আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিলাস শ্রেণীতে ভ্রমন

ফালতুপ্যাচাল

(আম্মাআআ)'বিলাস শ্রেণী' শব্দটা শুনলেই চোখের সামনে ভেসে উঠে বেশ গদিমোড়া আসনযুক্ত একটি কামরা। যেখানে আরাম করে বসে আশপাশের দৃশ্য দেখতে দেখতে ভ্রমন করা যাবে, চাইলে একটু তন্দ্রাচ্ছন্নতায়ও নিজেকে ডুবিয়ে দেওয়া যাবে। কিন্তু পুরো ধারনাটাই বদলে যাবে যদি কেউ এই ঈদ মৌসুমে পাটুরিয়া ঘাট দিয়ে পদ্মা নদী পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা চালান। সেখানকার লঞ্চগুলোয় বিলাস শ্রেণীর সম্বল বলতে কিছু রংচটা জংধরা লোহার বেঞ্চি। তবে বিলাসের কামরায় ঢোকার আগেই দেখতে পাবেন দরোজার চৌকাঠের উপরে লাল কালিতে বড় বড় করে লেখা শিরোধার্য হয়ে আছে, 'বিলাস শ্রেণীর ভাড়া দ্বিগুণ'।

মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যমুনা সেতুর এ যুগে বিলাস শ্রেণীতে পদ্মা পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা চালানোর প্রয়োজনটা কি? তবে প্রয়োজনই যে মানুষের অনেক বড় শিক সেটা বুঝতে পারলে এই প্রশ্ন আর মনে জাগ্রত হওয়ার কোন কারণ নেই। ঈদের পরদিনই জরুরি এক কাজে যেতে হয়েছিলো পাবনা। মানসিক হাসপাতালে সিট বুকিং দিতে নয়, বিষয় তার থেকেও গুরুতর। বন্ধুর শেষকৃত্যানুষ্ঠানে যোগ দিতে। মানে বন্ধুর বিয়েতে।

ঢাকা থেকে যাত্রা ঈদের পরদিন। পাবনায় অবস্থিত বন্ধু ফোনে গভীর আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে জানালো, নিজেকে নিয়ে শুধু গাবতলী বাস কাউন্টারে ছেড়ে দে, বাকিটুকু বাসঅলাদের দায়িত্ব। চোখ বন্ধ করে পৌঁছে যাবি পাবনা। ঈদের পরদিন থেকে লোকজন সাধারণত ঢাকামুখী হয় ফলে সিটও কোন সমস্যা নয়, ভাড়াও অনেক কম হবে। বন্ধুর কথার প্রথম অংশ ঠিক ঠিকই মিলে গেলো।

কোন প্রকার ঝামেলা ছাড়াই পেলাম টিকেট কিন্তু ভাড়া এক টাকাও কম নয় বরং স্বাভাবিকের চেয়েও বেশী। কারন জানতে চাইলে কাউন্টার থেকে করুণ কন্ঠে দাড়িঅলা ভদ্রলোক জানালেন, "ভাই তেলের টাকাই ওঠে না, যাত্রী নাই। ভাড়া কমাইলে লসের উপর আরো লস। " "তাহলে ঈদের আগেতো যাত্রী অনেক বেশী ছিলো, তখন ভাড়া বেশি রেখেছিলেন কেন?" "ঈদের আগে ভাড়া তো বাড়বেই। এটা তো নতুন কিছু না।

" খাঁ খাঁ কাউন্টারে পরিবারসমেত বাসের জন্য বসেছিলেন এক ভদ্রলোক। আমার বোকা বোকা প্রশ্নে তিনি সম্ভবত কিঞ্চিত বিরক্ত, "ভাই এগুলা বইলা লাভ নাই। এরা হইলো শাঁখের করাত। যাইতেও ভাড়া কাটবো বেশি আসতেও কাটবো বেশি। " টিকেট কেটেছিলাম শ্যামলী পরিবহনে।

যথাসময়ে কাউন্টার থেকে জানানো হলো যাত্রী কম হওয়ায় 4.30 টার বাস ছাড়া সম্ভব নয়। না, দুঃখিত হওয়ার কোনো বালাই নেই। আমাদের অন্য বাসে তুলে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে পাঠানো হলো আরেক কাউন্টারে। ভাবটা এমন যেন এতেই আমাদের অনেক কৃতজ্ঞ হওয়া উচিত। নতুন বাস আবার ছাড়বে এক ঘন্টা পরে।

