আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমি যে চোখের বালি ... কি করে রীধি কে বলি...

জীবনেরটানে স্বপ্নেরখোজে, খুজে ফেরা নিজের প্রান, তবু আমি ছুটে চলি, স্পাইসিস্পাই001 চৌধুরী ভিলার সামনে গাড়ীটা থামাতে বলল মা.. গাড়ী থামতে দেখে এক ভদ্রলোক আমাদের দিকে এগিয়ে আসলেন ... মা আর বাবা গাড়ী থেকে নেমে কূশল বিনিময় করলেন .. মা আমাকে আর দুষ্টু কে নামতে বললো.. গাড়ী থেকে নামার সময় আমার শরীরের বাম পাশ টা কেমন কেপে উঠল ... কি হতে চলেছে কিছুই মাথায় আসছে না কিন্তু কৌতুহল টা বেড়েই চলেছে .. আমেরিকা থেকে আসার পর থেকেই মা বলে যাচ্ছে কি যেন সারপ্রাইজ দেবে ... কিন্তু সেটা কি .... যাইহোক বাড়ীর ভেতরে ঢুকে কৌতুহল টা উবে গেলো বিয়ের দাওয়াত খেতে এসেছি ভেবে .... কিন্তু এই বিষয়টা নিয়ে মা আর দুষ্টুর নাটক করার কি ছিলো আল্লাহ জানে .. .. হঠাৎ একটা মেয়ে শাড়ী পড়ে বাঙ্গালী সাজে শরবত-মিষ্টি নিয়ে ঘরে ঢুকলো .. প্রথমে মা আর বাবাকে পা ছুয়ে সালাম করলো .. তারপর আমাদের দিকে মিষ্টির প্লেট বাড়িয়ে দিলো.... রীধির হাত থেকে প্লেট টা নেওয়ার সময় খেয়াল করলাম ওর হাতটা কাপছে.... আমার আর কিছু বুঝতে বাকী ছিল না কি হতে চলেছে..এইবার আমার একটু একটু বেশ রাগ উঠতে শুরু করলো .. মা এইটা কি পাগলামী শুরু করছে .. এই সব এর মানে কি .... কিছু বুঝে উঠার আগেই রীধির সাথে আমার বিয়ে হয়ে গেলো ... আমাকে না জানিয়ে মা আগে থেকেই সব ঠিক করে রেখেছিলো তাই কবুল বলা ছাড়া আর কোন কিছু বলে প্রতিবাদ পর্যন্ত করতে পারলাম না.... চলে আসার সময় রীধি খুব কান্নাকাটি করছে কিন্তু আমার কোনও ফিলিংস ই নেই.... একটু আগে আমার সামনে যা হয়েছে আমি যেন মনে করতে পারছি না , মনে করতে চাইছিও না.... বাসায় এসে মনে হলো দুষ্টু যেন রীধির মন ভাল করার দায়িত্ব নিয়ে নিয়েছে.. এই দেখে আমার রাগ আরও বেড়ে গেল ... মা না বলুক তুই তো বলতে পারতি... নিজ ঘরের বারান্দায় এসে দাড়িয়ে নিজেকে একা একা লাগছে.. সমস্ত বাড়ী ঘুরিয়ে দুষ্টু রীধিকে সামায়নের ঘরে নিয়ে এসে বলল, এইটা হচ্ছে ভাইয়ার ঘর মানে আজ থেকে তোমারও ... রীধি কিছু বলছিল না শুধু শুনছিল আর অবাক হচ্ছিলো কি সুন্দর গুছিয়ে কথা বলে মেয়েটা ..বারান্দা থেকে দুষ্টুর কথা শুনে আর রীধি ঘরে এসেছে জেনে মাথায় রক্ত উঠে গেলো...মা আঘাত পাবে ভেবে না পারছি কিছু বলতে না পারছি কিছু সইতে.... ভাবী তোমাকে গোমরা মুখে কিন্তু একটুক ও মানেচ্ছে না ... সেই কখন থেকে শুধু আমিই বকবক করে যাচ্ছি আর তুমি শুধু হু-হা করে যাচ্ছো .. মেয়েরা কি সারাজীবন বাপের বাড়ি থাকে নাকি ... এইবার রীধি একটু মুচকি হাসলো ... ভাবী তুমি ফ্রেশ হয়ে নাও আমি আসছি ... একা একা ঘরে একটু একটু বেশ অসস্থি লাগছে রীধির...