচ করার মত এত দীর্ঘ সময় আমার হাতে নেই। রুমকি কিছুটা বিরক্ত হয়ে বলল, আরে আমার কথাটা আগে তো শোন। শুধু শুধু প্যাঁচ-প্যাঁচ করছ কেন? _হ্যাঁ হ্যাঁ বল, শুনি। _আমি বলছিলাম যে টেস্টিং কেস হিসেবে তোমার সাথে প্রেম শুরু করতে পারি। কিন্তু আমার ভালো লাগলেও কোনক্রমেই আট-দশ দিন প্রেম চালাতে পারব না।

সজল একটু ভরকে গিয়ে থতমত কন্ঠে বলল, কেন, কেন? রুমকি ঠোটে লিপস্টিক লাগাতে লাগাতে বলল, তিন দিনের বেশি কোন ছেলের সাথে প্রেম করতে আমার মোটেই ভাল লাগে না। রুমকির উত্তর শুনে সজলের কপালে চিন্তার সূক্ষ রেখা ফুটে উঠলো। সে মাথার চুলে বিচুলি কেটে গম্ভীরভাবে বলল, সিরিয়াস কেস। এ সমস্যাটা তো আমারও। এরই মধ্যে রুমকির মোবাইল ফোনে আবারো " দুনিয়া কো মজা লে লো " রিংটোন বেজে উঠল।

####

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।