কৈফিয়ত দাবি করারও কোন উৎসাহ উদ্দীপনা নেই কারও মধ্যে। সবাই জানে, কৈফিয়ত চেয়ে কোন লাভ নেই। ঈদের আগে-পরে আমরা সবাই বাস মালিকদের কাছে জিম্মি। এটা সবাই একরকম মেনেও নিয়েছি। 2. বন্ধুর শেষকৃত্যানুষ্ঠান শেষ।

এবার ঢাকায় ফেরার পালা। ফিরতেতো হবেই। কিন্তু আমার ফেরাটা আবার জরুরিও। কারন 5 তারিখ সন্ধ্যায় ঢাকায় আরেক বন্ধুর শেষকৃত্যানুষ্ঠান। সেটায় উপস্থিত না থাকলে আমাদের বন্ধুত্বে যমুনা সেতুর মতো ফাটল দেখা দেওয়া নিশ্চিত।

পাবনা বাস কাউন্টারে গিয়ে মাথায় হাত। 5 আর 6 তারিখ ঢাকা যাওয়ার কোন টিকেট নেই। একেতো সেদিন শুক্রবার আর সামনে আছে 7-8 তারিখ অবরোধ। নানান ভাবে চেষ্টা করা হলো টিকেটের। সকল কাউন্টার থেকেই তোতাপাখির বুলি, 'কোনো টিকেট নাই।

' "ভাই ড্রাইভারের সামনে-পিছনে কোনোভাবে একটা ম্যানেজ করা যায় না?" এত হই হুল্লোড়ের ভেতরেও কথাটা কানে গেলো কাউন্টারের লোকটির। অবাক হয়ে তাকালো আমার দিকে। বললো, "মানে! আপনি ড্রাইভারের সামনে বসে যাবেন কিভাবে? ড্রাইভারের সামনে বসলে গাড়ি চালাবে কিভাবে?" "ওই কথার কথা আরকি! আচ্ছা সামনে না হোক ড্রাইভারের পেছনে বসলে তো কোনো সমস্যা নেই। দেখেন না একটা ম্যানেজ করা যায় কিনা। " না, কোন ভাবেই ম্যানেজ করা গেলো না টিকেট।

তাহলে ঢাকা ফেরার উপায়? সেটাও বাতলে দিলেন কাউন্টারের লোকটি। "খুব জরুরী হলে সোজা চলে যাবেন বাইপাস বাস টার্মিনালে। সেখান থেকে কাজীর হাট লঞ্চ ঘাটের বাস না হয় টাঙ্গাইলের বাসে উঠে বসবেন। " আমি আমার ভূগোল জ্ঞান ফলানোর চেষ্টা করলাম, "কিন্তু কাজীর হাট আর টাঙ্গাইল দুটো তো দুদিকে!" "আরে জানি রে বাবা জানি। বলতে দেন না আমারে।

যদি কাজীর হাট যান তাহলে বাস থেকে নেমে লঞ্চে উঠবেন। লঞ্চে 2 ঘন্টা লাগবে পাটুরিয়া পৌঁছাতে। তারপর সেখান থেকে 'অ্যাভেইলেবল' বাস পাবেন ঢাকা যাওয়ার। " ততনে বাস যে কতটা 'অ্যাভেইলেবল' জিনিস সেটা আমি বুঝে ফেলেছি। তবু লোকটা এতো আগ্রহ নিয়ে আমাকে উপায় বাতলে দিচ্ছে সেটা ভেবে তার কথায় আর বাগড়া দিলাম না।

এই ভিড়ের বাজারে এটাই বা কয়জন করে। বিনামূল্যে পথ নির্দেশিকা। এর ভেতর প্রায় 20 থেকে 30 জন এসে টিকেট প্রাপ্তির সম্ভাব্যতা যাচাই করে গেলেন। সবার মুখেই হতাশার ছায়া। সবার একই মিনতি, "একটা কোনো ভাবে ম্যানেজ করা যায় না?" "6 তারিখের ভেতর ঢাকা পৌঁছাতে না পারলে পরে কবে যে ঢাকা পৌছমু আর অবরোধ যে কয়দিন থাকে সেটা আওমীলীগ আর আল্লা জানে।

