আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অ্যানেকডট 7 ।। মিসেস মার্টিন ফন বুশেলের দেহরক্ষা

স্বেচ্ছাচার না করা গেলে তারে স্বাধীনতা বলে না। স্বাধীনতা মানেই স্বেচ্ছাচারের অধিকার।

মিসেস মার্টিন ফন বুশেলের দেহরক্ষা মি. মার্টিন ফন বুশেল (Martin Van Butchell) 1760 দশকের হাই প্রোফাইল লন্ডনবাসী আছিলেন। বেপোরোয়া জীবনযাপন ও প্রায় সমাজবিরোধী কর্মকাণ্ড তারে প্রচুর কুখ্যাতি আইনা দিছিল। ভদ্রলোকটিকে গোলাপী ডট অাঁকা একটা সাদা ঘোড়ার উপরে গাধার চোয়াল হাতে দেখা যাইত।

তিনি ওই চোয়ালের হাড্ডি নাড়াইতে নাড়াইতে লন্ডনের রাস্তায় ঘোড়াঘুরি করতেন। দন্তচিকিৎসায় সুনাম তারে অনেক বিত্ত আইনা দিছিল। বিজ্ঞাপনে প্রকাশ থাকতো যে তিনি বিনা ব্যাথায় দাঁত লাগাইতে ও তুলতে পারেন। তবে বুশেল ইতিহাসে বিখ্যাত হইয়া আছেন মৃত স্ত্রীর প্রতি তার আত্যন্তিক অনুরাগের কারণে। মিসেস ফন বুশেল তার অশান্তিময় বৈবাহিক জীবনের উত্তরাধিকার হিসাবে একটা আক্রোশপূর্ণ উইল কইরা গেছিলেন।

যার ডিক্রি মতে সম্মানীয়া মিসেস ফন বুশেলের মৃতু্য ও সমাধি (The moment i am dead and buried) হওনের লগে লগে স্থাবর-অস্থাবর সকল সম্পত্তি চইলা যাইব মিসেসের দূর সম্পর্কের আত্মীয়স্বজনদের ভোগদখলে। কৃতবিদ্য দন্তচিকিৎসক মনে করতেন তিনি দলিলে একটা ফাঁক খুঁইজা পাইছেন। 1775 সালের 14 জানুয়ারি স্ত্রী ম্যারির মৃতু্য সম্পন্ন হইলে মি. বুশেল সিদ্ধান্ত নেন প্রতিশোধকামী স্ত্রীর মৃতদেহ তিনি আদৌ সমাধিস্থ করবেন না। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য তার শিক্ষক ড. উইলিয়াম হান্টার এবং ড. উইলিয়াম ক্রুইকশাংকের শরণাপন্ন হইলেন তিনি। ডক্টরদ্বয় মিসেস বুশেলের মৃতদেহ সংরক্ষণে তারে সহযোগিতা করেন।

দুই ডাক্তার মৃতদেহের ধমণীতে তারপিন তেল (oil of turpentine) ও ক্যাম্পহোরেটেড স্পিরিট ওফ ওয়াইন (camphorated spirit of wine) ইনজেক্ট করেন। এবং চোখের জায়গায় তারা গ্লাস আই লাগাইয়া দেন। এরপরে মৃত-ভদ্রদেহটারে লেস গাউন পরাইয়া প্লাস্টার অফ প্যারিসে আটকাইয়া দিয়া কাচের ঢাকনা অলা কফিনে সাঁইটা দেওয়া হয়। ড্রয়িং রুমে রাখা হইছিল ম্যারির মৃতদেহ। সপ্তাহের সোমবার থিকা শনিবার পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল 9টা থিকা দুপুর 1টা পর্যন্ত বুশেল তার বাড়ি কাম চিকিৎসালয়ের জানালায় ডেডবডি প্রদর্শনের ব্যবস্থা করছিলেন।

মৃত স্ত্রীরে তিনি সর্বদা 'মাই ডিয়ারলি ডিপার্টেড' বইলা সম্বোধন করতেন। যদিও প্রচুর লন্ডনবাসী এই প্রদর্শনী দেখতে আসত তবু অনৈতিক প্রদর্শনীর জন্য বুশেলের অনেক নিন্দা হয়। দর্শকের ভিড়ে বিরক্ত হইয়া শেষে বুশেল প্রদর্শনে কড়াকড়ি আরোপ করেন। সেন্ট জেমস ক্রনিকল-এর 21 অক্টোবর 1775 সংখ্যায় বুশেল একটা বিজ্ঞাপন দিছিলেন : 'ফন বুশেল আগ্রহীদের অবহিত করছেন এই বলে যে, কোনো আগন্তুক এখন থেকে বুশেলের পূর্বানুমতি ব্যতিত তার স্ত্রীর মৃতদেহ দেখতে পাবেন না। অনুমতির জন্য রোববার বাদে যে কোনোদিন নয়টা থেকে একটার মধ্যে যোগাযোগ করুন।

' বুশেল পরে আরেকটা বিয়া করেন। নতুন স্ত্রী এলিজাবেথ পুরাতন স্ত্রীর মৃতদৈহিক উপস্থিতি মাইনা নিতে চান নাই। ফলে বাড়ি থিকা অক্ষয় মৃতদেহটা সরাইতে বাইধ্য হন বুশেল। ড. হান্টারের এক ভাইয়ের মিউজিয়ামে মৃতদেহটা তিনি দান কইরা দেন। শেষ পর্যন্ত সংরক্ষিত দেহ গিয়া পৌঁছায় দি রয়েল কলেজ অফ সার্জনস-এ।

মিসেস বুশেলের সমাধিস্থ হওয়ার লিগাল বাসনা প্রায় 166 বছর ধইরা অপূর্ণ থাইকা গেছিল। পরে 1941 সালে হিটলারের সৈনিকগো বোমার আঘাতে কলেজের ল্যাবরেটরি মিসমার হইলে তিনি ভূগর্ভস্থ হইছিলেন, এমন ধারণা করন যায়। ছবি : মাটিন ফন বুশেল লেখাটা শুদ্ধ নাগরিক 'ডায়ালেক্টে' যায়যায়দিন পত্রিকার 19/10/6 সংখ্যায় ছাপা হইছিল।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।