সে ঘুরতে ঘুরতে ঘরটা ভাল করে দেখতে লাগল ... হাটতে হাটতে বারান্দায় এসে ভূত দেখার মতো ভয় পেলো সামায়ন কে দেখে .... মা আর দুষ্টুর উপর যা রাগ ছিলো তা পুরোটা চোখে-মুখে নিয়ে রীধির দিকে তাকালাম ... রীধি এইবার সত্যি সত্যি ভয় পেয়ে গেলো ... মাথা কিছুটা নিচু করে চলে আসতে লাগলো..... এইবার মুখ খুললাম আমি , রাগে ফোপাতে ফোপাতে বললাম তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে ... ~ জী---জী-বলেন - তোমার সাথে যে আমার বিয়ে তুমি কি জানতে না ? ~ জী জানতাম - তোমার কি একবারও জানতে ইচ্ছা হয় নি কার সাথে তোমার বিয়ে হচ্ছে , সে কেমন, তার রুচি কেমন ... এ যুগের মেয়ে হয়ে তুমি কি করে অপরিচিত এক লোকের গলায় ঝুলে পরলে.... ~ রীধি কি বলবে কিছু বুঝে উঠতে না পেরে চুপ করে রইলো, মাথাটা যেন আরও এক ধাপ নিচু করলো... আমি এইবার একটু চেচিয়ে বললাম, কি ব্যাপার চুপ করে আছো কেন, আমি তোমার কাছে কিছু জানতে চাইছি....একটা কথা কান খুলে শুনে রাখো একজন ভিন্ন রুচির মেয়ের সাথে ঘর করা আমার পক্ষে সম্ভব নয় ...আমি আমেরিকা থেকে এসেছি কিছু দিনের জন্য আবার চলেও যাবো..এই অল্প সময়ের জন্য আমি চাইনা মা-বাবাকে কষ্ট দিতে তাই কোনো প্রস্তুতি ছাড়াই তোমাকে বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছি.....কখনো স্ত্রীর অধিকার নিয়ে আমার সামনে দাড়াবে না ... ~ রীধির রক্ত চলাচল যেন বন্ধ হয়ে গেলো সামায়নের ব্যবহারে ... এই প্রথম রীধি সামায়নের দিকে ভাল করে তাকালো আর খেয়াল করল ওর ফরসা গাল টা লাল হয়ে আছে যেন টোকা দিলেই রক্ত ঝরবে ... সামায়নের জন্য রীধির অন্যরকম মায়া লাগলো .... নিজেকেই নিজের শত্রু মনে হতে লাগলো রীধির ..... - ভেতরে যাও এখন আমাকে একটু একা থাকতে দাও ..... সবাই তো এখন আমাকে ভুলেই গেছে , তোমাকে নিয়ে আনন্দে মেতে উঠেছে.... খাবার টেবিলে আমি স্বাভাবিক ভাবেই খেয়ে উঠলেও, রীধির গলা দিয়ে যে খাবার নামছে না ঠিক টের পেলাম তবুও ও স্বাভাবিক ভাবে খাওয়ার বৃথা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে..... সামায়নের ঘরে ঢুকতে গিয়ে রীধির পা কাপছে তবুও শব্দ করে ঢুকল ... রীধি দুরের সোফাটার উপর বসলো আর মনে মনে বললো, হে আল্লাহ এ কোন বিপদে ফেললে .... কোন পাপের সাজা দিচ্ছো আমায়... রাত এগারোটা বাজতেই সামায়ন ঘুমিয়ে পরলো .... রীধি যে একা বসে আছে ওর কোনো খেয়ালই নেই রীধি এই প্রথম অনুভব করতে লাগলো তার জীবনটা আর স্বাধীন নেই ... রাত যত বাড়ছে তত বেশি বেশি বাড়ীর কথা মনে হচ্ছে আর ছটফট লাগছে .... এইসব চাপা কষ্ট নিয়ে রীধিও একসময় ঘুমিয়ে পড়লো... সকালে ঘুম থেকে উঠে রীধি কে সোফার উপর ঘুমাতে দেখে মায়া লেগে গেলো ...মা'র উপর রাগ করে ওর উপর এই ব্যবহার করাটা একদমই ঠিক হয়নি ....ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে মায়াটা যেন বেড়ে যাচ্ছে ...হঠাৎ সূর্যের আলোটা ওর মুখের উপর পড়াতে ওর ঘুম ভেঙ্গে গেলো ... আমি দেখে ঘুমের ভান করতে গিয়ে ঘুমিয়েই পড়লাম... ঘুম ভাংলো রীধির কাপা গলা শুনে, জী-শুনছেন, মা আপনাকে চা দিতে বলল . রীধির ভীত মুখখানা দেখে খুব খারাপ লাগছে ... চোখের ইশারায় কাপটা রাখতে বললাম আর গতরাতের ব্যবহারের জন্য নিজেকে গালি দিতে লাগলাম ... না ওর কাছে ক্ষমা চাইতেই হবে.... কিন্তু কিভাবে সেই মুখ কি আমার আছে....আমি যে এখন ওর চোখের বালি... (চলবে..) [ পরের পর্ব: ""বাড়িয়ে দাও তোমার হাত , আমি এবার তোমার আঙ্গুল ধরতে চাই""]  

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.