ঈদের পর পর পাবলিকরে এমুন বিপদে ফেললেই কি ইয়াজউদ্দীন মতা ছাড়বো নাকি?" একজন কথাটা বলে ফেললেও কাউন্টার ভর্তি সবার মনের কথাই আসলে এরকম। কোন ধরনের রাজনৈতিক দীর্ঘশ্বাসে নাক গলানোর আমার স্বভাবে নেই। তাই কাউন্টারের লোকটির কাছে আমি আবার আমার পুরোনো প্রসঙ্গ তুললাম। "পাটুরিয়া দিয়ে যাওয়ার ব্যাপারটা না হয় বুঝলাম কিন্তু টাঙ্গাইলের ব্যাপারটা কিরকম?" শুধু কথায় আর কত চিড়ে ভেজে? সুতরাং কাউন্টারে আরেকজন তোতাপাখি বসিয়ে রেখে আমার চা- সিগারেট খাওয়ার আহ্বানে তিনি বাইরে বেরিয়ে এলেন। একমুখ ধোঁয়া ছেড়ে জানালেন, "এখান থেকে বাসে চেপে সোজা চলে যাবেন টাঙ্গাইল।

সেখান থেকে ঢাকা যাওয়ার বাস তো কোনো ম্যাটারই না। " বাস 'ম্যাটার' না শুনে আমি আবার একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস গোপন করলাম। চা সিগারেটের বিল মিটিয়ে দিয়ে ঢুকলাম পাশেই পাবনার বিখ্যাত প্যারাডাইস সুইটস এ। প্রচন্ড ভিড়। সবাই মিষ্টি কিনছে।

তাদের অনেকেই ঢাকার যাত্রী। আমি কয়েক ধরনের মিষ্টির অর্ডার দিয়ে চুপচাপ একটা টেবিলে বসে পড়লাম। মাথা আমার ভনভন করে ঘুরছে। দেখি 'স্বগর্ীয় মিষ্টি' খেয়ে মাথা ঘোরা থামে কিনা! 3. 5 তারিখ সকাল বেলা বন্ধু এবং বন্ধু পরিবারের প্রবল আপত্তির মুখে ব্যাগ গুছিয়ে রওনা দিলাম বাইপাস বাস টার্মিনালের উদ্দেশ্যে। উত্তরবঙ্গের বিখ্যাত শীতে রীতিমত কাঁপাকাঁপি অবস্থা।

এর ভেতরই কয়েকটা বাস গেলো পাশ দিয়ে। আলু পটল তিল তিসির কোনো কিছুই ধারণের জায়গা নেই কোনটাতে। বাসের ছাদেও গাদাগাদি লোক। ঠান্ডা বাতাসে জবুথবু অবস্থা সবার। টার্মিনালে গিয়ে দেখি অবস্থা তূরীয়।

লোকজনের মাথার কারণে বাসের অবয়ব অদৃশ্য। পাগলের মতো লোকজন উঠছে বাসে। আমার চেয়ে অন্যরা সবাই সুবিধাজনক অবস্থানে। কারন তারা জানে কোন বাসে উঠে কোথায় যাওয়া যাবে। আমি তাও জানি না।

10 মিনিট লাগলো বাস এবং যাত্রী স্রোতের গতিবিধি বুঝে উঠতে। 'ডাইরেক্ট লঞ্চ ঘাট! ডাইরেক্ট লঞ্চ ঘাট' হেলপারের গলা ফাটানো সুমধুর আহবানে ছুটে গেলাম বাসটির দিকে। একটা লোকও আর উঠছে না বাসটিতে। না, বাসের কোনো সমস্যা না। জায়গা থাকলেতো উঠবে! গেটের কাছে এগিয়ে গিয়ে নিজের ভেতরে সাহস সঞ্চারের চেষ্টা করলাম।

হেলপারের বাড়িয়ে দেওয়া হাত শক্ত করে চেপে ধরলাম। হেঁচকা টানে উঠে পড়লাম। বাসের ভেতর থেকে প্রবল আপত্তি আর গালিগালাজ বর্ষিত হলো হেলপারের উপর। আমিও যে এই বর্ষণের বাইরে নই তা বুঝতে পারলাম। নিজের খারাপ স্বাস্থ্য নিয়ে এতদিন অনেক মনোকষ্ট ছিলো আমার।

ভিড়ের ভেতর শরীরটা গলিয়ে দিয়ে এই প্রথম ভাগ্যবান মনে হলো নিজেকে। কোনোরকমে একটা সিটের কোণ ধরে ভারসাম্য রা করলাম। হেলপার ননস্টপ আহবান জানিয়েই যাচ্ছে, 'ডাইরেক্ট লঞ্চ ঘাট! ডাইরেক্ট লঞ্চ ঘাট'। সেই আহবানে সাড়া দিয়ে আরো কয়েকজন উঠে পড়লো বাসে। অন্যদের সঙ্গে এবার আমি নিজেও গলা মেলালাম, "আর কোথায় লোক উঠাচ্ছেন? বাসটা ছাড়েন না এবার।

" অবশেষে দীর্ঘ প্রতিার পর বাস ছাড়লো। একটু পরেই আবার হেঁচকি তুলে থেমে গেলো। এবার টার্গেট ছাদ। আগেই উঠেছিলো অনেক। এবার সেটাকে পরিপূর্ণ রুপ দেওয়ার চেষ্টা।

চেষ্টা সফল হওয়ার পর কন্ডাকটরের মুখে পরিতৃপ্তির হাসি। কিন্তু এখানেই শেষ নয়। পরবতর্ী প্রতিটা বাসস্টপে বাস থামার আগেই লোকজন হামলে পড়তে লাগলো বাসের উপর। এবার ভাড়া তোলার পালা। পাবনা টু কাজীর হাট ভাড়া কত জানি না।

সবাই দেখলাম 30 টাকা করে দিচ্ছে। আমিও 30 টাকা দিতে গিয়ে দেখলাম আমার েেত্র ভাড়া নির্ধারিত হয়েছে 40 টাকা। কারন কি? সবাই নাকি উঠার সময় ভাড়া বলে কয়ে উঠেছে। আমি বেকুব না বলে উঠেছি বলে 10 টাকা বেশী দিতে হবে। কি আর করা।

এমনি সময়ে এখানকার ভাড়া 20 টাকা। 10 টাকার শোক ভুলে আমি দাড়িয়ে দাড়িয়ে একটু পর পর ঘড়ি দেখতে লাগলাম। দেড় ঘন্টার যাত্রা শেষ হলো 3 ঘন্টা 20 মিনিটে। 4. লঞ্চ ঘাটে চিকন একটা সিড়ি দিয়ে পল্টুনে ওঠার ব্যবস্থা। পিলপিল করে লোক উঠছে।

পল্টুনে উঠার আগেই লঞ্চের টিকেট কাটতে হবে। টিকেট ঘরের 10 হাতের ভেতর যাবার কোনো ব্যবস্থা নেই। অনেক কষ্টে টিকেট চাইতেই 20 টাকা মূল্যের একটা গোলাপি কাগজ ধরিয়ে দিলো কাউন্টারের লোকটি। সেটা পকেটে রেখে লোকজনের স্রোতে গা ভাসিয়ে দিলাম। পল্টুনে উঠেই আবার থমকে দাড়ালাম।

পল্টুনে ওঠা বাবদ 1 টাকার বিনিময়ে সবাইকে টিকেট কাটতে হবে। হকারের হাকডাক, লোকজনের চিৎকার চেঁচামেচি, এক টাকার ভাংতি সমস্যা- সবমিলিয়ে পল্টুন রীতিমত একটা নরকে পরিনত হয়েছে। তার উপর যুক্ত হয়েছে অতিরিক্ত ধাক্কাধাক্কিতে পানিতে পড়ে যাওয়ার ভয়। ঘাটে একটা লঞ্চ আছে বঠে কিন্তু আমি সেটাতে চেপে বসার সাহস কবে উঠতে পারলাম না। আমার মতো ভীতু কয়েকজন দূরে দাড়িয়ে লঞ্চটার ভবিষ্যত ভাবনায় ভীত হয়ে পড়লাম।

একজনকে ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, "ভাই এসব লঞ্চ কি ডোবে না?' ভদ্রলোক বিদেশীদের মতো শ্রাগ করার ভঙ্গি করলেন। মুখে কিছু বললেন না। সেটা দেখে আমি আরো ভয় পেয়ে গেলাম। অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাইয়ের কারণে লঞ্চ ডোবার ঘটনা বারবার মনে পড়তে লাগলো। উপরে আল্লাহ নীচে পানি।

যা থাকে কপালে। সাহস করে এগিয়ে গেলাম। যেতে যেতেই লঞ্চ দিলো ছেড়ে। কোনোরকমে দুলতে দুলতে লঞ্চ রওনা দিলো। আমিও হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম।

যাক এতো ভিড়ের লঞ্চে উঠতে হয়নি। পল্টুন ভর্তি লোকজন অপো করতে লাগলাম পরবর্তী লঞ্চের। আবার শুরু হলো রাজনৈতিক আলাপ। কান পচে গেছে আমার দেশের ভবিষ্যত নিয়ে মানুষের হতাশার কথা শুনতে শুনতে। তবু একজনের এক সরস মন্তব্যে মাথা ঝাঁকালাম আমি নিজেও।

সবুজ জ্যাকেট পরা এক তরুনের দাবি, দেশের নাকি এখন এই দোদুল্যমান লঞ্চের মতোই অবস্থা। সবাই চাই দেশটার ওপর চড়ে বসতে। তাই যেকোনো সময় দেশটা লঞ্চের মতোই ডুবে যাবে। লঞ্চ এলো 40 মিনিট পর। সবুজ জ্যাকেট সবার সামনে।

আমিও খুব একটা দূরে নই। সবাই শিকার ধরার মতো ওৎ পেতে আছে। ঘাটে লাগতে না লাগতেই চোখের পলকে লঞ্চ গেলো ভরে। কিন্তু পল্টুনে আগের মতোই লোক। আমি উঠে বসলাম দোতলায়।

বিখ্যাত বিলাস শ্রেণীতে। কোনদিকেই নড়াচড়ার কোনো উপায় নেই। এর ভেতর লঞ্চের টিকেট চেকার এসে জানালো, "যাদের গোলাপি বা সাদা টিকেট তারা নীচে নেমে যান। শুধু টিয়া রংয়ের টিকেটধারীরা বিলাসে বসুন। " আমার মতো অনেকেরই মাথায় হাত।

এই ভিড়ের ভেতর কোথাও যাওয়া সম্ভব না। গ্যাট হয়ে বসে রইলাম। যা হয় হোক। চেকার এলো। সবার সঙ্গেই অনেক তর্কাতর্কি হলো।

অবশেষে আপোষ হলো অতিরিক্ত 10 টাকা দিলে যে যেখানে আছে বসে থাকতে পারবে। তিনঘন্টা ঠায় চুপচাপ বসে থাকার পর লঞ্চ এসে থামলো পাটুরিয়া ঘাটে। নামার সিরিয়াল পেলাম 20 মিনিট পর। এবারও চিকন একটা সিঁড়ি। সিড়ির নীচে পদ্মার শীতল পানি।

হঠাৎ হইচই। কী হলো কী হলো! একটা বাচ্চা পড়ে গেছে সিড়ি থেকে। তাকে পানি থেকে তোলা হলো। কাদা আর ঠান্ডায় বেচারার অবস্থা খারাপ। এবার আমার নামার পালা।

আমার পা কাঁপতে লাগলো। লোকজনের ঠেলাঠেলিতে কোনপ্রকার অঘটন ছাড়াই মাটি স্পর্শ করলাম। 5. পিলপিল করে লোকজন ছুটছে বাস স্ট্যান্ডের দিকে। আমি একটা রিকশা নিলাম। 2 মিনিটের হাঁটা পথ 10 টাকা ভাড়া।

তিন চারটা বাস ওপর নিচ সব ভর্তি। কোথাও লাইনের কোনো বালাই নেই। মৌচাকের মতো লোকজন বাসকে ছেঁকে ধরেছে। অনেক কষ্টে গিয়ে পৌছালাম বিআরটিসি বাস কাউন্টারে। টিকেট দিচ্ছে তারা কিন্তু বাস কখন আসবে সে বিষয়ে তাদের কোনো ধারনা নেই।

অনেক চাপাচাপির পর জানালো 2 থেকে আড়াই ঘন্টা লাগতে পারে। কিন্তু কোনো নিশ্চয়তা নেই। টিকেট না কেটে এদিক সেদিক ঘুরে বেড়িয়ে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করলাম। সবার একই দাবি, ডাইরেক্ট ঢাকা 100 টাকা ভাড়া। এমনিতে স্বাভাবিক অবস্থায় ভাড়া 40 টাকা।

দেড় ঘন্টা পরিশ্রমের পর একটা বাসের সর্বশেষ সিটে নিজেকে আবিষ্কার করলাম। সারাদিনের কান্তিতে শরীর ছেড়ে দিলো। বাস চলতে থাকলো ঢাকার উদ্দেশ্যে। অবশেষে নানান জায়গায় হেঁচকি তুলে রাত 9 টায় বাস এসে থামলো গাবতলীতে। এবার সিএনজি খোঁজার পালা।

ড্রাইভাররা একেকজন নবাবের মতো পা তুলে বসে আছে। কেউ শ্যামলী যাবে না। আল্লাহর অসীম কৃপায় একজন রাজি হলো। ভাড়া 60 টাকা। এক পয়সাও কম না।

গেলে যাবেন, না গেলে নাই। রাজি থাকলে ওইঠা বসেন। রাজি না হওয়ার মতো শক্তি ততৰনে আর অবশিষ্ট নেই আমার শরীরে বা মনে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।